আমাদের প্রকৃতি আমাদের সাথে অনেক আগে থেকেই বিরূপ আচরণ শুরু করেছে। ভূপৃষ্ঠ দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে, দুঃখজনক ভাবে বাতাসে সীসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন, কখনো অতি বৃষ্টি, কখনো বা অনাবৃষ্টি, কখনো খরায় ধূ ধূ সবুজ ঘাস হীন মাটের পর মাট খাঁ খাঁ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ধরণী। তপ্ত অসহনীয় তাপমাত্রা ভ্যাঁপসা গরম, তাপদাহ। কখনো বা শীত হীন শীতকাল। আবার কখনো বা শৈত্য প্রবাহ। দেশের একদিকে ঝড় ঝাপটা আরেকদিকে যেন মরুভুমির গরম। ষড় ঋতুর দেশ এখন বলতে গেলে  গরমকাল, বর্ষকাল আর শীতকালের তিন ঋতুতে পরিণত হয়েছে। আমাদের  দেশে প্রকৃতির এই বৈরী, বিরূপ আচরণ বা রুদ্র রূপ ধারণের কারণ কি ? কারণ আমরাই বিবেক বিবেচনা হীন, হিংস্র, আগ্রাসী ভূমি দস্যুদের নির্লজ্জ এবং অর্থ-লোলুপ কর্মকাণ্ড এবং যত্রতত্র আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলে পাহাড় পর্বত খাল বিল দখল করছে।

আমাদের দেশে বনের পর বন উজাড় করা হচ্ছে একশ্রেণীর লুটেরা অসাধু ব্যবসায়ী আর অসৎ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী মিলে। এক গাড়ীর পারমিট নিয়ে দশ গাড়ীর মাল লোপাট হচ্ছে অবৈধভাবে। ইটের ভাটায় জ্বলছে কাঠ, ধ্বংস হচ্ছে বন জংগল, পাহাড় কেটে কেউ বালুর ব্যবসা করছে কেউবা আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে। খাল, বিল, ডোবা, জলাশয়, পুকুর, দিঘী ভরাট করে আকশচুম্বি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। শহরে এখন পুকুর দেখা যায়না। দেখা যায়না যেখানে সেখানে বড় বড় গাছ গাছালী। ক্রমশ কমে আসছে খেলার মাঠ। ঘরের সামনে এখন আর দেখা যায়না উঠোন, স্কুল কলেজের সামনে নেই খেলার মাঠ। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পানি প্রবাহের কথা বিবেচনায় না রেখে যেখানে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ যা নদীর মৃত্যুর কারণ হচ্ছে। নদী খালে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়েও নদী মরে যাচ্ছে, যথাসময়ে নাদীর নাব্যতা ধরে রাখার জন্য খনন কাজের অভাবে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিভন্ন ধরণের কল কারখানার ধুঁয়া বাতাসকে কুলষিত করছে আর এগুলোর বর্জ্য নদীর পানিকে করে তুলছে বিষাক্ত। পলিথিন আর প্ল্যাস্টিক বর্জ্যের কারণে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। কারেন্ট জাল ব্যবহার, অবৈধভাবে বালু তোলা সহ, শ্যালো ইঞ্জিনের নৌকার জ্বালনী, কীট নাশক সার বিষ প্রয়োগের ফলে নদীর মাছ এবং জলজ বিভিন্ন প্রানীর মৃত্য হচ্ছে। এবং পাহাড় কমে যাওয়ায় প্রতিবেশ বা জীব বৈচিত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পরিবেশ, প্রতিবেশ জীব বৈচিত্র আমাদের অতি লোভের কারণে আজ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। মানুষের নিঃশ্বাসের সাথে ছেড়ে দেয়া কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণের সেই সবুজ গাছের পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে সবুজ গাছ গাছালী আর পাহাড় পর্বত যা আমাদের অক্সিজেনের জোগান দেয়। পাহাড় ধ্বংসের ফলে পশু পাখীর সংখ্যা, কীট পতঙ্গের  সংখ্যা কমে যাচ্ছে, সুন্দরবনেও কমে যাচ্ছে বাঘের সংখ্যা। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, বাতাস, আবহাওয়া, গাছপালা, পশুপাখি, কীট পতঙ্গ, নানান প্রজাতির মাছ সহ জলাচর প্রাণী, পাহাড়, পর্বত, নদী, খাল, ঝর্না, ছড়া, টিলা থকে শুরু চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্ররাজী সবই মিলে পরিবেশ এবং প্রতিবেশ। অতএব আমাদের বিবেকহীন আগ্রাসী মনোভাবের পরিবর্তন না হলে প্রকৃতি আমাদের উপর অনবরত প্রতিশোধ নিতেই থাকবে। স্বীকার করতেই হবে মানব সভ্যতা আর অগ্রযাত্রা আজ হুমকীর মুখে। আশা করি পরিবেশবাদী সংঘটন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা এবং জন সচেতনতাই সবচেয়ে বেশী পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিস্বাস।

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ