ঘটনাটি যখন ঘটে তখন রাত এগারোটা অতিক্রম করে ছিলো।জুন মাস ২০০৯ইংরেজি সাল।তার আগে টানা তিন/চারদিন অবিরাম বৃষ্টি হয়েছিলো।জলাবদ্ধতার কারনে চারদিকেই থৈথৈ টলমলে পানি জমেছে।রাস্তা,উঠোন,ঘর কোনো জায়গা আর বাকি নেই।আমাদের বাড়িটা একটি ছোটো রাস্তার ধারে।ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে প্রায় সারাদিন জানালার পাশে বসে বসে গৃহবন্দী হয়ে নানা রকম মানুষের চলাফেরা দেখতাম।এছাড়া আর বিশেষ কিছু করার ছিলো না।সিড়ির অর্ধেকটাই পানিতে ডুবে ছিলো।গ্যাস,বিদ্যুৎ এর সংযোগ বন্ধ করে রাখা ছিলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে।বিদ্যুতের আলো না থাকায় হ্যারিকেন আর মোমবাতির আলো-আধারী পরিবেশ,চারদিক চুপচাপ নিরবতা,,এর মাঝে হঠাৎ হঠাৎ অন্ধকারে মানুষের চলাচল,তাদের পানিতে প্রতিধ্বনিত হওয়া কথা গুলো শুনে কেমন একটু ভয় ভয় অনুভুতি হতো।
সেদিন সকালে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।সন্ধযায় ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলে উঠলো।ভয়টা দূর হয়ে গেলো।পানির উপরে রাস্তার বাতির আলোর প্রতিফলন দেখত খুব সুন্দর লাগছিলো।বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম।বাচ্চাদের বাবা বাইরে গিয়েছিল,পানি কতটা কমেছে,বাড়ির সদর দরজায় তালা দেয়া হয়েছে কিনা ইত্যাদি দেখতে।কিছুক্ষন পর হঠাৎ করে তিনি ঘরে এসে বললেন, তাড়াতাড়ি চলো এক্ষুনি নানার বাসায় যেতে হবে।তিনি মারা গেছেন।আমি দ্রুত তৈরি হয়ে নিলাম।আমার নানার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে হাটা পথে দশ মিনিটের পথ।রাত বেশি ছিলো।আমি বাচ্চাদের জাগালাম না।পাশের রুমে গিয়ে ভাবীকে বললাম ওদের একটু দেখবেন।আমি যাচ্ছি।গিয়ে দেখি,সেখানে প্রচুর লোকজন এসেছেন নানাকে শেষবারের মতো একবার দেখতে।আত্মীয়-স্বজন,প্রতিবেশী ও নানার সংগী সাথিরা সবাই।কেউ বসে আছেন, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন।রাস্তা ঘাটে তখনো প্রায় হাটুপানি।রাত ক্রমশ বাড়ছিলো।উপস্থিত সকলে মিলে ঠিক করলেন ফজরের নামাজের পর জানাজা নামাজ হবে এবং তার পর দাফন সম্পন্ন করা হবে।বাড়িতে অনেক মানুষ ছিলেন।আমি ঠিক করলাম বাড়ি চলে যাবো আর মেয়েদের নিয়ে পরে আসবো।তাছাড়া আমি না গেলে ভাবীও বসে থাকবেন।
আসার সময় একা আসতে ইচ্ছে করছিলো না।কার সাথে আসবো ভাবছি।উঠোনে অনেক লোকের ভীড় ছিলো।তার মধ্যে আমার ছোট ভাইকে পেলাম।ওকে বললাম আমার সাথে চলো বাড়ি যাবো।ও কোনো কথা না বলে সাথে এলো।হাটু পানিতে হেটে চলেছি দুই ভাইবোন।চারপাশে কোনো সাড়া শব্দ নেই।দোকানপাট বন্ধ।আমি সামনে ভাই একটু পিছনে।আমি যাই বলছি ও শুধু হু-হা করছে।ও বরাবরই ভাইটা আমার থেকে একটু পিছনে হাটে।আর কথা কম বলে।যাইহোক,,বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছে ওকে বললাম এবার তুমি যাও,আমি ঘরে যেতে পারবো।আরো কিছু বলতে চাইছিলাম,পিছু ফিরে দেখি কেউ নেই!!চারদিক ফাকা, নিস্তব্ধ,শুধু পানির উপর দিয়ে চলাচলের ক্ষীণ একটি রেখা যেটা এখনো মিলিয়ে যায়নি।আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার ভাই এতো তাড়াতাড়ি দুই সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় পনের গজ রাস্তা কিভাবে পার করে চলে গেলো। আমি কোন রকম ঘরে ঢুকলাম।ঘড়িতে তখন রাত দুইটা বেজে আটত্রিশ মিনিট।
আমি ভাইকে ফোন দিলাম।কি ব্যাপার কোথায় তুমি?
ভাই উত্তর দিলো সে ও তার বন্ধুরা নানার দাফন,কাফনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে গেছে।প্রায় সব কেনা শেষ।একটু বাদেই এসে পরবে।আমি কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম।ঘন্টা খানিক পর আবার নানার বাড়ি গেলাম।মা বল্লো এতক্ষন কোথায় ছিলে? জামাই এসে তোমাকে খুজলো কোথাও পেলো না।(!)বাড়িতেও ছিলে না(!?!)। আমি বললাম বাড়ি গিয়েছিলাম।ভাইকে বকা দিতে চাইলাম আমাকে ভয় দেখানোর জন্যে।ভাই বললো ওর সাথে নাকি রাতে আমার দেখাই হয়নি।শুধু আমার ফোন পেয়েছিলো।কি বলেছিলাম ও কিছুই বুঝে নাই।
আমি সপথ করে বলতে পারি সেদিন রাতে কেউ আমার সাথে ছিলো।আমি তার উপস্থিতি অনুভব করেছি।আমি তার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনেছি।তার সাথে কথা বলেছি।কিন্তূ কে ছিলো আজও জানতে পারিনি।
* সমাপ্ত *
২৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, এটি তাহলে সেই প্যাত্না-পেত্নীর গপ্পো!
শপথ করলেই তো হবে না, সাক্ষী-সুক্ষী লাগবে জনা চারেক!!
পিছু নিয়ে খালি হাঁটলেই (হাঁটা-গপ্পো) তো হবে না, আরও কিছু থাকতে হবে।
দেখুন আরও কিছু যোগ (যোগাযোগ) করা যায় কী-না!!
সাবিনা ইয়াসমিন
ঘটনাটি আমার সাথে সত্যিই ঘটেছিলো।যা হয়েছিলো হুবহু সেটাই লিখেছি।আমি সে রাতে ভয় পাইনি,,আজো পাইনা।ঘটনাটি আমার কাছে এখনো রহস্যময় হয়ে আছে।কে ছিলো সাথে (!?!)
সত্যিকারের ঘটনা গুলোতে যোগ-বিয়োগ করবো কিভাবে ?
ছাইরাছ হেলাল
এত্ত কঠিন প্রশ্ন করা ঠিক না, তবে ঐ যে ভূতের গপ্পে জলজ্যান্ত ভূতানুভুতি আনতে হবে,
থাকতে হবে।
কে ছিল তা তো আপনাকেই বলতে হবে, তবে লেখা পড়ে সে যে ভূত ছিল-না বলেই মনে হচ্ছে!!
ইস্, কেন যে লিখিয়ে হয়ে ভুতের গপ্পো লিখতে পারলাম না কে জানে।
তবে মনোবল হারাচ্ছি না, আপনাদের সাথে/সঙ্গে থেকে শিখে যাব নিশ্চয়ই!!
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথমত এটি ভুতের গল্প না,,এটি রহস্যময় গল্প।ভৌতিক গল্পে ভয় থাকে।আর রহস্য গল্পে প্রশ্ন রয়ে যায়।লেখক গল্প বলার মতোই নিজের অথবা অন্যের কাছ থেকে জানা ঘটনাটি বলে যান আর পাঠকের কাছে প্রশ্ন রেখে যান।পাঠক তার নিজ ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে উত্তর খুঁজে নেয়।
আপনাকে ভয় দেখানোর সাধ্য আমার নেই।দুই-চারটা ডাইনী যদি ধারে দেন তাহলে একটি ভয়ের গল্প লিখতে পারবো বলে আশা রাখি।তবে তাতেও আপনি ভয় পাবেন কি না এই ব্যপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ;? ;?
ছাইরাছ হেলাল
ডাইনিদের সাথে পরীক্ষিত সখ্যতা বহু দিনের, এখানে তা প্রমাণিত,
তাই ভয় ভাবনার কিচ্ছু নেই, তবে ভইয় দেখানোর ট্রাই নিতেই পারেন!!
দেখুন শুধু আমি না, আমাদের কুইন (ম্যাম) সে-ও কিন্তু ভূতের গপ্পো হিসাবেই নিয়েছেন!!
বুঝলাম তো, সে কে ছিল বলতে চাচ্ছেন না, আচ্ছা বলতে হবে না,
আর একটি গল্পো বলে ফেলুন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ভাগ্য ভাল আপনি ভাল জিন ভূতের সাথে হেটেছিলেন নতুবা খবর ছিল।এটা কি, ই-ম্যাজিনের জন্য! বিষয় বস্তু ঠিক ছিলো বর্ননায় আরো ভয়ার্ত আরো কিছু চরিত্র আনলে দারুণ হবে। -{@
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ ভাই।যেখানে আমি নিজেই ভয় পাইনি সেখানে আরেকজনকে ভয় দেখাবো কেমন করে ?? প্রথম আর শেষবারের মতো অবাক হয়েছিলাম। জানা হয়নি ,,সে রাতে আমার সাথে কে এসেছিলো।।
ই-বুকের জন্যে লিখিনি।অশরিরী অনুভুতির অভিজ্ঞতা টুকু আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।আপনাদের লেখা গুলো দেখলে তখন একটা ভুতের গল্প লিখার চেষ্টা করবো। -{@
মায়াবতী
সাধারণত আমি ভৌতিক কোনো নাটক সিনেমা কখনওই দেখতে পারি না কারণ দারূণ ভীতু আমি। তোমার এই লেখা পড়ে ভয় টা একদম ই লাগেনি খুব ই স্বাভাবিক লাগছে। খুব সাধারণ ভাবে ভৌতিক গল্প লেখার জন্য সাবিনা সোনা তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
-{@
ছাইরাছ হেলাল
ভৌতিক গল্পে ভূত-ভূতনির হিম-হিম হিল-হিলে অনুভূতির গা ছম-ছম ভাব না থাকলে ভূতের গল্প কেমনে হয় কে জানে!!
সাবিনা ইয়াসমিন
@ছাইরাছ হেলাল,,,,,,,,,,আমি যদি কখনো ভুত হওয়ার সুযোগ পাই তাহলে আপনার বহু আকাংখিত হিম-হিম,হিল-হিলে আর ছম-ছম নাঁচ দেখতে একবার হলেও আপনার সামনে যাবো। ,,, প্রমিজ।
ছাইরাছ হেলাল
ঠিক আছে, সেজে-গুজে অপেক্ষায় থাকলাম, ভয় পাওয়ার জন্য, প্রমিজ!!
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি ভুতে বিশ্বাস করি না আপু।তবে ছবি দেখি মাঝে মাঝে।সাউন্ড বন্ধ করে দেখি।ভুতের চেহারা যেমনই হোক ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমার মনে ভয় ধরিয়ে দেয়।
আপনার কাছ থেকে ভুতের গল্প শুনতে চাই।কবে লিখবেন??
মাহমুদ আল মেহেদী
অনেক ভাল লিখছেন ঘটনাটা । বাস্তব ঘটনা বাস্তবেই মনে হয়েছে। কে ছিল ? আমাদেরও জানতে মনে চাইছে।
সাবিনা ইয়াসমিন
কে যে ছিলো তা আজও জানতে পারিনি।অনেক ধন্যবাদ।ঘটনাটি নিয়ে ভেবেছেন এতেই আমি খুশি।
ভালো থাকবেন।শুভকামনা রইলো।
জিসান শা ইকরাম
এরপরেও আপনি আবার নানা বাড়িতে গিয়েছেন!
আপনার ভয় করেনি?
এ রহস্যের সমাধান হবেনা,
কেউ একজন ছিল আপনার সাথে, কিন্তু কে সে?
আপনাকে ভয় করতে হবে এখন হতে,
কি বলে ফেলি, আর আপনার সাথে থাকা অদৃশ্য ভুতে এসে আমার ঘাড় মটকে দেয়,
সাবিনা ইয়াসমিন
আবার গিয়েছিলাম।তখনও আসল ব্যপারটা ধরতে পারিনি।ঘটনাটা যে স্বাভাবিক ছিলো না, মা আর ভাইয়ের মুখ থেকে ভালো করে শোনার পর মাথায় ঢুকেছিলো।অনেক ভাবেই চেষ্টা করেছি বিষয়টির সহজ কোন ব্যাখ্যা দ্বার করাতে।পারিনি।এটা পুরোই রহস্যময় হয়ে আছে এখনো।
এতো এতো ভয় নিয়ে ভৌতিক/রহস্যময় ইভেন্ট তৈরি করলেন কিভাবে!! অনেকের ভুত এখনোতো ঠিকমতো বেরই করেন নি। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি প্রচন্ড ভয় পাই ভুতের গল্প পড়তে বা ভুতের সিনেমা দেখতে। আপনার অনেক সাহস!
সাবিনা ইয়াসমিন
হা,হা,হা,,আমি ভুতের গল্প পড়তে বেশি ভয় পাইনা।দিনের বেলায় পড়ি।আর ভুতের সিনেমা দেখার সময় সাউন্ড বন্ধ করে দেখি।❤❤❤❤
নীলাঞ্জনা নীলা
বাব্বাহ! আমি এখন একা থাকতে ভয় পাইনা। তবে ভুতের গল্প বা মুভি, সেটা পারিনা আজও।
অনেক ভালো থাকুন।
তৌহিদ ইসলাম
ভুতের গল্প, কিন্তু সাবলীল ভাবে প্রকাশ করেছেন। সত্যি ভয় পাইনি 🙂
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন অনেক। -{@
ইঞ্জা
লেখাটি যেদিন দিয়েছিলেন সেদিনই পড়েছিলাম, সাথে কমেন্টো করেছিলাম, আজ দেখলাম আমার কমেন্টটা হাওয়া হয়ে গেছে। 🙁
সাবিনা ইয়াসমিন
তবুওতো দিলেন ,,এতেই খুশি।
আগের কমেন্টে কি লিখছিলেন ভাই ?
ইঞ্জা
কি দিয়েছি তো মনে নেই আপু, কিন্তু এইসব বিষয় আমি বিশ্বাস করি।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ঘটনা সত্যি হলে,
আমার মনে হয়ে তিনি আপনার নানার মৃত্যুতে আসা কোন পরহেজগার আত্মিয়ের আত্মা হবে। কিংবা কোন মোমিন জিনও হতে পারে।
আবার আপনার সাথে আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু ভালো সাহায্যকারীও হতে পারে। সেরকম হলে এসব বিষয় পাবলিক না করাই ভাল।
যে কোন কারণে আপনার উপর কোন বুুজুর্গের নেক নজরও থাকতে পারে। সঠিকটা আল্লাহই ভালো জানেন। হয়তো আপনি মাঝে মাঝে খুব ভালো স্বপ্ন দেখেন। এসব বিষয়ে তর্কে না জড়ানোই ভাল।
লেখার কিছু দাড়ি আরও কমার পরে স্পেস দিতে হবে আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঘটনাটি সত্যি ছিলো ভাই, আর আমি আসলেই মাঝে মাঝে অদ্ভুদ সুন্দর স্বপ্ন দেখি। পাবলিক না ঠিক, এই লেখাটি যখন লিখেছিলাম তখন সোনেলায় একটি ইভেন্ট চলছিলো। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক বা অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলি নিয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তখনকার ব্লগাররা লিখেছিলেন। আমিও তখন আমার নিজের ঘটনাটি সবার সাথে শেয়ার করেছিলাম।
এটা আমার ব্লগে আসার প্রথম দিকের লেখা। তখন উইন্ডোজ ফোনে লিখতাম। খুব কষ্ট হতো লাইন সমান্তরাল রাখতে/ স্পেস ঠিকঠাক মত দিতে পারতাম না।
এত আগের লেখাটি পড়ে কমেন্ট দেয়ার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা বাহার ভাইয়া। ভুলগুলো সময় নিয়ে ঠিক করে নিবো।
শুভ কামনা 🌹🌹