আমার মা…

জুলিয়াস সিজার ৩০ এপ্রিল ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:০৫:৩৩অপরাহ্ন বিবিধ ১৪ মন্তব্য

কয়েক বছর আগে আমার অনেক খারাপ একটা অসুখ হয়েছিল। প্রথমে মেডিকেল তারপর সেখান থেকে ক্লিনিকে। আমার সাথে ক্লিনিকে ছিলেন আমার মা। খাওয়াদাওয়া বন্ধ, এমনকি এক ফোঁটা পানিও না। স্যালাইন চলছে তো চলছে। মেজাজ অসম্ভব খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল। কারো সাথে কথা বলতে বললেই মেজাজ খারাপ হতো। মোবাইলের রিংটোন শুনলে, আত্মীয়স্বজন এমনকি বন্ধুরা দেখা করতে আসলে পর্যন্ত বিরক্তি লাগত।

তখন সারদিন মোবাইল টিপাটিপি করতাম। এজন্য বাড়িতে বকাও শুনতাম। একদিন ক্লিনিকে রাতে কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে। খেয়াল করে দেখি আমার মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছেন(শব্দে যেন আমার ঘুম না ভাঙে) এবং ফোনে আমার বোনের সাথে কথা বলছেন। অথচ আমি জেগে থাকলে কখনোই তিনি কাঁদেন নি। আমাকে সাহস দিতেন। তিনি বলছিলেন;-
"সে মোবাইলের শব্দ শুনলেই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছে না। ভেবে দেখ কেমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আগে আমি কত বকা দিয়েছি এই মোবাইলের জন্য। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।"

আমি তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলি যেন মা বুঝতে না পারেন আমি জেগে আছি। সব শুনলাম। সেদিন সকালেই মা কে একটা ঝারি দিয়েছিলাম। তখন এত অনুশোচনা হচ্ছিল। এরপর সুস্থ হওয়ার ডাক্তার পরামর্শ দিলেন বাড়িতে চলে যেতে। বাড়িতে গিয়ে শুয়ে বসে দিন কাটত। অনেকদিন ভেবেছি মা কে স্যরি বলব।
"কিরে কিছু বলবি?-
- না কিছু না।
কিছু না তো পিছনে ঘুরঘুর করিস কেন?
- না এমনি।"

আমি মুখচোরা টাইপের। যা কিছু বলার দরকার তা বলতে পারি না। এরপর আরো অনেক বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে হালকা কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে স্যরিও বলেছি। শুধু এই ঘটনার জন্য আমি আজও মাকে স্যরি বলিনি।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনদিন এটার জন্য স্যরি বলবও না। কিছু বিষয় অমীমাংসিত থাকাই ভালো। স্যরি বললে এই রাতটার অনুভূতি আমার কাছে আর এমন থাকবে না। কতকিছুর জন্যই তো মা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অসুস্থতার সময় কি বলেছি তা উনার মনেই থাকবে না। কিন্তু আমার মনে থাকবে। আমি যতদিন বেঁচে থাকব এই স্যরি না বলার খচখচানিটা আমার সাথে বেঁচে থাকবে।
আহা একটা জীবনে কত গল্প থাকে...........

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ