young beautiful woman smoking cigarette

 

আমাদের দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত তা নিয়েও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন পরিসংখ্যান।  তিন বছর আগে জাতিসংঘের এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। এর মধ্যে ৮৭ শতাংশ পুরুষ আর নারী ১৩ শতাংশ। মাদকাসক্ত নারীদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দেশে ৪০ লাখ মাদকাসক্তের মধ্যে ৪ লাখ নারী। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯১ শতাংশ কিশোর ও তরুণ, ৪৫ শতাংশ বেকার, ৬৫ শতাংশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং ১৫ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত।
আবার বাংলাদেশ মাদকবিরোধী সংস্থা (মানস)-এর এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ। এর মধ্যে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ১৬ শতাংশ। মানসের ওই পরিসংখ্যানে আরো উল্লেখ করা হয়, ৫ বছর পূর্বে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশ। এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২০ দশমিক ৬ শতাংশ। যে-কোনো বয়সি পুরুষ বা নারী যে-কোনো ধরনের মাদকই গ্রহণ করুক না কেন তার শারীরিক ও মানসিক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এর ব্যাপকতা আরো বেশি। তবে পরিসংখ্যান ভিন্ন হলেও এই সংখ্যা ৪০ থেকে ৭০ লাখ আর নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ১৩ থেকে ২০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু মাদক নয়, নারীদের মধ্যে তামাক সেবনের হারও বাড়ছে বলে জানা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছরে ঊর্ধ্বে ৪৩ শতাংশ মানুষ তামাকে (সিগারেট, বিড়ি, সাদা পাতা, জর্দা) আসক্ত। এর মধ্যে ২৯ শতাংশই নারী। । দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদশে নারী মাদকাসক্তদের কাছে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত মাদক বর্তমানে ইয়াবা। ফেন্সিডিলের সরবরাহ কিছুটা কমলেও মিয়ানমার থেকে অবাধে ইয়াবা এসে দেশে সয়লাব হয়ে গেছে। তাছাড়া আগের চেয়ে স্বল্পমূল্য এবং সহজলভ্য হওয়ায় মাদকাসক্তরা ইয়াবার দিকে ঝুঁকছে।  ইদানীং দেশের ধনীর সন্তানরা নতুন এবং ইয়াবার চেয়ে শক্তিশালী এবং মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক আইস এবং এল এস ডি’র দিকেও ঝুঁকছে।

উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলো আমাদের দেশের জন্য একটা অশনি বা অশুভ সংকেতের ইঙ্গিত বহন করে। আমাদের দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী,নারী-পুরুষের জীবনের জন্য যা একটা বিরাট হুমকি। আমাদের দেশে এখন ছেলেদের সাথে সাথে মেয়েরাও পাল্লা দিয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকছে । রাজধানীর নামি-দামী স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে তা বস্তি পর্যন্ত বিস্তৃত। সবচেয়ে আশংকা জনক হলেও সত্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সংখ্যাই বেশী। আমাদের দেশে অতি আধুনিকতার নামে ফ্রিস্টাইল জীবন-যাপন, দায়িত্বহীন পিতামাতা মেয়েদেরকে শাসনের মধ্যে না রেখে গড্ডালিকা প্রবাহে চলার সুযোগ করে দিচ্ছে। সমান অধিকারের নামে পুরুষদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বা নিজেদেরকে স্মার্ট প্রমাণ করতে গিয়েও অনেকে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক, মানবিক আর নৈতিক অবক্ষয়ের এ যুগে পারিবারিক কলহ বা অশান্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ, অসৎ সংগ, মুক্ত বা প্রগতিশীলতার নামে ধর্মীয় অনুশাসন বা রীতি-নীতি না মেনে চলাফেরায় উগ্রতা, ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা, অনেক সময় ছেলে বন্ধুদের ফাঁদে আটকা পড়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অনেক মেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরের তুলনায় নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নারী মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণী ও কিশোরী। এমনকি গৃহবধূ ও চাকরিজীবী নারীও আছেন এর মধ্যে। এসব নারীর অধিকাংশই ইয়াবা আসক্ত। এ ছাড়া গাঁজা, ফেনসিডিল ও ঘুমের ওষুধ খেয়েও নেশা করেন অনেকে। আবারো উচ্চবিত্ত অনেক নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা ফিগার ঠিক রাখতে নেশা করেন। এজন্য কোনভাবেই নারী স্বাধীনতা দায়ী নয় কেননা অনেক মেয়েই নিজের জ্ঞান বুদ্ধির জোরেই মাদক থেকে দূরে থাকে।

মাদকের স্বল্পমূল্য, সহজলভ্যতা, মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়, অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা বা নজরের অভাব, সন্তানদের প্রয়োজনের অধিক অর্থ প্রদান, শৈশবে মানসিক বিকাশের সমস্যা, ব্যাক্তিত্বের সংঘাত, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া বা প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় ফেল করা, আগ্রাসী এবং ভয়ংকর উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি, নীল ছবির দংশন, আধুনিকতার নামে অশ্লীলতা, এককথায় আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন সন্তানকে একজন মেয়েকে মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং মেয়েরা মাদক গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে যা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যা অভিভাবকদের জন্য, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য উদ্বেগের, উদ্বিগ্নের এবং শঙ্কিত হওয়ার ব্যাপার।

আসুন আমাদের সন্তানদের, ছেলে মেয়েদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখার জন্য জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে প্রতিরোধ এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাদকের উৎপত্তি, উৎপাদন, উৎসগুলো এবং এই অবৈধ ব্যবসার নির্মূল করতে হবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সমূহ ধারণা দিতে হবে এবং বিভিন্নভাবে মাদকবিরোধী প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে সাংঘঠনিক দক্ষতা, ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে দেশ সমাজ ও রাষ্ট্রকে। বিশেষজ্ঞদের মতে --ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্ব, চরিত্র, মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, আবেগ, অনুভূতি, চিন্তাধারা ইত্যাদি দূর করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা, কাউন্সিলিং এবং থেরাপি প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আসুন মরণ ব্যাধি মাদকাসক্তি বা মাদক মুক্ত একটি সুখী সুন্দর দেশ আর সমাজ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের ওপর অর্পিত নাগরিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হই। নব সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় দেশ সমাজ ও জাতি।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ