ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীঁরা ১২তম পর্ব

মনির হোসেন মমি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বুধবার, ০৯:৪৬:৪২অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

-গরীবের আবার অনুষ্ঠান,কিছুই হবে না শুধু মিষ্টি মুখ হবে।
-এটা কোন কথা হলো আপা আমরা আরো আশায় ছিলাম তোমার বিয়ের অজুহাতে হাফ বেলা ছুটি পাবো আনন্দ করব মন ভরে।সারাটা দিন মেইলেই কেবল কাজ আর কাজ আনন্দ করার কোন সুযোগ পাই না।
-আচ্ছা ধরো আমরা সবাই মিল্লা যদি খরচের টাকাগুলো দিলাম,দাওয়াতে প্রেজেনটেসনস পেলে টাকা ফেরত দিয়া দিবা।
মনের কোণে সুখের ছায়া উকি দেয় এই বুঝি জনম দুঃখী ফুলীর জীবনে সুখের বাতাস বহিতে শুরু করল।অনাথ ছোটন একজন সন্ত্রাসী হলেও মনের কোণে যতটুকু ভালবাসা ছিল তা কেবল ফুলীর জন্যই জন্মেছিল নতুবা সন্ত্রাসী ছোটনের জীবনে ভালবাসা ঘর সংসার এ সবের কোন অনুভূতি কোন কালেই তার মনে জাগেনি।টোকাইয়ের মতো জীবনকে টেনে হিচড়ে বড় করা জীবনে ওসব চিন্তা করা ছিল পাপ।

দু'দিন পরই বিয়ে পিড়িতে বসতে যাচ্ছেন গার্মেন্টস কন্যা ফুলী এবং শহরের আতংক ছোটন।দ'জনে আজ এক সঙ্গে বিয়ের কিছু কেনা কাটা করতে একটি প্রসিদ্ধ মার্কেটে যাবেন।ছোটন ফুলীকে তার হোন্ডার পিছনে বসিয়ে মনের সুখে হোন্ডা নিয়ে ছুটছেন রাজপথের অলি গলির মার্কেটগুলোতে কোথাও তাদের মনের মতো জিনিসপত্র মিলছে না,যদিও ফুলীর পছন্দ যা হচ্ছে তা আবার না নিয়েই দোকান থেকে বেড়িয়ে যান।যখন দোকানীকে দাম বা মূল্য দিতে চাচ্ছেন দোকানীরা মূল্য না নিয়ে ফ্রি তে গিফট দিয়ে দেন তাতে ফুলী অবাক হন।

-কি ব্যাপার বলুনতো,আপনার জিনিসের দাম নিচ্ছেন না কেনো?কেনো আমাকে ফ্রি দিচ্ছেন।
-না,মানে মেডাম ঐ ঐ যে......
-অই মিয়া ঐ ঐ কি, খুলে বলুন।
-না মানে...আপনি কি যে বলেন, ভাই" থাকতে আপনার কাছ থেকে টাকা নিবো কি করে।
ফুলী পিছন ফিরে লক্ষ্য করেন ছোটন দোকানীকে চোখের ইশারায় শাসাচ্ছেন।মনে ঘৃণা জন্ম নেয়...ছি! ফুলী তোর ছোটন এখনও সেই আগের মতোই আছে একটুও বদলায়নি।ফুলী মাল না নিয়েই অজানা উদ্দেশ্যে ছুটলেন।ছোটন পিছু পিছু ফুলীকে বিভিন্ন রকম ভাবে বুঝাবার চেষ্টা করেন।মার্কেট থেকে বেড়িয়ে রাজপথ দিয়ে হাটছেন দু'জনেই ...দূরত্ত্ব তার পর পাশা পাশি নীরবে পথ চলা।
-তুমি কি ভাবছ ওরা আমার ভয়ে তোমার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে না?তাহলে ভূল ভাবছ আমার জন্য ওরা আজ ব্যাবসা করতে পারছেন কিছু দিন আগেও ওরা চাদা দিতো কমপক্ষে দুই,তিন গ্রুপকে তারপরও মাঝে মাঝে ওদের মালিকের ওমুকের সন্তান তমুকের সন্তানকে অপহরন করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত.....যা এখন হয় না।
-বাহ্ চমৎকার, তবে তো আপনাকে সমাজ সেবকও বলা চলে।আইনের লোকেরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় আর আমার ওনারা দেশ সেবায় শ্রাদ্ধ করে বেড়ান,আজব দেশের আজব লোকজন....
-আরো কিছু আজব দেখো....ঐ দিকে তাকাও ঐ যে একটি ভ্যান গাড়ীতে কিছু থান কাপড় যাচ্ছে কিছুক্ষনের মধ্যে দেখবে অবাক হওয়ার ঘটনা,চলো একটু সামনে যাই।
প্রচুর জ্যাম জ্যামের ভিতর ধীরে ধীরে দুটি ভ্যানগাড়ী থান কাপড় নিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ বিজলির মতো এলোথেলো চুল আর নর্দমা থেকে উঠে আসা এক হিরোনচি এসে থান কাপড়ের উপর ধাড়ালো ব্লেডের ছোয়া দিয়ে দ্রুত হাওয়াই বেগে চলে যায়,ভ্যানওয়ালা লক্ষ্য করে মাথায় হাত...হিরোনচি ভ্যানওয়ালার কাছে দশটি টাকা চেয়ে ব্যার্থ হয়ে লক্ষ টাকার লোকসানের ঘটনা ঘটান।ঠিক ঐ সময়ে আরেক হিরোনচির কাজ দেখে অবাক হয় ফুলী...
-আর ঐ দিকে তাকাও....
অসহায় এক বৃদ্ধ ভিখারী প্রচন্ড খরা রোদে ক্লান্ত দেহে হঠাৎ হাটতে গিয়ে মাথা ঘুড়ে পড়ে ছিল রাস্তার এক সাইটে,বৃদ্ধটি অচেতন অবস্হায় শুয়েছিল উত্তপ্ত পাকা রাস্তায় এরই মাঝে কত লোক তাকে পাশ কেটে জীবনের তাগিদে ছুটাছুটি করছেন বলা মুসকিল এদের মাঝে পাঞ্জেয়ানা মুসল্লিরাও ছিল তারা ছুন্নতের আতরের পারফিউম নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে নাকে পাগড়ী দিয়ে চলে যাচ্ছেন বৃদ্ধটিকে নিয়ে ভাববার প্রয়োজনীতা মনে করেননি বলে ফিরে ও তাকায়নি।বৃদ্ধটির পাশ দিয়ে খালি পায়ে এক হিরোনচি হেটে যেতে চোখে পড়ে লোকে দান করা কিছু পয়সা পাকায় ছিটিয়ে আছে, লক্ষ ছিল চুরি করার যখন সে নীচু হয়ে পয়সা ধরতে যাবে তখন বৃদ্ধটির গোঙ্গানোর শব্দ পেয়ে থমকে যায় হিরোনচি, ভাবনায় পড়ে এতটা উত্তপ্ত পাকায় বৃদ্ধটি কি ভাবে শুয়ে আছে।হিরোনচি বৃদ্ধটিকে ডাক দেয় কোন সায় না পেয়ে....পাশ কেটে যাওয়া এক রিক্সাওয়ালাকে ডাকে।
-আবে ঐ সালার পো...এদিকে আয় একটু ধর ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।
রিক্সাওয়ালা না শুনার ভান করতেই রৌড়ে ধরে গালে দু'থাপ্পর লাগিয়ে দেয়।
-হালার পো মজা লাগেনি তোর বাপ যহন সুন্দর ভাবে ডাকছিল ...(মুখের ভিতর জিহবায় বিশেষ কায়দায় রাখা ধারলো ব্লেডের একটি টুকরা বের করে)একেবারে এ দিক দিয়ে টান দিমু পেটের ওজুড়িটা আলগোছে মাটিতে পড়ে যাবে।ধর ওকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।
-কি বুঝলে,দেখেছো কত কত ভালো, বড় বড় ধনী লোক কিংবা পাক্কা মুসল্লিরা বৃদ্ধটিকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো আবার ওরাই বলে সেবা করা ধর্মের আদেশ পালন করা অথচ নিজেরা কিছুই করবে না।তাহলে উত্তম কারা?.......বলো?
-আপনার প্রতি বাজে ধারনা আমার নেই তবে ওদের আর আপনার মাঝে পার্থক্য সামান্য ওরা বিষে বিষে বিষাক্ত হয়ে একদিন অকালে দুনিয়া ছাড়বে আর আপনি হঠাৎ কোন এক বন্দুকের গুলিতে যেমন কর্ম তেমন ফল পাবেন।
-সবইতো জানো,ঐ পথ থেকে ফিরতে হবে ধীরে ধীরে হঠাৎ তা সম্ভব নয়।
-তার মানে আপনি আপনার অবস্হানেই থাকবেন.....ঠিক আছে আমি চললাম।

ফুলী ছোটনকে হোন্ডায় রেখেই দ্রুত হাটা শুরু করেন।ছোটন পিছু ডেকেও কোন সাড়া পায়নি।অগত্যা ছোটন অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে তার চলার পথের দিকে হঠাৎ চোখ পড়ে কিছু আইনের পোষাকধারী লোক ফুলীকে টেনে গাড়ীতে তোলেন,এর মধ্যে ছোটন উচ্চ শব্দ করতে করতে হোন্ডা স্টার্ড দেয়ার সাথে সাথে গাড়ীটি ফুলীকে নিয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যায়।

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীরা ১১তম

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ