জহির সাহেব সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেল টিভিতে খবর দেখছিলেন। খুব
মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন তিনি। টিভি খুললেই খুন-খারাবির খবর। দেশে যেন শুধু এসবই চলে- খুন, ধর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি। তিনি নিজেও এমন একটি
অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাই তার মন ভালো নেই। থাকার কথাও না। এই মুহূর্তে যে অপরাধের ঘটনাটি টিভির খবরে প্রচারিত হচ্ছে সেটার প্রতি জহির সাহেবের একটু বাড়তি আকর্ষণ আছে।এর পেছনে কারণও অবশ্য আছে। তিন বছরের একটি ছোট ছেলে এসে তার মনোযোগ নষ্ট করে দিলো। কিন্তু জহির সাহেব রাগলেন না। শিশুটিকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিলেন, কোলে বসালেন। শিশুটি তার বড়ো মেয়ের ছেলে। বড়ো মেয়ের ঘরে আরেকটি
সন্তান আছে। পাঁচ বছরের রিতি। তার আদরের নাতনী। আর কোলে বসা শিশুটির নাম রাফিন। জহির সাহেবের স্ত্রী রমিজা খাতুন এসে রাফিনকে
নিয়ে গেলেন তার কাছে। জহির সাহেব আবার টিভিতে মনোযোগ দিলেন। তার মুখ গুরুগম্ভীর। রমিজা বুঝতে পেরেছেন তার স্বামী কিছু নিয়ে ভাবছেন। তাই নাতিকে নিজের কাছে নিয়ে নিলেন, আর স্বামীকে এক কাপ চা দিয়ে গেলেন। জহির সাহেব দুধ চা খেতে পছন্দ করেন।
জহির সাহেবের বড়ো মেয়ের নাম তুশি। তার আরও দুটি ছেলে মেয়ে আছে। তুশি সবার বড়ো। বিয়ে হয়েছে ছয় বছর হলো। সুখী সংসার তার। কিন্তু ৮ দিন হলো তুশিকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তার সাথে অন্য কিছু ঘটেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুধু সদর দরজার কাছে কিছু রক্তের দাগ দেখা গেছে। তুশির স্বামী আলম সেদিন বাড়ির বাইরে ছিল। ছোট বাচ্চা দুটি সকালে মাকে বিছানায় না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে দাদীর কাছে যায়।
তুশি নির্ভেজাল মানুষ। স্বামী, সন্তান, শাশুড়ি নিয়ে তার সুখের সংসার। তার সাথে কারোও কোনো বিরোধ
নেই। শাশুড়ির সাথেও তার খুব ভালো সম্পর্ক। এতোই ভালো সম্পর্ক যে অন্যরা হিংসে করতো। তুশির শাশুড়ি সাফিয়া বেগমও বুঝতে পারছেন না একটা
জলজ্যান্ত মানুষ কোথায় উধাও হয়ে গেল? তিনি টেরও পেলেন না! দরজা খোলার শব্দও পেলেন না। অবশ্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘোমান তিনি, টের না
পাওয়াই স্বাভাবিক। খবর শুনে আলম বাড়ি ফিরে এল৷ সে গিয়েছিল অফিসের ট্রেনিংয়ে। সেও কিছুই বুঝতে পারছে না, কী থেকে কী হলো। তার মাথায় যেন
বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়ল। কেউই কিছু বুঝতে পারছে না। এতদিন হয়ে গেল,
পুলিশও কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। মেঝেতে রক্ত ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো ক্লুও নেই। তুশির মতো এত ভালো মেয়ের কী কোনো শত্রু
থাকতে পারে? কারো বিশ্বাস হয় না।বিল্ডিং এর কেউ কেউ আবার কানাঘুষো করছে একজনকে নিয়ে। বলা যায় বদনাম রটাচ্ছে তুশিকে নিয়ে। তুশিরা যে ফ্ল্যাটে থাকে তার পাশের ছোটো ফ্ল্যাটে একটা ছেলে ভাড়া থাকত। তুশির ফ্যামিলির সবার সাথে তার ভালো
একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তুশি কি সেই ছেলের সাথেই পালিয়েছে কিনা সে বিষয়ে বিল্ডিংয়ের অনেক মহিলার সন্দেহ। আবার সেই বিল্ডিংয়েরই অনেকে
এটা মানতে পারছেন না। না, না, তুশি ভাবীকে দিয়ে এমন কাজ সম্ভব না। কী পরিবার অন্তঃপ্রাণ মেয়ে তুশি! সে করবে এমন কাজ? তবে বলা যায় না। যে দিনকাল পড়েছে! তুশির বাবা-মাও একথা বিশ্বাস করেন না। তারা তাদের মেয়েকে চেনেন। তাছাড়া ফুটফুটে দুটো সন্তান রেখে তুশির পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব না।
৩টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
গল্প টা কি এখানেই শেষ। তুশির রহস্য রয়ে গেল।
মোঃ মজিবর রহমান
পরবর্তী পর্ব আছে, না শেষ?
স্বপ্ন নীলা
জীবনটাই একটা রহস্য। গল্পটি ভালো লেগেছে। আরো পর্ব আছে ! নাকি শেষ হলো —