এক রক্তে লেখা পান্ডুলিপির গল্প বলি। যে পান্ডুলিপির কালি আমি পেয়েছি ৩০ লক্ষ শহীদের কাছ থেকে। সেই পান্ডুলিপির আর্ত্বনাদ এসেছে কয়েক লক্ষ ধর্ষিতার কন্ঠ থেকে। গল্পটি আপনাদের ভাল লাগবে খুব। গ্যারান্টি দিচ্ছি। এখানে আছে বারুদের গন্ধ, আছে ধ্বংসস্তুপ। আছে জানোয়ারের হা হা চিৎকারের ভয়াল হাসি। গল্পটি থেকে আপনারা সিনেমাও বানাতে পারবেন। কারণ গল্পে গান আছে অনেক। যে গানগুলো প্রযোজনা করেছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। গল্পে আছে ট্র্যাজিডি। কারণ গল্পে আপনি দেখবেন মা হারিয়েছে সন্তানকে। ভাই বোনকে, বোন ভাইকে। আছে বিরহ। প্রেমের সলিল সমাধী নির্মিত হয়েছে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার চিরদিনের ঘুমে। আছে টানটান উত্তেজনা। এই বুঝি চলে এলো সপ্ত নৌবহর। এই বুঝি ভারত দিচ্ছে আমাদের স্বীকৃতি।
বাংলা চলচ্চিত্রের গতানুগতিক চিত্রের মতোই এখানে পাবেন অসহায় নিরিহ ডাক্তার, শিক্ষক কিংবা শিল্পিদের উপর নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞের মতো দৃশ্য। আছে নায়কের বীরগাথা। একের পর এক ভিলেনের সাম্রাজ্য গুড়িয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আগেই বলেছি আমি আর্ত্বনাদ নিয়েছি ধর্ষিতার কন্ঠ থেকে। কাজেই ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে আপনি ধর্ষনের দৃশ্যটুকু কাটপিস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
এই পান্ডুলিপি লিখতে গিয়ে আমার হয়েছে মহা বিপদ। এত এত আইটেম! কিভাবে যে লিঙ্কআপ করি!
আপনি চাইলে এই পান্ডুলিপির একটু অংশ নিয়েই নির্মাণ করতে পারেন শর্টফিল্ম, টেলিফিল্ম, নাটক কিংবা মেগা সিরিয়াল। আর যদি আপনি আমার মতো অক্ষম হয়ে থাকেন, যার পকেটে পয়সা নেই, নেই চোখে স্বাভাবিক দৃষ্টি, তাই আছে হয়ত চশমা। তাহলে এখুনি একটা পান্ডুলিপি লিখতে বসে যান। তারপর পাঠিয়ে দিন পত্রিকা অফিসে। যদি সম্পাদকের দয়া হয়, তাহরে হয়ত ছাপর অক্ষরে দেখবেন আপনার নাম। কিছু পয়সাও হয়ত পাবেন। যা দিয়ে হয়ত মিটে যাবে আপনার কয়েক বেলার চাল-ডালের খরচ।
যাই হোক, যা বলছিলাম। এই পান্ডুলিপিতে আপনি পাবেন ধর্মের উৎকৃষ্ট ব্যবহার। যার দ্বারা আপনি লাইসেন্স পাবেন ধর্ষনের বৈধতার। আরো পাবেন অন্যের ঘরের আগুন দেয়া আর লুটপাটের ধর্মীয় স্বীকৃতি।
এই পান্ডুলিপিতে আছে দেশ প্রেম, আত্মত্যাগ। মহান আত্মত্যাগ। আছে রাজাকার নামক অদ্ভুত এক হিংস্র জানোয়ারের ভৌতিক কার্যকলাপ। আপনার জন্য আছে ভায়োলেন্স। দূর্বল চিত্তের মানুষ, অসুস্থ মানুষ আর শিশুদের একটু দূরে সরিয়ে রাখুন। কারণ কিছুক্ষণ পরপর আপনি পাবেন মানুষের মাংস ছিঁড়ে খাওয়া নিয়ে কুকুর আর শকুনের মারামারির দৃশ্য।
আর এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি পৌঁছে যাবেন পান্ডুলিপির একেবারে শেষ প্রান্তে। আর তখন হয়ত ভাববেন, দূর যা! এ আবার কেমন পান্ডুলিপি! আগা-গোড়া কোন সম্পর্ক নেই! হয়ত নিজেকে মনে মনে গাল দেবেন নির্বুদ্ধিতার জন্য সময় অপচয় হওয়ায়। আসলে হয়েছে কি! আমি নিজেই নিজেকে গাল দিচ্ছি এই পান্ডুলিপিটা লিখে সময় নষ্ট করায়। কারণ সুস্থ ইতিহাস না জানায় এই পান্ডুলিপিটা না হয়েছে কবিতা, না হয়েছে গল্প, না প্রবন্ধ, না একটা কিছু।
আসলে এটা কিছুই হয়নি। শুধুমাত্র আমার মতো একজন অক্ষম মানুষের দ্বারা আপনাদের মতো ক্ষমতাবানদের একটু সময় নষ্ট করার ক্ষমতা আছে কি-না সেটা যাচাই হলো।
বোধহয় আমার এটুকু ক্ষমতা আছে।
প্রেক্ষাপট:
২০০৪ সালে যখন আমি মুক্তিযুদ্ধ-রাজাকার-জঙ্গী-আওয়ামী রাজাকার ইত্যাদি নিয়ে কবিতা লেখা শুরু করি তখন কোন কুল-কিনারা পাচ্ছিলাম না যে কোথা থেকে শুরু করবো। মাথায় অসংখ্য প্লট ঘুরপাক খেলেও কোনটাতেই স্থির হচ্ছিল না। ঠিক সে সময় এই লেখাটি বেরিয়ে আসে এবং পরপর বেশ কিছু কবিতা বেরিয়ে আসে আত্মকথন হিসেবে। হঠাৎ একদিন মনে হলো এই যে আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত লেকচার মারি! কখনো যদি আমাকে নব্য তরুণ বা কিশোরদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় কোন অভিভাবক সমাবেশে আর যদি আমাকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেকচার দিতে আমি তাহলে কি বলবো!
তাই এখানে কিছুটা গদ্য কবিতা আর শেষে এসে দর্শকের সাথে ভাব বিনিময়।
২১টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
মনে হয় আমার মাথার নাটবল্টু সব ঢিলা হয়ে গেছে, নয়তো এটা কবিতা বিভাগে কীভাবে এলো কিছুতেই বুঝলাম না ভাই। এটা কি কবিতা ছিল! হেল্প প্লিজ..
বন্যা লিপি
এটা কবিতাই @সাবিনা। আমি এর মর্ম বুঝেছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
@বন্যা, জ্বী জ্বী, বুঝতে পেরেছি। ইহা একটি গদ্য-কবিতা
বন্যা লিপি
@সাবিনা- লেখাটা উচ্চারনের (আবৃত্তির) ঢংয়ে পড়েছি আমি। দুর্দান্ত লেখা। সেইই রকম দ্রোহের কবিতা।
তির্থক আহসান রুবেল
@সাবিনা ইয়াসমিন,
আমার এই স্টাইলটা কিছু কবিকে বিদ্রুপ করে সৃষ্টি করা। ২০০০ সালে একবার আমার একটি কবিতা পড়ে, কবিতা হিসেবে অস্বীকার করে কয়েকজন কবি। আমি মেনে নিলাম। সে সময় ছবির হাটে ঢাকার কিছু কবির আড্ডা হতো। আমি ছোট মানুষ একজনের আমন্ত্রণে সেখানে যাই। ঘটনার মাস কয়েক পর শয়তানী করে সেই একই কবিতা আমি চওড়া না রেখে লম্বালম্বি অর্থাৎ বাক্যগুলো ভেঙ্গে প্রিন্ট নিয়ে যাই। সেদিন তারা কবিতাটিকে আধুনিক গদ্য কবিতা বলে স্বীকার করে। আমি হেসে ফেললাম। এরপর থেকে আর কখনো কোন কবি আড্ডায় যাই নি এবং আমি গল্প/উপন্যাসের লাইনের মতো কবিতার একটা নিজস্ব ফরমেট চালু করি ….
সাবিনা ইয়াসমিন
কবিদের কাছেই কবিতা প্রমাণ করতে হয়! আসলেই কবিরা বিচিত্র মনের অধিকারী।
আপনার কবিতার লেখার এই স্টাইল প্রশংসার দাবী রাখে। ধন্যবাদ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য।
জিয়া আল-দীন
অসম্পূর্ণ রয়ে গেল যে! রাজাকার ক্ষমা পায়,মন্ত্রী মিনিস্টার হয়।গাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
মুক্তি যোদ্ধা ভিক্ষা করে।বীরাঙ্গনার জীবন চলে গ্রামের মানুষের চাল ডালের দাক্ষিণ্যে।ক্রিকেট খেলায় এখনো শ্লোগান — পাকিস্তান জিন্দাবাদ — মেরা পেয়ারে পাকিস্তান!
ধন্যবাদ আপনাকে ৭১ এর পটভূমি তুলে ধরার জন্য।
তির্থক আহসান রুবেল
@জিয়া আল-দীন, সবকিছুই আসছে একে একে। আশা রাখছি দেখে যাবেন লেখাগুলো
তির্থক আহসান রুবেল
@সাবিনা ইয়াসমিন, আসলে সে সময় সেখানে কবিরা নানান আড্ডার পাশাপাশি সেখানে বসে নিজেদের লেখা কবিতাগুলো পড়ে/আবৃত্তি করে/পাঠ করে শোনাতো। আমি নিতান্তই কলেজ ছাত্র তাই অতি উৎসাতে ফটোকপি নিয়ে সবার হাতে দিয়েছিলাম 🙂 তাই হয়ত তারাও বিভ্রমে পড়েছিল।
বন্যা লিপি
জোড়সে হাততালি ঠুকলাম কতক্ষণ 👏👏👏। পরে আসছি মন্তব্যে।
তির্থক আহসান রুবেল
টুপি খোলা স্যালুট
হালিমা আক্তার
এটা কবিতা না অকবিতা সেটা আমার বিষয় নয়। বিষয় বস্তু চমৎকার। আমার মনে হলো পান্ডুলিপির আত্মকথন। একটি পান্ডুলিপি অনেক কিছুর জন্ম দিতে পারে। সৃষ্টি ও করতে পারে। শুভ কামনা রইলো।
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ লেডি। ক্র্যাক জীবনের লেখালেখি ছিল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
পুরো ইতিহাস একই লেখায় এটা কষ্টকর। অসাধারণ থিম। শুভকামনা অশেষ।।
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ জনাবা
অনন্য অর্ণব
যাক অবশেষে এই বহুগুণে গুনাণ্বিত কবিতাটা পড়ার পর জানতে পারলাম ধর্ম ধর্ষণের লাইসেন্স দেয়,,,বৈধতা দেয় লুটতরাজ শেখায় আরো কতো কি…
এর মন্তব্যে আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে,
“আমার গেলো ছাল –
তাতে কার বাপের কোন বাল”
১৯৬৯-১৯৭১ এই সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে নির্মম নীপিড়ন করেছে তা নিতান্তই পাকিস্তানি জারজ গুলোর দায়ভার। পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষকে অমানুষ করে না।
তির্থক আহসান রুবেল
আপনার বাক্যের ভাবগত অর্থ বুঝতে আরেকটু পড়ালেখা করতে হবে। সেটুকু হলেই দেখবেন কি বলা হয়েছে, তার অর্থ কি ইত্যাদি সকল তাৎপর্য সহজেই বুঝতে পারছেন। আপাতত প্রাপ্ত মনস্ক সিরিজ বলতে যা বুজিয়েছি, তা বোঝার জন্য যে মানসিক বয়ষ প্রযোজন সেটা আসে নি আপনার। কাজেই বছর কয়েক পর আবারো পড়বেন। ততদিনে বুঝে যাবার মতো মস্তিস্কের বয়স চলে আসবে বলে আশা রাখছি।
অনন্য অর্ণব
আপনি অনেক জ্ঞানী। রিকশায় চড়ে গুলিস্তান যাচ্ছেন আর মনে মনে ভাব নিলেন বিজনেস ক্লাসের এয়ার টিকিট করে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হলো আপনার ভাবের বিমানটা কেবল আপনিই দেখবেন, বাকি দুনিয়া দেখবে আপনার থ্রি হুইলার প্লেনটা !
এই জন্যেই বলি এইসব মূর্খামি ছাড়েন, প্রথমত আপনি কবিতার ক্ষেত্রে এখনো একজন শিশু, দ্বিতীয়ত যা লিখেছেন তা সম্পূর্ণরূপে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী। সংযত চিন্তা করুন, পজিটিভ লিখুন, খিস্তি খেউর যেখানে সেখানে উগলে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে না জেনে তার ব্যাপারে যা তা ধারণা করা একজন শিক্ষিত মানুষের পরিচয় হতে পারে না।
তির্থক আহসান রুবেল
আপনার অজ্ঞতার দায় আমার নয় জনাব। আপনি দেশের প্রশ্নে যেখানে এক হতে পারছেন না, সেখানে আর কোন অপশন বাকি থাকে বিভেদকে প্রমোট করতে!
রিতু জাহান
আপনার গদ্য কবিতাটা পড়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে চলে গেছিলাম যেনো।
ওখানে আমার দাদাভাই আছেন, সত্যজিত রায় মজুমদার।
দাদাভাই সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন এই কাজটা করেই।
আপনার এ মহৎ কাজের জন্য আপনাকে স্যালুট।
ভালো থাকুন সব সময়।
তির্থক আহসান রুবেল
ধন্যবাদ। এক সময় আমার ছোটখাটো আর্কাইভ ছিল মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত। একটা একটা কাজে গিয়েছিলাম যাদুঘরে। একটা দূর্লভ ডকুমেন্টস ক্রসচেক করাতে। যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার সহযোগীতা করতে মানা করে দেয়।