জীবনের সমাপ্তি

মনির হোসেন মমি ১৪ আগস্ট ২০২১, শনিবার, ০৭:১০:৫৭অপরাহ্ন অণুগল্প ১২ মন্তব্য

মায়ের অন্তিম শয্যার সমাধির কয়েক দিন পর মায়ের বিছানায় বসে এক অসহায় বাপ তার ছোট্র অবুঝ মেয়েটির প্রশ্নের উত্তরে কোন কুল খুজে না পেয়ে অশ্রুজলে শুধু নিজেকে সিক্ত করলেন।যতক্ষণ মেয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছে ততক্ষণ তার চোখ জলে ভরাট হতে থাকে।চোখ উপচে পড়া জল তার গাল বেয়ে মাটিতে পড়ে৴মেয়ের প্রশ্নের উত্তরে দুঠদ্বয় কাঁপতে থাকে।

৴বাবা ওবাবা
৴কীরে মা কী হইছে ?
৴দাদী কই ?
৴ঐইতো বললাম না বেড়াতে গেছে...।
৴কতদিন বেড়াবে ? তুমি না বললে আজই চইলা আইবো!!
৴হ,বলছিলাম নাকি!
৴তুমিনা সব ভুলে কিছু যাও!

মেয়ের হঠাৎ চোখে পড়ল পাশে টেবিলে সাঁজানো দাদীর চঁশমাটা।মেয়ে বসা  থেকে উঠে গিয়ে দাদীর চশমাটা হাতে নিয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে।

৴তুমি না বললে দাদী বেড়াতে গেছে! এই চশমাতো দাদীর।আমি কতবার যে খুঁজে দিছি।দাদীতো চঁশমা ছাড়া চোখে দেখে না।

বাবা এবার কী বলবেন।তার হৃদয়ে আবেগ আর অনুশোচনার স্মৃতি জেগে উঠে।

৴বাবারে আমার চোখের চঁশমাটার ফ্রেমটা একটু পাল্লাইয়া দিবি।ফ্রেমটা ফাইট্টা গেছে।

না ছেলে পারেনি মায়ের শেষ কথা রাখতে।তার এ আফসোসটা চিরকাল মনে বয়ে বেড়াবে-এক অসীমাহীন ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে।কিছুক্ষণ আনমনা মন। অতপর মন ঠিক করল জীবনের এই পরন্ত  বিকালটার একটা সঙ্গ দিয়ে আসি-মনটা কেমন যেন রিফ্রেস করতে ইচ্ছে হল।মেয়েকে সাথে নিয়ে এক রিক্সায় চলে এলাম চির শীতল আমার শৈশবের স্মৃতি মিশ্রিত নদী শীতলক্ষ্যার পাড়ে।নদীর ঘাটে বাপ বেটি বসলাম। ঘাটে যাত্রীরা নৌকায় পারাপার হচ্ছে।

৴বাবা, ওবাবা,তুমি কিছু বলছো না কেন? দাদী কোথায়? দাদীর কাছে আমাকে নিয়ে যাবে? জানো বাবা- আমার না রাতে তেমন ঘুম হয় না শুধু দাদীর কথা মনে পড়ে।মাথার চোলে হাত বুলিয়ে দাদী যে ভাবে আমাকে ঘুম পারাত-আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম টেরই পেতামনা।

বাপের সুপ্তশোক  অনুভুতিতে জেগে উঠে।

আমিওতো তোর মতন মায়ের কুলে মাথা না রাখলে ঘুমাতে পারতাম না।একবারোতো আচ্ছা মতন বকে দিলেন আমাকে।
কীরে খোকা তুই কী আর বড় হবি না? আর কতোকাল তুই আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারবিনা?বল।এখনতো বড় হয়েছিস।

৴কী যে বলোনা মা-সন্তান কী কখনো মা বাবার কাছে কখনো বড় হয়? কখনোই না।
মা তার পান খাওয়া রঙ্গিলা ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি তুলে বলতেন।
৴পাগল ছেলে।ঠিক বলেছিস।
৴মায়ের কুলে মাথা রেখে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতাম আর মা আমার মাথায় কপালে হাত ভুলাতে ভুলাতে সুন্দর সুন্দর ছঁড়া কাটতেন।আমি এর মধ্যে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম বলতে পারতামনা।

আনমনা বাবাকে চেনতা চেতনায় ফেরাল মেয়ে।

বাবা ওবাবা অতো কী ভাবছো ? তুমিতো এখনো বললে না,দাদী কোথায়? খালি বলছো- বেড়াতে গেছে ।কোথায় গেছে তাও বলোনা ?

আসমানের ঐ যে গোধূলী অস্তিমিত লগ্নটা দেখছো ওর মত মা আসে মা যায় হৃদয়ের ঐ গহীনকাশে।পূর্বে উদিত হয়ে ভোরের প্রথম আলোতে৴ভোরের শিশিরে হাতের স্পর্শে মা বয়ে বেড়ায় ঠিক আজকের গূধুলীটার মতন আমার হৃদয়কাশে আবারো মনে কষ্ট তুলে চলে যায়।কী যে কষ্ট তুই যখন বড় হবি তখন বুঝবি।

মেয়ে চেয়ে দেখল বাবার চোখে জল।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

৴বাবা তুমি কাদছো? থাক আমি আর দাদীকে খোঁজবো না।

৴নারে মা তোর দাদীকে খোজার জন্য নয়।জীবনের এই গোধূলী লগ্নে তোর প্রশ্নের উত্তর আমি সহজ করে দিতে পারলাম না বলে খুব খারাপ লাগছে।

আসলে আমরা কে?এই ধরাতে আমরা যখন চলেই যাবো তখন এসেছিলাম বা কেন ? তাহলে জীবনের রং এতো  বিচিত্র কেন? কী লাভ জীবনের তাতে ? আসলে জীবনটা কী ?যখন যার পরিণতি ধ্বংস অবসম্ভ্যাবী?।

পাঠক আপনারাই বলুন।

শেষে স্যার হুমায়ূন আহমেদ কালজয়ী এর উক্তিটি এ সময় মনে পড়ল৴

 বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের মধ্যে গড়ে ওঠা পয়েন্ট টু-পয়েন্ট ভালোবাসাও অসহায় হয়ে যায়।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ