কৃষ্ণচূড়ার হাতছানি -২

মুক্তা ইসলাম ৯ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ০৩:০২:৫১অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

একটানা এতগুলাে প্রশ্ন করে স্ত্রীর কাছ থেকে কোনরুপ সাড়া শব্দ না পেয়ে হাসনাত সাহেব সােহিনীর হাত ধরে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন, কি হল কোন উত্তর দিচ্ছো না যে? আবার শরীর খারাপ করছে ? ভাল লাগছে না ?

সােহিনী নিশ্চুপ হয়ে তার স্বামীর বুকে মাথা ঘেষে তার স্বামীর বুকের গন্ধ শুকছেন। টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না। শুধু দুচোখ বেয়ে তার নিরব জলরাশি গড়িয়ে হাসনাত সাহেবের শার্টের বােতাম স্পর্শ করছে। মুহুর্তেই সােহিনী তার স্বামী হাসনাতের বুক চিড়ে একটা সাত/আট বছরের শিশুকে বের হয়ে তাদের বসার ঘরের দিকে দৌড়ে ছুটে যেতে দেখলেন। সােহিনীও বাচ্চাটির পিছন পিছন ডাকতে ডাকতে ছুটে গেলেন তাদের বসার ঘরের দিকে, বাবু!বাবু! এতাে জোরে দৌড়াচ্ছ কেন? ব্যাথা পাবে তাে বাবা।

এসব বলতে বলতে সােহিনী দৌড়াতে দৌড়াতে খুব ক্লান্ত শরীরে এক অচেনা ঝিল পাড়ে এসে পৌঁছালেন। চারিদিক নিস্তব্ধ হাহাকার । আশেপাশে জনমানবের চিহ্নটি পর্যন্ত নেই। সােহিনীর বাচ্চা নেই! স্বামী নেই! সােহিনী এবার কাঁদছে। খুব জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছে,“ হাসনাত! তুমি কোথায়? তুমি কোথায়? তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেওনা প্লিজ কোথাও যেও না! কোথাও যেও না! কোথাও না! সােহিনী খুব হাঁপাচ্ছে । কপাল থেকে ঘাম তার গলা বেয়ে বুকের উপর পরছে। মাথার চুলগুলাে সব ভিজে গেছে। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে এসেছে। পায়ের পাতাগুলাে খুব জ্বালাপােড়া করছে। চোখ মেলে সােহিনী দেখে। তার রুমের সিলিং ফ্যান অফ। গা তার এখনাে কম্বলে মােড়ানাে। ঘড়ির কাটা ১১ ছুঁই ছুঁই। বালিশের পাশে থাকা সোহিনী তার মােবাইল ফোন সিন করে দেখে তার স্বামীর অফিস থেকে তাকে করা চুয়াল্লিশটা মিসড কল উঠে আছে।

সােহিনী খুব দ্রুত তার স্বামী হাসনাত সাহেবকে কল দিলেন। ওপাশ থেকে হাসনাত সাহেব কল রিসিভ করে মায়া জড়ানাে কন্ঠে বলেন, সোনা! কত্তগুলাে কল দিয়েছি তুমি জানাে! চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম আজ তােমায় নিয়ে। তুমি ঠিক আছাে তাে ? সােহিনী খুব লজ্জ্বিত কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ওহহহ! সরি। আমি খেয়ালই করিনি তুমি এত্তগুলাে কল দিয়েছ। আমি ঠিক আছি। বাট জানো! আজও না আবার সেই দুঃস্বপ্নটা দেখেছি। এই স্নপ্নটা আমাকে খুব অস্থির করে তুলেছে। খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। আমি কি এবার পারব তােমাকে বাবা হতে সাহায্য করতে? বলাে না! তােমাকে সন্তানের মুখ দেখাতে? ওপাশ থেকে হাসনাত সাহেব উচ্চস্বরে হাসলেন। সােহিনী তার স্বামীর হাসির শব্দ শুনে একটু রেগেই বললেন, তুমি এতাে হাসছাে কেন? আমি কি হাসির কোন প্রশ্ন করেছি তােমায় ? তােমার মন খারাপ হয় না? এই যে দেখতে দেখতে বিয়ের এগারটা বছর কেটে গেল। তুমি এখনও বাবা হতে পারো নি, শুধু আমারই অসুস্থতার কারণে! তােমার কখনাে রাগ হয় না, আমার উপর?

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ