আনিসুল হকের অভিনয় দেখেছেন?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন ডঃ মাহফুজুর রহমানের গান ও গায়কী নিয়ে বিবিধ আলোচনায় ব্যস্ত, তখনই ওপরের প্রশ্নটা শুনে ‘আমারও একটা প্রেমকাহিনি আছে’ নামের টেলিফিল্মটা দেখতে বসলাম। এই দেশের লেখকরা সচরাচর নাটক-সিনেমা লিখেন, বড়জোর পরিচালনা করেন, কিন্তু ক্যামেরার সামনে অভিনয়? সত্যি সত্যি ব্যতিক্রমী ব্যাপার।স্বীকার করছি, যে উজ্জ্বল সরলতা লেখক আনিসুল হকের মধ্যে আছে, লেখক চরিত্রে তা খুঁজে পাই নি। তবে, আমি আগ্রহ নিয়ে তার ‘আমার ও একটা প্রেমকাহিনি আছে’ উপন্যাসটা পড়েছিলাম।
এদিকে টেলিফিল্মের সঙ্গে বইয়ের প্রায়ই মিল থাকলেও অনেকখানিই নেই। এর কারণ, মাসুম শাহরীয়ার তার চিত্রনাট্য শুরু করেছেন কক্সবাজারে। আবার শেষের দিকে এসে দেখি, নায়ক-নায়িকার জন্য মিলনাত্মক সমাপ্তি তৈরি করা হয়েছে। সন্দেহ নেই, এতে গত বইমেলায় ষষ্ট মুদ্রণ বের হওয়া উপন্যাসের পাঠকরা বাংলাদেশের টিভি জগতের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কিছু ধারণা পেয়ে যেতে পারেন।
অবশ্য এইসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে যে চমৎকার কাজ হয় না, তা না। উদাহরণ হিসেবে আশফাক নিপুণের ‘আমি মোটিভেশনাল স্পিকার হতে চাই’ এর কথা বলতে পারি। অল্পকিছু চরিত্র নিয়ে খুবই গুছানো নির্মাণ। বর্তমান সময়ের সঙ্গে এই নাটকের বিষয়বস্তু খুবই যায়।
নির্মাতা হিসেবে আশফাক নিপুণের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো, তিনি সেফজোনে থাকেন, আর হিউমারের সঙ্গে গল্পটা বলে ফেলতে পারেন। এতে ঠোঁটের কোণায় ক্রমশ জমে আসা হাসিটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। এই ঈদে ‘অস্থির সময় স্বস্তির গল্প’ সিরিজের নাটকগুলো বেশ আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটির কথা বলি:
প্রথমটি ‘হোটেল আলবাট্রোস,’ নুহাশ হুমায়ূনের প্রথম নির্মাণ। অনেক টেলিফিল্মে যা পাওয়া যায় নি, এই নাটকে তা ছিল। ক্যামেরা ওয়ার্ক খুবই সুন্দর। আর, তারচেয়েও বেশি সুন্দর আসাদুজ্জামান নূরের মত একজন বাঘা অভিনেতাকে সামাল দিতে দেখাটা।
দ্বিতীয়টি ‘কথা হবে তো?,’ প্রজন্ম টকিজের সৈয়দ আহমেদ শাওকীর পরিচালনা। এই নাটকটা আহসান হাবীবের বিখ্যাত কবিতা ‘দোতলার ল্যান্ডিং মুখোমুখি দুজন’ অবলম্বনে হলেও এখানে মাহবুব আর শাহানা নেই। গল্প ছাড়াও এর অন্যতম দিক হল মনোজ কুমারের অভিনয়, সঙ্গে‘সারাদিন তোমায় ভেবে’ গানটার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। সত্যি বলতে এটা সহজেই কোমল তোলপাড় তুলে দেয়।
তৃতীয়টি ‘বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভালো’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইন, কিন্তু তানভীর আহসানের নির্মাণ। এটি সে-ই গল্প, যা আমাদের চোখের সামনেই আছে; তবুও আমরা দেখতে পাইনি (না-কি দেখাতে চাইনি?)।
এই নাটকে ইয়াসমিন চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা (বাংলাদেশের টিভি জগতে এখন অনেক তিশা, এই জন্য পুরো নাম লিখতে হলো ) যা করেছেন, সেটা অন্য কেউ পারতো বলে আমি বিশ্বাস করি না।
গত কয়েকবছর টিভি নাটকে জোর করে হাসানোর অপচেষ্টা হচ্ছিল। এখন অবশ্য অবস্থাটা বদলাচ্ছে। অনেকে কাঁদানোর নাটকের দিকে এগুচ্ছেন। টিভির চেয়েও অনলাইনে নাটক দেখার চল বাড়ছে। চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন বিরতিহীন নাটক প্রচারের অভ্যাস করছেন। আর এসবের ফাঁকে ‘অস্থির সময় স্বস্তির গল্প’ সিরিজটি সত্যি সত্যি চমৎকার সুবাতাস দিয়ে গেলো।
স্বস্তির গল্প শেষ, এবার অস্বস্তি দিয়ে শেষ করি।
মাহমুদ দিদার নির্মিত ‘স্বৈরাচার কিংবা প্রেমিকা’ নামের একটা বিমূর্ত টেলিফিল্ম দেখার সৌভাগ্য হয়েছে (বাংলাভিশনে ঈদের ষষ্ঠ দিন যখন এই টেলিফিল্ম চলছে, তখন একই সময়ে এনটিভিতে ‘আমারও একটা প্রেমকাহিনি আছে’ চলছিলো)। সৌভাগ্য বলার কারণ, ওখানে সৌন্দর্যের প্রতি হিংসা থেকে নায়ককে কবি জীবনানন্দ দাশের ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’ বলতে বলতে নায়িকার চুল কেটে দিতে দেখা যায়।
সমস্ত দ্বিধা সরিয়ে বলছি, এটা আগাগোড়া সাহসী কাজ জেনেও আমি টেলিফিল্মটা বুঝতে যাই নি। এর কারণ, টেলিফিল্মটা দেখার পর একজনকে বলতে দেখেছি, ‘এইরকম নাটক নব্বই ভাগ মানুষই বোঝে না, আর যে বোঝে সে হলো গাধা।’
সেপ্টেম্বর, ২০১৭
৭টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
-{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
মুল সমস্যা বিজ্ঞাপন।সু্ন্দর পোষ্ট -{@
শুন্য শুন্যালয়
হা হা নাটক বোঝাও দেখি বিপদের, গাঁধা টাইটেল পেতে হবে 🙂
এতোগুলোর নাম দিয়েছেন, একটাও দেখিনি। দেখে বলতে হবে। তবে আনিসুল হকের নাটক দেখার রিস্ক নেবো কিনা বুঝতে পারছিনা। 🙂
হোটেল আলবাট্রসের লিংক দিতে পারেন? ইউটিউবে খুঁজে পাইনি।
নাজমুস সাকিব রহমান
দেখুন। দেখার পরে সিদ্ধান্ত নিন।
আপাতত, আমার কাছে ভালো লাগেনি বলে এই না যে আপনার লাগবে না।
আর, নাটকগুলো ইউটিউবে পাবেন না।
bioscopelive.com এ খুঁজলে পেয়ে যাবেন। ওখানেই দেখতে হবে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
ধন্যবাদ সাকিব ভাই। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
দেখতে হবে নাটকগুলো।
ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার উপস্থাপন
দেখতে হবে নাটক গুলো