আম্মা আগের দিনের সৃষ্টিশীল নারী ছিলেন, সাদা বা এক রঙের কাপড়ে খুব সুন্দর ফুলের কারুকাজ করা উনার শখ ছিলো, উনার হাতে কাজ করা সাদা কাপড়ের বেডশিট এখনো আমার কাছে আছে, যা কোন বিশেষ দিনে আমার বেডে দেওয়া হয়, উনি উলের সোয়েটার, মাফলার করে দিতেন আমাদের, সাথে সুতার বোনা টুপি এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
ঈদের সময় নামাজ পড়ে এসে আব্বা আম্মাকে সালাম করে সেমাই খেতাম, দুধ সেমাই আম্মার হাতে অনন্য যা এখন আমার স্ত্রী করে, এই সেমাই রান্নার আলাদা এক রেসিপি আম্মা শিখেছিলেন আমার নানীর কাছ থেকে, হয়ত বিশ্বাস করবেননা তবুও বলি, এমন সেমাই আজ পর্যন্ত আর কারো বাসায় খাইনি, ঘি, দুধ, চিনি ছাড়া আর কিছুই নয়, এরপরেও একদম আলাদা ধরণের টেস্ট, কারণ প্রিপারেশন আলাদা ধরণের।
আম্মা আবার সব ছেলে মেয়েদের চাইতে আমাকে বেশি আদর করতেন, ঘরে ভালো কিছু রান্না হয়েছে, ভালোটা তুলে রাখবেন উনার ইঞ্জিনিয়ারের জন্য, একবার সিলেট থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ে ফিরলাম বাসায়, এমন ম্যালেরিয়া যে জ্বর পড়েই না, ডাক্তার চিন্তিত, ঘরের সবাই টেনশনে, আমার যে আব্বা কখনো উনার ভালোবাসা ছেলেকে দেখাননি, সেই আব্বা এসে আমার মাথা কোলে নিয়ে বসে আছেন, মাথা ব্যাথা আর জ্বরে চোখ খুলতে পারছিনা, খেতে পারছিনা, এই অবস্থা দেখে আম্মা দৌড়ে গেলেন আমার মেঝ খালার বাসায়, ওখানে এক মাজার আছে, যেখানে এক বাবাজি আছেন, উনার কাছে গিয়ে আম্মা ধরণা দিলেন, বাবাজি আম্মাকে এক খিলি পান দিয়ে বললেন, তোর ছেলেকে খাওয়া।
আম্মা ফিরে এসেই আমাকে দিয়ে বললেন, "এইটা খা"।
এইসবে বিশ্বাস না থাকায় বিরক্তি নিয়ে খেলাম, খাওয়ার পাঁচ দশ মিনিট পর আমার হটাৎ প্রচন্ড বমি, এমন বমি করলাম আমার রুম পুরা ভর্তি বমি আর বমি, এর সাথে সাথে আমার জ্বর, মাথা ধরা গায়েব, তখনই একদম সুস্থ।
আম্মা খুব ঘুরতে পছন্দ করতেন, বিশেষ করে দল বেধে, এমন কি আমার হানিমুনেও আম্মা, খালাম্মা, ভাই বোন, কাজিনরা মিলে একদল কক্সবাজার গিয়েছিলাম, এরপরে অবশ্য আমি আর আমার স্ত্রী সিংগাপুর, থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম ডাবল হানিমুনে।
আম্মাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি যা লিখে শেষ করতে পারবোনা, আজ আম্মা নেই, উনার স্মৃতি সব রয়ে গেলো, আপনারা সবাই আম্মার জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ইচ্ছা অনিচ্ছা কিছুই থাকেনা মায়ের কাছে ছেলের ভালোর জন্য। তাই তিনি ছেলের সুস্থতার জন্য দোড়ে গেলেন ছেলেকে কিভাবে সুস্থ করবেন।
আমি ৮ বা ৯ বছরে যখন তখন খেলতে খেলতে হঠাত হাটুতে শক্তি হারা হয়েছিলাম তখন মা নানীর গ্রামে এক মামার নিকট থেকে গাছ-গাচ্ছড়া একটি মলম এনে সপ্তাহ ব্যাবহারে ভাল হয়েছিলাম।
তাই মায়ের মত আপন কেউ নায় এই পৃথিবীতে।
ভাই মা এখন নায় তার জন্য আল্লাহর নিকট দয়া করে তার আত্বার শান্তি কামনা করি। আমিন।
ইঞ্জা
আমীন।
আসলে মায়ের তুলনা মা ছাড়া করা যায়না, এক কথায় মারা অতুলনীয়া।
দোয়া রাখবেন ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা
মা অতুলনীয়, মার সংগে মা তুলনীয়।
আল্লাহ মাকে বেহেস্ত নসীব করুন।
ইঞ্জা
আমীন
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
আম্মার আত্মার শান্তি কামনা করছি।আমীন।
ইঞ্জা
আমীন
মৌনতা রিতু
মাকে নিয়ে সবারই স্মৃতির শেষ নেই। বাবারা তাদের ভালবাসাটা প্রকাশ করে কম। আমিও অনেক সময় এমন ঝাড় ফুক অববশ্যই দেই। আসলে আল্লাহর দোয়া কালামের উপর আর কিছু নেই। ভার থাকবেন ভাই। মায়ের জন্য দোয়া অবশ্যি।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন আপু, আমি এখনো দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি আম্মার বিশ্বাসই আমাকে সেদিন সুস্থ করে ছিলো।
ধন্যবাদ প্রিয় আপু।