নারীমুক্তি প্রথম পর্ব

জি.মাওলা ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শনিবার, ১২:০৭:৩৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩ মন্তব্য

“নারীমুক্তি” এই শিরোনামটাই যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিতে সক্ষম।

নারী কি কোন বন্ধনের নাম যে মুক্তির প্রশ্ন আসবে?
নারীত্ব কি কোন শৃঙ্খল?
নারীত্ব কি কোন কারাগার?
যে মুক্তির প্রশ্ন আসবে?

আমি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব না। কারণ আমার ধারনা আপনারা সবাই ব্যাপারটা অনুভব করতে পারেন। নারীরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন দ্বারা কেমন বঞ্চিত সে ব্যাপারে আলোচনা করা নি¯প্রয়োজন কারণ এটাও অনেকটা দিবালোকের মত সত্য ও স্পষ্ট। সেসব আলোচনা করাও বাহুল্য-তা কারণ আপনারা সবাই কমবেশি জানেন সবই।

আমি বরং মেয়েদের এই আধি-মুক্তির উপায় এবং স্বত্বা গত মুক্তির পথ নিয়ে আলোচনা করব। কারণ সবচেয়ে বেশী যা দরকার তা হচ্ছে নিজস্ব স্বত্বা অর্জন করা। নিজের মত করে দেখতে শেখা, ভাবতে শেখা। নিজের ভেতরের গ্লানি ও হিন্যমনতা দূর করা। আমারই মতে এর একটাই পথ আছে সেটা হল ভুলে যাওয়া যে “আমি নারী” কাজটা কঠিন নিঃসন্দেহে রীতিমত দুঃসাধ্য তবুও সম্ভব। আমার হাতে চুরির কাঁকন আমার পায়ে নূপুরের শৃঙ্খল, আমার গলায় ফুলের জানুয়াল, আমি কেমন করে ভুলে যাব যে আমি নারী। আর এই দেখুন মহাপুরুষরা নারী সম্পর্কে কে কি বলেছেন।
## শামূয়লে বাটলার বলেন “মহাপুরুষেরা নারী কি ভাবেন কখনই বলেন না”।
## ব্রুয়ে বলেন “নারীরা হচ্ছে চরমের প্রতিভূ তারা হয় পুরুষের চেয়ে উত্তম নয়ত অধম”। এভাবে যুগে যুগে নারী দেরে কে বিশেষ একটি শ্রেণীতে মহাপুরুষেরা পরিণত করেছেন। মহৎ কিছু সৃষ্টি করতে গেলেই স্বাভাবিক ভাবেই যে কোন মেয়ের মনে হতে পারে প্রসিলিস এর কথা।
## যিনি বলেছিলেন ‘‘নারীর প্রধান গৌরব হচ্ছে আলোচিত না হওয়া” অথবা
## গ্রেস বলেছিলেন “নারী স্বত্বার মূল কথা হচ্ছে এরা পুরুষের অধীনে থকবে বিনিময়ে পুরুষের দ্বারা প্রতিপালিত হবে”।

নেপোলিয়ন মুসোলিনি এবং হিটলার এই তিন মহাপুরুষ কে অন্যভাবে দেখলে, যারা আসলে কাপুরুষ ও নন- মনে করেন মেয়েরা শিক্ষায় অক্ষম। এটা তারা ভাবতেই পারেন, কারণ মেয়েরা অধম না হলে তারা উত্তম হকে কি করে? কিন্তু শোচনীয় ব্যাপার হল মেয়েদের সম্পর্কে যে কোন অবজ্ঞাপূর্ন কথাই মানুষ খুব সহজে বিশ্বাস করে থাকে।যেন এরা স্বতঃ:প্রমাণিত। উদাহরণ বাড়িয়ে কাজ নেই। আমরা এরিস্টটলকে স্মরণ করতে পারি। অনেক জ্ঞানের অধিকারী নিঃসন্দেহে কিন্তু অনেক ভুল জ্ঞানের ও অধিকারী তিনি। তাকে আমরা পর্যবেক্ষনবাদী বলি কিন্তু সত্য অর্থে তিনি তার স্ত্রীর মুখে কয়টা দাঁত তাও পর্যবেক্ষণ করেননি। বরং দম্ভ ভরে বলে বসেন মেয়ে-লোকের দাঁতের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় কম। শোচনীয় ও হাস্যকর ব্যাপার হল প্রায় সপ্তদশ শতক পর্যন্ত মানুষের এই বিশ্বাস ছিল। এই দীর্ঘ সময়ে কেউই তার স্ত্রী বা কন্যাদের দাঁত গুনেও দেখেননি। এমনই আমাদের আস্থা মেয়েদের ওপর।

আমদের রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলও ধোয়া তুলসীপাতা ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের মানস-সুন্দরী এবং উর্বশী কবিতায় অনেকটাই সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার মানস-সুন্দরীরা খুব ব্যক্তি-সম্পন্ন নয়। তার মানসীতে রয়েছে মেয়েদের সম্পর্কে চরম অপমানকর একটা
“কথা অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।”
আর নজরুলের নিজের বোধিয়ে বিরুদ্ধে এবং অসঙ্গতি। কখনও তিনি লিখে বসেন
“যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর”
আবার তিনিই লিখেন
“এরা দেবী এরা লোভী ইহাদের অতি লোভী মন”

এভাবে একটা মেয়ে যদি সারাক্ষণ মনে রাখে সে নারী সে হয়ত মানুষ নয় তবে সে কখনই অর্জন করতে পারবে না বৌদ্ধিক মুক্তি। সে ভাবতে পারবে না নিজের মত করে- তার থাকবে না কোন নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা জরুরী। (ক্রমশ)

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ