দেখা হয়নি উৎসবের আমেজ

রিমি রুম্মান ২৭ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১০:৩৮:১৮পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৬ মন্তব্য

এই শহরে আজ থ্যাংকস গিভিং ডে। এবার অন্যবারের মতো বন্ধুরা মিলে পার্টির আয়োজন নেই। এখানে আজ তুমুল বৃষ্টি নামার কথা ছিল। কিন্তু ঘুম ভেঙে রোজকার নিয়মে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি ঝলমলে রোদ। আকাশের দিকে তাকাই। নীল আকাশে ভেসে ভেসে মেঘেরা চলে যাচ্ছে অচিন কোনো দেশের পাণে।

নভেম্বরের শেষ সময়। হাড় কাঁপানো শীত থাকার কথা। অথচ এত চমৎকার আবহাওয়া! এমন দিনে ঘরে থাকা দায়। বেরিয়ে পড়ি শহর, শহরের মানুষ, উৎসবের আমেজ দেখতে। হলিডের কারণে অধিকাংশ দোকানপাট ও বড় বড় শপিং মল বন্ধ। তবু কেউ ঘরে বসে নেই।  মানুষজন হাঁটছে সড়কের দুইপাশের ফুটপাতের কিনার ঘেঁষে। জংশন ব্লুবার্ডে মোড় নিতেই চেনা রেস্তোরাঁ। আর্জেন্টিনার নীল-শাদা জার্সি পরা কিছু মানুষের জটলা। সাধারণত খেলা চলাকালীন সময়টাতে রেস্তোরাঁটি আকাশচুম্বী নীল-শাদা ব্যানারে সাজানো হয়। উচ্চ ভলিওমে মিউজিক বাজানো হয়। তখন হৈচৈ আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখে জার্সি পরা একদল মানুষ। কিন্তু আজ কোনো মিউজিক বাজেনি। উচ্ছ্বসিত হাসির আওয়াজ শোনা যায়নি। সুনসান নীরব, বিষণ্ণ। শোকে স্তব্ধ। আজও সেখানে নীল-শাদা ব্যানার বাতাসে দুলছে। ব্যতিক্রম দৃশ্য। থমকে দাঁড়াই। ব্যানারের গায়ে কালো হরফে লেখা- “মরে গেলে, আবারও আমি জন্ম নিতে চাই, একজন ফুটবলার হতে চাই। আবারও দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা হতে চাই। আমি একজন ফুটবলার যে মানুষকে আনন্দ দিয়েছে আর এটা আমার জন্য বেশির চাইতেও বেশি।” এইসব একদা বলেছিলেন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাদোনা। কী অসীম, অকৃত্রিম ভালোবাসা ফুটবলের প্রতি!

আমি সামনের দিকে হাঁটছি। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে দেখছি। আবারও। ব্যানারটি বাতাসে উড়ছে। আমার খুব করে মনে পড়ছিল আমার শহর চাঁদপুরের কথা। যেন মানস চক্ষে হাজী মহসিন রোডের পৈত্রিক বাড়িটি দেখছিলাম। যার ছাদে বাঁশের মাথায় পতপত করে উড়ছে নীল-শাদা পতাকা। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ খেলা চলছিল তখন। আব্বা ছাদে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগিয়েছিলেন। সেটি সুনীল আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে পতপত করে উড়ত। পাড়ার ছেলেপেলেরা কেউ কেউ খেলা দেখতে আসত আমাদের বাসায়। আমাদের সাদাকালো টেলিভিশনে। আমরা গভীর মনোযোগে দেখতাম ১০ নাম্বার জার্সি গায়ে ম্যারাদোনার মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো। সেই থেকে ফুটবল খেলা ভালোবাসতে শিখে যাই। স্কুলে ফুটবল টিমে খেলতাম। ইন্টারস্কুল ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতাম।

 

আমি জংশন ব্লুবার্ড ধরে কিছুদূর হেঁটে গিয়ে ফিরে আসি। রেস্তোরাঁর সামনের জার্সি পরিহিত মানুষ দেখি। বিষণ্ণ, স্তব্ধ মানুষ। বাতাসে দুলে উঠা নীল-শাদা ব্যানার দেখি। ব্যানারের লেখা পড়ি। সর্বকালের সেরা একজন দেশপ্রেমিক দেখি। আমার আর উৎসবের আমেজ দেখা হয়নি।

 

রিমি রুম্মান

নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ