: দেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির (সিপিবি) ভুমিকা অসাধারন। ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর বীরত্বপূর্ন ইতিহাসে দৃষ্টান্ত। একদা স্ব স্ব বলয়ের মতাদর্শের কারনে ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় কমিউনিষ্ট পার্টি। গড়ে উঠে কমিউনিজমের কার্ল মাকর্স’র আদর্শকে সামনে রেখে একের পর এক পার্টি। ঐক্যের শামিলে কখনো কখনো মিলিত হলেও বার বার ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে রচিত হয় কমিউনিজমের পার্টি। পার্টির মধ্যে বিরাজমান থাকা পেটি বুর্জোদের কারনেই এহেন ত্রাহিদশা বিরাজমান। সময় সময় পার্টির ভুল সিদ্ধান্তের জন্য চরমভাবে আবার খেসারতও দিচ্ছে। কমিউনিষ্ট পার্টির ম্যানুফেস্ট সাম্যের রাজনীতি। সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাগ্রত প্রান। বিভেদ বিভাজনের দেয়াল ভেদ করে এই সাম্যের বানী দেশের জনসাধারনের কাছে পৌছাতে ব্যর্থ তারা। বুর্জোয়া রাজনীতির ঘেরাটোপের বন্দীশালায় বাম রাজনীতি। অবশ্য বামপন্থী রাজনীতির মধ্যে বুর্জোয়াদের বাইরে থেকে দেশ প্রেমিকের ভুমিকায় লড়াইও করে যাচ্ছেন এমনও পার্টি রয়েছে। কিন্তু কেন লক্ষ্য তো একই তবুও কেন ঐক্যের শামিলে মিলিত হতে পারছে না। এসবের জন্য দায়ী কে বা কারা ? প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এক সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১১ দল। দেশের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে চেতনা নিয়ে গড়ে উঠেছিল বলয়। আবার গড়ে ওঠে ১৪ দল। আ’লীগকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আর বামপন্থীরা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন নিয়ে মাঠে সরব। বামপন্থীদের প্রধান শক্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয় প্রতিক্রিয়াশীলদের। বিশেষ করে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি। অনেক আগ থেকে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীও জানিয়ে আসছে। একটা পর্যায়ে তরুন প্রজন্মের বলয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে “শাহবাগ” আন্দোলন। বিপরীতে শাহবাগ আন্দোলন বিরোধীতে মাঠে নামে রাজনীতি সম্পর্কে সম্পূর্ন অজ্ঞ “হেফাজত ইসলাম”। হেফাজত ইসলাম চাউর ঘটায় আস্তিক নাস্তিকের প্রশ্ন নিয়ে। তারা নাস্তিক খেদাও আন্দোলনে মাঠে নামে। শাহবাগ আন্দোলনকে প্রকাশ করে ওটা নাস্তিকদের আন্দোলন। এক্ষেত্রে ধর্মকে ব্যবহার করে শাহবাগ আন্দোলন বিরোধীতে দেশব্যাপী হেফাজত ইসলাম মাঠ কাঁপিয়ে তুলে। শাহবাগ আন্দোলনকারীদের বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই গড়ে উঠে তরুন প্রজন্মের আন্দোলন। আস্তিক আর নাস্তিক অপবাদ দিয়ে মুসলমানদের মগজ ধোলাইয়ে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মত্ত হেফাজতে ইসলাম। কথা উঠে হেফাজত ইসলামকে ব্যবহার করে বিএনপি জামায়াত গেম নিতে চেয়েছিল। রাজনীতির নানা নাটকীয় ঘটনায় শাহবাগও থমকে গেছে। আর হেফাজতও চুপসে গেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বেশ তৎপর তারা তো কখনো মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত অধ্যায় রচনাকারীদের সাফাই গাইতে পারেন না। নাকি পারেন ? দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাম ঘরোনা কি কখনো সমর্থন জোগাতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন পাক বাহিনীর দোষর হয়ে কাজ করা কোন পরিবারকে। প্রানের মায়া বির্সজন দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া দেশের বীর সেনানীদের ওপর যে পরিবার হত্যাযজ্ঞের নীল নকশা একেছিল! যে পরিবার রাজাকার,আলবদর আর আল শামসদের প্রশিক্ষন দিয়েছিল কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের খতম করতে হয়। কিভাবে ধ্বংশলীলা চালাতে হয়। সেই রাজাকারের পরিবারকে সমর্থন দেয়াটা কি বাম রাজনীতির আদর্শ নাকি ভুল সিদ্ধান্ত। এরকম যদি কোন বিষয় বাম রাজনীতির বিষয়ে ঠাঁই পায় এটাকে কি বলা যেতে পারে ? দেশের কমিউনিজমের রাজনীতি কি অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছে ? নিজেদের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কি ফল বয়ে আনবে ? মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত পরিবারকে সমর্থন জুগানোর বিষয়টি এটা কি হঠকারী সিদ্ধান্তের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে না। অতীতে যেমন হঠকারী নানা সিদ্ধান্তে পস্থাতে হয়েছে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। যদি এমন হয় মুক্তিযুদ্ধে ওই পরিবারের বিতর্কিত কালো অধ্যায়ের বিষয়টি অজানা এটাও তাদের এক ধরনের অজ্ঞতার শামিল। আর যদি সমর্থন দেয়ার পরও বুঝতে কিংবা জানতে পারে দেশ মাতৃকার টানে স্বপ্নের বিজয়ে লক্ষে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া দামাল ছেলেদের দমনে সমর্থন জোগানো পরিবারের ভুমিকা ছিল বর্বরোচিত। তখন সমর্থন জোগানো বাম ঘরোনার পার্টি কি পদক্ষেপ নিবেন ? কি হতে পারে তাদের সিদ্ধান্ত ? সমর্থন বহাল থাকবে। নাকি অন্য কোন পন্থা। সেটা কি হতে পারে ? ভোটের ময়দান থেকে গুটিয়ে রেখে নিজেদের আখের গোছানোর কাজ করবে ! না রাজাকার পরিবারকে সমর্থনে অটুট থেকে ভোটের ময়দানে পা রাখবে ? সমর্থন জোগানোদের প্রশ্ন থাকতে পারে নিরব থাকলে তো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির ভীত মজবুত হবে তখন...। তবুও কথা আছে নিজের চরকায় তেল দিয়ে নিজেদের ভীত নিজেরা গড়তে ব্যর্থ কেন ? এ প্রশ্নের জবাব কি হতে পারে ?  পেটি বুর্জোদের কারনে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মন্তব্যও করেছেন সমর্থন জোগানো পার্টির সচেতন রাজনীতিকরা। তাহলে বাধা পেটি বুর্জোয়া ? পেটি বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে পার্টির কোন সিদ্ধান্ত হতে পারে না যেহেতু এদের কারনেই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। পেটি বুর্জোদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তির কি কোন বিধান নেই। যদি হয় তাদের নীতি আর্দশ পার্টির ম্যানুফেস্ট’র বাইরে।

লেখক :  (রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক)

Mail

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ