কাজের মেয়ে পর্ব –২

জি.মাওলা ৮ অক্টোবর ২০১৩, মঙ্গলবার, ০১:০৬:৩২পূর্বাহ্ন এদেশ ৩ মন্তব্য

তো নিজে তো কিছু কর না। চাটাও করতে বল কাজের মেয়েকে।ওর যদি তোমার প্রতি রাগ থাকে, আল্লাহ মালুম এমন কত কিছু তুমি খাবে। (ওয়াক থু)

@@ এবার আসুন দেখি ইসলাম কি বলে:
কাজের লোকদের প্রতি সদাচরণ রসূলের সুন্নত ।গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকা অর্থাৎ যাদের সাধারণ ভাষায় আমরা গৃহের কাজের লোক বলি তাদের প্রতি সদাচরণ করা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। যারা এ সুন্নতের বরখেলাপ করেন তারা গোনাহের পথই বেছে নেন। খাদেমদের সঙ্গে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যেমন সদাচরণ করতেন তেমনি তার অনুসারীদেরও একই শিক্ষা দিয়েছেন।
@@তিনি খাদেম বা কাজের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন, এরা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ-পাক এদের তোমাদের অধীন করেছেন। তোমরা যে খাবার খাও, তাদেরও তেমন খাদ্য দিও। আর তোমাদের কাপড় চোপড়ের মতো ওদেরও পোশাক পরতে দিও। তাদের সাধ্যের বাইরে কোনও কাজ দিওনা। যদি দিয়ে ফেল, তবে তোমরাও তাদের সাহায্য করো।’ (মুসলিম)

আমাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের মুমিন বলে পরিচয় দেন কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের প্রতি ততটা মনোযোগী নন। কাজের লোকের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো অনেকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আল্লাহর হাবিব, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজের লোকদের সঙ্গে ক্ষমাশীল হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
@@ তিরমিজি শরিফে বলা হয়েছে— এক লোক এসে রসূলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করছিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার গোলাম বা খাদেমকে কয়বার মাফ করবো? রসূল (সা.) চুপ থাকলেন।লোকটি তৃতীয় বার একই প্রশ্ন করলে উত্তরে রসূল (সা.) বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। (তিরমিযী),

@@একদিন রাসূল (সা.) দেখলেন, তারই এক সাহাবি আবু মাসউদ এক চাকরকে মারধর করছেন। তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, শোন হে আবু মাসউদ! মনে রেখ, তুমি এ গোলামটির সঙ্গে যে অধিকার দেখাচ্ছ, মহান আল্লাহ এর চেয়েও বেশি তোমার ব্যাপারে শক্তিশালী ও অধিকারী। এমন কথা শুনে অনুতপ্ত সাহাবি তখনই তাকে মুক্ত করে দিলেন। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, এটি যদি তুমি না করতে তবে অবশ্যই তোমাকে আগুনে জ্বলতে হতো। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)
>>আল্লাহ আমাদের গৃহ-পরিচারক ও পরিচারিকাদের সঙ্গে মানবিক আচরণের তৌফিক দান করুন।

@@ আমার কিছু প্রস্তাবনা: আমি কাজের মেয়ের সাথে জড়িত ৩ টি পক্ষকে নিয়ে কিছু প্রস্তাব করেছি। এগুলি মানলে আমার মনে হয় কাজের মেয়েদের প্রতি অন্যায় আচরণ কমবে।
@@ প্রথম পক্ষ মেয়ের অভিভাবক: আপনারা মেয়েকে পাঠিয়ে কি নিঃচিন্তে থাকেন তা খুব ভাল লক্ষণ নয়। তাই আপনাদের বলি:
১। যে বাড়িতে কাজে পাঠাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে ভালভাবে খোঁজ নিন।
২। আগেই বেতন সহ অন্যান্য বিষয়ে চুক্তি করে নিন।( তা ছাড়া ঠকার সম্ভাবনা আছে)
২। ওদের পরিবারের কর্ত্রীর ফোন নম্বর নিন। দরকার হলে ওদের ২-৩ টা নম্বর নিন।
৩। মাঝে মাঝে আপনার আদরের সন্তানের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন।
৪। প্রতি ৪-৬ মাস অন্তর মেয়ের সাথে দেখা করতে যান( এটি অন্তত করুন। আর এমন ভাবে যান যেন রাতে ঐ বাসায় আপনাকে থাকতে না হয়।)
@@ স্বামী বেচারা: আপনি বাড়ির কর্তা। আর আপনার বউ এর আরাম আয়েশ করার ব্যাপারে আপনিই দেখবেন। আপনার স্ত্রী কাজে কষ্ট হলে আপনি কাজের লোক জোগাড় করবেন।
হাদিসে আছে: স্ত্রীর কষ্ট হলে তার জন্য বাঁদির ব্যবস্থা কর। যত সম্ভব এরকম( সূত্র সহ কেও শেয়ার করলে বাধিত থাকব)
তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে নিচের বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলে নিন।
১। আগেই স্ত্রীকে সতর্ক করুন কাজের মেয়েটির সঙ্গে কোন রকম খারাপ ব্যাবহার করা যাবেনা।
২। কোন রকম শারীরিক আঘাত করা যাবে না।
৩। ভাল ভাবে খাবার খেতে দিবে।
৪। মাঝে মাঝে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলুন। তার পোশাক, চুরি ফিতের কোন আবদার আছে কি না।
৫। ৫-৬ মাস পর একসেট কমদামী হলেও উপহার দিন। এর দিন তা স্ত্রীর হাত দিয়ে।
অনেকে কাজের মেয়েকে এমন সব পোশাক( ছেড়া, ময়লা, পুরাতন) পরান তা দেখলে ওদের বখীলাপনার প্রমাণ মেলে ।
@@ মহিলাদের প্রতি: আপনি মা , আপনি মেয়ে। একজন মা বা মেয়ে হয়ে কেমন করে পারেন ঐ টুকুন বাচ্চার প্রতি খারাপ আচরণ করতে। আপনার তো বাচ্চা আছে আছে না। তো আপনাদের প্রতি আমার একান্ত অণুরোধ একটু সহনশীল আচরণ করুন। এর নিচের বিষয়গুলির প্রতি একটু নজর দিন। কারণ আপনার হোমমিনিষ্টি একান্ত আপনার। এখানে কেও নাক গলায় না। এই মিনিষ্টির রাণী পরিবারের সকলে এর প্রজা । তাই রাণী হিসেবে আপনি একটু ভদ্র ও বিবেচক না হলে তো রাজ্য চলবেনা। রাজ্যে তো কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দেবে।
১। একটু বিবেকবান হন।
২। গরিব বলেই তো আপনার বাড়ি কাজ করতে এসেছে। ওরও বাবা-মা ,ভাই-বোন আছে, আছে পরিবার। ও এখন তো আপনার পরিবারের সদস্য। ওর সঙ্গে একটু ভাল আচরণ করুন।
৩। আপনি যা খান ওদের তা খেতে দিন।
৪। গরিব বলেই তো পেটের দায়ে কাজ করতে এসেছে। এদের খাবার প্রতি একটু লোভ থাকে। আপনাদের বাড়ির নতুন নতুন খাবার ও জীবনে দেখেনি। মাঝে মাঝে চুরি করে তাই খেয়ে ফেলে। এতে না বকে বরং বুজিয়ে বলুন এবং ওকেও আপনাদের সঙ্গে খেতে দিন দেখবেন ও আর চুরি করে খাবে না।
৫। ও আপনার প্রতিটি কাজের হুকুম পালন করে। তাই আপনার স্বার্থে ওকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। ওকে পরিষ্কার জামা কাপড় পরান। মাঝে মাঝে মার্কেটে সঙ্গে গেলে চুরি , ফিতে, ক্লিপ, নেল পালিশ, মেহেদি, চুরি কিনে দিন। এগুলির প্রতি একটু লোভ হয় ওদের। ছোট মানুষ তো! ওর চোখের দিকে একটু খেয়াল করলেই আপনি ধরতে পারবেন ও কি চায়। দেখুন কেমন জুল জুল করে তাকাচ্ছে কোন জিনিসের প্রতি। এই ছোট ছোট কাজ ও ব্যবহারে ও আপনার কেনা গোলাম হয়ে যাবে।
@@ একটা গল্প না বললেই নয়: সাধারণ মানুষদের সন্তুষ্ট করা বা তাদের দিল জিতে নিতে বেশি কিছু করা লাগে না। একটু মিষ্টি কথা ও একটু ভাল ব্যবহার করলে ওরা আপনার ভক্ত হয়ে উঠবে। এটি আমি আমার জীবনের প্রতি পদে পদে শিখছি।
আমি তখন রাজশাহী থাকি। রাজশাহী হতে বাড়ি যাবার একমাত্র বাহন BRTC বাস। এই বাসের হেলপার বাবু। ওকে একবার রাজশাহীতে সাহেব-বাজারে এক হোটেলের সামনে দেখা হতেই যোর করে মিষ্টি- নিমকি খাইয়েছিলাম। আর একবার ঈদের আগের দিন রাজশাহী হতে বাড়ি যাবার সময় গল্পের ছলে জিজ্ঞেস করলাম ঈদে বাড়ি যাবে না। ও বলল- বলতে পারছিনা ভাই। যেতে যেতে সন্ধ্যা। তার পর দেখি যদি বাস পাই তাহলে বাড়ি যাব। ওর বাড়ি আমাদের সাপাহার হতে ৫০ কিমি দুরে জয়পুর হাট জেলায়। তো আমি প্রস্তাব দিলাম বাবু তুমি তো যেতে পারবেনা। চল আমার ওখানে ঈদ কর। ও এতই খুশি হয়েছিল ওর চোখ মুখ দেখে আমি তা বুজেছিলাম।
ও হেঁসে বলেছিল থাক ভাই বলেছেন এতেই আমি খুশি। একটা না একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
এর পর হতে বাড়ি হতে কোন কিছু পাঠালে ও আমার রাজশাহীর বাড়িতে দিয়ে যেত। এখন ঢাকা হতে ফোন দিয়ে যদি বলি বাবু অমুক দিন রাজশাহীতে নামছি একটা টিকেট রেখ। ও রেখে দাও।
মানুষের কাছে আমরা কি খুব বেশি কিছু চাই? চাই একটু ভাল ব্যবহার, একটু বিপদে সাহায্য। তো এর জন্য কাছের মানুষগুলির সাথে ভাল ব্যবহার তো করতে হবে।
৬। দুপুরে আপনার সাথে সাথে একটু ভাত ঘুম দিতে দিন। এতে ওর কাজে মন বসবে। সব কাজ ভাল করে করবে।
৭। গ্রামের মেয়ে তো, টিভির প্রতি একটু বেশি আসক্তি থাকে এদের। আপনার সঙ্গে সঙ্গে একটু টিভি দেখতে দিন। এতে ওর মন প্রফুল্ল থাকবে।
৮। টাকা পয়সা দিয়ে টুক টাক কিনতে দিচ্ছেন, তখন ওকে বলুন ওর জন্য একটা চকলেট/ চকবার/ চিপস/............... কিনতে। দেখুন ও আর আপনার এক দু টাকা চুরি করে চকলেট কিনবে না। আর কত খুশি হয়।
৯। ফ্রিজে রাখা খাবার গুলি , যেমন কমলা,আপেল, আঙ্গুর .............................. ওকে মাঝে মাঝে খেতে দিন। এগুলি ও গ্রামে থাকতে জীবনে দেখেনি। তাই এগুলির প্রতি একটা লোভ ওর ছোট মনে কাজ করে। তাই লুকিয়ে চুরি করে খাই।
১০। প্লেট , গ্লাস আলাদা করেছে এটি কেমন আচরণ। এ যেন সেদিন খবরে পড়লাম রাজশাহীর তানরে প্রত্যেক হোটেলে উপজাতিদের জন্য আলাদা প্লেট গ্লাস এর ব্যবস্থা। এদের নম্বর এবার ২। কি নিদারুণ ঘৃণা আমাদের।
ওর হাট দিয়ে সব বানানো খাবার খান আবার প্লেট ও গ্লাসের ব্যাপারে আলাদা। এ কেমন নীতি আপনাদের, এ কেমন শিক্ষা। এটিই কি আধুনিক শিক্ষা আমাদের?
১১। আর সবচেয়ে অবিবেচক হল কাজের মেয়েদের থাকার স্থান। ও বাবা তোমাদের একটা ঘর খালি পড়ে আছে , ওকে ওখানে ঐ খাটে কি শোয়াতে পাড়তেন না ? আচ্ছা ওর জন্য আলাদা বেডশীট এর ব্যবস্থা করুন। সকালে ও এগুলি তুলে আবার ভাল একটা বিছিয়ে দিবে।
কিন্তু কি করেন কি শীত কি গরম ওকে শুতে দেন হয় রান্না ঘরে অথবা বারান্দায়।
শীতের দিনে যত গদিই বিছান না কেন প্লাসটার করা ইটের মেঝে হতে কি রকম ঠাণ্ডা উঠে একবার ট্রাই করে দেখতে বলছি।

>>আপার বাসায় গেলে আমারই লোভ সামাল হয় না। ফ্রিজের মিষ্টি,কমলা,আপেল, আঙ্গুর দেখে। ও তো পিচ্চি মানুষ।
এই আমার এই ক্ষুদ্র মাথায় এসেছিল, তা লিখে ফেললাম। দয়া করে একটু দয়াবান অন্তত হোন। ( চলবে )

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ