গত পর্বে শেষ করেছিলাম সিদ্ধিরগঞ্জের প্রথম চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মোঃ আমিজ উদ্দিন সাহেবের কথা বলে।তার শাষণ কাল যদিও দেখিনি কিন্তু শুনেছি বহু মানুষের কাছ থেকে।এমন সব মানুষ যখন সাধারণ অবস্থায় থাকেন তখন সে হয় সৎ মার্জিত ও জন বান্ধব প্রিয়।যখনি বিশেষ কোন ক্ষমতায় সাধারণ মানুষ থেকে পার্থক্যে চলে যায় তখন হয় সে পূর্বের চেয়ে আরো বেশী দায়ীত্বশীল হন নতুবা সামাজিক অববয়ে অথবা ক্ষমতার দাপটে নিজেকে বদ রাগি হিসাবে উপস্থাপিত করেন।তাই সব মানুষই দোষ গুণ  মিলিয়ে বেচে থাকেন পৃথিবীতে।বলতে পারি কোন মানুষই তার দোষ গুণের উর্ধে নয়।লোক মুখে যতটুকু জেনেছি মরহুম এই চেয়ারম্যান সাহেবের বর্তমান বংশ পদবি প্রধান বংশের ছিলেন যে বংশের উৎপত্তি সম্ভবত ছিলো বৃহত্তর আদমজী জুট মিল এলাকায়।সম্ভবতঃ তারা পরবর্তীতে সিদ্ধিগঞ্জ বাজার হাট খোলা স্থানে বসতি স্থাপন করেন তবে প্রধান বংশ বলতে মুলত হাট খোলার চেয়ারম্যান বাড়ী মসজিদের সম্মুখে জাকির তাপস শিউলীদের বুঝায়।
সেই সময় সিদ্ধিরগঞ্জ সাইলো এ এলাকাটি আর্থিক ভাবে বেশ স্বচ্ছল ছিল।তখন বি আর টি সি,সি আর টিসি নামক বহু সংস্থা গুলো গম বা খাদ্য সরবরাহের নিয়োজিত ছিলো বহু ট্রাক।এছাড়াও ট্রেনেও ছিল সমান সরবরাহ।সেই সময় এ এলাকার অনেকের পেন্ট সার্টে ছিলো অসংখ্য পকেট।সে সব পকেটে বন্ধ বা টলন্ত ট্রেন থেকে কুড়িয়ে নিতো গম,ট্রেনের বগি থেকে জলের ঝর্ণা ধারার ন্যায় গম পড়ত জমিনে।যেমনটি সরকারী মাল দরিয়া মে ঢাল।তখন যার যত পকেট ছিলো সে তত বেশী গম সংগ্রহ করতে পারতেন।ঠিক কখন ট্রেন আসবে সে জন্য আগ থেকেই কিছু সংখ্যক লোক উৎ পেতে থাকতো।চলন্ত ট্রেন যখন সাইলো গেইটে প্রবেশ করে তখন এর গতি বেগ খুব ধীর গতি হয় তখন সহজে বগির ফাক ফোকর দিয়ে পড়ন্ত গম সংগ্রহ করত।

মানুষ মরণশীল।যার জন্ম আছে তার ধ্বংস অবশ্যাম্ভাবী।পৃথিবীর ক্ষমতা ধর মানুষের বেলাও তা।দেশের গড় আয়ু ৬০ বছরে জীবনে আমরা দীর্ঘ আঠারটি বছর পার করি জীবনের শৈশব কৈশোর কাটিয়ে,লাইফাকে গড়তে কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ে কেটে যায় আট দশটি বছর আর যদি সেশন জোটে পড়ি তাহলেতো কথাই নেই;কত বছরে যে লেখা পড়া করে শেষ করে একটি কাগজের মালিক হবো তা উপরওলাই ভাল জানেন।তার পর চাকুরীর বাজারে স্যান্ডেল ক্ষয়ের পালা।সোনার হরিণটি পেতে কারোর স্যান্ডেল ক্ষয়ের সংখ্যা  যেমন বলা মুশকিল তেমনি অনেকে আবার নাকে তৈল যুক্ত ঘুমের মাঝেও সহজেই পেয়ে যার জীবন স্বপ্নের শিড়ি।
এমনি এক যুগে আমি বা আমাদের জন্ম ছিলো।সেই যুগ থেকে আজকের এই যুগে হারিয়েছি বহু বন্ধু বান্ধব,বহু আত্মীয় স্বজন,বহু এ থানার গুণী জন।প্রথমে জান্নাতবাসী এ সব লোকগুলোর নাম যত টুকু মনে পড়ে তাদের কথা স্বরণ করব।তাদের কারো কারো অবদানে এই সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলটি ধীরে ধীরে পুরো দেশ বাসীর নজরে আসেন।

আমার জানা মতে প্রধান বংশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এ অঞ্চলের একজন ভাল মানুষ ভাল মনের মানুষ ভাল একজন খেলাধূলা উৎসাহ দাতা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হাবিব যিনি আততায়ীর আঘাতে পরলোক গত হলেও নারায়ণগঞ্জে যে কোন খেলা ধূলায় তার নাম স্বরণ করা হয় বিশেষ করে ফুটবল খেলায়।
এমনি হারিয়েছি স্বাভাবিক ভাবে সিদ্ধিরগঞ্জের সম্ভবত প্রথম দিকের ইউপি মেম্বার আলহাজ্জ্ব এম এ হাসেম যিনি আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ বাসীর গর্বো সাবেক সিইউপি দুই বারের সফল চেয়ারম্যান।এক সময়কার উপজেলা মহাসচিব এ ছাড়াও সর্বোশেষ বি এন পির নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সাংসদ আলহাজ্জ্ব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এর পিতা।
হারিয়েছি ইকবাল গ্রুপ এর এক সময়কার কর্ণধার যার প্রতিটি পায়ের ধূলোতে জীবন ইতিহাসের কথা কয়।যার বংশধরের কম বেশ সবাই আমার নীবির আপণ।সিদ্ধিরগঞ্জ শাহ শাব্দী (আঃ)এর মাজার রোড সংলগ্ন এই জান্নাত বাসীর বসবাস।
হারিয়েছি সিদ্ধিরগঞ্জ ইউপির আরেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আঃ রব।এই জান্নাতবাসী চেয়ারম্যান এর আমলটি ছিলো ঘূণে পোকা ভরা।গ্রামীন রাজনৈতিক একটা বিশাল কালো থাবা পড়েছিলো যার জন্য নির্বাচনগুলো ছিলো বিতর্কীত প্রশ্ন বোধক।যার শেষে সেভেন মার্ডারের জানা মতে মুল আসামী নূর হোসেন চেয়াম্যানের উৎপত্তি ঘটে।এর মাঝ খান দিয়ে ঘটে ইকবাল গ্রুপের ইকবাল সাহেবের সাথে নির্বাচনীয় যুদ্ধ যার মুলেও ছিলো একটি নোংরামী রাজনৈতিক খেলা।শুরু হলো শান্ত শীতল শীতলক্ষ্যা পাড়ের সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর অশান্তির ঝড়।যে ঝড় ভাংতে জানে গড়তে জানে না।এর পরবর্তীতে চেয়ারম্যান এর চেয়ার ক্রয় বিক্রয়ে চেয়ারম্যানের চেয়ারটি পান সেভেন মার্ডারের নজরুল ইসলামের শশুড় শহীদ চেয়ারম্যান।এ সম্পর্কে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আলোচনায় আসবে।
হারিয়েছি মিজ মিজির প্রাক্তক মেম্বার জান্নাত বাসী বারেক মেম্বার যিনি বি এন পির নেতা রাজু ভাইয়ের পিতা।মিজ মিজিকে ফলাও করে চিনতে তার অবদান কম নয়।এ ছাড়াও আব্দুল আলী পুলের আব্দুল আলী।বন্ধু ক্লাশ মেট কাউন্সিলর প্রয়াত সেভেন মার্ডারের নজরুল ইসলাম।
হারিয়েছি মাজার সংলগ্ন বন্ধু মিজানের ভাই জান্নাত বাসী জয়নাল আবেদিন সাদা জয়নাল।আওয়ামীলীগের জন্য নিবেদীন একটি প্রান ছিলেন।
হারিয়েছি সাদা মনের মানুষ রানস এ্যাপারেলসের কর্ণধার আল হাজ্জ্ব আঃ রব সাহেবের জান্নাত বাসী পিতা নূর মোহাম্মদ কারী সাহেবকে।অনেক ভাল লোক ছিলেন।মুলতঃ এই মহান মানুষটির আদুরী কানমলা খেয়েছি অগণিত।তার তাতঁ ও লাড়কীর ব্যাবসা ছিলো।যে দিন লাড়কী আসত সে দিন আমাদের টিভি দেখা কর্নফ্রাম হয়ে যায়।যত টুকু মনে পড়ে তখন সাদা কালো টিভিতেই প্রথম টারজান দেখতাম।এ ছাড়াও সে সময় দা ফল গাই,সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান,বাইনিকওম্যান,নাইট রাইডার এর মত জনপ্রিয় কিছু ইংরেজী সিরিজ চলত যা দেখতে আমরা বহু আগ থেকেই প্লান করতাম কোথায় দেখবো কারন সে সময় আমাদের পুরো এলাকায় হাতে গণা দু তিনটি বাড়ীতে টিভি সেট ছিল তাও কেবল সাদা কালো।সিদ্ধিরগঞ্জ প্রগতি সংসদ এর একটি ছোট টিন আর মুলি বাশেরঁ বেড়ার ঘর ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ রেবতী মোহন এর মাঠের এক পাশে সেখানে একটি সাদা কালো টিভি ছিলো যা দেখা কিশোর বয়সী ছেলেদের জন্য খুব টাফ ছিল।সে সময়কার মুরুব্বিরা আমাদের বাধা ছিল।আর এক টিভি সেট ছিলো আব্দুর হক মেম্বারে বাড়ীতে তবে এ বাড়ীতে রাতে অনেকেই যেতে সাহস পেতো না কারন তখন যে পথটি দিয়ে এ বাড়ীতে যেতে হয় সেই পথটি  ছিলো জমির আইলের মত সরু আর ঘণ গাছ গাছালীর ছায়াতে পথটি অন্ধকার থাকত।তাছাড়া এ বাড়ীর পাশেই ছিলো হারাইন্না নামক বিশাল এক পুকুর যে পুকুরটিতে বছরে কেউ না কেউ ডুবে মারা যেত।নেংটো কালে এখানে ডুবে মরার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল।সেই সকাল দশটায় পুকুরে ডুব দেই আর আমাকে উদ্ধার করা হয় বিকেল পাচটার পর এক দয়াবান ব্যাক্তি পাচটার কাজ শেষ করে পুকুরে স্নান করতে এসে খুজতেঁ খুজতেঁ অবশেষে সে পেয়ে যান ।

চলবে...
১ম পর্ব

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ