একটি ছড়ার জন্মকথা

#study

‘নাক ভাঙ্গা বাঘ’ নামে আমার একটি ছড়া আছে। ব্লগে আজকে ছড়াটি শেয়ার করবো। ছড়াটির একটি ইতিহাস আছে, তাই ছড়াটির পিছনের কিছু কথা বলতেই হয় ।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করানো খুবই কষ্টের বিষয়। অনেকেই এই কাজটি সহজে পারেন না। কারণ ছোট শিশুদের আব্দার থাকে বেশী, তারা নানা রকম বাহানা তুলে পড়ালেখা না করে ভিন্ন কিছু করতে চায়।

আমার ছাত্র জীবনে আমার উপর দায়িত্ব পড়লো আমার আপুর ছেলেকে পড়ানো, হাতে খড়ি আর কি! কায়সার কে পড়াতে হবে। কায়সার অল্প বয়সে এতই চটপটে ছিল যে ওকে পড়ানোর আগে সে আমাকেই পড়াতে শুরু করতো। কিছুতেই আমার মুখে মুখে বর্ণমালাগুলো সে পড়বে না। পড়তে বললে সে দেওয়ালের কোথায় টিকটিকি বসেছে, কোথায় মশা বসেছে এগুলো আমাকে দেখাতে থাকতো। আর গল্প শুনতে চাইতো বেশী বেশী।

আমি বুদ্ধি করে কায়সারের জন্য একটি গল্প বানালাম ।

গল্পটি ছিল এরকম:

একটি জঙ্গলের ধারে কুড়ে ঘরে বাস করতো এক বুড়ি। বুড়ির ছিল এক পাঠশালা, সেই পাঠশালায় বুড়ির কাছে বনের সব পশু পাখিরা পড়তে আসতো। বাঘ ছিল খুব দুষ্ট, সে কিছুতেই বুড়ির কাছে পড়তে চাইতো না। একেতো বাঘ পড়তো না তার উপর পড়তে আসা পশু পাখিকে বাঘ খুবিই বিরক্ত করতো। একদিন এক হরিণকে বাঘ খাওয়ার জন্য তাড়া করছিলো। হরিণ দৌড়তে দৌড়তে সামনে এক ঝর্ণা পড়ায় হরিণটি লাফ দিয়ে ঝর্ণা পাড় হয়ে জঙ্গলের ভিতর হারিয়ে গেলো। বাঘও হরিণের পিছন পিছন লাফ দিয়েছিলো। ঝর্ণার ঐ পাড়ে ছিল এক বটগাছ। বাঘ গিয়ে পড়লো বটগাছের শিখড়ের ‍উপর। বটগাছের শিখড়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাঘের ভোঁতা নাকটি ভেঙ্গে গেলো। গড়িয়ে পড়তে লাগলো রক্ত বাঘের ভাঙ্গা নাক থেকে।
আহত বাঘটি হরিণকে তাড়া করা ছেড়ে দিয়ে বুড়ির কাছে ফিরে আসলো। বুড়ির আবার পাঠশালার সাথে সাথে একটি ডাক্তারখানাও ছিলো যেখানে আহত পশুদের সে চিকিৎসা করাতো।
বাঘ বুড়িকে বলল: এই বুড়ি আমার নাক ভেঙ্গে গেছে, তাড়াতাড়ি আমাকে ওষুধ লাগিয়ে দাও। বুড়ি দেখে বাঘের ভোঁতা নাকের তিনটি হাড্ডি ভেঙ্গে গেছে। বুড়ি বাঘকে বশে পেয়ে বলল: সারাদিন তো অন্য পশুদের তাড়া করো আর দু্ষ্টুমি করে বেড়াও, পড়তে তো বসোনা একটুও।
বাঘ হুংকার দিয়ে বলল: এই বুড়ি বেশী কথা বলবা না, আমাকে হয় ওষুধ লাগাই দাও না হয় আমার জঙ্গল থেকে পালিয়ে যাও।
বুড়ি বলল: আচ্ছা বাবা শান্ত হও ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তোমাকেও কথা দিতে হবে এর পর থেকে এ.বি.সি.ডি পড়বে।
#গল্পটি এখানেই শেষ।
আমার গল্পটি কায়সারের বেশ পছন্দ হল। আমি এটি নিয়ে একটি ছড়া লিখলাম, সেও আমার সাথে পড়তে শুরু করলো ।

 

# নাক ভাঙ্গা বাঘ #
জঙ্গলে এক ছিলো বাঘ

হরিণ দেখলে মারে ডাক,

গাছের সাথে ধাক্কা লাগি

ভাঙ্গছিলো তার ভোঁতা নাক।
বুড়ির কাছে গিয়ে বলে

ওষুধ লাগাই দাও,

না হয় আমার জঙ্গল থেকে

পালিয়ে এখন যাও।
দেখে বুড়ি ভোঁতা নাকের

ভাঙ্গছে তিন হাড্ডি,

ওষুধ লাগাই দেবো যদি

পড়ো এ.বি.সি.ডি।

 

এভাবে তখন আমি কায়সারকে এবিসিডি বর্ণমালাগুলো শিখিয়েছিলাম। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কায়সার খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিলো। বর্তমানে কায়সার দু’টি কিউটের ডিব্বার আব্বু।

 

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ