সোনেলা ব্লগের জন্য লেখা-----
বৈশাখ সাজে সোনেলা--/অরুণিমা মন্ডল দাস
প্রবন্ধ
“পয়লা বৈশাখ” আমাদের দেশে যেমন পালিত হয় তেমন প্রবাসী বাঙালীরাও খুব আনন্দের সংগে পালন করে থাকেন। বাঙালীদের রক্তে যেন পয়লা বৈশাখের সাজ মিশে আছে।

পয়লা বৈশাখ কি? কেন?

বাংলা সনের প্রথম দিনকেই বা বৈশাখের প্রথম দিনকেই পয়লা বৈশাখ হিসেবে ধরি। ওইদিন আমরা নতুন বস্ত্র পরিধান করি। একে অপরকে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ছোটদের আদর বড়দের প্রনাম নিয়ে থাকি। নানারকম প্রথা, পূজার্চনা, গীতাপাঠ, কীর্তন প্রভৃতির মাধ্যমে বছরের প্রথম দিনে মাতি আর ভালো থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করি যাতে বছরের বাকি সময় গুলো, বাকি দিনগুলো খুব ভালোভাবে কাটাতে পারি।
চৈত্রের গরম দাবদাহে প্রকৃতি যখন সন্ত্রস্ত তখনই কঠোর ভাবে বৈশাখ মাসের প্রদর্পন ঘটে।  ঠিক কোন রক্তবর্ণা রাগী গৃহবধুর আগমন। কপালে লাল টিপ, হাতে শাঁখা,  পলা তাঁতের শাড়ি, কাজকর্মের আর ফাই ফরমাসের অবকাশে সে এক ধারালো তরবারি। মুখ লাল গরম আবহাওয়ায় সে এক অভিজ্ঞ সংসারী কূটনীতিবিদ।
থমথম রাগী প্রকৃতি। বিশাল রোদের তেজ। আম কাঠালের বন। বৈশাখের রোদের তেজে আম কাঁঠাল নরম হচ্ছে, পাঁকছে, মিষ্টি গন্ধের ছোঁয়ায় প্রকৃতি এক নতুন সাজে, বৈশাখী সাজ!!

মাঝে মধ্যে প্রবল গরম হাওয়া। বিকেলে ঠান্ডা হাওয়া সংগে রবীন্দ্রনাথের গান কিশোরকুমারের বিরহের পোড়ানো যন্ত্রণা; সবকিছু একাকার হয়ে মিশে যায়। কোকিলের মধুর ডাক, বিকেলে রান্না করা খিচুড়ি পায়েশ, মায়ের হাতের আশীর্বাদ, হাতে বোনা আলপনা । কালোজামের গাঢ় স্বাদে রসে ভরপুর হয়ে ওঠে, পুকুরের তাজা মাছের ঝোল, চাটনি, চিকেন, বাড়িতে আত্মীয়দের আনাগোনা, সর্বোপরি কবি হিসেবে বৈশাখের প্রথম দিনে নির্জনে বসে কবিতা লেখা। জীবনানন্দ, জয় গোস্বামী, তসলিমা নাসরিনের কবিতা পাঠ, প্রকৃতির মধ্যে এক অদ্ভুদ আনন্দের গোঙানি আমি অনুভব করি।

সোনেলাতে হলো অনেকদিন এসেছি। সবসময় এই ব্লগে আসতে পারিনা ঠিকই কিন্তু এই ব্লগের সব দাদা দিদি ভাই বোনদের আমার এক টন ভালোবাসা শ্রদ্ধা শুভেচ্ছা থাকল। দিদিদের দাদাদের অনুরোধ সবাই পয়লা বৈশাখের দিন সবাই নতুন পোশাকে একটা করে সেলফি পোষ্ট করবেন। খুব ভালো থাকুন, আনন্দে কাটান। আমি অন্তর থেকে সোনেলা ব্লগের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি। সোনেলার সবার জন্য এই কবিতাটি --

বৈশাখী আকাশ--

বৈশাখী তেজে লাল সিঁদুরে হাত রেখে
ইস্ত্রি দিয়ে মন পোড়াতে পোড়াতে আকাশটা কেমন উদাস কাকাতুয়ার ঝুঁটি
যে বঁটিতে ইলিশ মাছের আঁশ আদর করছিল
মিহিদানার থাপ্পড়ে কুপোকাত ফেসবুক ফ্রেন্ড
কাছে এসে সিলিংফ্যানটা চকোবার হয়ে গেল
কাটতে কাটতে চুলগুলো মিডিয়া হয়ে যাচ্ছে, সংগে নলেন গুড়ের পায়েসে প্রেম পাচ্ছি না।
কেমন বোকা বোকা সাজানো আলমারিটা সুখ চাইছে
কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে ষোড়সীর অক্সিজেন
তেত্রিশের নর্দমার ঘোলা কাঠালের রসে মন ডুবে আছে
চিকেনটাও পা ছাড়ছে না
কবিতা পাঠে যাই না তবু কানের দুদিকে রবীন্দ্রনাথ, কাদম্বরী যন্ত্রণা দেয়

একলা দুপুরের আলাপচারিতায় নির্জন ঝাউগাছ লজ্জায় মাথা নিচু
সুক্তো পাকাতে লেবুর হালকা হাওয়া
হাতের ধমনী শিরার অসহ্য চিৎকার
রক্ত চাইছে সবুজে মিশতে
ক্লোরোফিল শুষে জরায়ুর সুরাপান
একটু একটু করে দূরে যাচ্ছে চোখ কান মাথা
আবছা আকাশ রমনীর নিচু কালো চোখের জল
জলপ্রপাত হারিয়ে ফেলছে বরফের শান্তি
তবু
স্নানের পর ওবেঁচে থাকবে পয়লা বৈশাখের শেষ
পবিত্র ঝাল, কীর্তনের অবৈধ রাধামৃত কথা!

 

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ