এক মুঠো ভালোবাসা (১২তম পর্ব)

ইঞ্জা ৩ জুন ২০১৯, সোমবার, ১১:২৪:৫২অপরাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

 

পরদিন সকালে ছায়া ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে লাগলো, অনিক রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসে বললো, শুভ সকাল।
শুভ সকাল, রাতে ঘুম হয়েছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ কিন্তু এখন মাথাটা ভারী হয়ে আছে, আমাকে একটু লেবু পানি দিতে পারবে?
ওয়েট আনছি বলে ছায়া ফ্রিজ থেকে লেবু নিয়ে দুই টুকরো করে গ্লাসে রস ছিবড়ে নিলো, এরপর গ্লাসে পানি ঢেলে চামুচ দিয়ে নাড়লো।
আজ কি বানিয়েছো ব্রেকফাস্টে?
গ্লাস এগিয়ে দিয়ে ছায়া বললো, লুচি, সুজির হালুয়া আর পোস্ট এইগ।
অনিক লেবু পানিটা ঢক ঢক করে গলায় ঢেলে দিয়ে বললো, বাহ আজ দেখছি জম্পেস ব্রেকফাস্ট হবে।
এখন দেবো?
দাও।
ছায়া টেবিলে প্লেট দিয়ে ব্রেকফাস্ট সার্ব করলো, সাথে নিজেও বসলো।
অনিক লুচি দিয়ে সুজি নিয়ে মুখে দিয়েই উঁহ হু করে উঠায় ছায়া খিল খিল করে হেসে বললো, আরেহ গরম তো।
অনিক কয়েক দফা চাবিয়ে গিলে নিলো, আসলে খেয়াল করিনি, তা তুমি হাসপাতালে কয়টার সময় যাবে?
বারোটার দিকে চলে যাবো, ওখানকার ফরমালিটি গুলো শেষ করে নেবো।
আরেহ না, অত তাড়াতাড়ি গিয়ে লাভ নেই, ওদের মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে, এরচেয়ে বেটার তুমি তিনটা করে যাও, সাথে আমিও যাবো।
কেন আপনার অফিস নেই আজ?
না আজ সারা আমেরিকা বন্ধ, ৪ঠা জুলাই আজ, এছাড়া আমার সেক্রেটারিকে বলেছি ফ্যাক্টরি থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে আসার জন্য, গাড়ী এলেই বেরুবো আমরা।
দুপুরে কি খাবেন, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
দুপুরে আজ হাল্কা কিছু খাবো, মাছ হলে খারাপ হবেনা।
ওকে তাহলে রেডি করা শুরু করি।
হুম, আমি একটু শুয়ে থাকি, মাথাটা হাল্কা হোক।

দুপুরে আফরিন সময় মতোই পোঁছে গেলো গাড়ী নিয়ে, অনিককে ফোনে জানালে অনিক বললো ওরা আসছে।
একটু পরেই অনিক আর ছায়া গাড়ীতে উঠে আসলে আফরিন বললো, হাই।
হাই আফরিন, বাসা চিনতে কষ্ট হয়নি তো?
নাহ অসুবিধা হবে কেন, পপুলার এড়িয়া এইটা।
আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দিই, ও হলো ছায়া, ওর বাবাকেই হাসপাতাল থেকে আনতে যাবো।
আফরিন হাত বাড়িয়ে দিলে ছায়া ওর সাথে হ্যান্ডসেইক করলো, আফরিন বললো, হাই ছায়া, আমি আফরিন, নাইস টু মিট ইউ।
ধন্যবাদ আফরিন, সেইম হিয়ার।
আচ্ছা চললো আমরা রওনা হয়ে যায়, দাও,আমিই ড্রাইভ করি।
সিউর, আফরিন জবাবে বললো।
ড্রাইভ করতে করতে অনিক বললো, ছায়া সকালে কি মি. রবার্টসনের মেইলটা চেক করেছো?
জ্বি করেছি, ওরা স্যাম্পল চাইছে।
হুম তাহলে কালকেই এরেঞ্জ করে দাও, মামা লুসির হেল্প নিও।
এতক্ষণ ছায়া চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলো আর ভাবছিলো মেয়েটা খুব সুন্দর ও মিষ্টি, হটাৎ আফরিনের ডাক শুনে তাকালো।
আফরিন বলছে, ছায়া আনকেলের কি হয়েছিলো?
বাবার, ব্রেইনে ব্লক হয়েছিলো, মানে ব্রেইন স্ট্রোক।
ওহ সো স্যাড, এখন কেমন আছেন?
হাঁ এই জন্যই তো রিলিজ দিচ্ছে।
তা দেশ থেকে কবে এসেছেন?
প্রায় এক বছর হয়।
আফরিন, আরেকটা কাজ করবে আগামীকাল।
কি কাজ অনিক স্যার?
আমার পাসপোর্ট অফিস থেকে কালেক্ট করে হংকংয়ের টিকেট করে নেবে, আমি ডেস্কে মেমো দিয়ে রেখেছি।
ওকে।
এএ মধ্যে ওরা হসপিটালের প্রবেশ গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো, আফরিন আর ছায়া নেমে গেলে অনিক গাড়ী পার্কিং করতে গেলো।

ছায়া আফরিনকে নিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে গেলো, হটাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো, আফরিন ছায়াকে হোঁচট খেয়ে পড়তে দেখে দ্রুত ওকে ধরার চেষ্টায় নিজেও পড়ে যাওয়ার অবস্থা হলো, নিজেকে সামলে ছায়াকে ধরে উঠালো।
আহ, এক পায়ে দাঁড়িয়ে কোঁকালো ছায়া।
কি বেশি ব্যাথা পেয়েছেন, আফরিন উদ্বীগ্ন হলো।
মনে হয় পা মচকেছে।
ইশ।
আচ্ছা আমাকে ধরে এগিয়ে চলুন, পারবেন তো?
হাঁ দেখি বলে ছায়ার কাঁদে হাত দিয়ে এগিয়ে চলতে লাগলো, লিফটের সামনে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো ওরা, ইতিমধ্যে অনিক এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোমার?
হোঁচট খেয়েছি।
আহা, বেশি ব্যাথা পেয়েছো?
পা রাখতে পারছিনা চিনচিনে ব্যাথা।
ওরা উপরে উঠে আসলে অনিক ছায়াকে রিসেপশনে বসিয়ে হাসপাতাল কর্মিদের বলে একটা আইস ব্যাগ আনিয়ে ছায়ার পায়ে চেপে ধরলো।
অনিক বাবাকে রিলিজ করতে হবে, ছায়া কাতর কণ্ঠে বললো।
ও নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা, আমিই সব করছি, বলেই বললো কাগজপত্র গুলো দাও, ছায়া সব কিছু দিলে অনিক উঠে গেলো।
পনেরো মিনিট পর রওশনের বাবাকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে এলো।
ছায়া উঠে দাঁড়াতে চাইলে আফরিন দ্রুত ধরে নিজের কাঁদে ভর দিয়ে দাঁড় করালো।
বাবা কেমন আছো তুমি।
আমি তো একদম ভালো, তোর কি হয়েছে, শুনলাম নাকি পা মচকেছিস?
হাঁ একটু মচকেছে।
আচ্ছা চলো আনকেলকে নিয়ে বাসায় যায়।

ঘন্টা খানেক পর অনিকরা সবাই বাসায় পোঁছালে অনিক রওশনের বাবাকে গেস্ট রুমের বিছানায় শুয়ে দিলো এবং জিজ্ঞেস করলো, আনকেল কি খাবেন এখন?
একটা কড়া চা, হবে?
কেন হবেনা, আমি এখনই নিয়ে আসছি।
ছায়া বাধা দিলো, অনিক আমি করে নিয়ে আসছি।
মাথা খারাপ, নিজে তো দাঁড়াতেই পারছোনা, আমিই নিয়ে আসছি, বলে অনিক চলে গেলো কিচেনে, যাওয়ার আগে ড্রয়িংরুমে বসা আফরিনকে জিজ্ঞেস করলো চা কফি কিছু খাবে কিনা?
কফি বেটার হবে কিন্তু ব্ল্যাক, জবাবে আফরিন জানালো।
ওকে বলে অনিক এগুলো কিচেনের দিকে, পিছন পিছন আফরিনও এলো।
আপনার ফ্ল্যাটটা বেশ বড়, কবে নিয়েছেন এইটা?
এইতো দুই বছর হয়ে গেলো।
সাজিয়েছেনও বেশ, বেশ রুচিশীল কাজের ছাপ আছে পুরা ফ্লোরে।
তাই, ধন্যবাদ।
আপনি একাই থাকেন?
হুম প্রায় একাই বলতে পারো, অবশ্য এখন উনারা আছেন আর আগামী সপ্তাহে আমার বাবা আসবেন।
তাই, খুব ভালো তো।
চলো গেস্ট রুমে যায়, সেখানে বসে খাবো, ট্রেতে চা কফি আর কিছু কুকি ভর্তি প্লেট নিয়ে এগুলো অনিক, রুমে এসে বেড সাইড টেবিলে কুকি আর চা রেখে কফি গুলো সবাইকে দিলো সবাইকে, ইতিমধ্যে রওশনের বাবা উঠে বসলে উনাকে চার কাপটা এগিয়ে দিলো।
রওশনের বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, আহ সেই স্বাদ, একদম আগের মতোই আছে।
আনকেল আপনার মনে আছে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
কেন থাকবেনা, আলবত আছে।
আনকেল কুকি নিন, এও এড়িয়াতে এই কুকি খুব জনপ্রিয়।

............ চলবে।
ছবি গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ