নির্বাক প্রতিবাদ

মাছুম হাবিবী ১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ০৬:০৪:১৮অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১২ মন্তব্য

তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। বয়স একদম কম, ফুরফুরা মেজাজের মানুষ ছিলাম। প্রতিদিনের মত আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার পর পরই বাসায় আসলাম। ঘরে ঢুকতেই মা বললেন এখন ঘর থেকে যা তো, পরে আসিস তাড়াতাড়ি যা! মায়ের কথামত ঘর থেকে বের হয়ে যাই। ঘর থেকে বের হয়ে একটু দূর যেতেই একটি চিৎকার কান স্পর্শ করলো! মাগো ইশ, উফ,ছাড় আমারে এই জাতীয় চিৎকার ভেসে এলো কানে! আমি চিৎকার আর কাঁন্না শোনে দাঁড়িয়ে গেলাম। লক্ষ্য করলাম আমাদের বাড়ির পিছনে কেউ একজন কাঁন্না করছে। একটু দূর এগুতেই দেখতে পাই বড় আম গাছটার নিচে কিছু লোক একটা মেয়ে জোড় করে রেপ করছে!

অনেকটা অন্ধকার ছিল তাই কিছু দেখতে পাচ্ছিনা। শুধু মেয়েটির আর্তনাদ ভেসে আসছে কানে! আমি ঘরে গেলাম, মাকে বলি বাড়ির পিছে কে কাঁদতেছে? মা বলেন কেউ না যা তুই, পরে সব বলবো নে, এখন যা। মায়ের কথা শোনে আমি রেগে যাই। তারপর মাকে বলি কি হইছে বলো? মা মাথাটা নিচু করে বলেন আমাদের গ্রামের 'যে চোরাটা হে আর মদখোর দুই তিনটায় মিল্লা একটা মেয়েকে কই থাইক্যা ধইরা আনছে! এখন মেয়েটা কাঁদতেছে। মায়ের কথা শোনে বুঝার বাকী নেই ওখানে কি চলতেছে! আমি দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই, মা আমার পিছু পিছু এসে বলেন তুই কিছু বলিস না ওরা খারাপ লোক! যা বাবা রাস্তায় গিয়ে ঘুরে অায় ওরা গেলে আছিস।

আমি মায়ের কথা শোনে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। রাস্তা থেকে ঘুরে এসে আবার বাড়িতে অাসি। এসে দেখি তারা এখনো মেয়েটিকে রেপ করতেছে! সহ্য করতে পারতেছিনা মেয়েটির চিৎকার। আমার পৃথিবী যেন বনবন করে ঘুরছে। আমি অস্তির হয়ে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করছি! কিছু বলতে পারতেছিনা, করতেও পারতেছিনা। ওরা খারাপ কিছু বললে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে এই ভয়ে দাঁড়িয়ে অাছি। বাড়িতে আমি আর মা ছাড়া কেউ নাই! সবাই যার যার কাজে। এমনিতেই সন্ধ্যার পর আমাদের বাড়ির দিকে কেউ আসেনা। তাই খালি বাড়ি পেয়ে মেয়েটিকে জোড় করে ধরে আনছে!

মেয়েটির কাঁন্না সহ্য করতে না পেরে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বসে আছি। ইয়ারফোন লাগানোর পরও কাঁন্না আসছে! মেয়েটির কাঁন্না শোনে আমার দুচোখ ছলছল করছে! আমি রীতিমত কেঁদে ফেলছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। কার কাছে যাবে মেয়েটিকে বাঁচাতে। এসব দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে দৌঁড়ে বাজারে গেলাম। দুজন বড় ভাইকে বিষয়টা শেয়ার করলাম। উনাদের বলছি পুলিশকে খবর দিতে। একজন ভাই পুলিশকে ফোন দিচ্ছেন কিন্তুু পুলিশ ফোন তুলছে না। তারপর এলাকার মেম্বারের কাছে যাই। মেম্বার বিষয়টা আমলে নেয়নি। মেম্বার রসিকতার ছলে বলে 'দূর এটা খারাপ মেয়ে হয়তো! টাকা দিয়ে আনছে, তোমরা যাও এসব বিষয়ে কথা না বলাটাই ভালো।।

বড় দুঃখ নিয়ে ওখান থেকে চলে আসি। সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচে খারাপ মানুষটাই আমি! কিছু করার ক্ষমতা নাই। একজন অসহায় বোনকে রক্ষা করার ক্ষমতা নেই আমার। চোখ মুছতে মুছতে বাড়ির দিকে হাঁটছি আর মনে মনে বলছি 'মাবুদ এই কুকুরদের বিচার তুমি কইরো! আর ওরা মারা গেলে ওদের জানাজা তো দূরের কথা ওদের লাশও দুচোখে দেখবো না।

তার কিছুদিন পর শুনি তিনটা ধর্ষকের মধ্যে একটা সন্ত্রাসীর আঘাতে আহত হয়েছে কিন্তুু মরেনি। তবে কুকুরের মত কষ্ট পেয়েছে! অাল্লাহ্ ধীরে ধীরে বিচার করেন। তার প্রমাণটা পেয়েছিলাম সেদিন। তবে এখন তারা কুকুর থেকে বাদ, সবাই ঘৃণা করে আর অভিশাপ দেয়। এলাকার কেউ পছন্দ করেনা এসব অমানুষদের। আমার লাইফে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে এই ঘটনাটা মনে হলে আমি শিউরে উঠি! আমার মুখ কালো হয়ে যাই, একটা লজ্জা চলে আসে চোখে মুখে। তবে এখন যদি কেউ এসব করতে চায় তাহলে ডর ভয় উড়িয়ে সোজা থানায় যাব। পুলিশ এনে ধরিয়ে দিব। পুলিশ কিছু করতে না পারলে নিজেই ওদের বিচার করবো। এখন আর বসে থাকার সময় নেই, যা করার এখনই করতে হবে। যা বলার এখনই বলতে হবে।।

#ঘটনাটি_সত্য

0 Shares

১২টি মন্তব্য

  • বন্যা লিপি

    দশম শ্রেনী পড়ুয়া একজন কিশোরের মনে তখন থেকেই যে প্রতিবাদ করার মনোবল সঞ্চার হয়েছিলো।হয়েছিলো মানুষ রুপি জানোয়ারের স্বরুপ নিরুপন করার। নিরব প্রতিাদের মতো অভিশাপ ছাড়া দেবার করার কিছুই ছিলোনা। সময়ে এসে এখন উপলব্ধি গুলো প্রচন্ড আক্রোশে এখন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে মনের জোড় আরো প্রবল হলো।সাধুবাদ জানাই আপনাকে এমন পোষ্ট লেখার জন্য।সকলের এখন সময় হয়েছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এভাবে প্রতিবাদ করার।

  • জিসান শা ইকরাম

    ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করলেন ভাই,
    কি মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না।
    সন্ত্রাসী আর মাস্তানদের হাতে বন্দি আমরা, আমাদের সমাজ।
    দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া একজন ছাত্রের এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার শক্তি থাকার কথা নয়,
    তবে মেম্বার তো ব্যবস্থা নিতে পারতো, কত সহজ ভাবে বলে দিলো সে খারাপ মেয়েলোক! এরাই এই সব অপরাধের প্রশ্রয় দাতা। এদেরও বিচার হওয়া উচিৎ।

    এখন প্রতিবাদ এবং ব্যবস্থা নিতে হবে কঠোর ভাবে।
    শুভ কামনা আপনার জন্য।

    • মাছুম হাবিবী

      জ্বী দাদা অনেক চেষ্টার পরও বাঁচাতে পারিনি। কিছু অসাধু মানুষের জন্য আজ আমাদের এই অবস্থা। সেদিন যদি মেম্বার একটা কঠিন প্রদক্ষেপ নিতো তবেই মেয়েটিকে বাঁচাতে পারতাম। আফসোস অনেক চেষ্টার পরও কিছু করতে পারিনি। তবে এখন আর ছাড়বো না যেই হোক প্রতিবাদ চলবে। অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ লম্বা লেখাটা পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন দাদা

  • শামীম চৌধুরী

    আপনার গল্পটি পড়ে শরীরের লোম দাড়িয়ে গেল। সত্য ঘটনা প্রকাশ করলেন। কিন্তু আপনার মা ভুমিকা রাখতে পারতেন মেয়েটিকে ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে। আপনিও পারতেন। রাস্তায় ঘুরাঘুরি না করে কয়েকজন বন্ধু ও বাড়ির আশেপাশের লোকজন নিয়ে মেয়েটিকে রক্ষা করতে পারতেন। অথচ আপনি তা না করে নিজেকে অপরাধী ভাবছেন। আপনার মা’র কথায় বুঝলাম ওরা চোর ও অমানুষ প্রকৃতির। তারপরও অপরাধী সবচেয়ে দূর্বল। যদি সন্ত্রাসীদের ভয়ই পান তবে এমন ঘটনা ঘটেই যাবে।
    হ্যাাঁ আরেকটি কথা না বলে পারছি না। যে কোন গল্পের স্বার্থকতা ভাষা। আপনার লেখায় সাধু ও চলতি ভাষার মিশ্রন রয়েছে।পরবর্তীতে এদিকটা খেয়াল রাখবেন। নইলে লেখা যতই সুন্দর হোক না কেন ভাষাগত মানের জন্য পাঠক মুখ ফিরিয়ে নেবে। আশা করি আমার কথায় রাগ করবেন না। ক্ষমা করবেন সরাসরি বলার জন্য।

    • মাছুম হাবিবী

      অাসলে দাদা গ্রামের মহিলা এমনিতেই পুরুষ ভয় পায়। অার সারা গ্রামের মানুষ ওদের এড়িয়ে চলে ওরা খারাপ লোক। তারপরও সাহস করে কয়েকজনকে বিষয়টা জানাই কিন্তুু দুঃখের বিষয় কেউ অামার পাশে দাঁড়ায় নিই।এলাকার মেম্বার পর্যন্ত এগিয়ে অাসেনি। অার অনেক ধন্যবাদ অাপনাকে দাদা সুন্দর করে ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য। অাগামী থেকে চেষ্টা করবো এই বিষয়টা পরিহার করতেছে। অনেক ভালোবাসা দাদা ভাই। ভালো থাকবেন, শুভ দুপুর

  • শিরিন হক

    আমাদের সমাজের ঘটে যাওয়া হাজার চিত্র একটি কাহীনিতে ফুটিয়ে তুললেন।১০ শ্রেণীতে পড়া একটি বালক কেনো কিছু বখাটের কাছে একা ৩০ বছরের যুবক ও কিছু করে উঠতে পারবেনা। সমাজপতিদের এহেনো আচরণের জন্যই এসব খারাপ লোকেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ওদের মধ্যে কেউ হয়তো ওদের ই লোক। তবে বাজারের লোকদের সমেবেতো হয়ে এগিয়ে আশা উচিৎ ছিলো। পুলিশ আসতে যতো সময় নিতো তাতে অপরাধীরা পালিয়ে যেতো। সমাজের মানুষের মনে এখোনো সেই সাহস আসেনি দেখে লজ্জিত হই।
    সত্য ঘটনা শুনে শিউরে উঠলাম লেখা ভালো কি মন্দ সেই মন্তব্যের ভাষা নেই।

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    আল্লাহ একদিন পাপীদের বিচার করবেন ” এই ভাবনাটি অনেক প্রতিবাদ করা থেকে মানুষকে নিরস্ত রাখে। অথবা অত্যাচারীত ব্যক্তি/ নারীটি বিধর্মী থাকার কারনেও অনেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চায়না। এছাড়া আছে সমাজে সবল ও দুর্বল এর প্রভাব।

    একজন কিশোর থাকা অবস্থায় কতটুকু প্রতিবাদ করেছিলেন তা এখন আর ধর্তব্যের মাঝে পড়েনা। প্রতিবাদ / প্রতিরোধের জন্যে কোনো নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয়না। ইতিহাসের পাতায় পাতায় শিশু/ কিশোরদের অসংখ্য বীরত্বের নজির পাওয়া যায়।

    আপনি ঘটনাটি মনে রেখে নিরবে নিজেকে একজন সবল প্রতিরোধী হিসেবে গড়ে তুলে প্রমান করেছেন, আপনার ভেতর মনুষ্যত্ব পুরোটাই বিদ্যমান আছে।

    লেখার বানান আর ভাষা ব্যবহারে আরেকটু যত্নবান হতে হবে মাছুম। ভালো থাকুন, শুভ কামনা 💐💐

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ