আমার আব্বা

ইঞ্জা ৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ১২:২৩:৩৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩১ মন্তব্য

উনি ছিলেন প্রচন্ড রাগী কিন্তু অসম্ভব রকমের প্রজ্ঞাবান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, মেধাবী মানুষ, যখন রাগ করতেন তখন উনার চোখ দেখলেই আমরা বুঝে যেতাম যে আজ খবর আছে, পড়ালেখার প্রতি অসম্ভব রকমের টান থাকায় উনি আমাদেরও পড়ালেখার প্রতি সবসময় যত্নবান ছিলেন, নিজেও পড়তেন অনেক।

দেশ বিদেশের সকল নিউজ ছিলো উনার নখদর্পনে, উনার ব্যক্তিত্বের কাছে জাদরেল মানুষদেরও উনার  কথার মাধ্যমে কুপোকাত হতেন।

বিদেশে বছরে কয়েকবার যেতেন উনি, একবার লন্ডনে এক বাঙ্গালী উনার সাথে ইংরেজিতে ভুজুংভাজুং করছিলো, উনি উনাকে শুদ্ধ ইংরেজি বলার তালিম দিয়েছিলেন যা আমার এক প্রবাসী আত্মীয়র মাধ্যমে শুনেছিলাম।

উনি তুখোড় ইংরেজি বলতেন, উর্দুতে উনি ততকালীন পাকিস্থান আমলে পড়েছিলেন বিধায় একদম সুদ্ধ ভাবে বলতে পারতেন, তদরূপ হিন্দি বলতে পারতেন ভালোভাবেই। 

 

খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আসক্তি ছিলো উনার, ছেলেবেলায় প্রচুর ফুটবল, ক্রিকেট খেলতেন, পরবর্তীতে উনি ব্যাডমিন্টনের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন, এই ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যই আমাদের বাসার উঠোনকে পাকা করে দিয়ে চারিদিকে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, এছাড়া মাপ মোতাবেক ব্যাডমিন্টন কোর্ট করেছিলেন যেখানে শুধু আমরা নয়, পাড়ার ছেলেরা, আমার বন্ধুরাও খেলতো।

ব্যাডমিন্টন খেলাতে উনি বাজি ধরতেন কোক আর পেটিসের, হারুয়া পার্টি তা কিনে এনে খাওয়াতে হতো। 

ব্যাডমিন্টন কোর্টে কেউ লম্বা প্যান্ট পড়ে খেলতে নামবে এমন সাহস কারো ছিলোনা, কপ্লিট ড্রেসকোড পালন করাতেন।

ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য পাইওনিয়ার সাটেল কর্ক সবসময় উনিই কিনে রাখতেন স্টকে, যেন পাড়ার বা বাইরের কারো পকেটের টাকা খরচা নাহয়।

জাওয়ান থেকে নিজের জন্য এবং আমার জন্য আনাতেন ইওনেক্স ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেট যা এখনো স্বযত্নে রাখা আছে। 

 

ব্যবসায়িক জীবনে প্রচুর সুনাম থাকার কারণে দেশে বিদেশে উনাকে প্রচুর মানুষ চিনতেন, বাংলাদেশে প্রথম বেবি টেক্সি উনিই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলেন। 

সাংসারিক জীবনেও উনি ছিলেন বেস্ট হাসবেন্ড, বেস্ট ফাদার, বেস্ট ভাই, বেস্ট দুলাভাই। 

খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন উনি, খেতেন ভালোটা, পড়তেন সাফারি স্যুট, প্রতি বছরই প্রায় গাড়ি চেইঞ্জ করতেন, উনিই আমাদেরকে নিসান, টয়োটা, মাজদা ব্র্যান্ড চিনিয়ে ছিলেন। 

হাঁ যার কথা বলছিলাম উনি আমার আব্বা, উনি মাত্র পয়তাল্লিশ বছর বয়সে ১৯৯০ সালের জুলাই মাসের ১২ তারিখ চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে ব্যাডমিন্টন কোর্টেই খেলতে গিয়ে হার্ট এটাক করে ইন্তেকাল করেন।

ঐদিন আমি সিলেটে থাকায় উনার মৃতদেহ এবং আমার ফ্যামিলিকে ঘিরে সারারাত পাড়াপড়শি অপেক্ষায় ছিলো আমাদের বাড়িতে।

উনার জন্য, আত্মীয়, বন্ধু বান্ধব ছাড়াও উনার কাস্টমাররা লাওয়ারিসের মতো কান্না করেছিলো আমাদের সাথে সাথে।

আমার আব্বার তিন তিনটা জানাযার আয়োজন হয়েছিলো জুম্মার নামাজের পর।

 

আপনারা সবাই আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ কারিম, রহমানুর রাহিম উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, যেন উনার সকল গুনাহ মাফ করে দেন।

 

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা....

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ