বাবুর ঢাকাশহর দেখা

জি.মাওলা ১১ অক্টোবর ২০১৩, শুক্রবার, ০১:০৮:৫৮পূর্বাহ্ন গল্প ৫ মন্তব্য

বাবুর ঢাকাশহর দেখা

পর্ব—এক

বাবু এবার ৫ম শ্রেণীর পিএসসি(PSCE—Primary School Complettion Exammination ) পরীক্ষা দেবে। ও গ্রামের একটা স্কুলে পড়াশুনা করে।গ্রীষ্মের ছুটিতে ওর মামা ওকে ঢাকাতে কাটাবার জন্য বলেছে। বাবুও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে গ্রীষ্মের ছুটির। ওহ ঢাকার চিড়িয়াখানা, সংসদ ভবন, জাতীয় যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাদ্দি উদ্যান, লালবাগের কেল্লা...............।। শাহবাগ চত্বর। ২১ শের আমতলা--- নজরুল ইসলামের কবর।
ওর সমাজ বই এ পড়া এই কয়টা জিনিস সম্পর্কে জেনেছে ও। আর এগুলি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে বাবু। মামাকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে এগুলি ওকে দেখাতেই হবে। মামা হাসিমুখে ওর সব কথায় রাজি হয়েছে।
স্কুলরে বন্ধুদের কাছে গল্প করে করে ওদের কাছে এ কদিনে বেশ ক্রেডিট ( ভাব) নিয়েছে ও। কেও কেও নতুন নতুন জায়গা দেখার জন্য বলেছে। একদিন আড্ডায় এক বন্ধু বলল বাবু শোন শেরে বাংলা স্টেডিয়াম টা দেখে আসিস বুজলি। আর ও খানে সাকিব এর দেখা পেলে আমার জন্য অটোগ্রাফ নিয়ে আসবি। ওর কাছ হতে একে বারে পাকা কথা আদায় করে নিয়েছে ওর ঐ বন্ধু। কেও বলেছে বাবু সাহাবাগ চত্বর টা দেখে আসবি কিন্তু। কেও বলে বাবু লালা বাগের কেল্লাতে যাবি কিন্তু।কেও বলে বাবু শাপলা চত্বর টা দেখে আসবি বুজলি। আর সব জায়গার ছবি তুলে আনবি আমরা দেখব কিন্তু। ও সকলের কাছে কথা দিয়েছে ছবি তুলে আনবে সব যায়গায়। সকলে খুব এক্সাইটেড হয়ে আলোচনা করে এই সব। সকলে কল্পনায় চলে যায় সেইসব যায়গায়।

পর্ব— দুই
আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। আজ বাবু ঢাকা যাবে। আগের দিন মামার সঙ্গে কথা বলেছে বার বার। রাতে ঘুমটাও ভাল হয়নি উত্তেজনায়। স্বপ্নে চলে গেছিল ঢাকার চিড়িয়াখানায়। জিরাফ, গণ্ডার দেখে আনন্দে লাফাচ্ছে ও। এমন সময় মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল বাবুর। ধড়মড় করে উঠে বসল। সকাল ৭ টায় বাস। হাত ঘড়িতে দেখল সকাল ৬ টা বাজে। ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে প্যান্ট পরে রেডি হয়ে গেল ও। মা ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে।
এমন সময় মামার ফোন আসল, মা মামার সঙ্গে কথা বলছে। ও ফোন চেয়ে কথা বলল।
হ্যালো মামা, কেমন আছ?
ভাল মামা। তুমি বাসে উঠে চলে আস কোন সমস্যা হবে না মামা। আমি বাস স্ট্যান্ডে থাকব কোন সমস্যা হবে না, বুজেছ মামা। একদম ভয় পাবেনা।
(মনে মনে ভাবল ও ভয় পাচ্ছে না, কেমন থ্রিল অনুভব করছে। তিন গোয়েন্দা পড়ে পড়ে ও জানে কখন কি ভাবে আচরণ করতে হবে। এ ছড়া জাফর ইকবালের “দস্যি কজন” ও পড়ে ফেলেছে। ওরা এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললে ও কেন ঢাকা একা একা যেতে পারবে না)
ওকে মামা, রাখি।
মা আবার মামার সঙ্গে কথা বলছে।

পর্ব—তিন
হানিফ ইন্টার প্রাইজ এর বাস। জানালার ধারে বসে সকালের প্রকৃতি দেখতে দেখতে চলছে বাবু। হুহু করে বাতাস এসে লাগছে মুখে।
মার কথা ভেবে বেশ খারাপ লাগছে ওর। মা ওকে বিদায় দেবার সময় ওকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলেছিল। ওরও কান্না আসতেছিল। অনেক কষ্টে চেপে গেছে চোখের পানি, এই ভেবে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই। মাকে ছেড়ে এই প্রথম কোথাও যাওয়া ওর।বাবা মট-সাইকেলে করে ওকে তুলে দিতে এসেছিল বাস স্ট্যান্ডে।
তার পর একগাদা উপদেশ বর্ষণ করেছে। শোন কেও কিছু দিলে খাবে না। কেও কিছু নিলে নিবে না। আর ঢাকায় রাস্তা পার হবে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে, আর হাঁটবে ফুটপাত দিয়ে।(ও সমাজ বইয়ে আর গোয়েন্দা বই ও জাফর ইকবালের বইগুলিতে এই গুলি আগেই পড়ে পড়ে হা-ফেজ হয়ে গেছে)
মামাকে কখন কাছ ছাড়া করবেনা। আর মামার মোবাইল ও আমার মোবাইল নম্বরটা মুখস্থ করেছ।
ও মাথা ঝাঁকিয়ে হা বলতেই বাবা বলল একবার বলত।
মামারটা ০১৭১৮৪৮১৬৫৮। তোমারটা ০১১৯০৯৬৩১০৮ ।
বাবা গুড বলে ওর মাথা নেড়ে দিয়েছে।
এই সব ভাবতে ভাবতে বাস মধইল বাজারে এসে পৌঁছেছে গেল। এখানে কিছু যাত্রী উঠল। আবার বাস চলা শুরু করল।
ও ভাবল ওর যাত্রা পথ এরকম---- সাপাহার >> নওগাঁ >> বগুড়া >> এলেঙ্গা >> সিরাজ গঞ্জ >> যমুনা সেতু >> ঢাকা।
ওহ যমুনা সেতু টা ভালভাবে দেখতে হবে ভেবে রাখল বাবু মনে মনে। যমুনা সেতু সম্পর্কে কি জানে ও, মনে করতে চেষ্টা করল।
যমুনা নদীর উপরে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু। ১৯৯৮ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ইহা যমুনা নাদীর পূর্ব তীরের ভূয়াপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করে। এইটি বিশ্বে ১৩তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৫ম দীর্ঘতম সেতু। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠিত করে। এইটি অত্র অঞ্চলের জনগণের জন্য বহুবিধ সুবিধা বয়ে আনে, বিশেষত অভ্যান্তরীন পন্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যবস্হা দ্রুত করে । বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার নামানুসারে এ সেতুর নামকরণ করে বঙ্গবন্ধু সেতু।
(ক্রমশ)https://www.facebook.com/golammaula.akas/posts/593015684099694

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ