এপিসোড – ৪২০ :p

আর্বনীল ১৯ জুলাই ২০১৪, শনিবার, ০৫:৪৩:৩৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১২ মন্তব্য

আমার সাথে ঘটে যাওয়া এমন একটা ঘটনা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ঘটনাটা ঘটেছিল কাল সন্ধ্যায়। ভাবছি এই ঘটনাটা ভুত এফএম এ পাঠাবো কিনা। যাইহোক, আমি সরাসরি ঘটনায় চলে যাচ্ছি – - – - – -
আমার বন্ধু তন্ময়! কয়েকদিন হল তার পাশের বাসায় নতুন একটা মেয়ে এসেছে। মেয়েটা দেখতে নাকি অপ্সরীর মত। দু-একবার তন্ময়ের চোখে পড়েছে। এতেই তার এই ধারনা। তবে আমার ধারনা হল দূরের জিনিস দেখতে বরাবরই সুন্দর হয়। আর কাছে গেলে পুরাই বান্দর হয়। মানে খারাপ হয় আরকি! যাইহোক, তন্ময়কে আমি বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম যে, মেয়েটাকে দূর থেকে দেখতে যতটা ভালো মনে হচ্ছে। কাছ থেকে সে ততটা ভালো নাও হতে পারে। কিন্তু কে বুঝে কার কথা? তন্ময় এক কানে আমার কথা শুনে আরেক কানে বের করে দিয়ে বলল, বুঝলি দোস্ত! এটা হল ‘Love At First Sight’ আমি বোধহয় সত্যিই মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি। এখন আর কিচ্ছু করার নাই। যেভাবেই হোক ওকে আমার ইমপ্রেসড করতে হবে। কিন্তু কিভাবে যে ইমপ্রেসড করাবো বুঝতে পারছিনা। একটা বুদ্ধি দেতো দোস্ত। আমি বললাম, কালতো আয়শা আপার ক্লাস আছে। ঐ ক্লাসটা আমার একদম ভাল্লাগেনা। কাল আপার ক্লাসে বসেই তোকে কার্যকরি একটা বুদ্ধি দেব। কিন্তু আমি যে তোকে বুদ্ধি দেব তার জন্যতো আমাকেও তোর কিছু দিতে হবে। তাইনা? ঐ যে ওইদিন ম্যাডাম কোন চ্যাপটারে বুঝালো না! ইনভেস্ট ছাড়া আসলে প্রফিট হয়না। এখন চল আমরা লাচ্ছি খাব। টাকা দুই দিবি। মানে আজ ইনভেস্ট করে রাখলি আর কি! পরে তার প্রফিট পাবি। বুঝলি? তন্ময় কিছুক্ষন কি যেন ভেবে রাজী হয়ে গেল। এটা ছিল প্রথম ঘটনা। আমি আসলে বিস্ময় সামলাতে পারছিলাম না। ত…ত…তন্ময় লাচ্ছি খাওয়াতে রাজী হয়েছে? 😮 তন্ময় বলল, চল যাই। তারপর আমি নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে একটা পাড়ার (নাম বললে সমস্যা হতে পারে) গলির প্রায় কাছাকাছি আসার পরই ঘটল সেই ঘটনাটা। যার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। তন্ময় বলল “দোস্ত! একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। আমিতো ভুল করে বাসায় মানিব্যাগ ফেলে এসেছি। এখন কি করি বলতো?”

আমি মনে মনে বললাম, শালা তুই যে এমন একটা নাটক করবি সেটা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল। হঠাৎ করেই তন্ময় বলে উঠল দোস্ত দেখ… দেখ…”

আমি গলির মুখে দোকানটার দিকে তাকালাম। একটা আট/দশ বছরের ছেলে দৌড়ে এসে দোকানে ঢুকল। তারপর হাপাতে হাপাতে দোকানদারকে বলল, মামা তারেক ভাই কইছে দুইটা টাইগার দিতায়। দোকানদার ছেলেটার হাতে দুইটা টাইগার দিয়ে দিল। ছেলেটা আবার দৌড়াতে দৌড়াতে চলেও গেল। এটা স্বাভাবিক একটা ঘটনটা। কিন্তু এর পর যা ঘটেছে। এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশ্বাস করুন এসব মনে হতেই আমার গায়ের ঘুমন্ত লোম সব জেগে উঠেছে। সে যাইহোক, যা বলছিলাম! আমি তন্ময়েত দিকে তাকিয়ে বললাম, এটা দেখার কি আছে বলদ? তন্ময় আমার দিকে কেমন যেন অদ্ভুত একটা কু-দৃষ্টি দিল। আমি আৎকে উঠলাম। ও বলল, দেখার কিছুই নেই? ওকে ফাইন! এখন দেখ। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তন্ময় ঐ ছেলেটার মত দৌড়াতে দৌড়াতে দোকানে গিয়ে ঢুকল। তারপর হাপাতে হাপাতে বলল, মামা! তারেক ভাই কইছে আরো দুইটা টাইগার দিতায়। দোকানদারও দেখলাম কিছু না বলেই দুইটা টাইগার ওর হাতে ধরিয়ে দিল। তন্ময়ও হাসতে হাসতে দোকান থেকে বেরিয়ে এল। আমার হাতে একটা টাইগারের বোতল ধরিয়ে দিয়ে বলল, নে দোস্ত! আজ টাইগার দিয়ে চালিয়ে নে। অন্যদিন লাচ্ছির ব্যাবস্থা হবে। আমি টাইগার হাতে দাড়িয়ে আছি। সুন্দর বনের বাফগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি। ফিলিংসটা এমনই। কিন্তু আমার বিস্ময় (খানিকটা ভয়ও) কিছুতেই কাটছেনা। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, তা… তারেক ভাইটা কে তুই চিনিস?

“আরে ধুর! তারেক ভাই কে এটা আমার চেনার দরকার কি? আমাদের যেটা দরকার ছিল আমরা সেটা পেয়ে গেছি। খা! খেয়ে ঠান্ডা হ’ ইদানিং যা গরম পড়েছে”
আমি বোতলটা খুললাম। কিন্তু গলায় ঢালতে পারছিনা। টেনশনে সারা শরীর বেয়ে ঘাম নামছে আমার। শুধু মনে হচ্ছে এই বুঝি কেউ আমাদের মারার জন্য তেড়ে আসছে। এই বুঝি কেউ আসছে… এই বুঝি শেষমেষ এসেই গেল……
(এতটুক শোনার পর রাসেল ভাই নিশ্চয় বলবে, এরপরওতো আপনার সাথে কিছু একটা ঘটেছিল বলেছিলেন। আমরা বরং সেটা শুনি…… ) 😀

হ্যা রাসেল ভাই! এরপরের ঘটনাটা ছিল আরো ভয়ংকর! রাতে আমার ঠিকমত ঘুম হল না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করে রাত কাটিয়েছি। ভাবলাম সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে টাইগারের দামটা মিটিয়ে যাব। কিন্তু কি বলে যে টাকাটা দেব সেটা বুঝতে পারছিলাম না। পুরো ঘটনাটা বললে যদি Case খেয়ে যাই? এসব ভাবতে ভাবতেই বাসা থেকে বের হলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর তন্ময়ের বাসা পরে। ওকেও ডেকে নিলাম। আমরা দুজনই চুপচাপ হাটছিলাম। কেউ কোন কথা বলছিলাম না। মোবাইল বের করে ফেসবুকিং ও করছিলাম না। যাইহোক, সেই দোকানটার কাছে আসতেই তন্ময় বলল, দোস্ত! তুই একটু দাড়া আমি আসছি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তন্ময় দোকানটায় গিয়ে ঢুকল। আমার গায়ের ঘুমন্ত লোম আবারও জেগে উঠল। তবে কি তন্ময় আবারও সেই ভয়ংকর ঘটনা………।।

ওহ গড! আমি যা ভাবছিলাম সেটা হয়নি। দেখলাম তন্ময় পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট বের করে দোকানের মামাটার হাতে দিয়ে বলল, মামা! কাল দুইটা টাইগার নিয়েছিলাম। তারেক ভাই টাকাটা আমার হাতেই পাঠিয়ে দিল। আর বলল, বাকি টাকাটা উনি নিজে এসে দিয়ে যাবে। মামা দুইটা টাইগারের দাম রেখে বাকি টাকাটা ফেরত দিল। তারপর তন্ময় হেসে হেসে দোকান থেকে বের হয়ে এল। দোস্ত! কাল রাতে একদম ঘুমোতে পারিনি। সারা রাত একধরনের অপরাধবোধে ভুগছিলাম। এখন পাপ মুচন করে এসেছি। চল এবার ক্লাসে যাই।।। হঠাৎ করেই আমার মনের মাঝে একধরনের আনন্দের ডেউ খেলে গেল। ভাবতে ভাল্লাগছে তন্ময় আমার বন্ধু। আমার কাছে যে ব্যাপারটা ঠিক মনে হয়নি। তার কাছেও সেটা ঠিক মনে হয়নি। এবং সে তার ভুল নিজে থেকেই শুধরে নিয়েছে। কাউকে বলে দিতে হয়নি। আসলে অপরাধ করার পর যাদের মনে অপরাধবোধ জন্মায় তারাই মানুষ। অন্যরা সব অমানুষ। আমি হাটছি আর ভাবছি… ইস! সব মানুষ যদি তন্ময়ের মত হত………

 

বিঃদ্রঃ এই ঘটনায় ‘ভুত এফএম আর রাসেল ভাই” আমার অনিচ্ছায় ঢোকে পরেছে। লেখা শেষে ব্যাপারটা আমার চোখে পড়ে। এর পেছনেও নিশ্চয় কোন রহস্য আছে। :p

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ