চিঠি (০৪)

সুলতানা সোনিয়া ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শনিবার, ১২:৫৬:৩৫অপরাহ্ন বিবিধ ৪ মন্তব্য

প্রিয় কালোমানিক ,
আদর করে তোর নাম দিয়েছিলাম কালোমানিক। নামটি তোর ভীষণ অপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি আর আপু তোকে কালো মানিক বলেই ডাকি ! কালো বলে তোর দুঃখের সীমা ছিলোনা। ছোটবেলায় আমাদের দুবোনের পাউডার আর মেকাপ মেখে ফর্সা হবার কি যে বৃথা চেষ্টা ছিলো তোর! ! মারামারি আর দুষ্টামিতে ৩ জন মাতিয়ে রাখতাম ঘর ! মা, খাবার জিনিস বেড়ে রাখলে তোর খাবার লুকিয়ে আমরা দুবোন ভাগ করে খেয়ে ফেলতাম ! তারপর তুই এসে আমাদের দুবোনের চুল ছিরতিস । আহা , কি যে সুন্দর সেই দিনগুলো !!

স্কুল থেকে ফিরেই আর পাওয়া যেতো না আমাকে, তুই আর আমি পড়িমরি করে ছুটতাম খেলার মাঠে। দুপুরে না ঘুমালে মা তোকে আর আমাকে খুব মারতেন । মা যখন আমাদের প্রচণ্ড মারতো , মুখপোড়া বোনটা তখন শুধু হাসত।
মার নাহয় খেলামই, তাই বোলে অমন কোরে হাঁসতে হয় ? রাগে আমার পিত্তি জ্বলে যেতো !।।
প্রায়ই মা তোর ক্রিকেট এর ব্যাট লুকিয়ে রাখতেন , এই আপু , চালতার আঁচার খাবি? হ্যাঁ ভাই, দে না।এনে দে, জিভে জল লকলক করতো । আগে আমার ব্যাট এনে দে, লুকিয়ে রাখা ব্যাট আনতে গিয়ে আমিও কি কম মার খেয়েছি মা এর হাতে ?

মায়ের আঁচলের খূট থেকে পয়সা চুরি কোরে তুই আর আমি কতো যে আইসক্রিম চকলেট কিনে খেতাম ! ভাই, ও ভাই , মনে আছে তোর সেই দিন গুলির কথা ? একদিন মারামারি করতে গিয়ে আমার পায়ে ছোট একটা রড দিয়ে আঘাত করলি। সে কি রক্তারক্তি অবস্থা। সেলাই লাগলো ৩ টা । সেদিন মা এর হাতে কি যে মার খেলি! জানিস , তখন তোর জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছিলো। কি করে অমন বোকামি কাজটা তুই করলি ?

দেখতে দেখতে কতো বড় হয়ে গেলিরে ! বিমান বাহিনী তে জব করছিস। দেশ সেবার বড় দায়িত্ব তোর কাধে। আজ আমাদের ছুটাছুটি আর মারামারির সেই দিন গুলি নেইরে। তবু পরম মমতায় অপেক্ষায় থাকি শুক্রবার এলেই তুই বাসায় আসবি, তোর প্রিয় খাবার গুলো রান্না করি। ওতেই অনেক শান্তি পাই। বাবার পরে এখন তুই তো আমার অভিভাবক। তোকে অনেক ভালোবাসিরে।
ভালো থাকিস কালোমানিক, প্রিয় ভাইটি আমার....

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ