বাঙ্গালীরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে জানেনা। আমার আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে খ্যাতিমান বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বেঁচে থাকতে তাঁদের ন্যায্য এবং প্রাপ্য সম্মান, শ্রদ্ধা, সম্মাননা, পদক দেই না। আমাদের সমাজে শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসা শাস্ত্র, প্রকৌশলী এবং পরিকল্পনাবিদ, চিত্র শিল্পী, কারু শিল্প, নৃত্যকলা, উদ্ভাবক, কৃষিবিদ, অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা, চলচিত্রকার, সঙ্গীত পরিচালক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশা এবং শ্রেণীর মানুষের সমাজে স্ব স্ব ক্ষেত্রে নানানমূখী এবং বহুবিধ অবদান ও কীর্তিকলাপ আছে। তাঁদের বিভিন্নমুখী অবদানের কারণে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের মান-সম্মান, ভাবমূর্তি, ইমেজ উজ্জ্বল হয়েছে। দেশের মানুষের বিভিন্ন কল্যাণ সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে দেশের এবং ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষের। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশে সমাজের বিভিন্ন পেশা এবং ক্ষেত্রের জ্ঞানী-গুণী, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে আমরা জীবিত থাকাকালে যথাযথ মর্যাদা আর সম্মান দেই না বা দেখাই না। বরং বিশিষ্টজনের মৃত্যুর পর শুরু হয়ে যায় তাঁর স্তুতি, প্রশংসা, তাঁর মানবিক গুণাবলীসহ বিভিন্ন ধরণের কার্যকলাপের বর্ণনা। তাঁর মৃত্যুর পর অনেকেই বিভিন্ন সম্মাননা, পদক, পুরুষ্কার প্রদান করে তাঁকে মরণোত্তর স্বীকৃতি দেয়া হয়ে থাকে। যার জন্যে এতোকিছু, যে মানুষটির জন্য এতো আয়োজন তিনি কিন্তু জীবিতকালে তাঁর প্রাপ্য সম্মান শ্রদ্ধা পদক পুরষ্কার কিছুই দেখে যেতে পারেন নি। অথচ জীবিতকালে তিনি যদি তাঁকে প্রদত্ত সম্মান, পদক, সম্মাননা, পুরষ্কার দেখে যেতে পারতেন তাহলে তিনি অবশ্যই প্রাপ্য সম্মানের জন্য আনন্দিত আবেগাপ্লুত গর্বিত হতেন। তাঁর উত্তরাধিকারীরাও সমানভাবে সম্মানিত আনন্দিত এবং গর্বিত হতে পারতেন। আমরা যারা এখন হুমড়ি খেয়ে পড়ছি তাঁরাও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতাম না। মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্মে মননশীলতায় সৃষ্টিশীলতায় উদ্ভাবনে জ্ঞান বিজ্ঞানে ধর্মচর্চায় কবিতা আর সাহিত্যে চিত্রকর্মে সাংবাদিকতায় খেলায় অভিনয়ে গানে কথায় কন্ঠে সৃজনশীল এবং জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। তাই তাঁদের অবদানকে জিবীতকালেই স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ।
অতি সম্প্রতি গায়ক এন্ড্রু কিশোর মারা গেছেন। তাঁর মরে যাওয়ার পর সবাই তাঁকে শ্রদ্ধায়, সম্মানে ভাসিয়ে দিচ্ছি। তাঁর চরিত্রের বিভিন্ন মহিমা ভেসে আসছে। তাঁর মানবিকতা, ভদ্র আর অমায়িক আচরণ সবকিছু মানুষেরর মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। অথচ তিনি যখন দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছিলেন এসব শুভাকাঙ্ক্ষীরা কোথায় ছিলেন। কে কয়বার তাঁর চিকিৎসার, শারীরিক স্বাস্থ্যের, তাঁর আর্থিক অবস্থার খবর নিয়েছেন। দেখা যাবে হাতে গোণা জনা কয়েক সহৃদয়বান মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে মাত্র যা খুব দুঃখজনক বিষয়। আসুন আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনদের জীবিতকালে তাঁদের খোঁজ খবর নেই। তাঁদের সুখে দুঃখে, অসুখে বিসুখে সাহায্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি। দেশ ও সমাজের কল্যাণে, মঙ্গলে, উন্নয়নে, বিদেশে ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে,মানুষের জীবন জীবিকা আর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে, দেশের মানুষের জন্য অবদান, ভাবমূর্তি বৃদ্ধি, সম্মান বৃদ্ধির জন্য যেসমস্ত কর্মকাণ্ড করেছেন সেগুলির মূল্যায়ন করে তাঁকে তাঁর প্রপ্য সম্মান, পুরষ্কার, পদক দিয়ে ভূষিত করি। মরণের পরে মরণোত্তর সম্মান দেখানোর ভয়াবহ মানসিক বিকৃতি, লোক দেখানো স্তুতিবন্ধ করি। শোকসভা, স্মরণসভার মতো ভাওতাবাজী বন্ধ বা পরিহার করি। তবে যে সমস্ত বিশিষ্টজন কর্মে আদর্শে দেশ ও সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তাঁদের স্মরণসভা, শোকসভাগুলো বেশি বেশি করে করি যাতে বর্তমান প্রজন্ম তাঁদের অনুসরণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। যে জাতি তাঁর শ্রেষ্ট এবং আদর্শবান সন্তানদের সম্মান শ্রদ্ধা জানাতে জানেনা সে জাতির উন্নতিও হতে পারে না।
১৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার সাথে পুরোপুরি সহমত পোষণ করছি। আমি ও এটাই বলি । আরে মরে গেলে হীরা , সোনা, সম্মান যাই দেইনা কেন সেটাতো যার প্রাপ্য , যার সবথেকে বেশী আনন্দ পাবার কথা, গর্ব করার কথা সেইতো পেলনা কিছু। বেঁচে থাকতে খবর নিতে পারেন না, কাছে যেতে পারেন না মরলে তার এসব কিছুই দরকার হয় না। যদি সত্যিই কিছু করতে হয় বেঁচে থাকতে করুন,তার প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ান। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই আপনাকে। খুব ভালো লাগলো বিষয়টি
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দিদি, আপনার ভালো লাগা, আপনার মূল্যবান এবং যুক্তিপূর্ণ মতামত আমাকে লেখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া নার্গিস
প্রথমে ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান খুবই সুন্দর একটা বিষয়ে লিখার জন্য।
সমাজের মানুষ গুলোই এমন বেঁচে থাকলে মূল্য দেয় আর মৃত্যুর পর সম্মানে ভাসিয়ে দেয়।
অথচ বেঁচে থাকলে যদি এই মানুষ গুলোর প্রতি নূন্মতম সহাভূতির প্রকাশ করতো, তাহলে এই মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ গুলো হয়ত মৃত্যুর আগে মরতো না।
অভিমান গুলো হয়ত ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যেত, মৃত্যুর আগে হয়ত আমাদের জন্য ঘৃনাটা রেখে যেত না।
অসুস্থতায় টাকা, সাহায্য বড় না একটু পাশে থাকা,খোঁজ নেওয়া সহাভূতিটুকুই সবার কাম্য আমরা এতটুকু হৃদয়বান হই।
বেঁচে থাকলে দেয় বেঁতের ছঁটি, মরলে দেয় শীতল পাঁটি,,,এটাই বাংলাদেশের মানুষ।
বেঁচে থাকলে মূল্য দেয় না অথচ মরলে দেয় মরনউত্তর সম্মাননা।
আল্লাহ্ আমাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করুন, মানবিক দিক থেকে মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার সুন্দর বিশ্লেষণ, মূল্যবান এবং যুক্তিপূর্ণ মতামত আমাকে আনন্দিত এবং আবেগাপ্লুত করেছে এবং সহমত পোষণ করছি —“অথচ বেঁচে থাকলে যদি এই মানুষ গুলোর প্রতি নূন্মতম সহাভূতির প্রকাশ করতো, তাহলে এই মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ গুলো হয়ত মৃত্যুর আগে মরতো না।
অভিমান গুলো হয়ত ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যেত, মৃত্যুর আগে হয়ত আমাদের জন্য ঘৃনাটা রেখে যেত না।
অসুস্থতায় টাকা, সাহায্য বড় না একটু পাশে থাকা,খোঁজ নেওয়া সহাভূতিটুকুই সবার কাম্য আমরা এতটুকু হৃদয়বান হই।
বেঁচে থাকলে দেয় বেঁতের ছঁটি, মরলে দেয় শীতল পাঁটি,,,এটাই বাংলাদেশের মানুষ”। ভালো থাকবনে। প্রীতিময় শুভ কামনা আর শুভেচ্ছা রইলো বোন।
সুরাইয়া নার্গিস
কৃতজ্ঞতা রইল ভাইজান।
নিতাই বাবু
আপনার সাথে আমিও একমত পোষণ করছি। সেইসাথে আশা করি আপনার এই লেখা সরকারের উচ্চমহলের কারোর দৃষ্টিগোচর হোক। তাহলেই হয়তো এ-বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হবে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দাদা আপনার মতামত এবং প্রত্যাশার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলি — “সেইসাথে আশা করি আপনার এই লেখা সরকারের উচ্চমহলের কারোর দৃষ্টিগোচর হোক। তাহলেই হয়তো এ-বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হবে”।
ভালো থাকবনে দাদা, শুভেচ্ছা অফুরান।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা আদৌ থেকে গুণীজনদেরকে সম্মান দিতে জানিনা এবং দেওয়ার চেষ্টাও করিনা।
তাই আমরা নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে পারিনা।
আপনার এরূপ লেখার সাথে সহমত পোষণ করছি।
লেখাটি সকলের দৃষ্টিগোচর হোক।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দাদা আপানার সুন্দর এবং যুক্তিপূর্ণ মতামতের সঙ্গে আমি একমত — “আমরা আদৌ থেকে গুণীজনদেরকে সম্মান দিতে জানিনা এবং দেওয়ার চেষ্টাও করিনা।
তাই আমরা নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে পারিনা”।
ভালো থাকবেন দাদা। শুভেচ্ছা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
১০০% সহমত ভাইসাব।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সহমত প্রকশের জন্য অভিনন্দন এবং শুভ কামনা রইলো ভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
খুবি ভাল বিষয়ে লেখেছেন আলম দা
আমিও এরকম চিন্তা করেছিলাম
যারা একটু গুণিব্যক্তি তাদের কে বেচে থাকায় অবস্থায়
সম্মান করা তারা দেখে যেতে পারল কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি
কেউ এগে আসেনি ————-
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য — “যারা একটু গুণিব্যক্তি তাদের কে বেচে থাকায় অবস্থায়
সম্মান করা তারা দেখে যেতে পারল কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি
কেউ এগে আসেনি ————-” ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
কেউ কেউ মরে গিয়েও সম্মান সম্মাননা পাচ্ছেন,
জামাল নজরুল ইসলাম মরে গিয়েও সম্মান পান-নি বলেই জানি।
অধিক শোকে পাথর হয়ে এখন আর কিছুই ভাবতে পারি না।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সঠিক বলেছেন ভাই — “জামাল নজরুল ইসলাম মরে গিয়েও সম্মান পান-নি বলেই জানি।
অধিক শকে পাথর হয়ে এখন আর কিছুই ভাবতে পারি না”।
অথচ স্টিফেন হকিংস বলেছেন জামাল নজরুল ইসলাম তাঁর চেয়েও বড় মাপের একজন বিজ্ঞানী। কি দুর্ভাগ্য বাঙ্গালী জাতির।
ভালো থাকবেন ভাই। শুভ কামনা রইলো।
তৌহিদ
সহমত পোষণ করছি। জীবিতকালেই যার সম্মান পাওয়া উচিত মৃত্যুরর পরে সে সম্মানতো তিনি দেখে যেতে পারলেননা। আমার মনে হয় নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি ভাবা উচিত।
ভালো লিখেছেন ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার মূল্যবান জবাবের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করছি ভাইয়া। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ ভাই।