বৃষ্টি ~ ১

দিলরুবা মুন ৭ অক্টোবর ২০১৩, সোমবার, ০১:৩৫:০০অপরাহ্ন বিবিধ ২ মন্তব্য

হাতীর ঝিলে একটা বাতি নেভানো ল্যাম্পপোস্টের নিচে সিমেন্ট বাঁধানো বেঞ্চের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে যূথী, পা দু’টো বাচ্চাদের মতো সামনের দিকে ছড়ানো...
নিজেদের জন্য বরাদ্দ রাখা সময়গুলোতে নিজের অজান্তেই আমরা কেমন যেন ছোট হয়ে যাই!
গাল ফুলিয়ে পানিতে ঢিল ছোঁড়া, ঘাস ছেঁড়া, প্রিয় জিনিসগুলো একটু একটু করে নষ্ট করা, যেন নিজেকে নয়, ওই জিনিসটাকেই কষ্ট দিচ্ছি...
নাহ! যূথী তেমন কিছুই করছে না, সে অনেক বেশী রকম শান্ত আজ...
বৃষ্টি তার বরাবরই অপছন্দ, তবু আজ ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছে সে, সামনে থৈ থৈ করছে পানি, বৃষ্টির বড়ো বড়ো ফোঁটাগুলো পানিতে যেন নেচে বেড়াচ্ছে, কানের হেডফোনটা কখন যে টুপ করে পড়ে গেলো কে জানে!!!! এখানে সেখানে বৃষ্টির ঝুপ ঝুপ ঝরে পড়ায় অনেক রকম শব্দ হচ্ছে, শব্দগুলোয় অন্যরকম ছন্দ আছে, যেন প্রকৃতি তাকে কিছু বলতে চায়...
যূথীর চোখগুলো খুব সুন্দর, টানা টানা, পাপড়িগুলো বড়ো বড়ো, ভিজে গিয়ে অনেকগুলো করে একে-অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে, যেন বলতে চাইছে, “ঠাণ্ডা লাগছে খুব”
লাল হয়ে যাওয়া ফোলা ফোলা চোখে তার বিস্ময় আর বিষাদ মিলেমিশে একাকার,
আকাশটা আজ অহেতুক বেশী সুন্দর, অথবা এতো আবেগ নিয়ে আগে কখনো সে আকাশ দেখেনি... দূরের দালানগুলোর কাছাকাছি মিষ্টি একটা কমলা বর্ণ, ওদিকে কিছু পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ছে তো উড়ছেই... মাথার উপর আঁধার কালো মেঘ, একটা তপ্ত দুপুরকে সাঁঝ বানিয়ে দিলো নিমেষেই, এতই শক্তি তার...
আশেপাশে কেউ নেই, কেউউউ নেই... একটা ছবির মত জায়গায় সে সম্পূর্ণ একা...

এখনো পুরোপুরি আঁধার নামেনি, তবু একে একে বাতিগুলো জ্বলে উঠলো যান্ত্রিক নিয়মে... দালানগুলোয় নাম খচিত বাতি জ্বলল কয়েক রঙের... হরেক রঙের দালানগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন আরও রঙ্গীন হয়ে বাতিগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে খিল খিল করে হাসছে, এতো সৌন্দর্য সহ্য করা যায় না... অন্যরকম একটা ব্যথা বাজে বুকে... যূথী চোখ বুজে ফেলে...

আঁধার নামলো বলে, ধীরে ধীরে চোখ মেলে যূথী নির্বিকারের মতো... ডানহাতে একটা সিরিঞ্জ ভর্তি অবশ করার লিকুইড, মায়ের ল্যাব থেকে চুরি করা, মায়ের সাথে টুকটাক কাজ ভালোই করত, তাই মিস হবার ভয় নেই...
খুব যত্ন করে বাম হাতের কব্জিতে পুশ করে সে, যেখানে ছোট্ট ছোট্ট স্পন্দন দেখতে পাওয়া যায়...
কোলের মধ্য থেকে ভেজা প্যাকেটের আবরণ খুলে ব্লেডটা বের করে, একটু পরেই লালের সাথে বৃষ্টির মিশে যাওয়া দেখতে দেখতে মাথায় চিনচিনে অনুভূতি নিয়ে ধীরে ধীরে অন্ধকার নামতে দেখবে...... একটা শীতল সুখ!!!

যূথীর হাতটা কাঁপছে...
সে এখন ভাবছে, যদি ফিরে আসতে ইচ্ছে করে? আমি কি পারবো ফিরে আসতে?
যে জীবন আমি সৃষ্টি করতে পারিনা, তাকে ধ্বংস করার অধিকার কি আমার আছে???
হাতের ব্লেডটা লেকের পানিতে ছুঁড়ে ফেলে ঢুকরে কেঁদে ফেলে যূথী।
সময়, পরিস্থিতি আর প্রকৃতির চেয়ে এমন উপদেষ্টা হয়না, এরা হাত ধরে চলতে শেখায়...

যূথী কি এখনো কাঁদছে?
কাঁদুক, ওকে আজ কাঁদতে দাও, ওর কাঁধে ঝুলে থাকা হেডফোনে বাজতে থাকুক,
“*“তুমি তাদের নাম দিলে না,
মনের ভুলে কেউ দিলো না,
তোমার দেয়া আমার কোন নাম ছিল না...”*”

আচ্ছা, ভালবাসা কি শুধুই একটা নাম???

[[Don’t try this at home; Writer not will be liable for any occurrence]]

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ