বাবুর ঢাকাশহর দেখা —- দ্বিতীয় অংশ

জি.মাওলা ২৪ অক্টোবর ২০১৩, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৮:৫৮অপরাহ্ন গল্প ৭ মন্তব্য

প্রথম অংশ--- বাবুর ঢাকাশহর দেখা

http://www.sonelablog.com/archives/6671

বাবুর ঢাকাশহর দেখা ---- দ্বিতীয় অংশ

পর্ব —চার
নওগাঁ হানিফ কাউন্টারে বাস থামতেই বাবুর ঝিমুনিটা কেটে গেল। বেশ কিছুক্ষণ আগে বাথরুম চেপেছে, আর তা ভুলে থাকতে মনটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতেই ঝিমুনি চলে এসেছিল। তাড়াহুড়া করে বাস হতে নামল ও।
ফ্রেস হয়ে পাশের দোকান হতে এক প্যাকেট বাবুল গাম কিনল বাবু। মুখে দিলে বেশ রস থাকে। চাইলে মাঝে মাঝে ফুলিয়ে বিনোদনও নেওয়া যায় এই বিশেষ চুইঙ্গাম হতে।
বাসে উঠে ছিটের কাছে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম ওর।
ওমা! ওর ছিটে বসে একটি মেয়ে।
বাসের জানালা দিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে কেমন উদাস হয়ে।
এক নজরে দেখে যা মনে হল------
বয়স ওর মতই ( যদিও মেয়েদের বয়স অনুমান করা বেশ কঠিন)। দুধে আলতো গায়ের রং। ঢিলে ঢালা থ্রি পিস পরনে। দোপাট্টা বিশেষ কায়দায় গলায় পেঁচানো। সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেয়েটির সাপের মত লম্বা চুলের বেণি । মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ হাবলার মত তাকিয়ে থাকল বাবু।
মেয়েদের একটা ষষ্ঠ সেন্স থাকে, কেও ওদের দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকালে ওরা কেমন করে যেন বুজে ফেলে। ঐ মেয়েটিও কেমন যেন ঝট করে বাবুর দিকে তাকাল।
বাবু বেশ বিব্রত বোধ করল, মেয়েটির ঐরকম দৃষ্টির কাছে। কেমন যেন অপরাধ করে ফেলেছে ও। এমন যেন ঐ দৃষ্টির অভিযোগ।
অস্বস্তি ঝেড়ে বাবু বলে উঠল
EX-CUSE ME ঐটা আমার ছিট। দয়া করে এপারে আসবেন কি?
OF-COURSE , TAKE YOUR SIT.
মেয়েটি উঠে আসতেই, বাবু খেয়াল করল মেয়েটি ওর চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক লম্বা।
বাবু জানালার পাশে ওর ছিটে গিয়ে বসল। মেয়েটি এবার বসল পাশের ছিটে।
বাবু মনে মনে বেশ অস্বস্তি ফিল করল। এমন না যে ও মেয়েদের সঙ্গে মেশে না!
স্কুলে ওর ১০ -১২ জন ক্লাস মেট বান্ধবী। সবার সঙ্গে কথা বললেও ৩-৪ জনের সঙ্গে ওর বেশ খাতির । কিন্তু পাশের সহ যাত্রীটি অপরিচিত বলে কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। সহযাত্রীর সঙ্গে পরিচিত হতে ইচ্ছে থাকলেও মেয়েটির মূডী ভাব দেখে কেমন যেন সাহস করে উঠতে পাড়ছে না। সব ভুলে বাইরের প্রকৃতি দেখায় মন দিল বাবু। বাস ততক্ষণে শরের বাহিরে চলে এসেছে।
পাশে বসা মেয়েটি বাবলি। ওও চাচ্ছে পাশের সহযাত্রীর সঙ্গে পরিচিত হতে। আড় চোখে বেশ কয়েকবার তাকিয়েছে ছোড়াটার দিকে। কেমন উদাস হয়ে কবিদের মত বাইরে প্রকৃতির দিকে টাকিয়ে।
ও খুব ছটফটে মেয়ে। কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয় ওর পক্ষে। শেষ মেষ ওই আগে কথা বলবে বলে ঠিক করল বাবলি।
EX-CUSE ME আমি বাবলি।
বাবু চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকাল। মুখে ভদ্রটার একটুকরো হাঁসি হেঁসে ও বলল---- আমি বাবু।
ভিতরে ভিতরে বেশ ভয় পাচ্ছে বাবু, কে যানে কেমন হবে?
বাবলিরও একই অবস্থা, কে যানে কেমন হবে ছেলেটা? আর বয়স ওর মতই, আপনি না তুমি বলবে। প্রথম প্রশ্নটাই তাই আপনি বা তুমি কোনটাই বলে নি। শালা আচ্ছা ছেলেটাও!
উত্তরটাও দিয়েছে বেশ কৌশলে, আপনি বা তুমির ব্যাপারটা গেছে এড়িয়ে!
তাই এবারও কৌশলে আরেকটা প্রশ্ন পাড়ল বাবলি --- বাবু কি একা যাচ্ছে ?
হা একাই যাচ্ছে ও। মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তরটা দিল বাবু।
বাবুও বুঝতে পাড়ছে ব্যাপারটা। তাই কথা সহজ করার জন্য ও বলল--- আমরা মনে হয় সমবয়সী, তাই তুমি করে বলাটাই ভাল হবে। হেঁসে বাবলির দিকে তাকাল বাবু।
বাবলিও হেঁসে ফেলল বাবুর কথায়।
পরিবেশটা বেশ সহজ হয়ে উঠল ওদের দুজনের কাছেই।
তোমার সঙ্গে কে আছে বাবলি?
আমিও একা যাচ্ছি বাবু, দুষ্টুমি করে বলল বাবলি।
সত্যি বলছ! বেশ অবাক হয়ে বলল বাবু।
আরে না এমনি দুষ্টুমি করলাম।
ঐ পাশের ছিট দেখিয়ে বলল আমার মা-বাবা।
তাই বল!
কেন অবাক হওয়ার কি আছে। তুমি একা যেতে পারলে আমি একা যেতে পারতাম না?
বাবু কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। শেষে বলল কেন পারবে না, ১০০ বার পারবে। আসলে তোমার মত পিচ্চি একটা মেয়েদের একা বের হওয়া বা কোথাও একা যাওয়া ঠিক মানায় না। তো তাই।
কি আমি পিচ্চি! বেশ রাগ রাগ গলায় কথাটা বলল বাবলি। কেও ওকে পিচ্চি বললে ওর মাথা গরম হয়ে যায়। আর আরেক পিচ্চি ওকে বলছে পিচ্চি।
SORRY SORRY আসলে ঐ অর্থে তোমাকে কথাটা বলিনি। বাবু বাবলিকে ঠাণ্ডা করতে বলে উঠল।
কেও করুন গলায় SORRY বললে তার উপর রাগ করে থাকতে পারে না বাবলি। তাই বাবু কে বলল--- ওকে ঠিক আছে।
তা যাই হোক। তুমি কি ঢাকায় যাচ্ছ, না পথে কোথাও নেমে পড়বে বাবু?
এবার সরাসরি বাবলির দিকে তাকাল বাবু। চোখে চোখ পড়ে গেল দুজনের। বাবু কেমন লজ্জা পেল একটু।
বাবলিও কেমন অস্বস্তি বোধ করল বাবুর অনুসন্ধানী দৃষ্টি দেখে। ওর দৃষ্টি কেমন স্বচ্ছ, সুন্দর। আর কেমন যেন দুষ্টুমি ভরা পাঁজির পা একটা।
আরে না, ঢাকায় যাব।
বাবলি তোমরা কি ঢাকায় থাক?
হা ।
বাহ বাহ ভাল তো। ঢাকার একজন বন্ধু জুটে গেল। হেঁসে বলল বাবু।
বাবু একটা প্রশ্ন করি ? বাবলি বলে উঠল।
বাবু বিশেষ ভঙ্গিতে হাত উঠিয়ে বলল থাম থাম। বুজতে পারছি কি জানতে চাও আমি মনে হয় বুজতে পারছি। উত্তরটা আগে বলে নিই, দেখ মেলে কি না।
এবার আমি PSCE দিব।
OH MY GOD বুজলে কেমনে বাবু আমি এটাই প্রশ্ন করব?
বাবু একটু ফিচকে রহস্যময় হাঁসি হেঁসে একটু ভাব নেবার চেষ্টা করল। ভাবখানা যেন এমন ও প্রথম আলোর রাশি ফলের জ্যোতিষী প্রফেসর কাওসার আহমেদ।
বাবলি বেশ অবাক হয়েছে বাবুর উত্তর শুনে। ওকে এই প্রশ্ন করত যে--- ও কোন ক্লাসে পড়ে?
বাবলি ডান হাতটা বাবুর দিকে বাড়িয়ে, বলল--- CONGRATULATION বাবু। আমিও তো এবার PSCE দেব।
বাবলির বাড়ানো বন্ধুত্বের হাতটা ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল বাবু( আসলে একে বলে হ্যান্ড সেক)।
দুজনেই বার কয়েক ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিল হাত।
বাবুর মনের দ্বিধা কেটে গেছে। বেশ সহজ এবং আন্তরিক মনে হচ্ছে সহযাত্রীটিকে।
বাবলির একই অবস্থা। ভাল এবং খোলা মনের ছেলে বাবু।
ঢাকার কোন স্কুলে পড় তুমি বাবলি?
ভিকরুনুন স্কুলে।
ওহ তুমি তো ভাই বস পাবলিক। ঢাকার সবচেয়ে ভাল স্কুলে পড়।
বাবুর খোলা প্রশংসা শুনে একটু আরক্ত হল বাবলি।ও পাল্টা প্রশ্ন করল
তুমি জানলে কেমনে ওটা ঢাকার সেরা স্কুল?
ওমা! জানবোনা কেন ? প্রতিবারই তো পত্রিকাতে দেখি তোমাদের SSC / HSC রেজাল্টে, তোমাদের স্কুল ১ম বা ২য় হয়েছে।
তুমিও কি ঢাকাতে পড় বাবু? বাবলি বাবুকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল।
আরে নারে ভাই। আমি গ্রামের একটা প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। এই প্রথম তোমার ঢাকাতে যাচ্ছি বেড়াতে। আমার মামার আমন্ত্রণে। ঢাকা দেখতে যাচ্ছি।
বাবুর সহজ স্বীকারোক্তি বাবলির ভাল লাগল। ও বলল-----
প্রথম কথা ঢাকা-- একা আমার না, ঢাকা সবার। গোটা বাংলাদেশের মানুষের। দ্বিতীয় কথা—WELLCOME BABU. WELLCOME DHAKA.
THANKS BABLI. WELLCOME তো জানালে। এবার বল ঢাকার কি কি দেখার আছে।
খুব জটিল প্রশ্ন বাবু। একেক জনের চয়েস একেক রকম। একেক জন একেক বিষয়ে আগ্রহী। ফলে একেক জন ঢাকাতে একেক বিষয় দেখতে আসে বা আসলে একেক জন একেকটা জায়গা দেখে।
আমি তোমার চয়েস জানতে চাচ্ছি। তোমার চোখে ঢাকার কি কি দেখার বিষয় আছে।বাবু বলে উঠল।
ওকে, আমি মনে করি তুমি যেহেতু প্রথম ঢাকায় আসছ, সেহেতু প্রথম তোমার শুরু করা দরকার ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা দিয়ে। এর পর এস আধুনিক ঢাকাতে।
ঐতিহাসিক আর আধুনিক বলতে তুমি কি বোঝাতে চাঁচ্ছ বাবলি?

ঐতিহাসিক বলতে আমি.........
বাহাদুর শাহ পার্ক,
সিপাহী বিপ্লবের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ,
খাজা হাফিজুল্লাহ স্মৃতিস্তম্ভ,
বিনতি বিবির মসজিদ,
মুসা খান মসজিদ,
হাজী শাহাবাজ মসজিদ,
সাত গম্বুজ মসজিদ,
বেগম বাজার মসজিদ,
লালবাগ শাহী মসজিদ,
খান মহম্মদ মসজিদ,
তাঁরা মসজিদ,
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,
পরীবিবির সমাধি,
লালবাগের কেল্লা,
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার,
আহসান মঞ্জিল,
ঢাকেশ্বরী মন্দির,
জয় কালী মন্দির,
গুরু দুয়ার ণাণকশাহী,
নর্থ ব্রুক হল,
জিনজিরা প্রসাদ,
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার,
রোজ গার্ডেন,
মীর জুমলার কামান,
বলধা গার্ডেন,
কার্জন হল,
বড় কাটরা,
ছোট কাটরা,
বঙ্গভবন,
হোসেনী দালান,
বাংলা একাডেমী ভবন ।
আর তো মনে পড়ছে না। মনে হয় সব বলা হয়ে গেছে।
বাবলি বলছে আর বাবু একমনে তন্ময় হয়ে শুনছে ওর কথা।
বাবু বলল “ঢাকা গেইটের” নামটা ছেড়েছ।
ওহ হা! ইণ্ডীয়া গেইটেট মত এটা বিখ্যাত আমাদের এই “ঢাকা গেইট” ।
বাবু আর একটা আছে বলতে পার?
ঢাক তোরণের কথা বলছ কি?
ঠিক বলেছ।
ধন্যবাদ বাবু মনে করিয়ে দেবার জন্য। আর আমার মনে হয় তুমি আগে থেকেই এগুলির নাম জানতে।
সব গুলির না জানলেও কিছু কিছু যানতাম। তুমি একে বারে ফকফকে করে দিলা আমার দেখার লিস্টটা। এ জন্য ধন্যবাদ বাবলি।
এবার আধুনিক বিষয় গুলির একটা তালিকা দাওত।( ক্রমশ)
https://www.facebook.com/golammaula.akas/posts/600653320002597

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ