রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি,ঔপন্যাসিক,সংগীত স্রষ্টা,নাট্যকার,চিত্র কর,ছোট গল্পকার,প্রাবন্ধিক,অভিনেতা,কণ্ঠ শিল্পী ও দার্শনিক।তাঁকে vegabondrocks_1288904650_1-durantoblog_1210268410_2-tagorerabindranath2বাংলা ভাষার সর্ব শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।রবীন্দ্রনাথকে গুরু দেব, কবি গুরু ও বিশ্ব কবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।রবীন্দ্রনাথের বায়ান্নটি কাব্য গ্রন্থ,আট ত্রিশটি নাটক,তেরটি উপন্যাস ও ছয়ত্রিশটি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর সর্ব মোট পচা নব্বইটি ছোট গল্প ও উনিশত পনেরটি গান যথা ক্রমে গল্প গুচ্ছ ও গীত বিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অ-প্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্র সাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত।এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন।রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্য গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৮৬১ খ্রীঃ হতে ১৯০১ খ্রীঃ দীর্ঘ এ জীবনে তারঁ প্রতিভায় পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন।তারঁ জীবনে কাব্য সাহিত্য রচনায় জীবন চলার মাঝে ঘটে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা যা অনেকের কাছে জীবন চলার রোল মডেল।তারঁ সম্পর্কে লেখা, তাকেঁ নিয়ে গবেষনা করা বিশ্বে বহু সাহিত্য সংগঠন রয়েছেন তারা করছেন তাই এখানে তাকেঁ নতুন ভাবে পরিচয় করে দেবার কিছুই নেই আমার কারন আমরা আমার পূর্বপূরুষরা ছোট বেলা থেকে তার অনবদ্য লেখাগুলো পড়েই বড় হয়েছি বা ভবিষৎ প্রজন্মরা বড় হবে।আমি শুধু বলব আমি গর্বিত বাংলা ভাষার পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সাহিত্যকে পেয়ে।এখন আসা যাক তারঁ জীবনে ঘটে যাওয়া স্বরণীয় ঘটনাগুলোর আলোকপাতের দিকে।
........................................

(y)  শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কথা শিল্পী প্রমথ নাথ বিশী।তো,এক বার প্রমথ নাথ বিশী কবি গুরুর সঙ্গে শান্তি নিকেতনের আশ্রমের একটি ইঁদারার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।ওখানে একটি গাব গাছ লাগানো ছিল।কবি গুরু হঠাৎ প্রমথনাথকে উদ্দেশ করে বলে উঠলেন,‘জানিস, এক সময়ে এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্ন সহ কারে লাগিয়ে ছিলাম? আমার ধারণা ছিল,এটা অশোকগাছ; কিন্তু যখন গাছটি বড় হলো দেখি, ওটা অশোক নয়, গাবগাছ।’ অতঃপর কবি গুরু প্রমথ নাথের দিকে সরাসরি তাকিয়ে স্মিত হাস্যে যোগ করলেন, ‘তোকেও অশোক গাছ বলে লাগিয়েছি,বোধ করি তুইও গাব গাছ হবি।’
(y) এক বার রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজি এক সঙ্গে বসে সকালের নাশতা করছিলেন।তো গান্ধীজি লুচি পছন্দ করতেন না,তাই তাঁকে ওটসের পরিজ (Porridge of Oats) খেতে দেওয়া হয়েছিল;আর রবীন্দ্রনাথ খাচ্ছিলেন গরম গরম লুচি।গান্ধীজি তাই না দেখে বলে উঠলেন,‘গুরুদেব,তুমি জানো না যে তুমি বিষ খাচ্ছ। উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বললেন,‘বিষই হবে;তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে।কারণ,আমি বিগত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খাচ্ছি।’
(y) রবীন্দ্রনাথের একটা অভ্যাস ছিল, যখনই তিনি কোনো নাটক বা উপন্যাস লিখতেন,সেটা প্রথম দফা শান্তি নিকেতনে গুণী জন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই এরূপ পাঠের আসরে যোগদান করতেন।তা,এক বার আসরে যোগদান কালে বাইরে জুতা রেখে আসায় সেটা চুরি হয়ে গেলে অতঃপর তিনি জুতা জোড়া কাগজে মুড়ে বগল দাবা করে আসরে আসতে শুরু করে দিলেন।রবীন্দ্রনাথ এটা টের পেয়ে গেলেন।তাই এক দিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে এ ভাবে আসরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বলে উঠলেন,‘শরৎ,তোমার বগলে ওটা কী পাদুকা-পুরাণ?’এ নিয়ে সেদিন প্রচণ্ড হাসা হাসি হয়েছিল।
(y) এক বার এক দোল পূর্ণিমার দিনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের সাক্ষাৎ ঘটে।তো,পরস্পর নমস্কার বিনিময়ের পর হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর জামার পকেট থেকে আবির বের করে রবীন্দ্রনাথকে বেশ রঞ্জিত করে দিলেন।আবির দ্বারা রঞ্জিত রবীন্দ্রনাথ রাগ না করে বরং সহাস্যে বলে উঠলেন,‘এত দিন জানতাম দ্বিজেন বাবু হাসির গান ও নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন।আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়,দেহরঞ্জনেও তিনি একজন ওস্তাদ।’
(y) মরিস সাহেব ছিলেন শান্তি নিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক।একা থাকলে তিনি প্রায়ই গুনগুন করে গান গাইতেন।তো,এক দিন তিনি তৎকালীন ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে বললেন,‘গুরু দেব চিনির ওপর একটি গান লিখেছেন,গানটি বড়ই মিষ্টি।’ অতঃপর তিনি গানটি গাইতে লাগলেন,‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে,ওগো বিদেশিনী,তুমি থাকো সিন্ধুপারে…।‘তা চিনির গান তো মিষ্টি হবেই।কিন্তু এই ব্যাখ্যা আপনি কোথায় পেলেন?’ প্রমথনাথ বিস্মিত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন।উত্তরে মরিস সাহেব জানালেন,‘কেন,স্বয়ং গুরু দেবই আমাকে বলে দিয়েছেন।’
(y) কবি গুরুর পঞ্চাশ বছর বয়সে পদার্পণ উপলক্ষে শান্তি নিকেতনের একটি কক্ষে সভা বসেছিল,যেখানে তিনি স্ব কণ্ঠে গান করছিলেন।তো,তিনি গাইলেন, ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি,শুধু কাশি শুনেছি।কবি গুরু এটা গেয়েছিলেন আচার্য যতীন্দ্র মোহন বাগচি উক্ত কক্ষে প্রবেশের পূর্বক্ষণে,তাই বাগচি মহাশয় কক্ষে প্রবেশ করে বিস্ময়-বস্ফািরিত নয়নে সকলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।‘সিঁড়িতে তোমার কাশির শব্দ শুনেই গুরুদেব তোমাকে চিনেছেন’,সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তখন বাগচি মহাশয়কে বুঝিয়ে দিলেন,‘তাই তো তাঁর গানের কলিতে বাঁশির স্থলে কাশি বসিয়ে তাঁর গানটি গেয়েছেন।’
(y) সাহিত্যিক‘বনফুল’ তথা শ্রী বলাই চাঁদ ব্যানার্জির এক ছোট ভাই বিশ্ব ভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তি নিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন।অত এব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রবীন্দ্রনাথ যখন বললেন,‘কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি’,তখন বলাই বাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন,‘আজ্ঞে না,আমি অরবিন্দ।রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন,‘না কানাই নয়,এ যে দেখছি একেবারে শানাই।’
(y) একবার কালিদাস নাগ ও তাঁর স্ত্রী জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ মৃদুহাস্যে নাগ-দম্পতিকে প্রশ্ন করলেন, ‘শিশু নাগদের (সাপের বাচ্চাদের) কোথায় রেখে এলে?’ আরেকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর চাকর বনমালীকে তাড়াতাড়ি চা করে আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে কপট বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বললেন, ‘চা-কর বটে, কিন্তু সু-কর নয়।’ আরও একবার কবিগুরুর দুই নাতনি এসেছেন শান্তিনিকেতনে, কলকাতা থেকে। একদিন সেই নাতনি দুজন কবিগুরুর পা টিপছিলেন; অমনি তিনি বলে উঠলেন, ‘পাণিপীড়ন, না পা-নিপীড়ন?’ প্রথমটায় তারা কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে কথাটার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পেরে খুবই মজা পেয়েছিলেন।
(y) রবীন্দ্রনাথ কথা প্রসঙ্গে দিনু বাবুকে(রবীন্দ্র নাথের নাতি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর)এক বার বলেছিলেন,বুঝলি দিনু,সে দিন ওমুক লোকটা দশটি টাকা ধার নিয়ে গদগদ কন্ঠে বললে,আপনার কাছে আমি চির ঋণী হয়ে রইলুম।দিনু বাবু আৎকেঁ উঠে বললেন,তুমি দিলে ওকে টাকাটা?ওতো একটা জোচ্চোর! তা মানি,কিন্তু লোকটার শত দোষ থাকলেও একটা গুণ ওর ছিল,রবীন্দ্রনাথ শান্ত স্বরে বললেন।লোকটা সত্য ভাষী।কথা রেখেছিলো -চির ঋণী হয়েই রইল।

আজ এই পর্যন্তই
আসছে বৈজ্ঞানিক
আইনস্টাইন

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ