জীবন্ত দগ্ধ হয়ে গেল বায়ান্নটি প্রাণ। মৃত্যু কত সহজ। বলছিলাম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা কথা। দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু তার জন্য সেফটি ও সিকিউরিটি থাকতে হবে। বিশেষ করে কারখানা গুলোতে।
আপনারা ব্যবসা করবেন। কারখানা বানাবেন। মুনাফা ঘরে তুলবেন। কিন্তু অসহায় কর্মচারীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যাবস্থা রাখবেন না। কারন ওরা দরিদ্র। ওরা অসহায়। ওরা পেটের দায়ে আপনার কারখানায় দিনরাত শ্রম দিয়ে যায়।
খবরে প্রকাশ দুর্ঘটনার সময় চারতলার গেট তালাবদ্ধ ছিল। যার ফলে আগুন লাগার পর কারখানা থেকে কেউ বের হতে পারে নাই। আমার প্রশ্ন কারখানা কি কোন দারোয়ান থাকেনা। আর দারোয়ান যদি থেকেই থাকে। তবে কারখানা তালাবদ্ধ থাকে কেন??? কতটা অমানবিক হলে মানুষ এ কাজ করতে পারে।
একসময় আমাদের গার্মেন্টসগুলোতে প্রায়ই আগুন লাগার কথা শোনা যেত। প্রশাসন ও বায়ারদের শর্ত মেনে চলার কারণে গার্মেন্টস গুলো এখন অনেকটাই সেফটি এবং সিকিউরিটি মেনে চলে। প্রশাসন কঠোর হলে কারখানাগুলো সেফটি সিকিউরিটি মেনে চলতে বাধ্য।
এবার আসা যাক ফায়ার সার্ভিসের কথায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৭/১৮ টি ইউনিটের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও প্রায় ২৪ ঘন্টা লেগে যায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। এটাকি আগুনের ভয়াবহতা, না ফায়ার সার্ভিসের অক্ষমতা। না কি আগুনলাগা কারখানার কাঠামোগত দুর্বলতা।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি এক সময় রিপোর্ট দিবে। তাতে মালিকপক্ষ কিছুটা বিব্রত অবস্থায় পড়বে। দুর্ঘটনার কারণে মালিকপক্ষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কিন্তু যে তরতাজা বায়ান্ন জীবন প্রদীপ নিভে গেল। তাদের পরিবারের শূন্যতা কিভাবে পূরণ হবে। খবরে দেখা গেল তাদের সকলেরই বয়স সতেরো বা আঠারো থেকে চব্বিশ/ পঁচিশ হতে পারে। যে ফুলগুলো বিকশিত হবার অপেক্ষায় ছিল। ছিলো পরিবারের আশা ভরসা। তারা অকালেই ঝরে পড়ে গেল। সরকার ঘোষিত অর্থ সাহায্য কি পারবে মায়ের বুকের হাহাকার প্রশমন করতে।
২০টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
খুবই দুঃখজনক। শ্রমিকের টাকায় চাকা চলে। অথচ লাশ তাকেই হতে হয়। মালিকের কি আসে যায়? কয়েকদিন পত্রিকায় ঘুরবে লেখা। এরপর আগের মতো।
আপনাকে ধন্যবাদ
হালিমা আক্তার
আজ মালিকপক্ষের লোক রিমান্ডে নিয়েছে। কাল ছেড়ে দিবে।আবার আগের মতো কারখানার চলবে। আমরা ভুলে যাব। শুধু ভুলবেনা প্রিয়জন হারা মানুষগুলো। শুভ কামনা অবিরাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
কি বলবো বুঝতে পারছি না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যেমন হয়ে যাচ্ছে/গেছে তাতে সাধারণ মানুষের কিছু বলার অধিকার আছে কিনা সেটাই এখন একটা প্রশ্ন। লকডাউন চলছে অথচ গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কলকারখানা চালু রাখা হয়েছে। আবার যেসব কারণ দেখিয়ে সব চালু রাখা হচ্ছে সেসব কারন গুলোর মুল অংশের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনার উল্লেখ নেই।
দুর্ঘটনায় কবলিত ফ্যাক্টরির মালিকের বক্তব্য শোনার পর মনে কেবল একটাই প্রশ্ন জেগেছে শ্রমিকরা কি মানুষ নয়! নয়তো সে নিজে একজন মানুষ হয়ে তার পক্ষে কীভাবে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর দায়ভার নিতে অস্বীকার করা সম্ভব হলো?
এই দেশে জুতা চুরির বিচার হয়, বেওয়ারিশ কুকুরকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে আইন তৈরী হয়, অথচ নিজ স্বার্থে যারা শত শত মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় তাদের জন্য কোন বিচার নেই, আইনের যত প্রভাব প্রতিপত্তি সব এখান এসেই থমকে যায়।
হালিমা আক্তার
এদেশে সবচেয়ে সস্তা দরিদ্র মানুষের জীবন। লকডাউন বলেই হয়তো বাহির থেকে তালা মেরে ভিতরে কাজ করছিল। যাতে প্রশাসন এর লোক জানতে না পারে। এ অসম্ভব এর দেশে সবকিছুই সম্ভব।কারো কিছু হবে না।যার জন গেছে সেই আজীবন বেদনা বহন করবে। শুভ কামনা অবিরাম।
সুরাইয়া পারভীন
অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। গরীব মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছে এইভাবে লাশ হবার জন্যই বোধহয়।
যাদের রক্ত ঘামা পয়সায় আয়েস করে দিন কাটায় মালিক পক্ষ তাদেরই লাশ বানায়। সামান্য কিছু আর্থিক সহায়তা কেনো পৃথিবীর এমন কোনো বস্তু নেই যা দিয়ে একটা মায়ের শূন্য বুক পূর্ণ করতে পারে।
হালিমা আক্তার
আর্থিক সাহায্য কি আর সন্তানের শূন্যতা পূরণ করতে পারে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা অবিরাম।
মনির হোসেন মমি
আগুন লাগার দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয় এদেশে এটা একটা সাধারন বিষয় হয়ে গেছে।অত্যান্ত দুঃখজনক যে বার বার ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটানাগুলোর বিচারগুলো বছরের পর বছর বাদুর ঝুলার মত ঝুলে আছে।এখানে ৫২ জনের মৃত্যু।কয়দিন পর সব ভুলে যাবে।ভিকটিমরা সেই আগের অবস্থানেই রবেন মাঝে ক্ষতি হয়ে যায় স্বজন হারাদের।
ভাল লিখেছেন।
হালিমা আক্তার
যদি দুই একটা দুর্ঘটনার কঠিন শাস্তি কত। তাহলে মালিকপক্ষ সাবধানে কারখানা চালাত। সেফটি এবং সিকিঊরিটির কথা বিবেচনা করতে। শুভ কামনা অবিরাম।
মোঃ মজিবর রহমান
খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। রাত আতটায় দেখে বেকুব বনে গেছিলাম। আর দুইজন লাফ দিয়ে আরও ভুল করে সঙ্গে সংগেই মারা যায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এসব মালিকপক্ষের শুধু কিছুটা হয়রানি আর কিছু টাকা-পয়সা নষ্ট হবে। তারপর আপনি আমি সবাই ভুলে যাবো , বিচারের লোকজন ও ভুলে যাবে। যার ঘর খালি হলো তারাই একদিন এ শোক কাটিয়ে উঠবে । তারপর আবার মালিকপক্ষ ব্যবসা করবে , নতুন আরো প্রাণ ঝরবে। কোথায় আছি আমরা?? তদন্ত হবে কাগজেকলমে তার কোনো হদিস থাকবে না। যারা চলে গেল তাদের জন্য ই আমার কষ্ট হয়, এ পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর-কেউ কাউকে মনে রাখে না। সুন্দর পোস্ট আপু
হালিমা আক্তার
একদম সত্যি কথা বলেছেন। আমরা কিছুদিন মনে রাখবো। তারপর কে আর কাকে মনে রাখবে। আবার প্রাণ যাবে। মিডিয়া গরম হবে। এভাবেই চলতে থাকবে। শুধু প্রিয়জন হারা মানুষগুলো হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকবে। শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
তানজারিনের কথা আমাদের মনে আছে, মনে রেখেছি।
কিচ্ছু না, সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
পেছনে পড়ে থাকবে যারা হারিয়েছে স্বজন, তাদের দীর্ঘশ্বাস।
হালিমা আক্তার
কেউ কাউকে মনে রাখেনা। সব কিছু স্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। শুভ কামনা অবিরাম।
জিসান শা ইকরাম
এখানে মালিকের অব্যবস্থাপনার ছাপ স্পষ্ট।
কেন গেট তালা লাগানো থাকবে?
ভবনে কেনো ফায়ার এক্সিট থাকবে না?
এই দুটো কারনের জন্য মালিকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস আসল সময়েই ব্যার্থ, এটাও প্রমানিত।
অমূল্য জীবন আর ফিরে আসবে না, মৃতদের উপর নির্ভরশীল মানুষদের কথা কেউই ভাববে না।
তদন্ত কমিটির উপর আস্থা নেই আমাদের জনগনের।
সমসাময়িক ঘটনা পোষ্টে তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
হালিমা আক্তার
ঘটনা ঘটার আগে আমরা কেউ নিরাপত্তার কথা ভাবি না। দুর্ঘটনা ঘটার পর কারণ গুলো খুজে বের করি। ততদিনে কিছু প্রাণ ঝরে যায়। কিছুদিন সরগরম, আবার অনিরাপদ জীবন। এভাবেই চলছে প্রাণের দেশ। শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সবসময়ই এমন ঘটনা ঘটতেই থাকে যার আদৌ কোন বিচার হয় না। আমরা ভুলে যাই সাধারণ শ্রমিকরাও ভুলে যায়। পেটের দায়ে আবার তারা কাঁদে গিয়ে লাশ হয়ে দগ্ধ হয়। আমার মতামত প্রশাসনের কড়া নজরদারী প্রয়োজন।
শুভ কামনা সবসময়।
হালিমা আক্তার
কোন দুর্ঘটনার বিচার হয় না বলেই আবার দুর্ঘটনা ঘটে। পেটের দায়ে শ্রমিকেরা লাশ হয়ে ফিরে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা অবিরাম।
তৌহিদুল ইসলাম
খুব কষ্ট পেয়েছি এই ঘটনায়। মানুষের জীবন কত তুচ্ছ! নিমিষেই পুড়ে মরে গেলো। দোষীদের শাস্তি হোক এটাই চাই। ফাইলবন্দি রিপোর্ট আর শুনতে চাইনা।
ভালো থাকবেন আপু।
হালিমা আক্তার
আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।