বছরের প্রথম তুষারপাত দেখা !

রিমি রুম্মান ১৭ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ০৯:৩৭:০০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৬ মন্তব্য

এই শহরে আজ ভেজা সকাল। চারদিকে শুভ্র তুষার গলা শুরু হয়েছে।পথ-ঘাট ভেজা। সাথে ঝলমলে রোদ। অথচ গতকাল দিনভর তুষারপাত শেষে রাতভর বৃষ্টি হলো। ঝড়ো বাতাস বইলো। চললো ভোর অবধি। সকালে বাইরে খোলা আকাশের নিচে এসে দেখি বাড়ির সামনের চেরী গাছ হলদে পাতা সমেত ডাল ভেঙ্গে পড়ে আছে। মনটা বিষন্ন হলো। কেননা রোজ আসা যাওয়ার পথে এই গাছ গাছালি, সবুজ ঘাস মনকে সতেজ রাখে। একরাশ ভালো লাগায় ছেয়ে রাখে|

গতকাল ছিল বছরের প্রথম তুষারপাত। তাতে কী ! প্রতিদিনকার রুটিন জীবন তো আর থেমে থাকে না। তুষারের মাঝে বের হয়েছি। ছোট বাপজানের স্কুল ছুটির সময়। গ্যারাজে গিয়ে দেখি গাড়ির উপর এক ইঞ্চি পরিমান সাদা তুষার জমেছে ততক্ষণে। তীব্র বাতাস আর স্নো এর সাথে যুদ্ধ করে গাড়ি পরিস্কার করে ছুটলাম তাঁর স্কুলের দিকে।স্কুলের সামনে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষায় থাকবার কথা। কিন্তু এরই মাঝে দু’বার নেমে গাড়ির উপর জমে যাওয়া তুষার পরিস্কার করতে হয়েছে। খুব ধীরে সতর্কতার সাথে বাড়ি ফিরি। ছোটজনকে নামিয়ে দিয়ে ছুটি বড় বাপজানকে আনতে ট্রেন স্টেশনের দিকে। চারপাশ ঘোলাটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। শাদা তুষারে ঢাকা গাড়িগুলোর হেডলাইট জ্বলছিল। দেখে হঠাৎ মনে হবে একদল শাদা ভাল্লুক জ্বলজ্বলে চোখ মেলে সারি বেঁধে খুব ধীরে হেঁটে চলছে । রেড লাইটে থেমে আছি। স্কুল ফেরত শিশুরা বাবা কিংবা মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছে। বাড়ি ফিরছে। একজন বাবা তাঁর ছোট্ট মেয়েটিকে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল কাঁধে চড়িয়ে। আচমকা পা পিছলে পড়ে যায়। দেখে মনটা আচানক খারাপ হয়ে গেলো। ততোক্ষণে পিতা-কন্যা উঠে দাঁড়িয়েছে। সবুজ বাতি জ্বলে উঠেছে। আবার খুব ধীরে এগোই। সামনে, গন্তব্যে। ট্রেন স্টেশনের খুব নিকটে এসে থামি। অপেক্ষায় থাকি, আমার বাপজান যেন সাবওয়ে থেকে বেরিয়েই গাড়িতে এসে বসতে পারে। এরই মাঝে গাড়ি আবারো ঢেকে গিয়েছে সাদা তুষারে। বাইরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বাড়ি ফেরা কঠিন এবং বিপদজ্জনক হয়ে উঠেছে। আবারো বাইরে এসে চারপাশের কাঁচ পরিস্কার করছি। ঠান্ডায় হাত জমে অবশ হয়ে আসছিল। তবুও থেমে থাকার জো নেই। ছেলেকে নিয়ে নিরাপদে বাড়ি তো ফিরতে হবে। গাড়ি পরিস্কারের এক পর্যায়ে এবার নিজেই পা পিছলে পড়ে যাই। কেউ একজন ধরে উঠে দাঁড়াতে সহযোগীতা করছে আর বলছে, আর ইউ ওকে ম্যাম ? তাকিয়ে দেখি সে আর কেউ নয়,আমার আত্নজ| আমার বড় বাপজান, রিয়াসাত। আমরা মা ছেলে ফিরছি বাড়ির দিকে। পাঁচ মিনিট দুরত্বের পথ যেতে লেগে গেলো বিশ মিনিট। জীবনটাই এক যুদ্ধক্ষেত্র। বার বার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবো, উঠে দাঁড়াব। তবুও একে অপরকে আগলে রাখবো প্রগাঢ় ভালোবাসায়।

এই তো আমার বছরের প্রথম তুষারপাত দেখা !

রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্ৰ

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ