এক মুঠো ভালোবাসা (১০ম পর্ব)

ইঞ্জা ২৭ এপ্রিল ২০১৯, শনিবার, ১১:২৭:১০অপরাহ্ন গল্প ৩১ মন্তব্য

 

যেভাবে ভূমিকম্প শুরু হলো, সেভাবেই শেষ হয়ে গেলো, অনিক আসে পাশে তাকালো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে, এরপর বেরিয়ে আসতে গিয়ে বাধা পেল হাতে, ছায়া অনিকের হাত চেপে ধরে আছে, সাথে থরথর কাঁপুনি।
ভূমিকম্প থেমে গেছে ছায়া, আসো বেরোও।
ছায়ার অনিকের হাত ধরে বেরিয়ে এলেও ওর কাঁপুনি থামেনি এখনো, অনিক ওকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো, তুমি বসো আমি পানি নিয়ে আসছি।
আঁতকে উঠে ছায়া বলে উঠলো, না না আমিও যাবো।
আরেহ ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, এমন মাঝে মাঝে হয়, তুমি বসো, বলেই অনিক বেরিয়ে গেলো রুম থেকে, একটু পরেই ফিরে এলো গ্লাসে করে পানি নিয়ে, নাও পানিটা খেয়ে নাও।
ছায়া হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেলো, এরপর তাকালো অনিকের দিকে, অবাক হয়ে দেখলো অনিকের কপাল কেটে গেছে।
ইশ আপনার তো কপাল কেটে গেছে।
কি বলো, অনিক অবাক হয়ে কপালে হাত দিলো, এরপর হাত নামিয়ে দেখলো হাত রক্তে ভিজে গেছে।
আপনার এখানে ফাস্টএইড বক্স আছে?
ওয়াল আলমিরাতে আছে, কাটলো কিভাবে?
ছায়া দ্রুত এগিয়ে ফাস্টএইড বক্স বের করে নিয়ে এসে অনিকের পাশে বসলো, এন্টিসেপটিক বের করে প্রথমে তুলায় লাগিয়ে নিয়ে মুছতে লাগলো, অনিক নাক মুখ কুঁচকায়ে রাখছে দেখে বললো, বেশি জ্বলুনি হচ্ছে না?
হুম অল্প।
ছায়া একটা ব্যান্ড এইড খুলে নিয়ে হাল্কা চাপে লাগিয়ে দিয়ে বললো, আপনি শার্ট চেইঞ্জ করে ফেলুন, পুরা শার্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে।
অনিক উঠে গিয়ে আলমিরা থেকে একটা টিশার্ট বের করে বাথরুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে আসলো, এসে দেখে ছায়া পুরা রুম গুছিয়ে রাখছে, অনিকও হাত লাগালো।

রুম গুছিয়ে দুজনে রুম থেকে বের হয়ে দেখে বিভিন্ন জিনিষপত্র এইদিক ওদিক পড়ে আছে, দুজনে মিলে সব গুছানো শুরু করলো, কলিংবেলের শব্দ শুনে অনিক এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো লোকাল সিকিউরিটি অফিস থেকে লোক এসেছে, ওরা জানতে চাইছে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা।
অনিক না বলাতে ওরা চলে যেতে উদ্ধত হলে অনিক জানতে চাইলো ভূমিকম্পের মাত্রা কত ছিলো?
৫.৬ মাত্রা ছিলো, এইখান থেকে বিশ কিলোমিটার উত্তরে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো বলে বেশি অনুভূত হয়েছে।
ধন্যবাদ জানিয়ে অনিক দরজা বন্ধ করে ফিরে এলে ছায়া জিজ্ঞেস করলো ডিনার কখন খাবেন?
দেখি এখন রান্না করবো।
রান্না আমি করে রেখেছি, দেখলাম ওগুলো সব ঠিক আছে।
তুমি রান্না করতে গেলে কেন?
আমি ফ্রিই আছি তাই রান্না করলাম।
ঠিক আছে তাহলে ফ্রেস হয়ে নাও, আমিও ফ্রেস হয়ে আসছি।
কিছুক্ষণ পর ওরা খেতে বসলো, খাওয়ার মাঝেই ছায়া বল ও হসপিটালে ফোন দিয়েছিলো, ওদের ওখানে তেমন কোন সমস্যা হয়নি, বাবা ঠিক আছে, এখনো ঘুমাচ্ছেন।
খুব ভালো খবর, ভালো করেছো ফোন দিয়ে।
আচ্ছা এইখানে কি ভূমিকম্প বেশি হয়, ছায়া জানতে চাইলো।
বেশি হয়না, কিন্তু মাঝে গত দুই বছরে এইটা সহ তিনবার হলো।
তাই, ভয়নাক ব্যাপার।
হুম তা তো ভয়ানক।

পরদিন সকাল আটটায় অনিক ছায়াকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এলো রওশনের আব্বাকে দেখতে, উনার ঘুম ভেঙ্গেছে ঘন্টা খানেক আগে।
ছায়া এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, বাবা কেমন লাগছে এখন?
আমি তো ঠিক আছি, তুই কেমন আছিস মা?
আমি কিভাবে ভালো থাকি বাবা, আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলে আমিও ঠিক থাকবো, বলতে বলতে চোখের কোন বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো ছায়ার।
কাঁদছিস কেন মা, দেখ আমি একদম সুস্থ আছি, অনিক তুই কেমন আছিস ব্যাটা?
অনিক এগিয়ে আসলে রোশনের বাবা হাত বাড়িয়ে ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, তোকে দেখা মানে আমার রওশনকে দেখা।
আনকেল এখন কেমন লাগছে আপনার, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
তোকে দেখে একদম সুস্থ হয়ে গেছিরে।
তুই সেই যে এলি এইদেশে, আর ফিরলিনা কেন ব্যাটা?
আনকেল আমি এইখানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
খুব খুশি হয়েছি তোকে দেখে, তোর ঠিকানা ছায়াকে দিয়ে রাখিস, আমি সুস্থ হয়ে উঠলে তোর কাছে যাবো।
বাবা আমি এখন উনার বাসাতেই আছি, এক সপ্তাহ ঐ বাসায় না যাওয়াই নিগ্রো মহিলা অন্য আরেকজনকে বাসা দিয়ে দিয়েছে।
কি বলিস, কেন?
বাবা ওসব পড়ে বলছি, তোমাকে সকালে কিছু খেতে দিয়েছে ওরা?
হাঁ, ওরা স্যুপ আর কিছু ফ্রুট দিয়েছে?
আর কিছু খাবে?
হাঁ মা আমি ভাত খাবো।
বাবা এইখানে তো ওসবের ব্যবস্থা নেই, তুমি বাসায় ফিরলে তারপর খাওয়াবো।
আনকেল আমি এখন আসি, অফিসে যাবো।
যাবি? আচ্ছা যা, আবার কবে আসবি?
কালই আসবো আবার, ছায়া আমি আসি?
ওকে বাই।

অফিসে পোঁছেই অনিক নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, দরজায় নক শুনে বললো, কাম ইন।
আফরিন প্রবেশ করে বললো, শুভ সকাল।
আফরিন বসো, তুমি এপয়নমেন্ট লেটার পাওনি?
হাঁ পেয়েছি।
ওকে, তাহলে আগামী এক তারিখে জয়েন করছো তো?
আমার একটা অনুরোধ ছিল।
কি বলো?
আসলে এই মাস শেষের তো আর মাত্র কয়েকদিন আছে, আমি কি আজ থেকে জয়েন করতে পারি, আমাকে এর জন্য কিছু দিতে হবেনা।
এইটার তো কোন নিয়ম নেই, অনিক জবাবে বললো।
না মানে এই সুযোগে আমি আমার অফ টাইমটা কাজে লাগাতে পারতাম, ঘরেই তো বসে থাকি।
ওকে, এক সেকেন্ড বলে ইন্টারকমে চাপ দিয়ে বললো, মামা প্লিজ একবার আসো।
আপনার মাথা কেটেছে কিভাবে, আফরিন উদ্বীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
গতরাতে ভূমিকম্পের সময় আঘাত লেগেছে, তা তোমাদের কি অবস্থা?
না আমাদের কোন সমস্যা হয়নি শুধু এইটা ওটা পড়ে গেছে, কিছু ভেঙ্গেছে।
মামা লুসি নক করে প্রবেশ করলে ওদের কথায় ভাটা পড়লো।
মামা ও আজ থেকেই কাজ শুরু করতে চাই, তুমি কি বলো?
আমার কোন অসুবিধা নেই যদি তুমি অনুমতি দাও।
ওকে তাহলে তুমি ওকে সাথে রেখে কাজ গুলো বুঝাতে শুরু করো আর ওকে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যেও।
ওকে অনিক।
থ্যাংক্স মি. অনিক, আমি খুব খুশি হয়েছি, আসি তাহলে।
হুম যাও, আর হাঁ আমাকে সবাই অনিক নামে ডাকে এবং আপনি বলা ছেড়ে দাও, এইটা আমাদের স্ট্যান্ডার্ড না আপনি বলা।
আফরিন হেসে বললো, ওকে অনিক, ধন্যবাদ আবারো।

.......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ