আকাশে মেঘের ঠোঁট

রিমি রুম্মান ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ১০:৪৯:২০পূর্বাহ্ন গল্প ৮ মন্তব্য

১৬৯ স্ট্রিট সাবওয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে হিলসাইড অ্যাভিনিউ ধরে বাড়ির দিকে হাঁটছে কামরুন নাহার। ক্লান্ত, অবসন্ন, ধীর পায়ে হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউর দিকে হাঁটছে। কাজ শেষে এ পথটা হেঁটে বাড়ি ফেরা বেশ ক্লান্তিকর। শ্বাস ঘন হয়ে আসে। দুপাশে প্রকাণ্ড সব গাছ। পাহাড়ের মতো উঁচু রাস্তা। তবুও ফিরতে হয়। অন্য পথে ফেরার কোনো রাস্তা নেই। রোজ এই পথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি বাড়ির সামনে ক্ষণিক দাঁড়ায়। অনেকটা জিরিয়ে নেওয়ার মতো। শ্বাস নেয়। নেমপ্লেটের দিকে তাকায় কয়েক সেকেন্ড। এই তাকিয়ে থাকায় প্রশান্তি লাগে, স্বস্তি লাগে। যেন দীর্ঘ ক্লান্তিকর দিন শেষে ক্ষণিক প্রশান্তি। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি যে, এই স্থানে ক্ষণিক বিরতির এই সময়টায় অজান্তেই রোজ জীবনানন্দ দাশের সেই লাইনটি বিড়বিড় করে আওড়ায় কামরুন নাহার, ‘তখন ভোরের রোদে আকাশে মেঘের ঠোঁট উঠেছিল হেসে...’।

কেন এই ভালো লাগা? কেন এই প্রশান্তি? বাড়িটির সামনের নেমপ্লেটে বাংলায় লেখা ‘নোঙর’। বাড়ির নাম ‘নোঙর’। এই বিদেশে কোনো বাড়ির নাম আগে কখনো চোখে পড়েনি তাঁর। শুধু নম্বর দিয়ে চেনা যায় বাড়ি। সামনে ঘন সবুজ ঘাস, কিছু সুবাসিত ফুলের গাছ। শৌখিন বাঙালি পরিবারের বাড়ি। এ বাড়ির খালাম্মার সঙ্গে তাঁর পূর্ব পরিচয় আছে। মাঝে মাঝে ডাক্তারের অফিসে দেখা হয়, গল্প হয়। খালাম্মার বয়স ষাটের কোঠায়, আর খালু সত্তরের কোঠা পেরিয়েছে। খালু এই প্রবাসে এসেছেন সত্তরের দশকে। জাহাজে চড়ে। জাহাজ তীরে ভিড়লে সেই যে সবার চোখের আড়ালে নেমে পড়েছেন, সেই থেকে এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস। আর তাই শখ করে নীড়ের নাম রেখেছেন নোঙর। বৈধ কাগজ পত্র ছিল না দীর্ঘদিন। এক বিদেশিনীকে মোটা অঙ্কের ডলারের বিনিময়ে বিয়ে করে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন—কন্ট্রাক্ট ‘ম্যারেজ’। তা-ও এ দেশে আসার ১৬ বছর পর। দেশে গিয়ে পাশের গাঁয়ের অভাবী পরিবারের সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেন। বয়সের ব্যবধানটাও একটু বেশি বটে। খালু যতটা সহজে বৈধ কাগজ পেয়েছেন, ততটাই কঠিন ছিল তাঁর বন্ধুর বিষয়টা। খালুর ভাষায়, ‘সাফায়েত বিয়া করছিল গায়নিজ এক মহিলারে। ম্যালা ট্যাঁহার বিনিময়ে। ওমা! এরপর তো সময় পার হইয়া গেলেও মহিলা সাফায়েত’রে ডাইভোর্স দেয় না! আরও ম্যালা ট্যাঁহা দাবি করে। এইভাবে বহুত ডলার হাতাইয়া নিছে বেটি।’

ছেলে ইভান আর মেয়ে ইমাকে নিয়ে কামরুন নাহারের সংসার। স্বামী তুষার খান দেশে ডাক্তারি পাস করেছে। তবে এ দেশে আসার পর আর পড়া চালিয়ে যেতে পারেনি। ব্যয়বহুল এই শহরের বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতেই হিমশিম দশা। কিছুদিন লং আইল্যান্ডের ওষুধের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেছে। এখন ট্যাক্সি চালানো পেশা বেছে নিয়েছে। স্বাধীন পেশা। মালিকের রক্তচক্ষু নেই। সার্বক্ষণিক চাকরি হারানোর ভয় নেই। গাড়ি পার্ক করে কোথাও না কোথাও নামাজ আদায় করে নেওয়া যায়। আয় রোজগারও অন্য অনেক পেশার চেয়ে ভালো। এ নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। নেই কষ্টবোধ। এ নিয়ে তুষার খানের ভাষ্য, ‘যে জীবন যাপন করছি, সে তো আমারই স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া, কারও প্রতি অভিযোগ, অনুযোগ জানাবার অধিকার তো নেই আমার’।

দেশে ডাক্তারি পাস করার পর তুষার খানের ভেতরে এক বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছিল যে, শুধু সাধারণ পাস দিয়ে কিচ্ছু হবে না। বিদেশে গিয়ে পড়তে হবে। বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। আর তাই তো ঘটকের মাধ্যমে কামরুন নাহারের সঙ্গে বিয়ে হয়। কামরুন নাহার বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেনি ছোটবেলার দুরন্তপনার কারণে। কিন্তু তাই বলে ডাক্তার পাত্র পেতে তাঁর সমস্যা হয়নি মোটেও। আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে বিধায় উচ্চ শিক্ষিত পাত্র পেতে বেগ পেতে হয়নি। যদিও কামরুন নাহারের একটি দুঃস্বপ্নের মতো অতীত আছে। তবুও সব জেনে বুঝেই তুষার খান এ বিয়েতে আগ্রহী হয়েছে। প্রতিটি মানুষের জীবনেই নিকষ অন্ধকার কোণ থাকে। কারওটা জানা যায়, কারওটা গোটা জীবন সবার অগোচরে থেকে যায়। এই জানা কিংবা না জানায় কারও ক্ষতি তো নেই!

কামরুন নাহার সেই অন্ধকার সময় মনে করতে চায় না। তবুও মনে পড়ে কারণে অকারণে। অনেক বছর আগে, অল্প বয়সেই কামরুন নাহারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল বিদেশ ফেরত রাজন রহমানের। পাত্র কী করে অর্থাৎ পাত্রের পেশা কী এমন প্রশ্নের উত্তরে আত্মীয়দের জানানো হয় পাত্র আমেরিকায় থাকে। ‘আমেরিকায় থাকে’ শব্দ দুটির আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল পাত্রের বংশ পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা সব। কামরুন নাহারের বাবার সহায় সম্পত্তি, গ্রামে প্রভাব প্রতিপত্তি ভালো। কথা ছিল বিয়ের পর কামরুন নাহারকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হবে সহসাই। সেবার পাত্রী দেখতে দেখতেই রাজন রহমানের ছুটি ফুরিয়ে যায়। শেষে তাড়াহুড়োয় বিয়ে হয় কামরুনের সঙ্গে। দেশে মাত্র এক সপ্তাহের বৈবাহিক জীবন ছিল তাঁদের। রাজন ফিরে যায় প্রবাসে। দিন, মাস, বছর পেরোয় কামরুনের অপেক্ষার প্রহর ফুরায় না। স্বামীর কাছে ফেরার অপেক্ষা, স্বপ্নের দেশে নিজের নতুন সংসার সাজানোর অপেক্ষা। পরে জানা যায় রাজনের মূলত আমেরিকায় থাকার বৈধ কাগজপত্র নেই। কোনোভাবে একবার অনুমতি নিয়ে দেশে গিয়েছিল। শেষে নিরুপায় হয়ে কামরুনের বাবা দালাল ধরে মোটা টাকার বিনিময়ে ডিভি লটারিপ্রাপ্ত একজনের স্ত্রী হিসেবে তাঁকে স্বামীর কাছে আমেরিকায় পাঠায়।

বিদেশে আসার পর কামরুন বেশ অবাক হয়েই লক্ষ্য করে রাজনকে সবাই রনো নামে ডাকে। রাজন নিজেই নিজেকে সবার কাছে রনো নামে পরিচয় দিয়েছে। কামরুন বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে রাজনের বন্ধুর বাসায় লং আইল্যান্ডে এক পার্টিতে যাওয়ার পর। সেদিন অন্য সব অতিথিদের সঙ্গে কামরুনকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ‘ক্যারন’ বলে। কামরুনের বিষয়টি ভালো লাগেনি। বাড়ি ফিরে স্বামীকে অনুযোগের স্বরে বলেছিল, পার্টিতে সবাইকে আমার নাম ‘ক্যারন’ বললে কেন? উত্তরে রাজন শ্লেষের সঙ্গে বলেছে, এ দেশে এসেছ যেহেতু, চলা-ফেরা, কথা-বার্তায় স্মার্ট হতে শেখো। ওই সব কামরুন্নাহার টামরুন্নাহার টাইপের খ্যাত নাম বলে আমায় বন্ধুদের সামনে বিব্রত করবে না। কামরুনের মন খারাপ হয় খুব। আরও মন খারাপ হয় যতটা স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় স্বামীর ঘরে এসেছে, ততটাই দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছে ছোট্ট একটি রুমে স্বামীর বসবাস দেখে। আলো বাতাসহীন বেসমেন্টে প্রথম দিকে দম বন্ধ লাগত, হাঁসফাঁস লাগত। অথচ যে বন্ধুর বাসায় পার্টিতে গিয়েছিল সেদিন, তাঁদের কী বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি! সামনে ফুলের বাগান। পেছনে বাচ্চাদের খেলার জায়গা, একপাশে কত রকম সবজি গাছ লাগিয়েছে! দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। সবুজ আর সবুজ!
যাক্‌ গে। কার কী আছে সেসব নিয়ে ভেবে কী হবে! রাজন পড়াশোনা করছে। পড়া শেষ হলে একদিন ভালো চাকরি হবে। ভালো চাকরি হলে একদিন আমাদেরও এমন বাড়ি হবে নিশ্চয়ই।

নতুন দেশে আসার তিন সপ্তাহ পর রাজন কামরুন নাহারকে একটি ‘নাইনটি নাইন সেন্টস’ স্টোরে চাকরি ঠিক করে দেয়। আগেই ঠিক করে রেখেছিল কাজটি। ইন্ডিয়ান মালিক রাজনের পরিচিত ছিল। সপ্তাহে ছয় দিন। ওপেনিং টু ক্লোজিং। সব মিলিয়ে রোজ ১০ ঘণ্টা করে। সপ্তাহে ছয় দিন, ৬০ ঘণ্টা। যদিও দোকানের নাম ‘নাইনটি নাইন সেন্টস’, কিন্তু অধিকাংশ জিনিসের দামই নাইনটি নাইন সেন্টের বেশি। দীর্ঘ সময় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় খুব ক্লান্ত লাগে কামরুনের। পা ব্যথা হয়। মাঝে মাঝে শরীর অবশ হয়ে আসে। তবুও তাঁর ভাবতে ভালো লাগে যে রাজনের পড়া শেষ হলে, ভালো একটি চাকরি হলে নিশ্চয়ই তাঁকে আর বেশি কাজ করতে হবে না। আপাতত কামরুন চাকরি করে সংসারটা চালিয়ে নিলে রাজন নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে পড়াটা শেষ করতে পারবে। কাজ ও সংসারের ব্যয় বহন করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায় না এই দেশে, যেকোনো একজন পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, অন্যজন সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবে। রাজনের যেহেতু পড়ার আগ্রহ বেশি, সে-ই না হয় পড়ুক, ভাবে কামরুন। সারা দিন রাজনের অনেক পড়া! কম্পিউটারে বসে রাতদিন শুধুই পড়ে। তাই কষ্ট হলেও তাঁকে কাজটা করতে হচ্ছে। রাজনের পড়া শেষ হলেই তাঁরা সন্তান নেওয়ার কথা ভাববে। রাজনের বুদ্ধিদীপ্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কামরুনের বেশ ভালো লাগে।

কামরুনের কর্মস্থলের পাশেই ‘ডানকিন ডোনাটস’ কফি শপ। মাঝে মাঝে সেখানে কফি কিনতে গেলে পরিচয় হয় রিভা নামের সদা লাস্যময়ী এক বাংলাদেশি নারীর সঙ্গে। রিভা সেখানে ক্যাশিয়ারের কাজ করে। কামরুন প্রায়ই রিভাকে উপদেশ দেয়। বলে, ‘কলেজে ভর্তি হও, নইলে জামাইকে পড়তে বলো। এই ছাতার কাজ কত দিন করবা? তোমাদের ভবিষ্যৎ আছে না? আমাকে দেখো, দেখে শেখো’। রিভা হাসে। উত্তরে কিছু বলে না। ভাবে সবার স্বামী, সংসার তো আর এক নয়, কার যে কিসে ভালো হবে, তা কেবল সে-ই জানে।

কয়েক বছর বাদে এক তীব্র রোদের খটখটে দুপুর। উচ্ছ্বসিত রাজন একটি সাদা খাম হাতে ফোনে উচ্চ স্বরে কথা বলতে বলতে ঘরে ঢোকে। সেদিন কামরুনের ডে অফ ছিল। ভেজা হাত মুছে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে কামরুন। রাজনের গ্রিনকার্ড এসেছে ডাকে! কামরুনের মাধ্যমে আবেদন করে পাওয়া এটি। দুমাস বাদে পড়াও শেষ হবে তাঁর। আহা এবার আর তাঁদের পিছু ফিরে তাকানোর সময় নেই। কষ্টের দিন ফুরাবে সহসাই। কামরুনের আর দীর্ঘ ঘণ্টা কাজ করতে হবে না। কাজ কমিয়ে দেবে। রাজনের ভালো চাকরি হলে ছুটির দিনগুলোতে মনের আনন্দে ঘুরে দেখবে শহর, প্রকৃতি, ইমারত। দেখবে শহরের মানুষের কোলাহল, যানজট। কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে...!

সময়টা ছিল নভেম্বর মাসের শুরুর দিকের এক রোববার। রক্তিম সন্ধ্যা। সন্ধ্যাও ঠিক নয়, তখনো খানিকটা বিকেল ঝুলে ছিল প্রকৃতিতে। প্রকৃতি সেদিন রং মেখেছিল যেন গায়ে। পাতাঝরা দিন ছিল। ঘন নীল আকাশে মেঘ লেগে ছিল। যেন শাদা ব্লাউজ আর গাঢ় নীল শাড়ি পরিহিতা কোনো নারী আঁচল উড়িয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিন একটু আগেই ছুটি হয় কামরুনের। রোববারে সাধারণত বিকেল আর সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়ে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। হালকা শীতের দিন সন্ধ্যা শুরুর আগে আগে ক্ষণস্থায়ী এই সময়টা চমৎকার লাগে কামরুনের। বেশ ভালো লাগার আবেশ নিয়ে বাড়ি ফেরে সে। রোববারের এই সময়টা রাজন বাড়িতেই থাকার কথা। কিন্তু সেদিন যেন কেমন শূন্য শূন্য লাগে বাড়ি ঢুকেই। এত ফাঁকা তো কখনো লাগেনি আগে! ক্লান্ত শরীর। ক্লোজেট খুলে জামা বের করতে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা লাগে কামরুনের বুকের ভেতর। রাজনের জামা কাপড় কিছুই নেই! নেই ল্যাপটপ, বইপত্রও। টেবিলে নিঃসঙ্গ একটি সাদা খাম চায়ের কাপের নিচে চাপা দিয়ে যত্নে রাখা। ঝড়ের বেগে সেটি হাতে নেয় সে। মাত্র দুটি লাইন, ‘আমাকে খুঁজো না। তোমার সঙ্গে বাকি জীবন কাটানো সম্ভব নয়। ইতি, রাজন’। কামরুনের হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কাঁপা হাতে অন্য কাগজটি মেলে ধরে সামনে। ডিভোর্স লেটার। মতের অমিল? কোনোদিন তো তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মতের অমিল হয়নি! রাজন যেভাবে চেয়েছে, কামরুন সেভাবেই চলেছে। সেভাবেই জীবন যাপন করেছে। কার্নিশে আশ্রিত কোনো এক চড়ুইয়ের জীবন। মত কিংবা দ্বিমত তো হয়নি তাঁদের! কোনো বিষয় নিয়ে বিবাদ, মারামারি, হাতাহাতি কিছুই তো ছিল না সংসারে! তবে? ধ্বংসপ্রাপ্ত কোনো নগরীতে বেঁচে যাওয়া একমাত্র প্রাণী মনে হতে থাকে নিজেকে। বুক ভেঙে কান্না পায়। এক ছাদের নিচে থেকেও রাজনের দুরভিসন্ধি একেবারেই টের পেলাম না? অশ্রুজলে ভেসে যেতে যেতে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে কামরুন। যে প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই হয়তো পৃথিবীর কারওরই।

এরপর কেটে গেছে কয়টি বছর। সময়ের হাত ধরে কত নদী সাগরে মিশেছে। পরিযায়ী পাখিরা উষ্ণতার সন্ধানে এক দেশ থেকে অন্যদেশে উড়ে গিয়েছে।

কামরুন দীর্ঘশ্বাস নেয়। বাড়ির পথে পা বাড়ায় হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউর দিকে। পথটা পাহাড়ের মতো উঁচু। এ পথে হেঁটে বাড়ি ফেরা ক্লান্তিকর। তবুও এ ফেরায় আনন্দ আছে। ঘরে তুষার খানের মতো যত্নশীল স্বামী আছে। রোজ বাড়ি ফিরলে যে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি এগিয়ে দিয়ে বলবে, আগে গলাটা ভিজিয়ে নাও। ছেলে ইভান আর মেয়ে ইমা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বিরামহীন বলতে থাকবে সারা দিনের খুনসুটির কথা। বাবার সঙ্গে তাঁদের দুমড়ে মুচড়ে আদর দেওয়ার কথা। ভালো লাগার আবেশ গায়ে মেখে দ্রুত বাড়ির দিকে হাঁটে কামরুন। ঘোলা হয়ে আসা চশমার কাচ গলায় ঝোলানো স্কার্ফে পরিষ্কার করে আবারও চোখে দেয়। আনমনে আবৃত্তি করে প্রিয় লাইন, ‘তখন ভোরের রোদে আকাশে মেঘের ঠোঁট উঠেছিল হেসে...’

রিমি রুম্মান
নিউইযর্ক, যুক্তরাস্ট্র

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ