নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে মাজার গেটের পাশের নালায় পড়ে এবার নিখোঁজ হয়েছেন সাদিয়া আকতার (১৮) নামের কলেজ পড়ুয়া এক তরুণী। গতকাল (২৭ সেপ্টেম্বর’২১) সোমবার রাত ১০টায় বাবা ও মামার সাথে হেঁটে যাওয়ার সময় হাত ফসকে নালায় পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি।  রাত ৩টার দিকে সেই দুর্ভাগা তরুণীর লাশ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রাম শহরে নালায় নিখোঁজ হওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ২৫ আগষ্ট’২১ নগরের মুরাদপুর এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় চশমা খালে পা পিছলে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যান পটিয়ার ছালেহ আহমেদ নামের ৫০ বছর বয়সী এক ব্যাক্তি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, অদ্যাবধি তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এক তথ্য থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে গেল ছয় বছরে নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে কমপক্ষে ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি এ বছর গত ৩০ জুন নগরের মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক এবং যাত্রীর মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাস স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, ‘আগ্রাবাদ হতে চৌমুহনীগামী সড়কের নীচ দিয়ে একটি নালা রয়েছে। এই নালা দিয়ে পুরো আগ্রাবাদ এলাকার পানি নিকাশ হয়। নালাটি অনেক পুরোনো। এটি পরিষ্কার করা হয় না। নালাতে জমে থাকা আবর্জনা জোয়ারের পানিতে উপচে উঠে। পানি চলে গেলে আবার আবর্জনাগুলো নালায় জমে থাকে। আবার নদীতে জোয়ার এলে এই নালায় জোয়ারের পানি আসে। তখন পানিতে স্রোত থাকে। আমরা আশংকা করছি, নালায় পড়ার পর তরুনী তলানীর পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। আমরা উদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

চট্টগ্রামে এখন ১১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলাকালে অনেকক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকায় কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হয়না, সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়না। দেয়া হয়না সতর্কতা মূলক নির্দেশনাও। আমাদের স্মৃতি থেকে এখনো বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডির কথা মুছে যায় নি। গত ২৪ নভেম্বর’ ১২ তারিখে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় ফ্লাইওভারের স্টিলের গার্ডার ধসে পড়ে ১৭ জন নিহত হয়। সে সময় আনুমানিক ৫০০ জন মানুষ এই গার্ডারগুলির নিচে অবস্থান করছিল বলে জানা যায়। পাশাপাশি সেখানে অস্থায়ী মার্কেট ছিল যাতে প্রচুর খদ্দের ছিল। এমন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম চলাকালে সেখানে কোন নিরাপত্তা বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছিল না। উপরে ফ্লাইওভারের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চলছে নিচে অবাধে কাঁচা বাজার চলছে, মানুষ আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডা দিচ্ছে কোচিং ফেরৎ শিক্ষার্থীরা। এখানে যেন কারো কোন দায়-দায়িত্ব নেই। বলা যায়, এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ অনেকটা ফ্রিস্টাইলে চলছিল।

চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত দুঃখের এবং বেদনার বিষয় হচ্ছে ভারী বা মাঝারি বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে মেগা প্রকল্প চলমান এবং তা শেষ না হওয়ায় তার সুফল চট্টগ্রামবাসী অদ্যাবধি পচ্ছেনা। তা কবে পাবে তার নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না কেউ। এ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ নানান ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও বৃষ্টির পানি অপসারণে চলমান সিডিএ’র প্রকল্পের খাল ও নালা-নালায় বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলে এবারের জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে। আবার সিডিএ বলছে চসিক নালা নর্দমার আবর্জনা এবং বর্জ্য সঠিক এবং যথাযথভাবে অপসারণ না করায় চট্টগ্রামে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, মেগা প্রকল্প নিয়ে চসিক এবং সিডিএ’র রাশি টানাটানি যা দুই সাবেক মেয়র এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে শুরু হয়েছিল বর্তমান দুই নতুন মেয়র এবং সিডিএ’র চেয়ারম্যানের মধ্যেও তা বিদ্যমান এবং চলমান।  জলাবদ্ধতায় জলমগ্ন নগরে রাস্তা আর নালা-নর্দমা এবং খালের পানি একই উচ্চতায় থাকে বলে রাস্তা বা নালা-নর্দমা বা খাল খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। পাশাপাশি নালা-নর্দমাগুলোতে সীমানা প্রাচীর নেই। নেই নালার রেলিং। চলমান প্রকল্পগুলোতে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। নেই সতর্কতামূলক প্রচার প্রচারণা। চলাচলের জন্য বিপৎজ্জনক কোন চিহ্ন।  তাই বর্ষায় চলাচলের সময় মানুষ রাস্তা আর নালা নর্দমার অবস্থান বুঝতে পারে না। ফলশ্রুতিতে নালা বা খালে পড়ে দুঃখজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। তথাপি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এসব দুর্ঘটনার দায় বা দায়িত্ব স্বীকার না করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে। পাশাপাশি যে কোনো দুঃখজনক মর্মান্তিক মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা ঘটার পরে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্টিং মিডিয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঝড় উঠে। পরবর্তী কালে আরেকটা দুর্ঘটনার পরে আগেরটা সবাই ভুলে যায়। আমরা জানিনা এভাবে আর কত নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বোধোদয় হবে। তাঁরা তাঁদের ওপর ন্যস্ত দায়-দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে সচেতন এবং নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা নেবে। মানুষের চলাচল নিরাপদ হবে।  নিখোঁজ ছালেহ আহমেদের বাসায় গিয়ে চসিক মেয়র তাঁর পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। আসলে চট্টগ্রামবাসীর কাছে আশ্বাসের কোনো বিশ্বাস নেই। নগরবাসী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জলজট যানজট মুক্ত সুন্দর সবুজ এবং বসবাসোপোযোগী চট্টগ্রাম শহর দেখতে চায়।

ছবিঃ দৈনিক আজাদী। তারিখঃ- ২৮/০৯/২০২১।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ