আজমির শরীফ ভ্রমণ

ইঞ্জা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০৬:৪৩:৪০অপরাহ্ন ভ্রমণ ৩০ মন্তব্য

 

২০০৫ সালের কথা, দিল্লি এয়ারপোর্টে নেমেই টেক্সি ক্যাব নিয়ে যাচ্ছি হোটেলের পথে, ক্যাবওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম কোন ভালো ট্রাভেল এজেন্ট পাওয়া যাবে কিনা, থাকলে আগে ওখানে নিয়ে যাও।
সে এক ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে নিয়ে গেলো, ওখানে বসেই ফাইনাল করে অল্প কিছু এডভান্স করলাম, কথা হলো ওরা সুজুকি এস্টিম পাঠাবে, এক রাত জয়পুর থাকবো আসার পথে, পরদিন ঘুরে ফিরে সব দেখেই বিকালে রওনা হয়ে দিল্লি আসবো।
হোটেলে এসে ফ্রেস হয়ে দুপুরের লাঞ্চ করলাম চিল্ড বিয়ারের সাথে তন্দুরি চিকেন, রোটি (নান), মিক্সড রাইতা।
খেয়ে উঠে পার্টস সাপ্লাইয়ারকে কল দিলাম, তাকে বললাম আজমির শরীফ থেকে ফিরে ওর সাথে দেখা করবো।
ফোন রেখে দিলাম ঘুম, এক ঘুমে রাত নয়টা, উঠে ফ্রেস হয়ে বেরুলাম আসপাশ ঘুরতে, রিক্সা নিয়ে ইতি ঘুরে কেএফসিতে খেয়ে হোটেলে ফিরলাম রাত ১১ টায়, এসে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করে রাত দুইটার সময় রেডি হয়ে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ নিয়ে নিচে নামলাম চেক আউট করার জন্য, চেক আউট শেষ করার সময় গাড়ী চলে আসাতে গিয়ে উঠে পড়লাম।
এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে আমাদের পনেরো মিনিট লাগলো, এগুতে লাগলাম আমরা আজমীরের উদ্দেশ্যে, সকাল হলে আশে পাশের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে এগুচ্ছি, হটাৎ খেয়াল করলাম রাস্তার দুই পাশের চেহেরা বদলাতে শুরু করেছে, যতদূর চোখ যায় শুধু ধু ধু বালুচর, এক সময় তাও বদলাতে শুরু করলো, এখন আমরা এক্সপ্রেসওয়ে ছেড়ে গ্রাম্যপথে এগুচ্ছি, এরমানে হলো আমরা রাজস্থানের মরুভূমিতে এসে গেছি।

 

ড্রাইভার বললো, সামনেই আমরা যাত্রা বিরতি করবো রাজস্থানের পুস্কারে, এইখানে যদি এক রাত থাকি তাহলে উঠের রাইড নেওয়া যাবে, স্থানীয়দের নাচগান উপভোগ ও রাতের ডিনার হবে বারবিকিউ।
আমি না করলাম কারণ আমার মন টানছে খাজা বাবার দরবারের দিকে।
পুস্কারে একটা স্থানীয় বাংলোতে যাত্রা বিরতি করলাম, ওখানে একটা রুম দেওয়া হলো, কি খাবো জিজ্ঞেস করাতে আমি চিকেন কড়াই, পরোটা দিতে বলে বাথরুমে গিয়ে গোসল সেরে কিছুক্ষণ ঘুমালাম, সকাল দশটার সময় কলিংবেলের শব্দে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
রুমবয় খাবার দিয়ে গেলে দ্রুত খেয়ে বেরিয়ে এলাম ব্যাগ নিয়ে, বিল মিটিয়ে আবার রওনা হয়ে গেলাম, পুস্কারে বিখ্যাত এক মন্দির আছে যেখানে বানরের আধিক্য বেশি, (ড্রাইভার বললো)।
আমরা পাথুরে পথ বেয়ে এগুচ্ছি, ড্রাইভার বললো একটু পরেই আজমির শরীফ দেখা যাবে পথ থেকেই, সত্যি সত্যি একটু পরেই আজমির শরীফ দেখা যেতে লাগলো, আমরা পাথুরে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম, কিছুক্ষণ পরেই আমরা পোঁছে গেলাম আজমির শরীফ শহরে।

ছোট এক শহর আজমির শরীফ এলাকাটি, জুমাবার ছিলো সেদিন, গাড়ীওয়ালা ভিতরের দিকে কিছুদূর নিয়ে গিয়ে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললো, যখন বেরুবেন আমাকে কল দিলে এইখানেই গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করবো, আমি এগুলাম খাজা বাবার দরবারের উদ্দেশ্যে।
হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রঃ) মাজার শরিফ হেটেই এগুচ্ছি, আশে পাশে মানে রাস্তার দুই পাশে প্রচুর দোকান ঘর, অনেক গুলো মোতোয়ালি আমাকে ঘিরে ধরলো যেন তাদের কাউকে নিই, হটাৎ সুন্দর, লম্বা এক মানুষ ভীর ঠেলে এগিয়ে আসলে বাকিরা রণে ভঙ্গ দিলো।
উনি সালাম জানিয়ে আমার নাম ধাম জানতে চাইলে পরিচয় দিলাম, আমি মোহাম্মদ গোলাম নবী, বাংলাদেশ থেকে এসেছি।
উনি খুব আনন্দিত হয়ে বললেন, আসুন আমি আপনার সঙ্গি হবো আজ, আমিও সানন্দে রাজি হয়ে এগুলাম।
আজমির শহরটি রাজস্থানেরই একটি ছোট শহর যা খাজা বাবার দরবার শরীফকে ঘিরে গড়ে উঠেছে, এই এলাকাটিই রাজস্থানের একমাত্র মুসলিম এলাকা বা মুসলিম বেশি, শহরের দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি রেলস্টেশন আছে, অনেকেই দিল্লি থেকে সরাসরি ট্রেনে করে আজমির শরীফ জিয়ারত করতে আসেন।

........... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ