বাবানামা

অভি ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:১১:০৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি, গল্প, রম্য ১৭ মন্তব্য

১.

কত কিছুই না ভেবেছি, লিখেছি, নিজেকে পন্ডিত ভাবলে যা হয় আর কি! বাবা হবার আগেই বাবা হওয়া কেমন হবে এইটা ভাবা যে একটা মহা বোকামি তা পণ্ডিতকে কে বুঝাবে। লেখাগুলো কেমন হাস্যকর হয়ে গেছে, বাবা হতে কেমন লাগে সেটা লেখার মত দুঃসাহসও দেখাব না। মাথাভর্তি চুল, ছোট ছোট আঙ্গুল/ পা আর পুরো একটা মানুষ আমার এক হাতের সমান। সন্তানের মায়ের পাশে দাড়িয়ে একটা নতুন জীবনের শুরু দেখতে পারার আনন্দে আমি বোকার মত কেঁদে ফেলেছি। ছোট একটা জীবন বুকের উপর হুটোপুটি করবার যে বাধভাঙ্গা আনন্দ, তাকেই বাবানুভুতি বলে। এইটা কিভাবে জানি বেশ গুরু গম্ভির লেখা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল পুরাই উল্টো। আবেগ রে ভাই আবেগ। বাবানুভুতি বলে কথা।

প্রথম দিনটা পুরাই আবেগ, তারপর শুরু হয় বিপদ, বাচ্চা কান্দে ক্যা? ঘুমায় না ক্যা? হাগে না ক্যা? খায় না ক্যা? বেশি খায় ক্যা? কম খায় ক্যা? ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝরাতে হঠাত সাইরেন কই, কেন বাজে, এইটা আনুসন্ধান করতে খুব বেশি সময় লাগে না। সাইরেনের মানে হচ্ছে খাবে, তারপরই হাগবে, তারপরই ঘুমাবে (কোলে নিয়া হাঁটাহাঁটি করাও লাগতে পারে, কে জানতো ঘরের এ মাথা থেকে অন্যমাথায় যেতে কয় পা লাগে!) দুই তিন দিন প্রবল আগ্রহে, পুত্র সাইরেন বাজাইলেই মায়ের সাথে ঘুম দিয়া উইঠা এইটা ওইটা আগাইয়া দেই। হাগছে কিনা দেখি। তারপর ধিরে ধিরে গভির রাতে আগ্রহে একটু ভাটা পরল। পুত্রর মা সাইরেন শুনে যথারীতি ঘুম থেকে উঠে ছেলের উদরপূর্তি করল। আমি এক চোখ খুলে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গভির ঘুমের দিকে অগ্রসর হইলাম। ভাবলাম মাইলা কাটা গেলেও যাইতে পারে।

বউ খাবার শেষে ঘুমন্ত আমাকে ঠেলিয়া বলল তোমার পোলারে একটু শোয়াইয়া দাও, হুজুরের খানাপিনা শেষ। আমার বাবানুভুতি আবার তিব্র হয়ে উঠলো, আমি আধো ঘুমে অতি যত্ন করে পুত্রকে তুলতে গেলাম। আমার অতি যত্ন এমনই যত্নময় ছিল আমার হাত পুত্রর ঠ্যাং এর পাশ দিয়ে শুরশুর করে ন্যাপির মধ্যে ঢুকে গেল। আধোঘুম সঙ্গেসঙ্গে ছুটে গেল, হাতে নরম গরম সদ্য প্রস্তুত হাগু। ক্লান্ত মায়ের খুসি দেখবার জন্য পিচ্চি বাদে আর কেউ ছিল না, এইটাই কপাল আরকি।

যা শিখলামঃ আধঘুমে বাবানুভুতি একটু ইয়ের ব্যাপার!

 

বাবানামা - ২

ছোট্ট বাবা আমার বড় হয়ে যাচ্ছে। এই তো সেদিন এক হাতের মধ্যে পুরো মানুষটা ছিল, এখন আর এক হাতে ধরবার দুঃসাহস করা যায় না! হাতে পায়ে ভালো শক্তি জমা করেছে দিন রাত খাওয়া দাওয়া করে - আর হাগু মুতু - আর ঘুমানো - আর শান্তির বিন্দুমাত্র ব্যাঘাত ঘটলে মোক্ষম অস্ত্র তো আছেই পোয়া পোয়া পোয়া শব্দে বিকট সাইরেন। কাজ শেষে বাসায় আসলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়, হয়ত ভাবে "এই ভ্যাম্পায়ারটা কে? খালি রাত্রে রাত্রে আসে, আর ঘুমায়! আর আমারে একলা পাইলেই উম্মা উম্মা শব্দ করে কি জানি উদ্ভট এক কাজ করে আমার শান্তি বিঘ্ন ঘটায়!" সুযোগ পাইলেই সাইরেন বাজাতে একদমই দেরী করে না!

ন্যাপির মধ্যে নরম গরমের সন্ধান পাবার পর থেকেই ভাবছি, ন্যাপি কোম্পানির নামটা কে রাখছে "হাগি"? এমন নাম করনের সার্থকতা আমি আর জীবনে দেখি নাই! হাগির মধ্যে হাগি! এই হাগা অবস্য আমাদের বাংলা হাগা না। হাগ আসছে জড়াজড়ি থেকে, সবাই ছোট বাচ্চা চাপাচাপি টাইপের জড়াইয়া ধরতে চায়, কিন্তু হাতে দিলে চরম বান্দর লোকজনও কেমন যেন রোবট হয়ে যায়! একটু এদিক সেদিক নড়লে যদি করাত মরাত কইরা ভাইঙ্গা চুইরা যায় তাইলে তো গ্লু ত্লু দিয়া জোড়া দেবার কোনো সিস্টেম নাই। যাই হোক, হাগিরে আমার দেশী হাগা ভাবতেই ভালো লাগে। ঠিক যেমন চাইনিসরা দুঃখ পাইলে বলে, "তুই বুচি" (সরি), আমিও বলি কিন্তু মনে ধান্দা থাকে অন্য।  এখন থেকে আপনারাও ভদ্র হয়ে যান আমার মত। কথা নাই বাত্রা নাই বেপুক দুঃখিত হয়ে যান!

পিচ্চি দুনিয়াতে আসতে পারে নাই উপদেশের কোনো কমতি হয় নাই এখন পর্যন্ত। আমি আবার আছি মাল্টি নোডাল মাল্টি কালচারাল উপদেশের উপরে। আর্কিটেকচার ফাইনাল প্রজেক্টে কে কয়টা মাল্টি লাগলাম তার উপরে প্রজেক্টের ভার দেখা হতো। আমি পারলে ১০-১২ টা মাল্টি লাগাইয়া দেই! মাল্টি নোডাল,মাল্টি পারপাস, মাল্টি পাগল ব্লা ব্লা। এখন বুঝতেছি কত ধানে কত চাল! বাইরের বাতাস যেন না লাগে, পোলার গরম লাগে/ ঠান্ডা লাগে, বেশি আলো নাকি কম, কেউ বলে কাঁদলে কেন তুলি না, কেউ বলে তোলা যাবে না.... আমি এখন আছি, "তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিন চাই"! শুইনতাম না কারো কথা!

বিশ্বকাপের সময় পোলা পেটের মধ্যে যে কিকা কিকি করছে, আমি নিশ্চিত এই পোলা গোল দিবে কোনো সন্দেহ নাই। এখন যত গোল সব কম্বলের উপরে। দুই এক মিনিটের মধ্যে কম্বল এক দিকে আর পোলা আর একদিকে। তারপর লাগে ঠান্ডা, শুরু হয় সাইরেন "বদমাইস কম্বল খালি আর একদিকে যায়!" অনেকে বলছে চুসনি নাকি অনেক কাজের জিনিস। আমার পোলা মহাবান্দর সে দুইটা টান দিয়াই থুতু দিয়া ফেলে দেয় "এইসব দুই নম্বরি চৈলতো না!" সে এক অভিনব উপায়ে খায়, "খায়, একটু কান্দে (নিশ্চই আবেগে), আবার খায়, একটু বমি করে, একই সাথে চোখ মুখ শক্ত করে কুতুনি দিয়া হাগি তে হাগু করে! যে যুগের পোলা, একই সাথে আইফোন, আইপড, লেপটপ, ডেস্কটপ, টিভি সব চালাবে। নতুন খামচি দেয়া শিখে গেছে। শান্তি বিঘ্ন ঘটলে খামচি দিয়ে "তুই বুচি" বলে দিবে, সবাই খুসি!

 

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ