ক’দিন আগে বিশ্ববিখ্যাত ভিডিও সাইট ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম। ভিডিওটার শিরোনাম: “La odisea de la especie Homo habilis” ভিডিওটা দেখে ভাবতে লাগলাম, আদিম যুগের কথা। আদিম যুগের কথা পুস্তিকায় অনেক পড়েছি। বুড়ো বুড়িদের মুখে শুনেছিও অনেক। মনে হয় আমার পূর্বপুরুষরাও সেই আদিম যুগ থেকেই জন্মে জন্মে এই কলিযুগের সভ্যজগতে এসে পৌঁছেছিল। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আমার পূর্বপুরুষের সংখ্যা কত হয়েছিল, তা আমার জানা নেই। হয়তো হিসাব করে কোনও দিন এর সঠিক সংখ্যা বের করতেও পারবো না। তবে আদিম যুগ থেকে এপর্যন্ত, পূর্বপুরুষ হতে আমি পর্যন্ত কীভাবে এসেছি; ইউটিউবে থাকা ভিডিওটা দেখে সে- বিষয়ে একটু ধারণা মাথায় এসে যায়।
ভিডিওটা দেখে মানুষ আদিম যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত কীভাবে এগিয়ে আসলো, মোটামুটি একটা হিসাব মিলিয়ে ফেলি। যেমন : আমার পিতৃপুরুষদের মধ্যে আমি পাঁচ পুরুষের নাম জানি। আমার বাবার নাম; আমার ঠাকুরদাদার নাম; ঠাকুরদাদার বাবার নাম; এভাবে পাঁচ পুরুষের নাম। তাঁদের পিতৃপুরুষদের বাবার বাবার নাম মানে চৌদ্দপুরুষের নাম। তা আমার জানা নেই। আমার তো জানা নে-ই, এই বিশ্বের কেউ কারোর চৌদ্দপুরুষের নাম জানে কিনা, তাও জানি না। ধারণা করা যায় কেউ জানেই না। আর জানবেই বা কী করে? একটা বংশের চৌদ্দপুরুষদেরও তো চৌদ্দপুরুষ থাকে। চৌদ্দপুরুষদের পূর্বপুরুষও থাকে। হাতের আঙুলের কড় গুণে হিসাব করতে গেলে এসব চৌদ্দপুরুষদের বাবার বাবা তো কয়েক হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। তাহলে দেখা যায় এভাবে বাবার বাবা পর্যন্ত যেতে যেতে সেই আদি পিতা পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে বলে মনে হয়। তার মানে একটা গাছের মাথা থেকে মূল পর্যন্ত পৌঁছানো। যেমন : আদি পিতা আদি মাতা বা আদম হাওয়া পর্যন্ত। তাহলে মনে হয় আমরা তো সেখান থেকেই এপর্যন্ত। মানে আমরা জীবের সেরা মানুষ যেখান থেকে এসেছি।
তাই ভিডিওটা দেখার পর ভাবতে হয় বর্তমান থেকে সেই আদিম যুগ কেমন ছিল? সেই যুগের মানুষের জীবনধারণই বা কেমন ছিল? বর্তমান থেকে কি ভালো ছিল? নাকি দুর্বিষহ ছিল? নাকি সেই যুগের মানুষ বর্তমান যুগের মানুষের চেয়ে সুখি ছিল? এসব নিয়ে নিজে নিজেই অনেকসময় চিন্তা করি। আর ছোটবেলায় আদিম যুগের মতো মানুষের জীবনধারা দেখে অতীত বর্তমান নিয়ে একা একা ভাবতে থাকি।
ভিডিওটিতে দেখা যায় বানর আকৃতির কয়েকজন আদিম মানুষের একটা দল। ওদের শরীরে বনমানুষের মতো লোমশ। এই দলে পুরুষ কয়েকজন, মেয়ে একজন। ওরা সবাই বস্ত্রহীন, উলঙ্গ। ওরা শুধু খাদ্যের সন্ধানে বন-ভাদরে ঘুরে বেড়ায়। ওদের মুখে ভাষা নেই। ওরা বোবা। তবে মুখে আওয়াজ তুলতে পারে। আর হাতের ঈশারা, চোখের ঈশারায় একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করে। একটুখানি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারলে, সবাই মিলে খায়। ওদের মনে ভালোবাসা আছে। একে অপরকে ভালোবাসে। সাথের একজনকে যদি বনের কোনও হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করে খেয়ে ফেলে, তো সাথের আরও কয়েকজন বিলাপ করে কান্নার সুর তুলে। ওরা দিনের বেলায় রোদ পুড়ে, খাদ্যের সন্ধান করে। রাতের অন্ধকারে সবাই একসাথে ডলাডলি করে ঘুমিয়ে থাকে। ওঁদের ঘড় নেই। বৃষ্টি এলে আশ্রয় খুঁজে। আশ্রয় বলতে কোনোএক বড় গাছের তলায়, নাহয় কোনও পাহাড়ের গুহায়।
ইউটিউবে থাকা ভিডিওটা নিচে দেখানো হলো:
https://m.youtube.com/watch?v=mQrOLGoIl2c&client=mv-google
এসব দৃশ্য দেখে বোঝা গেল যখন কাগজ কলম আবিস্কার হয়নি, তখন মানুষের লেখা-পড়া ছিলই না। লেখা-পড়া যে কী, তাও মানুষ জানতো না, বুঝতোও না। যখন কোনও বস্ত্রের আবিস্কার হয়নি, তখন মানুষ লজ্জা কাকে বলে তা কী জানতো? মনে হয় তখনকার সময় লজ্জা নিয়ে বেশিকিছু ভাবতো না, জানতোও না! এসব নিয়ে তখন তাঁদের ভাবার সময়ও ছিল না। ভাবতো শুধু আহার, নিদ্রা নিয়ে। করতো শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা। তাঁরা চেষ্টা করতো তাঁদের পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য কোথাও আছে, কী আছে? বৃষ্টি এলে নিজেকে বাঁচাবে কী করে? হিংস্র প্রাণী আক্রমণ করলে বাঁচবে কী করে? এসব চিন্তা নিয়েই তখনকার মানুষেরা বেঁচে থাকতো। আর বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে পর্বতে ঘুরে বেড়াতো। ভিডিওটিতে তা-ই দেখানো হয়েছে।
দেখানো হয়েছে একজন মা সন্তানসম্ভবা হলে মায়ের অবস্থা কেমন থাকে। মায়ের গর্ভে থাকা নবজাতকের জন্য মায়ের ভালোবাসা কেমন থাকে। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির মুখ দেখে গর্ভধারিণী মা কেমন আনন্দ উল্লাস করে। সন্তানের জন্য জন্মদাতা পিতার ভালোবাসা কেমন থাকে। বনের হিংস্র প্রাণীর সাথে লড়াই করে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েও নিজের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকে। প্রখর রোদে গাছে আগুন ধরে গেলে সবাই হায়-হুতাশ শুরু করে। সেই আগুন নিয়ে গবেষণা করে নিজেরাই আগুন জ্বালাতে শিখে। বৃষ্টিতে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে ঝুপড়িঘর বানাতে শিখে। ধারালো পাথরের ঘষায় হাত কেটে গেলে সেই পাথর দিয়ে শিকার করার অস্ত্র তৈরি করতে শিখে। তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পশুর চামড়া ব্যবহার করে। সেই চামড়া দিয়েই একসময় নিজেদের লজ্জা নিবারণের বস্ত্রও আবিস্কার করে ফেলে। এভাবে পার হতে লাগলো কালের পর কাল, আর সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ। এখন চলছে কলিযুগ। মানুষ এখন কলিযুগের মাঝামাঝি সময়ের সভ্য যুগে।
এই যুগে আমার বাবার জন্ম হলো। আমার বড়দাদার জন্ম হলো। চার বোনের জন্ম হলো। এরপর আমার জন্ম হলো ১৯৬৩ খ্রীস্টাব্দের ৮ জুন। সেই থেকে শুরু হলো এই সুন্দর পৃথিবীতে আমার পথচলা। পাঁচবছর বয়সে দেওয়া হলো আমার হাতেখড়ি। হাতেখড়ি দেওয়ার কাগজ ছিল কলা পাতা। কলম✒ছিল বাঁশের কঞ্চি। সেই আদিম যুগ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা আমার জানা না থাকলেও, আমি একটু একটু বুঝের হতে শুরু করেছিলাম ১৯৬৮ খ্রীস্টাব্দ থেকে। ভালোমন্দ বুঝতে শুরু করে দেখেছি আদিম যুগের মানুষের মতো অনেক মানুষকে অর্ধনগ্ন হয়ে থাকতে। দেখেছি লেংটি পরে থাকতে। ছোটবেলার সেসব দেখা একরকম স্মৃতি থেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। ইউটিউবে থাকা ভিডিওটা দেখে আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করলাম, আদিম যুগের ভাবনা।
২০টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার পোস্ট। ভিডিও টা দেখতে হচ্ছে।
অনেক আগে পাঠ্যপুস্তকে আদিম মানুষের ছবি দেখেছিলাম। আদিম যুগ আদিম মানুষ বলে যে কিছু ছিলো তা ভাবনাতেই ছিলো না। এখন আরো গভীর ভাবে জানতে ইচ্ছে করছে। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা আপনাকে
নিতাই বাবু
দিদি, ধৈর্য ধরে ভিডিওটা পুরোপুরি দেখলেই বুঝতে পারবেন, সেই যুগে আমরা কেমন ছিলাম; এখন কেমন আছি। এর চেয়ে বেশিকিছু আর বলার নেই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ইসিয়াক
চমৎকার উপস্থাপন।
ধন্যবাদ
নিতাই বাবু
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
এক কথায় অসাধারণ !
চমৎকার রচনাশৈলী।
শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
সুন্দর গঠনমুলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আদিম হলেও এরা আমাদের ই পূর্বপুরুষ। চৌদ্দপুরুষ দের নাম নিয়ে যা বললেন মোহিত হলাম। আপনার লেখনীতে সবসময় একটা যাদু কাজ করে যা পড়ার জন্য আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। অনেক কিছু জানলাম , দেখলাম। এককথায় অসাধারণ। ধন্যবাদ দাদা। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
নিতাই বাবু
আপনার জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো দিদি। আশা করি ভালো থাকবেন।
এস.জেড বাবু
এতো গভীরে কেউ ভাবে কেমন করে।
দুই বার পড়লাম।
অনেক কিছু ভাবতে হবে নতুন করে।
দারুন লিখেছেন ভাই
নিতাই বাবু
সুন্দর গঠনমুলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় বাবু দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন।
এস.জেড বাবু
আপনিও ভালো থাকবেন ভাই,
আপনার ভাবনার জগত আরও সম্প্রসারিত হউক।
শুভকামনা।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ ,পড়ে ভালো লাগলো।
মাহবুবুল আলম
নিতাই বাবু! লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো। শুভ কামনা!
নিতাই বাবু
সুন্দর গঠনমুলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন।
রেহানা বীথি
খুব সুন্দর পোস্ট দাদা। আদিম মানুষ সম্পর্কে কিছুটা পড়েছিলাম, আপনার পোস্টের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হলাম। চমৎকার ভিডিওটি সংযোজন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
যদি সময় থাকে তো ভিডিওটা দেখার জন্য অনুরোধ থাকলো। ভিডিওটি পুরোপুরিভাবে দেখলেই বুঝতে পারবেন, সেই দিনগুলো কেমন ছিল। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
তৌহিদ
সভ্যতার বিকাশে আমরা ক্রমে আধুনিক হচ্ছি। তবে আদিম যুগে মানুষের কস্ট করে কাটানো জীবনযাপন ছবিতে দেখে বা ভিডিও দেখে পুরোপুরিভাবে অনুধাবন করা সত্যিই কঠিন।
দারুণ একটি বিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন দাদা। অনেক ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
তবুও এই ভিডিওটিতে সেই যুগের সেই মানুষগুলোর ভালোমন্দ অনেককিছুই দেখানো হয়েছে দাদা। যা দেখানো হয়েছে, তা দেখেই কিছু অনুভব করা যায়। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ছাইরাছ হেলাল
কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গিয়ে মন খারাপ করে দিলেন!
কঠিনের বাস্তবতা হয়ত একেই বলে, কেউ দেখে, কেউ শুধু শোনে! প্রিয়জনের কাছে।
নিতাই বাবু
হ্যা দাদা, ঠিক বলেছেন। ভিডিওটা দেখলে সত্যি মনটা খারাপ হয়ে যায়!
সুন্দর গঠনমুলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।