উনি ছিলেন প্রচন্ড রাগী কিন্তু অসম্ভব রকমের প্রজ্ঞাবান, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, মেধাবী মানুষ, যখন রাগ করতেন তখন উনার চোখ দেখলেই আমরা বুঝে যেতাম যে আজ খবর আছে, পড়ালেখার প্রতি অসম্ভব রকমের টান থাকায় উনি আমাদেরও পড়ালেখার প্রতি সবসময় যত্নবান ছিলেন, নিজেও পড়তেন অনেক।
দেশ বিদেশের সকল নিউজ ছিলো উনার নখদর্পনে, উনার ব্যক্তিত্বের কাছে জাদরেল মানুষদেরও উনার কথার মাধ্যমে কুপোকাত হতেন।
বিদেশে বছরে কয়েকবার যেতেন উনি, একবার লন্ডনে এক বাঙ্গালী উনার সাথে ইংরেজিতে ভুজুংভাজুং করছিলো, উনি উনাকে শুদ্ধ ইংরেজি বলার তালিম দিয়েছিলেন যা আমার এক প্রবাসী আত্মীয়র মাধ্যমে শুনেছিলাম।
উনি তুখোড় ইংরেজি বলতেন, উর্দুতে উনি ততকালীন পাকিস্থান আমলে পড়েছিলেন বিধায় একদম সুদ্ধ ভাবে বলতে পারতেন, তদরূপ হিন্দি বলতে পারতেন ভালোভাবেই।
খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আসক্তি ছিলো উনার, ছেলেবেলায় প্রচুর ফুটবল, ক্রিকেট খেলতেন, পরবর্তীতে উনি ব্যাডমিন্টনের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়েন, এই ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যই আমাদের বাসার উঠোনকে পাকা করে দিয়ে চারিদিকে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন, এছাড়া মাপ মোতাবেক ব্যাডমিন্টন কোর্ট করেছিলেন যেখানে শুধু আমরা নয়, পাড়ার ছেলেরা, আমার বন্ধুরাও খেলতো।
ব্যাডমিন্টন খেলাতে উনি বাজি ধরতেন কোক আর পেটিসের, হারুয়া পার্টি তা কিনে এনে খাওয়াতে হতো।
ব্যাডমিন্টন কোর্টে কেউ লম্বা প্যান্ট পড়ে খেলতে নামবে এমন সাহস কারো ছিলোনা, কপ্লিট ড্রেসকোড পালন করাতেন।
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য পাইওনিয়ার সাটেল কর্ক সবসময় উনিই কিনে রাখতেন স্টকে, যেন পাড়ার বা বাইরের কারো পকেটের টাকা খরচা নাহয়।
জাওয়ান থেকে নিজের জন্য এবং আমার জন্য আনাতেন ইওনেক্স ব্যাডমিন্টন র্যাকেট যা এখনো স্বযত্নে রাখা আছে।
ব্যবসায়িক জীবনে প্রচুর সুনাম থাকার কারণে দেশে বিদেশে উনাকে প্রচুর মানুষ চিনতেন, বাংলাদেশে প্রথম বেবি টেক্সি উনিই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলেন।
সাংসারিক জীবনেও উনি ছিলেন বেস্ট হাসবেন্ড, বেস্ট ফাদার, বেস্ট ভাই, বেস্ট দুলাভাই।
খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন উনি, খেতেন ভালোটা, পড়তেন সাফারি স্যুট, প্রতি বছরই প্রায় গাড়ি চেইঞ্জ করতেন, উনিই আমাদেরকে নিসান, টয়োটা, মাজদা ব্র্যান্ড চিনিয়ে ছিলেন।
হাঁ যার কথা বলছিলাম উনি আমার আব্বা, উনি মাত্র পয়তাল্লিশ বছর বয়সে ১৯৯০ সালের জুলাই মাসের ১২ তারিখ চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে ব্যাডমিন্টন কোর্টেই খেলতে গিয়ে হার্ট এটাক করে ইন্তেকাল করেন।
ঐদিন আমি সিলেটে থাকায় উনার মৃতদেহ এবং আমার ফ্যামিলিকে ঘিরে সারারাত পাড়াপড়শি অপেক্ষায় ছিলো আমাদের বাড়িতে।
উনার জন্য, আত্মীয়, বন্ধু বান্ধব ছাড়াও উনার কাস্টমাররা লাওয়ারিসের মতো কান্না করেছিলো আমাদের সাথে সাথে।
আমার আব্বার তিন তিনটা জানাযার আয়োজন হয়েছিলো জুম্মার নামাজের পর।
আপনারা সবাই আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ কারিম, রহমানুর রাহিম উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, যেন উনার সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা....
৩১টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা,
আল্লাহ তায়ালা আপনার বাবাকে জান্নাতবাসী রাখুন, আমীন।
ইঞ্জা
আমীন
ধন্যবাদ আপু, অনেকদিন পর আমার লেখাতে এলেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই জন্যে অবশ্যই আমি ক্ষমাপ্রার্থী ভাইজান। ব্যস্ততা আমার উপর খুব নির্মম চাপ ফেলছে। যখনই অবসর হয় চলে আসি সবার মাঝে। আশা করছি দ্রুত নিয়মিত হতে পারবো। ঐ পর্যন্ত কোনো রাগ করা চলবে না প্লিজ 🙂
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ
নিতাই বাবু
আপনার আব্বার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা-সহ আপনার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার আপনার আবার বিদেহি আত্মা শান্তিতে রাখবেন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ প্রিয় দাদা।
নিতাই বাবু
পবিত্র ঈদ-উল-আজহা’র শুভেচ্ছা রইল দাদা।
ইঞ্জা
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা দাদা, ঈদ মুবারক।
ফয়জুল মহী
শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বাবার প্রতি
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার আব্বার কথা শুনে মুগ্ধ হলাম। বিধাতা ওনাকে এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলেন! ঈশ্বর ওনাকে ভালো রাখুন, যেখানেই থাকুক। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ইঞ্জা
অশেষ ধন্যবাদ আপু, আসলে আব্বা যেমন রাগী ছিলেন, তেমনই নির্মল ছিলেন, উনার কথা বলে শেষই করতে পারবোনা আপু।
অনুরোধ রইলো আব্বাকে আপনার প্রার্থনায় রাখার জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
এক বর্নাঢ্য জীবনের মালিক ছিলেন তিনি।
ইঞ্জা
উনার বর্ণাঢ্য জীবনের কথা বলে শেষ করা যাবেনা ভাইজান, যা বলেছি তা খুবই অল্পই বলা যায়।
উনার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইল ভাইজান।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওনি স্বর্গবাসী হোন।
ওনার আত্নার সদগতি কামনা করি।
ভাল থাকবেন।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ অশেষ দাদা।
তৌহিদ
আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি দাদা, বাবার জন্য অনেক দোয়া রইলো। লেখাটি পড়ে আপ্লুত হলাম। তিনি অনেক গুণী একজন মানুষ ছিলেন।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা। আপনিও ভালো থাকুন দাদা। শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই, যা লিখেছি তা খুবই অল্প, আব্বার সব কথা লিখতে হলে বড় একটি বই হবে, দোয়া করবেন ভাই।
তৌহিদ
ধারাবাহিক লিখতে পারেন দাদা। অনবদ্য লিখেন আপনি।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি ছগিরা।
ইঞ্জা
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা
ইসিয়াক
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা
আপনার আব্বার জন্য অনেক দোয়া রইলো। উনার আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি।
ইদ মোবারক ভাইয়া।
ইঞ্জা
আমীন।
ধন্যবাদ ভাই, ঈদ মুবারক।
মোঃ মজিবর রহমান
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
সকল মৃত্য বাবামা জান্নাতবাসি হোক।
প্রআর্থনা করি মহান স্রিষ্টিকর্তা আল্লাহর দরবারে।
আবার বলি -রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।
ইঞ্জা
আমীন, সুম্মা আমীন।
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই আমার। 😊
মোঃ মজিবর রহমান
সুম্মা আমিন।
ইঞ্জা
শুকরিয়া ভাই।
আরজু মুক্তা
ভালো থাকুন ওপারে
ইঞ্জা
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা
উর্বশী
আল্লাহ পাক যেন বাবাকে জান্নাত বাসি করেন —- আমীন।
বিনম্র শ্রদ্ধা।
ইঞ্জা
আমীন, সুম্মা আমীন।