চতুর্থ পর্বের লিঙ্ক
পঞ্চম পর্ব
একাধিক লেখ্যরূপযুক্ত শব্দ এবং একটিমাত্র লেখ্যরূপযুক্ত শব্দ
একাধিক লেখ্যরূপযুক্ত শব্দের বানানে লেখার সময় ভুল হবার সম্ভাবনা নেই, যা আগেই বলেছি। যেমনঃ গাড়ী/গাড়ি/শাড়ি/শাড়ী ইত্যাদি। কিন্তু এমন কিছু বাংলাশব্দ আছে যাদের একাধিক লেখ্যরূপই নেই, তবুও দেখা যায় লেখকরাও তাকে ভুলবানানে লেখে। যেমনঃ রূপকে লেখেন রুপ বানানে, পড়া আর পরা এর মাঝেও ফারাক করতে পারেন না অনেকেই। পড়া দিয়ে বোঝায় যেকোনো মুভমেন্ট বা নড়াচড়া বা আন্দোলনকে যথা- বইপড়া, আমপড়া। আর পরা দ্বারা বোঝায় শরীরে কিছু পরিধান করা। এসব শব্দের দ্বৈত বানানরূপ না থাকলেও অবুঝশিশুদের মতোই ভুল করছেন আমাদের অনলাইন লেখকরা হরহামেশাই, যা লজ্জাজনক। ফলে লেখায় অর্থবিকৃতি ঘটে যাচ্ছে- সেদিকে লক্ষ্যই নেই তাদের।

সুতরাং যাদের বাংলাশব্দভাণ্ডার এতোই কম তাদের আগে বানান না শিখে, ডিকশনারি অনুসরণ না করে লেখালেখিতে আসা ঠিক নয় বলে আমি মনে করি। যেহেতু তারা ভাবেন একবিষয় আর বানানভুলের দরুণ লেখেন অন্যকিছু। দেখুন তাহলে- ”আমি তোমার কোন মত শুনতে চাই না” বলে আমি মতামত/অভিমত (Opinion) বিষয়ে বললাম, যা সঠিক। কিন্তু ৯০% লোককেই দেখি এর মানে করেন ''আমি তোমার 'মত' (মতো) আগাম কিছু বলতে চাইনা; মানে তারা তুলনা অর্থে বা অনুরূপ (Comparing) অর্থেই বুঝাতে লিখে থাকেন, যদিও বানানে লেখেন ওকারবিহীন ও হসন্তযুক্ত ”মত'বা মতামত শব্দটি, যার ফারাক আকশ-পাতাল।

ক্রিয়া আর অসমাপিকা ক্রিয়ার ফারাক
বাংলাভাষায় পাঁচটি পদের একটি হচ্ছে ”ক্রিয়াপদ” যাকে ইংরেজিতে বলে ভার্ব। কী আশ্চর্যের বিষয় যে, এ ক্রিয়াপদের ব্যবহারও অনেকেই জানেন না। অথচ তারা কঠিন ব্যাকরণের কবিতা লেখেন বা লিখে থাকেন। যেমনঃ ”অথচ কবিতা লেখেন” এ শুদ্ধ বাক্যকে তারা লেখেন এভাবে ‘‘অথচ কবিতা লিখেন” অর্থাৎ সাধু ও চলিত শব্দের ফারাক বোঝেন ('বুঝেন' নয়) না। বুঝে আর বোঝে এর আকাশ-পাতাল ফারাক না বুঝলে লেখালেখিতে আসার মানেই হয়না। এখানে বুঝিয়া (Understanding) অসমাপিকা ক্রিয়া’র চলিতরূপ হচ্ছে 'বুঝে' আর প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট টেন্স হছে-বোঝে বা বোঝা (Understand)।

কবিতা-ছড়ায় অন্ত্যমিল জোড়াতে একাজটি অনেকেই করেন। যেমন একজনের একটি কবিতার লাইন দেখুন-তুমি আছো আমার হৃদয়জুড়ে/তাই শুধু আমার অন্তর পুড়ে(পুড়িয়া, যা হবে পোড়ে)।

বহুবচনযুক্ত শব্দের পৃথকীকরণ এবং অর্থবিভ্রাট
বাংলায় টি/টা/খানা/খানি অব্যয়গুলো যেমন সুনির্দিষ্ট ও একক অর্থে ব্যবহার করতে বুঝায় তেমনই বিপরীতরূপে অনেক সংখ্যক বা বহু বুঝাতে গুলো/গুলি/রা/বৃন্দ/সমূহ/সব অব্যয়গুলো আমরা ব্যবহার করি। এসব অব্যয় উপযুক্ত শব্দের ডানপাশে স্পেসছাড়াই যুক্ত হবার নিয়ম থাকলেও অনেকেই অযৌক্তিকভাবে ভেঙ্গে আলাদা করে লিখে থাকেন, যা হাস্যকর দেখতেও। যেমন- কথা গুলি/মেহমান বৃন্দ/ পাখি সব/হিসেব সমূহ ইত্যাদি।

এবং/ও/আর এর ভুলব্যবহার
আমাদের অনেকেই জানেন না যে, এবং,ও অথবা আর অব্যয় কখন কোথায় লিখতে হয়? সবাই সাধারণতঃ এটাই জানে যে, এরা বাক্যের ভেতরেই থাকে; কিন্তু এতটুকু জানলেই কি চলে? এদের সঠিক ব্যবহার জানাও জরুরি সঠিক বাক্যগঠনের স্বার্থেই। বাক্যের ভেতরে জটিল বাক্যগঠনের সময় বা একাধিক বাক্যাংশকে যুক্ত করতেই ব্যবহৃত হয় এবং অব্যয়টি; যেমন-”তোমাকে সেখানে যেতে হবে এবং আমার কাজটি তোমাকেই করতেই হবে।” আবার, 'আর' অব্যয়টির ব্যবহারও কিন্তু সাধারণত এবং এর মতোই এটি মনে রাখা উচিৎ। যেমনঃ তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানেনা। যদিও কিছুক্ষেত্রে ভিন্নার্থেও আর এর কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমনঃ 'তোমাকে আরকিছু বলতে হবেনা।' তদ্রূপ ও অব্যয়টিও বাক্যের ভেতর থাকে কিন্তু এটি ব্যবহৃত হয় শুধু দু’টি শব্দকে পৃথক করতে। যেমন-আমি রুই, কাতল ও ইলিশ মাছ কিনতে চাই। (চলবে)

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ