এক মুঠো ভালোবাসা (১৩তম পর্ব)

ইঞ্জা ১২ জুন ২০১৯, বুধবার, ০৮:৫৪:৪৮অপরাহ্ন গল্প ৩৩ মন্তব্য

 

ড্রয়িং রুমে এসে অনিক ছায়াদের বসিয়ে নিজে গেল ফাস্টএইড বক্স আনার জন্য, সে খেয়াল করেছে ছায়ার পা ফুলে গেছে, ফাস্টএইড বক্স নিয়ে ফ্রিজ থেকে অল্প কয়েকটা বরফ কিউব নিলো, এরপর ড্রয়িংরুমে এসে ছায়ার সামনে ছোট টি টেবেল রেখে বললো, তুমি এইটার উপর পা রাখো।
ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন?
তোমার পায়ের ব্যাথা ঠিক করতে হবেনা?
না না ও আমি করে নেবো, আপনি আমাকে দিন।
এই একদম চুপ, পা তোলো বলছি বলেই নিজেই ছায়া পাটা হাল্কা ভাবে ধরে তুলে টেবিলে রাখলো অনিক।
আমি কি হেল্প করতে পারি, আফরিন বললো।
না তা এখন দরকার নেই, বলেই অনিক বরফ নিয়ে ছায়ার পায়ে হাল্কা করে লাগাতে লাগালো, এরপর ছোট টাওয়েল দিয়ে পা মুছে নিয়ে পেইন কিলার ক্রিম লাগিয়ে হাল্কা করে মাসাজ করতে শুরু করলো, এরপর পাটা এক হাতে নিচে থেকে ধরে আরেক হাত দিয়ে এদিক ওদিক করছে, ও খেয়াল করছে ছায়া ব্যাথায় কুঁচকে যাচ্ছে, হটাৎ একটা টান দিতেই ছায়া ও মাগো করে উঠলো।
কি হলো, বেশি ব্যাথা পেয়েছো?
হাঁ।
উঠে দাঁড়াও তো, দেখো হাটতে পারো কিনা?
ছায়া আসতে করে উঠে দাঁড়ালো এবং ধীরে ধীরে পা ফেলে হাটতে লাগলো।
কি ব্যাথা আছে?
ছায়া অবাক চোখে ফিরে তাকালো অনিকের দিকে আর বললো, নাহ কোন পেইন নেই দেখছি।
হুম আসলে তোমার পায়ের গোঁড়া নড়ে গিয়েছিলো।
আফরিন এতক্ষন হাঁ করে দেখছিলো অনিকের কান্ডকারখানা, জিজ্ঞেস করলো আপনি এ কাজ কই শিখলেন?
ছায়ার বাবাই শিখিয়েছিলেন আমাকে, আচ্ছা তোমরা গল্প করো, আমি রান্না চুলাতে দিয়ে আসছি।
না আপনারা বসুন আমিই করছি, ছায়া বললো।
থাক, তুমি এখন পা টিকে রেস্ট দাও, আফরিন মাছ মুরগী চলবে তো?
আজ না অনিক স্যার, আমি আজ উঠি।
আরেহ বসো, আটটার মধ্যে আমার রান্না হয়ে যাবে, খেয়ে যেও।

খাওয়া রেডি হয়ে গেলে অনিক রওশনের বাবাকে নিয়ে আসতে গেলো, রুমে নক করে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো রওশনের বাবা রুমের সোফায় বসে ম্যাগাজিন পড়ছেন।
আনকেল কখন উঠেছেন, ঘুম হয়েছে?
হাঁরে বাবা, তুই দেখছি সব ইঞ্জিনিয়ারিং বই রেখেছিস সব।
অনিক হেসে বললো, আনকেল খাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে, আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।
এতো তাড়াতাড়ি ভাত খাবো, মাত্র তো আটটা?
আনকেল বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে, আচ্ছা আগামীদিন থেকে একটু দেরি করে দেওয়া হবে, আসুন।
রওশনের বাবাকে ধরে ডাইনিংয়ে নিয়ে এসে অনিকের চেয়ারে বসিয়ে দিলো, নিজে বসলো পাশের চেয়ারে। আফরিন ও ছায়া অলরেডি চলে এসেছে ডাইনিংয়ে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো, বাবা এখন কেমন লাগছে?
টপ অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড।
সবাই হেসে দিলো এক সাথে, অনিক রওশনের বাবার প্লেটে ভাত সবজি, মাছ তুলে দিয়ে বললো, আনকেল মাছটাতে কোন কাঁটা নেই, আপনি খেতে পারবেন।
ছায়া উঠে বাকিদের প্লেটে খাবার তুলে দিলো, রওশনের বাবা জিজ্ঞেস করলো অনিককে, অনিক ওকে তো চিনলামনা?
আনকেল ও আমার সেক্রেটারি।
বাঙ্গালী মনে হচ্ছে?
আনকেল আমার নাম আফরিন, আমি বাঙ্গালী হলেও জন্ম এই দেশে।
খুব ভালো, তা বাংলাদেশে বাড়ী কই তোমাদের?
ঢাকার ধানমন্ডিতে।
আনকেল আপনাকে মুরগী দিই।
দাও বাবা, লেগ পিছ আছে?
হাঁ আনকেল দিচ্ছি, আমি জানতাম আপনি লেগ পিছ পছন্দ করেন।
মনে আছে তোর?
অনিক হাসলো।
ছায়া অবাক হয়ে শুনছিলো অনিক আর তার শ্বশুরের কথা গুলো, তা খেয়াল করে রওশনের বাবা হেসে বললেন, অনিক তার বাসায় কম আমার বাসায় বেশি সময় কাটিয়েছে মা।
তাই বাবা?
হাঁ রওশন আর অনিক, দুজনেই ছিলো যেন দুই ভাই, চোখ ছলছল করে উঠলো উঠলো উনার।

ডিনার শেষে আফরিন বিদায় নিতে চাইলে অনিক আর ছায়া উঠে গেলো দরজা পর্যন্ত, ছায়া আফরিনের হাত ধরে বললো, এই দেশে এসে আমার কারো সাথে তেমন পরিচিত ছিলোনা, আজ তোমার সাথে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগলো, তুমি আমার বন্ধু হবে?
সিউর, আমরা বন্ধুই তো, হেসে আফরিন বললো।
ছায়াও হেসে বললো, বিদায় বন্ধু।
বিদায় বন্ধু।
আফরিন, কাল তাহলে কাজ গুলো করে নিও।
ওকে অনিক স্যার, বাই।
বাই।
আফরিন চলে গেলে অনিক রওশনের বাবাকে রুমে দিয়ে আসলো, সাথে একটা ইমার্জেন্সি কলবেল দিয়ে আসলো যাতে চাপ দিলে অনিকের রুমে বেল বাজে, এইটা ও গতবছর লাগিয়েছিলো ওর বাবার জন্য।
ডাইনিংয়ে এসে সব কিছু পরিস্কার করে তুলে রাখলো, ছায়াকে বললো, তুমি কি এখনই শুয়ে পড়বে?
জ্বি যাবো, আপনি কবে যাচ্ছেন হংকং?
আশা করছি পরশু।
আমি ভাবছিলাম বাবা সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন, এখন আমাদের জন্য একটা বাসা নিয়ে সেখানে উঠে পড়বো।
কেন এইখানে কোন সমস্যা হচ্ছে?
না না কিসের সমস্যা, এরপরেও।
হাত তুলে অনিক ছায়াকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললো, কোন সমস্যা না থাকলে এইখানেই থাকো, ওকে আর কোন কথা নয়, তুমি শুয়ে পড়ো।
ছায়া ধীর পায়ে নিজ রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো ছায়া, অনিক ড্রয়িং ডাইনিংয়ের বাতি নিভিয়ে নিজ রুমে যাওয়ার আগে উঁকি দিয়ে দেখলো রওশনের বাবাকে, উনি ঘুমাচ্ছেন দেখে অনিক নিজ রুমে চলে গেলো।

রুমে এসে অনিক স্লিপিং ড্রেস পড়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো, ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম কি আর সহজে আসে, বারবার ছায়ার কথা ভাবছে, এতোদিন ও এ বিষয়ে ভাবেনি, যখন ছায়া বললো ও আরেকটা বাসা নিয়ে চলে যাবে তখন থেকেই ওর মাথায় ছায়ার ভাবনা পেয়ে বসেছে, আচ্ছা আমি কি এখনো ছায়াকে নিজের জীবন থেকে সরাতে পারিনি, আচ্ছা ও কেন যেতে চাইছে, থাকুক না আরো কিছুদিন, এটলিষ্ট ওর সামনে তো থাকবে, ধুর কি সব ভাবছি আমি?
অনিক উঠে রুম থেকে বের হয়ে মিনিবার থেকে ড্রাই জিনের বোতল বের করে একটা গ্লাসে লার্জ পেগ বানিয়ে ঢকঢক করে মুখে চালান করে দিলো।
আপনি এখনো ঘুমাননি?
অনিক চমকে উঠে ফিরে তাকালো, ছায়াকে দেখে বোকার মতো হাসলো।
আচ্ছা কি খাচ্ছেন, এইটা খেলে কি ঘুম আসে?
তা আসে।
আমাকেও দিননা, ঘুম আসছেনা।
না নাহ, তুমি খেতে পারবেনা, তুমি শুয়ে পড়ো এমনিতেই ঘুম এসে যাবে।
ছায়া খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললো, ভয় পাচ্ছেন আমি মাতাল হয়ে যাবো বলে?
অনিক আবার বোকার মতো হাসলো।
ছায়া এগিয়ে এসে আরেকটা গ্লাস নিয়ে নিজে ঢাললো এক পেগ সমান, ফ্রিজ থেকে ২ টা লেবু নিয়ে কয়েক টুকরো করে একটা প্লেটে নিয়ে এসে নিজেরটাতে দুই টুকরো চিপে রস ঢেলে নিয়ে দুই চুমুক দিয়ে ফিরে তাকালো অনিকের দিকে, অনিকের হা করা মুখটা দেখে আবার খিলখিল করে হেসে দিলো।
তোমার অভ্যাস আছে দেখছি, অনিক বললো।
হাঁ তবে অল্প, ছায়া বাকিটুকু জিন গলায় ঢেলে দিলো।
রওশন শিখিয়েছে, আসতে করে অনিক প্রশ্ন করলো।
ছায়া ওর ভাবনার জগতে কিছুক্ষণ ডুবে গেলো।
কি বললেনা?
ছায়া ফিরে তাকালো অনিকের দিকে তারপর বললো, হাঁ।
তুমি ওকে ভুলতে পারোনি না?
কেন ভুলবো, ভুলতে চাইও না।

.......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ