১৯৯০ সনের কথা, তখন আমি সিলেটে আমাদের গাড়ীর শোরুম দেখতাম, ওখানেই থাকতাম এক হোটেলে দৈনিক ১৫০ টাকা ভাড়ায় আমার আরেক স্টাফ সহ, সেখানে শোরুম দেখভালের সাথে সাথে পড়াশুনাটাও চলছিলো সমান গতিতে।
সারাদিন অফিস, গাড়ী ডেলিভারি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থেকে সন্ধ্যায় শ্রান্ত আমি ফিরে যেতাম হোটেলে,কিছুক্ষণ রেস্ট করেই পড়তে বসতাম, এই ছিলো আমার নৈমিত্তিক কর্ম।
মাসে দুই মাসে চট্টগ্রাম ফিরে যেতাম মাকে দেখবো বলে।
আম্মা আমার জন্য ভালো ভালো আমার পছন্দের পদ গুলো রান্না করে রাখতেন, সাথে আমার অনুপস্থিতিতে যা কিছু ভালো রান্না হয়েছিলো তার সবই তুলে রাখতেন আমার জন্য।
সিলেটের অফিস শেষে হোটেলে ফিরে এলাম, শরীরটা কেমন যেন লাগছে, আমি আমার স্টাফকে বললাম রুম বয়কে বলে মশার এরোসল দেওয়ার জন্য, সিলেটের মশা গুলোর সাইজ বেশ বিশাল, মশাদের হাতিই বলতে পারেন।
রুম বয় এসে এরোসল দিয়ে গেলে আমি ঘুমিয়ে গেলাম, রাতে খাওয়ার জন্য স্টাফ আমাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো প্রচন্ড জ্বর আমার, ও দ্রুত আমাকে জাগিয়ে দিয়েয়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ মাথায় পানি ঢাললো, এরপর রুমে শুয়ে দিয়ে দৌড় দিয়ে বেরুলো নাপা আনার জন্য।
ও ফিরে এসে দেখে আমি বসে আছি, জ্বর ঘাম দিয়ে পড়েছে।
পরদিন সকালে একদম ঠিকঠাক, অফিস সেরে আসার আগেই জ্বর উঠলো।
এইভাবে দুইদিন হতে দেখেই ও পরদিন দ্রুত টিকেট কাটতে গেলো ট্রেনের, টিকেট কেটেই সে সহ রওনা দিলাম ঐ রাতেই, তখন ছিলো পাহাড়িকা ট্রেন, আমি শুয়ে আছি স্লিপিং কুপে, প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছি, আমার স্টাফ (জাবেদ মামা) বোতলে করে আনা পানি দিয়ে মাথায় পট্টি দিচ্ছে।
ভোরে পোঁছে গেলাম চট্টগ্রামে, জাবেদ মামা আমাকে বাসায় পোঁছে দিলো, আব্বা আম্মা দুজনেই অবাক হটাৎ করে আমাকে দেখে।
সেইরাতেই ডাক্তার এলেন, ব্লাড টেস্ট দিলেন, ব্লাড টেস্টেই ধরা পড়লো আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে।
আম্মা শুনেই অস্থির হয়ে উঠলেন, জ্বর উঠলেই বালতি কে বালতি পানি ঢালছেন মাথায়, পুরা শরীর টাওয়েল পানিতে ডুবিয়ে মুছে দিচ্ছেন।
ডাক্তার ম্যালেরিয়ার ঔষধ দিয়েছেন, কিন্তু জ্বর নামেনা, বরঞ্চ আরও সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে ডাক্তারই শঙ্কিত হয়ে উঠলেন।
এই অবস্থা দেখে আম্মা আর থাকতে পারলেননা, আম্মা দৌড় দিলেন উনার এক ফকির বাবার কাছে, আব্বা এসে আমার মাথাটা উনার কোলে নিয়ে বসে আছেন।
ঘন্টা দুয়েক পর আম্মা ফিরে এসে আমাকে একটা পান দিয়ে বললেন, নে এইটা খেয়ে ফেল, ফকির বাবা দিয়েছেন।
আমি যেহেতু এইসব বিশ্বাস করিনা, তবুও আম্মার মন রক্ষার্থে মুখে পুড়ে দিলাম।
মনে হয় মিনিট দুয়েক চিবিয়ে খেয়ে ফেলে দিতে চাইলে আম্মা বললেন, সব খেয়ে ফেলতে।
আমি বাধ্য ছেলের মতো কোঁৎ করে গিলে ফেললাম, গিলে ফেলার একটু পরেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করতে লাগলাম, এতো বমি আমার কখনো হয়নি, আমার বেডরুমের পুরা ফ্লোর বমিতে ভরে গেলো, বমি বন্ধ হলে আম্মা আমাকে কুলি করিয়ে শুইয়ে দিয়ে কাজের লোককে দিয়ে পুরা রুম পরিস্কার করিয়ে দিলেন আর এদিকে আমি ধরধর করে ঘামছি, সেইদিন যে জ্বর পড়লো আর জ্বর উঠেনি।
এ কারো কেরামতি কিনা জানিনা, শুধু জানি এ ছিলো আমার মার অগাধ বিশ্বাস, উনার বিশ্বাসের কারণে আমি একদম সুস্থ হয়ে গেলাম।
এমনি ছিলেন আমার মমতাময়ী মা, যার মমতার তুলনা হয়না।
এমনি মমতাময়ী মা আমার ২০১৭ ১০ই নবেম্বর আমাদেরকে একদম এতিম করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
দোয়া করি আল্লাহ্ রহমানুর রহিম আম্মাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
৩৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
মায়েরা এমনই হয়, সন্তানের জন্য নিজের সবটুকু বিশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন সবসময়। যার মা বাবা নেই সেই জানে এতিম হবার বেদনা।
আল্লাহ মাকে জান্নাতবাসী করুন। ভালো থাকবেন দাদা।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, মা তার সন্তানের জন্য নিজের জীবনও বাজি রাখতে পারেন, ধন্যবাদ ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
মায়ের জন্য সহস্র শুভ কামনা দাদা মাকে আমার সালাম দিবেন ।
ইঞ্জা
দাদা পুরা লেখাটি আরেকবার পড়ুন, এ অনুরোধ রইলো।
সঞ্জয় মালাকার
অবশ্যই দাদা পাড়বো
সঞ্জয় মালাকার
মায়ের তুলনা শুধুই মা, মা যেথাকুন ভালো থাকুন মায়ের জন্য স্বর্গীয় কামান।
সঞ্জয় মালাকার
মা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন, মায়ের জন্য স্বর্গীয় কামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা।
রেহানা বীথি
মা, তাঁর তুলনা শুধুই তিনি। আমরা শুধু নিয়েই যাই তাঁর কাছ থেকে। বিনিময়ে দিতে পারি না কিছুই। তিনি বিনিময় আশাও করেন না। ভালো থাকুন মা। অফুরন্ত দোয়া মায়ের জন্য।
ইঞ্জা
😭 সত্যই বলেছেন আপু, এই জন্যই সবাই বলে মার তুলনা মাই।
সুরাইয়া পারভিন
মায়ের তুলনা মা। মায়ের বিশ্বাস ভালোবাসা কখনো বৃথা যায় না। উনার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যেখানে আছেন ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ আপু
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ তাঁকে নিশ্চয়ই বেহেস্তে দাখিল করেছেন।
মায়েরা মা-ই থেকে যান, প্রকাশ্যে বা আধারে।
ইঞ্জা
আমীন।
দোয়া রাখবেন ভাইজান।
প্রদীপ চক্রবর্তী
জগতের সকল মা অন্তর্যামী।
মায়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
..
আপনার জন্য শুভকামনা দাদা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা, মার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করছি।
মনির হোসেন মমি
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
মায়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমীন।
মা এর মন মানে না বাধন …সন্তানের সামান্য অসুস্থায় অস্থির মা।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
নাজমুল হুদা
মায়ের তুলনা শুধু মা । আমি অনেক পাগলামি করি এবং মাঝে মাঝে বলি তুমি আমারে আদর করো না। কিন্তু যখন অসুস্থ হই তখন বুঝি আম্মা কত আদর করে, কষ্ট করে।
কাছে থাকলে বুঝা যায় না মায়ের স্নেহ এখন মেসের খাবার খেলেই বুঝি কত কষ্ট।
ইঞ্জা
মা ভালোবাসে কিনা তা মুখে কখনো বলেননা, কিন্তু উনার কর্মেই বুঝা যায় উনার ভালোবাসা কতটুকু বেশি উনার সন্তানের জন্য, অনুরোধ করবো যত বেশি পারেন মাকে ভালোবাসা দেবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
মায়ের আদর ভালোবাসার কাছে সব যুক্তি, বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস তুচ্ছ হয়ে যায়। মা-ই কেবল পারেন সন্তানের জন্যে সব করতে।
মা ভালো থাকুন ওপারে। পৃথিবীতে মা যেমন করে আদর, মমতায় আপনাকে আগলে রেখেছেন, আল্লাহ তায়ালা যেনো তার চির শান্তির জান্নাতে মায়ের আত্মাকে সেভাবে রাখেন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ আপু, মাকে যথার্থ ভাবে তুলে ধরেছেন।
জিসান শা ইকরাম
মায়ের মমতার কোনো তুলনা হয়না,
মায়ের হাত যখন কপাল স্পর্ষ করে, অসুস্থতা কমে যায় সবার।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী।
আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ ভাইজান, সত্যি মার তুলনা মাই।
এস.জেড বাবু
///শুধু জানি এ ছিলো আমার মার অগাধ বিশ্বাস, উনার বিশ্বাসের কারণে আমি একদম সুস্থ হয়ে গেলাম।
মায়েরা এমনি হয়, ডাক্তার যদি বলেন টেবলেট দেয়ার দুই ঘন্টা পর জ্বর কমবে, তারা পনের মিনিট পর থার্মোমিটার লাগিয়ে দেখবেন। আর এক ঘন্টা পর ডাক্তারের গুষ্ঠি উদ্ধার করে নতুন ডাক্তার খোঁজবেন।
আল্লাহ উনাকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদায় রাখুন।
আমিন।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, মায়েরা তার সন্তানের জন্য নিজ জীবন দানও করতে পারেন, ধন্যবাদ ভাই।
আমীন।
মোঃ মজিবর রহমান
মা শধুই মা কিন্তু অন্তরে জায়গা শুধুই সন্তানের। আমিও এররকম মা হারিয়েছি। কিন্তু তাঁর মমতা না হারিয়েও হারিয়েছি তাঁর স্নেহ মমতাময়ী হাতের স্পর্শ। যা আছে স্রিতিতে অন্তরে। মা বেহেস্তবাসি হোক। আমিন।
ইঞ্জা
মায়ের দুধের ঋণ নিজ গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও শোধ হয়না, কারণ মার তুলনা নেই, উনারা সন্তানদের জন্যই বাঁচেন।
সকল বাবা মার জন্য দোয়া রইলো।
ধন্যবাদ ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ ভাই। ভাল আছেন, ভাল থাকুন
ইঞ্জা
ভালোবাসা জানবেন ভাই।
মাহবুবুল আলম
মা-কে নিয়ে লেখাটি হৃদয় ছূঁয়ে গেল। সকল মায়েদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, আমার মার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনার আম্মাকে আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন, আমিন।
আপনি গাড়ির ব্যবসা করতেন? আমি ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গাড়ির ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলাম। আমরা জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করতাম এবং ইন্ডেন্ট দিতাম। খাতুন গঞ্জ আমির মার্কেট আমাদের অফিস ছিল।
মৌলভী বাজারের সৌদিয়া কার সেন্টারের আনোয়ার সাহেব আমাদের কাছ থেকে গাড়ি নিতেন। তিনি চট্টগ্রাম আসলে আমাদের বাসায় থাকতেন। পরে সম্ভবত তিনি সিলেটেও শো-রুম দিয়েছিলেন।
ইঞ্জা
আমীন।
হাঁ ভাই, এক সময় ছিলাম, এখন একি লাইনের এক গ্রুপে আছি, দোয়া রাখবেন ভাই।
আমি ট্রাক পিকআপ লাইনে আছি।
মোহাম্মদ দিদার
মা!
মায়ের মতো এই জগতে কি আছে আর?
ইঞ্জা
না ভাই, কেউ নেই। 😢