#ঢাকা ট্রিপ....
#ভাল থাকিস ঢাকা...

(এই লিখাটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা অবলম্বনে )

মা অসুস্থ থাকার কারণেই হঠাৎ করে খুবই অপ্রস্তুত ভাবে লন্ডন থেকে দেশে আসা |
আমার মায়ের চিকিৎসার জন্যই মূলত ঢাকা শহরে থাকা | গত সপ্তাহেও কয়েকদিন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ছিলাম | ৫দিন পর আবার চিকিৎসার জন্য আসতে হল |

#মহান আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করছি | মার্ অপরারেশন সাক্সেসফুলি আজ (9.08.2016) শেষ হয়েছে; হার্ডে একটি রিং লাগানো হয়েছে | খুবই টেনশনে ছিলাম, এযাত্রায় আল্লাহ্পাক টেসনমুক্ত করলেন |

টাকা একটু বেশি যায়,তবে আমাদের দেশে চিকিৎসার মান-আমি মনে করি অনেক ভাল | দেশেই এখন জটফট যেকোন বিষয়ে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় |

স্কয়ারে চিকিৎসা একটু ব্যয় বহুল কিন্তু ইন্টারনাল চিকিৎসা সেবা ভাল লেগেছে |এখানে ডাক্তার খুবই যত্ন নিয়ে রোগীদের দেখা শোনা করেন |যা আমি নিজে দেখেছি |

তবে স্টাফদের বিশেষ করে বিলিং সেকশনের কর্মচারীদের আচরণ খুবই অসুন্তুষ জনক |

নিরাপত্তার নাম সাধারণ মানুষকে খুবই হয়রানি করা হয় এখানে | নিরাপত্তাকর্মীরা সুন্দর ভাষায় দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলেন না | এটা সত্য যে, সারা দুনিয়াতে এখন জঙ্গিবাদ আশংখা রয়েছে ; তাই তারা একটু নিরাপত্তার নামে একটু অতিরিক্ত বাড়া -বারিও করছে | আমার সাথে তাদের নিরাপত্তা কর্মীরা খুবই খারাপ আচরণ করার পরেও, সরি শব্দটা বলেনি ; যা আমার কাছে মনে হয়েছে,বিব্রতকর |

# স্কয়ারে বিশেষ ভাল দিক গুলো হল, চিকিৎসক চেষ্টা করেন রোগীদের সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে |লিফট পর্যাপ্ত আছে -সিঁড়ি -চলন্ত সিঁড়ি পর্যাপ্ত-পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন ভিতরে দিক গুলি |

#ভীষণ মন খারাপ ছিল কয়েকটি দিন ,তার পরেও চেষ্টা করেছিলাম ভাল রাখার |
যেহেতু দেশে আমার ভাই-বোনরা কেউই নেই, তারা বিদেশ থেকে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন দিয়ে আম্মার অবস্থা জানতে চাচ্ছেন |মাঝে -মাঝে ফোন ধরছি, আবার মাঝে মাঝে ফোন ধরাও কোন পরিবেশ পাচ্ছি না |

#খুবই কঠিন কিছু বাস্তবতার মুখ-মুখী বলা চলে | ভীষণ ভাবে মিস করছিলাম নিজের মানুষ গুলোর উপস্থিতি | খুবই অস্বস্তিকর লাগছিল মাঝে-মাঝে |

#স্কয়ারের অপারেশন থিয়েটারে আমার মত অপেক্ষা করছিলেন,আরেক সিলেটি তরুণ ডাক্তার সাঈদ ও তার ভাই ফেরদৌস |তাদের সাথে,মূলত এখানেই পরিচয় | তারাও তাদের বাবার হার্ডের রিং লাগানোর জন্য আমার মত তীতের কাকের মত অপেক্ষায় ছিলেন | তাদের সঙ্গ ; আমাকে খানিকটা একাকী থেকে মুক্ত করেছিল |গত সপ্তাহে মার্ এনজিও-গ্রাম করার সময় আমার বন্ধু জয় সাথে ছিল, সে তার পেশাগত কাজে খুব ব্যস্ত থাকায় এ সপ্তাহে আমার সাথে ঢাকা আসেনি | শুধু আব্দুল ভাই আর আমি | দুজনই দুজনকে বিনোদন দিয়ে আনন্দে রাখার চেষ্টা করেছি |ভদ্র লোক কিছুক্ষন পর-পর আমাকে চা -কফি খাব কিনা,বলছেন ?

আব্দুল ভাই কে কেবিনে রেখে আমি -মার্ অপারেসন থিয়েটারেই পাশে অনেক্ষন ভীষণ মন খারাপ করে যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম ; তখনি ডাক্তার সাঈদের সাথে পরিচয় হয় |তার কাছ থেকে খুবই ভাল কিছু ধারণা পেয়েছি দেশের হার্ডের চিকিৎসা নিয়ে |উনার ভাই ফেরদৌস সাহেব, ভদ্র লোক ঢাকায় থাকেন | গার্মেন্সের ব্যবসার সাথে জড়িত |তিনি বলেন, H&M এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি তিনি |

লন্ডনে এই ব্যান্ডের কাপড় ইংল্যান্ডের প্রায় সব শহরেই আছে | কাজেই কিছুটা আগ্রহ ছিল -বাংলাদেশ থেকে এগুলো কিভাবে প্রক্রিয়া যাত করা হয়,কারা এগুলোর মালিক,কিভাবে এই কাপড় গুলো সংগ্রহ করা হয়,এই বিশাল অবসর সময়ে এই সব নিয়ে কথা হচ্ছিল উনার সাথে |উনি একবার ইংল্যান্ডের ইয়র্ক শহরে ঘুরতেও গিয়েছিলেন |বিলেত ঘুরার কিছু অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করলেন, আমার সাথে |সুযোগ পেলে আমিও ঘুরে ঘুরি করি বিলেতের প্রায় কম বেশ সব শহরেই আমি ঘুরেছি |

ইংল্যান্ডের Asda,Tesco,Sainsbury, Zara,Primark সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাপড়গুলো মূলত: আসে বাংলাদেশ থেকে | উনি আমাকে এবিষয়ে ভাল একটা ধারণা দিলেন, করা কিভাবে অর্ডার আনে-কিভাবে বিক্রি হয় ব্লা-ব্লা ...

#যেহেতু ঢাকায় ছিলাম সর্ব-সাকুল্যে প্রায় ১৫দিনের মত তাই ঢাকা আমাদের রাজধানী খ্যাত এই শহর নিয়ে কিছু বলতে চাই -একদিন আমি আর আব্দুল ভাই সিদ্বান্ত নিলাম, হেটে হেটে আমরা হাসপাতাল থেকে ব্যাংকে যাব | প্রায় ৩০ মিনিট হেটে দেশের রাজধানী খ্যাত শহরটির কিছু অংশের চিত্ৰ স্মার্ট ফোন দিয়ে ভিডিও করেছি | সময় করে পোস্ট করব |

আমার দৃষ্টিতে মুটেই বসবাসের উপযোগী কোন শহর নয় ঢাকা, ঢাকার চেয়ে কয়েক হাজার গুন্ ভাল পরিবেশ আমার শহর সিলেটের | বিশেষ করে খুবই অস্বাস্থকর খাবার -দাবার -কোন কারণে বাহিরে গেলে জ্যাম -ধুলাবালি তো আছেই | ফুটপাতে একদিকে পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে, হকারদের অন্যদিকে আবার এসে বসে পড়ছে হকাররা ||

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুন্ বেশি মানুষের এই শহরে যারা বেশি দিন থাকবে, তাদের গড় আয়ুও কমে যাবে | আমার ধারণা ছিল কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে ঢাকা | বেসিক্যালি খুব বেশি মানুষের কারণে এই শহরকে উন্নত বিশ্বের কোন শহরের ন্যায় কোন দিনও তৈরী করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না |

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী। আধুনিক ঢাকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান কেন্দ্র।

এক সময় ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা -তার পর দিল্লি -এখন নতুন দিল্লি, পাকিস্তানের এক সময় ছিল করাচি-এখন ইসলামাবাদ, সময় আর বাস্তবতায় এগুলো পরিবর্তন
হতেই পারে | বাংলাদেশের রাজধানী চট্রগ্রাম কিংবা রাজশাহী কিংবা সিলেটে নিয়ে গেলে মনে হয় মানুষের ভিড় একটু হলে কমবে |

সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরানো ঢাকা মুঘল সাম্রাজ্যের সুবহে বাংলা (বাংলা প্রদেশ) এর প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে এই শহর জাহাঙ্গীর নগর নামে পরিচিত ছিলো।

আধুনিক ঢাকা শহরের বিকাশ ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসন আমলে, এই সময় নবাবগণ ঢাকা শাসন করতেন।

এই সময় কলকাতার পরেই ঢাকা বাংলা প্রেসিডেন্সিরদ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হয়ে ওঠে।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পরে ঢাকা নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসামপ্রদেশের রাজধানী হয়।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়।

১৯৫০-৬০ সালের মধ্যে এই শহর বিভিন্ন সামাজিক, জাতীয়তাবাদী ও গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

১৯৭১ সালে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী ঘোষিত হয়। ইতিপূর্বে সামরিক আইন বলবৎ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, সামরিক দমন, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তাণ্ডবলীলার মতো একাধিক অস্থির ঘটনার সাক্ষী হয় এই শহর।

আমার গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি -যেভাবেই হোক এই শহর থেকে মানুষ কমাতে হবে; যেখানেই যান দেখবেন পিপিলিকার মত মানুষ আর মানুষ | শুধু সিলেট ছাড়া মনে হয় সারা দেশের মানুষ এখানে থাকতে -জীবন যাপন করতে চান |

সিলেটিরা খুবই প্রয়োজন না হলে এই ধুলাবালির শহরে বসবাস করতে চায় না | #যবনিকার শুধু এটাই বলব --

#ভাল থাকিস ঢাকা !!

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ