ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা১১

মনির হোসেন মমি ৬ ডিসেম্বর ২০১৪, শনিবার, ১০:৪০:৪৫অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

সবাইকে বিজয় মাসের শুভেচ্ছা -{@

ফুলী কাজ শেষে রাতের অন্ধকারে হেটে যাচ্ছেন তার নিজ গৃহের দিকে।অনেকটা ভয়ে সংকোচে এগুচ্ছেন কেননা সেই মুহুর্তে তার সহ কর্মী বলতে কেউ ছিল না তার সাথে।বাধ্য হয়ে অন্ধকার পথটি দিয়ে একাই যেতে হচ্ছে।ফুলী অনেকটা ভয়ে সংকোচে নিরাপদে বাসায় ফিরলেন।বাসায় তার খালার সাথে কে যেন কথা বলছেন।প্রবেশে প্রথম থমকে গেলেও পরক্ষণে ছোটনকে দেখে আশস্ত হন।
-কি ব্যাপার ফুলী তুমি এতো রাতে....কি ভাবে এলে, পথে কোন সমস্যা...।
বিরক্তির ভাব ফুলীর চোখে মুখে.,একেতো মাত্রাতিক্ত পরিশ্রমে অন্য দিকে চোখে অপর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।ফুলী কিছুই বললনা সরাসরি ভিতরে প্রবেশ করেন।
-শোন,তোমার মামলাটা অনেকটা শেষের দিকে...
-আমার কথা বলতে এখন ইচ্ছে করছে না।

ফুলীর মানষিক অবস্হা বুঝতে  পেরে ভ্রু কুচকে চিন্তিত মনে ছোটন তার কথায় সায় দেন।
-ঠিক আছে পরে একদিন কথা হবে তবে আজ আমি এই রাতটা এখানেই অবস্হান নেবো।
খালা ছোটনকে পাশের ছোট এলোমেলো রুমটিকে গুছিয়ে দেন।ছোটন শুয়ে পড়েন,এ কাইত ও কাইত করতে থাকেন কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না।ভাবনায় আসে তার অতীত বর্তমান এবং ভবিষৎ....অস্পষ্ট অতীত ঘূণে পোকার ন্যায় তিল তিল করে তার হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করছে,অ-নিরাপদ বর্তমান তাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা দেখাই ভবিষৎ তবে ভবিষৎ যে অন্ধকার বদ্ধ গোহা তা তার কর্মই বলে দেয়।

'৭১ যুদ্ধে জন্ম পরিচয় হীন এক এতিম বালক অনাহারে অর্ধহারে বেচে থাকার সংগ্রামে সে আজ দেশের সন্ত্রাসীদের দলের সেরা মাস্তান।ভাবনায় কখন যে তার ক্লান্ত নেশা আসক্ত চোখের পাতাঁ এক হয়ে উঠে বুঝতে পারেননি।

কোন এক অপরাধে তার জন্য সালিশী বসেন তার নিজ গ্রামে।বেশ মোল্লা টাইপের মাতাব্বর আর ভঙ্গুর অসহায় হাড় কঙ্কাল সাড় জনতা উম্মুখ হয়ে চেয়ে রয়েছেন মাতাব্বরের মুখের দিকে।বিচারের কাঠগড়ায় ছোটন মাতাব্বরের প্রশ্নের উত্তর একের পর এক দিয়ে যাচ্ছেন।হঠাৎ সে রেগে যান কোন এক বিচারকের ছোটনের জন্ম পরিচয়কে কটাক্ষ করে কথা বলায়।
-এই মাতাব্বর....সাবধান! আমি ছোটন,আমার কোন জন্ম হয়নি আমি স্রষ্টার বিবি মরিয়মের গর্ভ থেকে এসেছি।আজ যারা এদেশে বসবাস করছেন নিশ্চিন্তে তা আমার জন্মের ফসল।
সভায় শ্মষানের নীরবতা।ছোটনের আত্ত্বপক্ষ সমর্থনের প্রতিটি শব্দই যেন সভাস্হলের উপস্হিত জনতার হৃদয়ে তীরের মতো আঘাত করছে।অত্যান্ত বিনয়ে নম্রতার সর্বোউৎকৃতায় ঘটে যাওয়া তার অতীতকে জনতার কাছে উপস্হাপন করে বার বার প্রশ্নের তীর জনতার মাঝে ছুড়ে দিচ্ছেন...প্রতিত্তোর নেই ....তার কাছে জনতা যেনো গুরুতর আসামীর কাতারে।
-বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলী এবং আমাদের গ্রামের অতি সাধারন জনতা আমি আজ ভাগ্যের অন্নেষায় ঘুড়তে ঘুড়তে বড়ই ক্লান্ত।কেনো আমি এমন হলাম,আমিতো আপনাদের সন্তানের মতোই উচ্চতর পড়া লেখা করতে স্কুলে কলেজে যেতে পারতাম!...যেতে পারিনি, জন্ম আমাকে বাধাঁ দেয়...স্কুল কলেজে পড়তে পিতৃ পরিচয় লাগে....যা আমি দিতে পারিনি,বলতে পারেন কে আমার পিতা?.....জানি পারবেন না,সর্বনাসী '৭১ এ হাজারো পাকিদের মধ্য থেকে তা বের করা সম্ভব নয়,....তাহলে এর জন্য কি আমিই দায়ী?
-ভূমিষ্টের পর মা আপনাদের মতো সমাজপতিদের দুয়ারে দুয়ারে কর জোড়ে মিনতি করে আশ্রয় চেয়েছিলেন,আপনারা তাকে আশ্রয়ের বদলে তাকে উপাদি দিয়েছেন...বেশ্যা, আর জনম দুঃখী এই আমাকে বলেছেন তখন নষ্ট বীজের ফসল।বলেন তো, এর জন্য কি আমার গর্ভধারিনী মা দায়ী?যাদের ইজ্জত সম্মান জানের বদলে এই স্বাধীন বঙ্গ ভূমিতে নির্বিগ্নে বসবাস করছেন তাদেরকেই করছেন অপমান আর অবহেলা!
-আজ যে জমিনে বসে স্বাধীন ভাবে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে তা আমার যুদ্ধে শহীদ হওয়া জন্মদাতা মায়ের স্বামীর দান আর তাদের সন্তানদের বলছেন আজ জারজ,অবৈধ আর নষ্ট ফসল!,তাহলে এ দেশটিকে জীবন দিয়ে স্বাধীন করা কি আমার পিতা-মাতার পাপ ছিল?.............................।।।।।।।।।

আমার মতো আরো অনেকে দত্তক হিসাবে দেশ থেকে বিতারিত করেছেন বিদেশে তাদের প্রশ্নের সাথে আমারও প্রশ্ন আমাকে একটি জন্ম সনদ পত্র এনে দিতে পারবেন যা দিয়ে আমিও আপনাদের সন্তানদের মতো বলতে পারবো,এই নাও আমার জন্ম পরিচয়।আমিও আপনাদের সন্তানদের মতো বাচতে চাই।।।।সেই অধিকার চাই।

আপনাদের সব অভিযোগ সকল শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো শুধু আমাকে আমার জন্মদাতা পিতার পরিচয়টা দিন...প্লিজ......।।।

শেষ রাতের নিস্তব্দতায় গোঙ্গানো কান্নার সূর ফুলীর কানে আসতেই ফুলীর লেগে যাওয়া ঘুম আবারও ভেঙ্গে যায়।ধীরে ধীরে সে বিছানা থেকে উঠে চিকন সূরে গোঙ্গানো শব্দ আসার গতি পথ লক্ষ্য করে ছোটনের শোবার ঘরের জানালায় উকিঁ দেয়...ফুলী ভয় পেয়ে যায় ছোটনের গোঙ্গানোর শরীরের ছটফটের তাড়নায় সে এবার ছোটনের ঘরে প্রবেশ করে ছোটনকে স্পর্শ করে ডাক দিতেই ছোট হঠাৎ বাচ্চা শিশুর মতো কান্না ঝড়া কন্ঠে ফুলীকে জড়িয়ে ধরেন।ফুলীও বুঝতে পারেন ছোটনের যন্ত্রনাটা কোথায় কেননা সেওতো ছোটনের মতো ভাগ্য বিড়ম্বনা কলংকিত এক অসহায় নারী।

এরই মধ্যে খালা যে কখন জেগে গিয়ে তাদের মাঝে ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলো অবলোকন করছেন তা তারা টের পাননি।খালা যেন পণ করে ফেললেন দ্রুত তাদেরকে বিয়ের পিড়িতে বসাবেন।

চলবে...

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা১০

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ