বগুড়ার দই ও মিষ্টি স্বাদে ও গুনে অতুলনীয় হওয়ায় দেশ ও বিদেশে সকলের কাছে অতি প্রিয়, বগুড়ার দই এর স্বাদ সকলের মুখে মুখে, এখন যেকোন অনুষ্ঠানাদিতে খাওয়ার শেষে বগুড়ার দই না হলে তৃপ্তি হয়না।
কথা শিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘রসগোল্লা’ গল্প থেকে জানা যায় আমাদের রসগোল্লা নিয়ে বিদেশের ইমিগ্রেশনে কি লঙ্কা কান্ডই না ঘটে ছিল, রসগোল্লা মুখে দিয়ে ইমিগ্রেশনের বড় বাবু আড়াই মিনিট নাকি মুখ বন্ধ করে রেখেছিল অভিভূত হয়ে। বঙ্গ দেশের
রসগোল্লার মত আমাদের বগুড়ার দই নিয়ে আছে অনেক মজার কান্ড।
পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই।
বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে, ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। তাকে কাচের পাত্রে তৈরি করা বিশেষ ধরনের দই খেতে দেওয়া হয়, লোভনীয় স্বাদের কারণে গভর্নর এন্ডারসন বগুড়ার দই ইংল্যান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
বগুড়ার দই এর স্বাদ পেতে এখন ভারত উঠে পড়ে লেগেছে, গত বছর জলপাইগুড়ি জেলার চেম্বার কর্মকর্তাদের মধ্যে বগুড়ার দই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়, ওই সময়ে সেখানে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলায় বগুড়ার দইয়ের কদর এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে বগুড়া থেকে ১০ মেট্রিক টন (প্রতিটি ৬শ’ গ্রাম ওজনের ১৭ হাজারেরও বেশি সরা) দই সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল, পরে অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যে এত দই পাঠানো যায়নি।
গত বছর ডিসেম্বরে জলপাইগুড়িতে অনুষ্ঠিত নর্থ বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনবিএনসিসিআই) আয়োজিত বাণিজ্যমেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ৫শ’ কেজি দই পাঠানো হয় বগুড়া থেকে আর যায় কোথায় দইয়ের স্বাদ পেয়ে সেখানকার লোক পিপড়ের মতো লাইন ধরে ভিড় করতে থাকে স্টলে, এত চাহিদা পূরণ করা যায়নি।
বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে।
উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন, প্রায় দেড়শ’ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু, পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।
বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে পৌছে যাওয়া বগুড়ার এবং বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।
যাএয়া এখনো বগুড়ার দই চেঁকে দেখেননি তাদের জীবনই বৃথা।
তথ্যসূত্রঃ গুগল।
ছবিঃ কালেক্টেড।
৩০টি মন্তব্য
মাসুদ চয়ন
ইতিহাস ঐতিহ্য সৃষ্টি হয় ফের নতুনত্ব আসে সময় পরিক্রমায়।কিছু কিছু ইতিহাস কখনোই বিলীন হয়না।ইহা তেমনই এক ইতিহাস।দই ঐতিহ্য বাঙালী জীবনের সাথে নিগুঢ়ভাবে জড়িয়ে থাকবে আরও বহুকাল।ভালো একটা লেখা উপহার দিলেন।
ইঞ্জা
মনের কথাটি বললেন ভাই, ধন্যবাদ।
সিকদার সাদ রহমান
ছোট বেলায় খেয়েছি। অনেক দিন খাওয়া হয় না! আছেন কোন দানবীর? একটু দই খাওয়াবেন?
ইঞ্জা
দই খাওয়ানোর জন্য দানবীরের দরকার লাগেনা, নিজেই কিনে খেয়ে নেওয়া যায়। 😜
মনির হোসেন মমি
বগুরার দই বিশ্ব জ্ঞাত এ ভাবে এ কথাগুলো আমি আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম।তবে দেশে বগুরার দই বিখ্যাত তা জানা ছিলো।
ইঞ্জা
দিকে দিকে একি শুনি?
বগুড়ার দইয়ের জয়ধ্বনি। 😋
মনির হোসেন মমি
এহনতো খাইতে মনচায়।কি করাম।বগুরার কোন উপকারী ব্রদার আছেননি।
ইঞ্জা
বগুড়ার দই খাওয়ার জন্য আজকাল বগুড়া যেতে হয় নাকি, অনলাইনে আজকাল পাওয়া যায় বগুড়ার আসল দই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা একটি ব্যতিক্রমী বিষয় নিয়ে পোষ্ট দেয়ার জন্য। বগুড়ার দই অনেক খেয়েছি তবে বিষদ তথ্য জানলাম আপনার পোস্টের মাধ্যমে। বগুড়ার সাদা দইও কিন্তু সেই টেস্ট দাদা।
শুভকামনা জানবেন।
ইঞ্জা
আমি খোদ নিজেই বগুড়াতে বসে এইসব খেয়েছি, এমন স্বাদ অন্য দইয়ে মিলেনা।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। 😊
নাজমুল হুদা
দই আমার অনেক প্রিয় ।কিন্তু ছবিগুলো দেখে বুঝতে পারছি দই কীভাবে সংরক্ষণ করে । আগে কোনোদিন দেখি নাই। আগে যখন অনেক দুধের গাভী ছিলো তখন ঘরেও খাইতাম।
সুন্দর পোস্ট
ইঞ্জা
এইভাবে দই বসায় শুধুমাত্র বগুড়াতে, ফলশ্রুতিতে বগুড়ার দই বিখ্যাত হয়েছে। ☺
শিরিন হক
এই লেখাটা পত্রিকায় ফিচার হিসেবে দিয়ে দেন। তথ্য ভরপুর। বগুড়ার দই খেয়েছি বাট ইতিহাস আজ জানলাম।একন কারো সাথে এবিষয়ে গল্প করতে পারবো আপনার লেখা পড়ে
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, পত্রিকাতে দেওয়ার জন্য ভালো কিছুই দেবো, এইসব ইনফরমেশন তো পত্রিকাতে হরদম পাওয়া যায়, দোয়া রাখবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার প্রিয় জিনিস দৈ !! লেখাটা দেখেই এত ভালো লেগেছে কমেন্ট সাথে সাথে না দিয়ে আগে আমার ফেইসবুক ওয়ালে আটকে দিয়েছি 😀😀
ভাইজান, প্রিয়তে নিলাম। এই পোস্ট এখন থেকে আমারও। 😊😊
ইঞ্জা
আপ্লুত হলাম আপু, আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুব খুশি হলাম আপু, ধন্যবাদ। 😊
জিসান শা ইকরাম
বগুড়ার দৈ নিয়ে এত হুলুস্থুল তা জানা ছিল না।
বগুড়া প্রথম গেলাম ২০১৭ সনে আপনার ভাবীকে নিয়ে, তখন প্রথম জানি বগুড়ার দৈ সম্পর্কে। ঢাকা ফেরার সময় কিনে নিলাম দশটি সরা।
এরপর ২০১৮ সনে যাই একা আমার ব্যবসার প্রয়োজনে, ফেরার সময় দৈ আনতে ভুলিনি।
দৈ বানানোর চুল্লী দেখে মুগ্ধ হলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্ট দেয়ার জন্য।
ইঞ্জা
আমিও প্রথম এই দই খায় ২০০৯ সনে, বগুড়াতে মার্কেটিং পারপাসে দুই রাত ছিলাম, তখনই এর স্বাদ পেয়েছিলাম, এমন দই তো দেশের আর কোথাও হয়না ভাইজান, দই তো নয় যেন ক্ষির খাচ্ছি। 😊
ছাইরাছ হেলাল
একই অঙ্গে এত রূপ
কেন ছিল লুকিয়ে, জাতি তা জানতে চায়।
সিরিজ হাতে রেখে একে একে দেখছি লেখার রঙ বাহার।
দৈ খোর আমি, দৈয়ের ছবি দেখলেও ভাল লাগে।
দৈ নিয়ে এত কাণ্ড তা কিন্তু এই প্রথম আপনার লেখার কাছেই জানলাম।
ইঞ্জা
রঙরুপ লুকিয়ে ছিলো কোথায় জানিনা কিন্তু ভাগ্যবলে ছবিগুলো অনলাইনে পেয়ে যায়, এতেই ভাবলাম ব্লগে দিই, সবাই জানুক।
দই খোর আমিও, এই দই বগুড়াতে প্রথম খেয়েছিলাম, আহা কি স্বাদ এর, ভুলাই যায়না।
বন্যা লিপি
দই আমার খুব খুব খুব প্রিয় খাবার। দই বানানো দেখেছিলাম একবার ২০১৪ তে আমার মেজো জা’য়ের বাবার বাড়িতে। বগুড়ার দই খেয়েছি কিনা মনে করতে পারছিনা। আমাদের অঞ্চলের গৌরনদীর দইও ভীষণ নাম করা।
এখন তো সত্য সত্য বগুড়ার দই খাইবার মুন চায়। এদিকে যা পাওয়া যায় তা কি আসল?
দারুন লোভ দেখানো, তথ্যবহুল পোস্ট দিলেন ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
আপু বগুড়ার দইয়ের স্বাদ কেমন জানেন?
যেন মালাইয়ের ক্ষির, এখন বুঝুন এ খেতে কেমন স্বাদ, এই দই এখন অনলাইনেও পাওয়া যায়, শুধু অর্ডার করুন আর ঘরে বসেই পান। 😊
ধন্যবাদ আপু। ☺
আরজু মুক্তা
বগুড়ার দৈ মানে জিভে জল।।সুন্দর একটা থিম নিয়ে আপনি যা জানালেন পাঠক একবার হলেও খেতে চাইবে!!
ইঞ্জা
খাওয়া উচিত আপু, এর স্বাদটাই যে অনন্য।
ধন্যবাদ আপু। 😊
শাহরিন
অনেক কিছু জানলাম ভাইয়া।বগুড়ার দই এর এতো ভক্ত আছে জানতাম না। সবাই এসব ইতিহাস অনেক তারাহুরো করে লিখে শেষ করে ফেলে কিন্তু আপনার লেখাটি ব্যাতিক্রম।
আমি বগুড়ার দই অনেক খেয়েছি 🙂
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অনিঃশেষ আপু,
ব্লগ এমন একটা জায়গা যেখানে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়, কারণ এর পাঠক বিশ্বব্যাপী।
ধন্যবাদ আবারও আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। 😊
জাহিদ হাসান শিশির
ছোটবেলা বেশ কয়েকবার খেয়েছি। সেই টেষ্ট !
ইঞ্জা
আমার তো ক্ষীরের মতো লাগে ভাই।
দেবজ্যোতি কাজল
বগুড়া না , বগুড়া শেরপুরের দৈ প্রসীদ্ধ
ইঞ্জা
সত্যি, আগে শুনি নাই, পেপার পত্রিকাতেও শুধু বলে বগুড়ার দই।
ধন্যবাদ আমাকে সঠিক জায়গাটি সম্পর্কে জানানোর জন্য।