ছিনতাইকারী বনাম আমি

শাহরিন ৫ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ১২:২০:১০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৬ মন্তব্য

বর্তমান জীবনে ছিনতাই পকেটমার এর হাতে যে পরেনি সে মহা সৌভাগ্যবান। যারা প্রতিনিয়ত কোন না কোন দরকারে পথে বেশী বের হন তাদের কথা বলছি আরকি।

আমি ছোটবেলা থেকেই একটু বাইরের কাজ গুলো করি, যেমন দোকানে যাওয়া শপিং বা বাজার করা আর চাকরির সুবাদে দু'বেলা তো অবশ্যই। কিছু অঘটন শেয়ার করছি আজকে সবার সাথে কেউ যদি পড়ে এইসব দিকে একটু যত্নবান হন এই উদ্দেশ্যে লেখা।

১.
তখন স্কুলে পড়ি সিক্স বা সেভেন এ বড় বোনের সোনার চেইন পরে মামার বাড়ি আজিমপুরে বেরাতে গেলাম। ফেরার সময় কবরস্থানের পাশ দিয়ে আসার সময় কে যেন জোরে পিঠে আঘাত করলো। তারপর মা বললো চেইন নিয়ে গেছে। মন খারাপ হয়ে গেল, আশে পাশের মানুষ দৌড়ে ধরলো ছিনতাইকারি কে, চেইন এর কিছু অংশ ফেরত পেয়েছিলাম।

**মেয়েরা সোনা গয়না একটু ঢেকে পড়লে এসব ঘটনা এড়াতে পারবেন।

২.
বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা মাত্র দেখেছি সবে। স্কুল জীবন থেকেই বাচ্চাদের পড়াই আমার মায়ের শখের জন্য। সেদিনও টিউশনির বেতন পেয়ে মহা খুশিতে রিকশা চড়ে বাসায় আসছিলাম।  ভ্যানিটি ব্যাগে চার হাজার টাকা আর আব্বার পাঠানো মোবাইল।  হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার পাশে দাঁড়িয়ে হাত থেকে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে দেখলাম। বাসার সামনের দোকানদার এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে রিকশাওয়ালাকে দিতে চাইলে নিতে অস্বীকার করলো, আমার এমনিতেই টাকা খোয়া গেছে এই ভেবে। ওই দিন অঘটনের পরেও মন ভাল হয়ে গিয়েছিল।

* যখন খোলা কোন পরিবহনে উঠবেন অবশ্যই ব্যাগ শক্ত করে ধরে রাখবেন।

৩.
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করিনি, তখনো চাকরি করি একটি বায়িং হাউজে। কলেজের বান্ধবী ফোন করে বললো ওর মামার বিয়ে। ছুটির দিন থাকায় গেলাম। আশার সময় ছিনতাইকারীরা মাইক্রোবাস ঘিরে ধরলো। সবাই সোনা গয়না দিয়ে দিল আমিও দিলাম। সে ঘটনার কিছুদিন পরে আবার সেগুলো ফেরত পেলাম। পরে জানলাম বান্ধবীর মামা অনেক প্রভাবশালী, সে সব ফেরত এনেছে।

* কোথাও  সোনাদানা পরে গেলে আসার সময় রাত হয়ে গেলে তা ব্যাগ বা নিরাপদ কোন স্থানে রাখলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।

৪.
আমরা তিন বোন বান্ধবীর মত। একে অপরের দরকারে হাজির সব সময়। কোন এক দরকারে নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম। বাসে করে আসার সময় জানালার পাশের সিটে বসলাম। মোবাইল কানে ছিল না, কিন্তু হঠাৎ কে যেন জানালা দিয়ে হাত দিয়ে মোবাইল নেয়ার চেষ্টা করলো। নিতে পারেনি তবে খামচি দিয়েছিল কয়েকদিন আগে পুড়ে যাওয়া আংগুলটাতে। পরে সেখানে ঘা হয়ে গিয়েছিল।

*বাসে জানালার পাশে বসে মোবাইল ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।

৫.
আরেক বন্ধুর ভাইয়ের বিয়েতে বিয়ের পোশাক কেনার দায়িত্ব পরলো আমার উপর। বন্ধুর মামী আর আমি শপিং শেষে ফেরার সময় আগের ঘটনার মতো পাশে প্রাইভেট গাড়ি থামিয়ে ছুড়ি বের করলো একজন।  বন্ধুর মামীর হাত থেকে ব্যাগ টান দিয়ে, আমারটি নেয়ার সময়ই আশেপাশের মানুষ ছুটে আসলো।  সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলাম।

* মামীর ঘরের চাবি সহ দরকারি কাগজ পত্র  ছিল ব্যাগে। তাই আমার মনে হয় বাইরে বের হওয়ার সময় দরকারি কাগজ বাসায় রেখে যাওয়াই ভালো।

৬.
কর্মজীবী হওয়ার কারণে বিয়ের পরে মা বাবার বাসায় সপ্তাহে ২/৩ বার যাওয়া আমার জন্য সমস্যা ছিল না। সাথে পতি দেব এর ও বাঁধা না থাকার কারণে আমি যেতে পারতাম।  একদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে মিরপুর থেকে গুলশানের দিকে যাচ্ছিলাম। বিজয় স্মরণি তে আসার পরে হঠাৎ অনেক বাতাস লাগলো গায়ে, মনে হল রিকশায় চড়ছি। সাথে সাথেই মাথায় কে যেন হাত দিল। বুঝলাম ছিনতাইকারী। কিন্তু কিছু নিতে পারেনি। নামার পরে দেখলাম ধারালো কিছু দিয়ে সি এন জির উপরের অংশ পুরোটা ছিড়ে ফেলেছিল। সিএনজি চালক আমার উপর রাগ করলেন, বললেন 'আপনার এতো ব্যাগ দেখেই ওরা আমাদের গাড়ী টার্গেট করেছে।'

* রাতে সাবধানে গাড়িতে ফোন ব্যবহার করবেন যদিও এখন সব সিএনজিতে প্রোটেকশন আছে।

৭.
বানিজ্য মেলায় অফিস শেষে গেলাম আমাদের পরিবারের সবাই আগে থেকেই ছিল সেখানে। ঘোরাঘুরি শেষে আবিষ্কার করলাম ব্যাগে মোবাইল খানা নেই।

* মেলা বা জনবহুল এলাকাতে গেলে ব্যাগ সাবধানেই রাখা নিরাপদ।

এছাড়াও নিউমার্কেট ও সুপার শপেও মোবাইল ও টাকা হারানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। অনেক বকা শুনেছি বাইরে যাওয়া,  রাতে জার্নি করা, ঘোরাঘুরি নিয়ে কিন্তু থামতে পারিনি যে!!! ভয় পেয়ে কি চলাফেরা বন্ধ করে দিব? তা হবে না। তবে সাবধানে চলি আগের থেকে। মেয়েকে কোলে নিয়ে রিকশায় চড়লে আমি মানসিক ভাবে একটু দূর্বল থাকি শুধু। পাশে কোন গাড়ি বা মোটর সাইকেল দেখলে ভয় লাগে,  ব্যাগ কেড়ে নিবে সে ভয় না ভাবি যদি ব্যাগ কেড়ে নিতে যেয়ে মেয়েটা আবার ব্যাথা পায়!!!

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ