অপরাজিতার পরাজয়

মাহমুদা মজুমদার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ০৪:৪৬:২৭অপরাহ্ন ছোটগল্প ১৬ মন্তব্য

সময় টা ২০০০সাল,বিংশ শতাব্দীর পদচারনায় মুখরিত পৃথিবী বাসী।

এ রকম সময়ে এসেও একজন নারীর মতামত প্রকাশের সুযোগ নেই এমন টা ভেবে অঝোঁরে চোখের পানি ফেলে চলছে ডাক্তারী পড়ুয়া ২ বর্ষের ছাত্রী ফারিহা।

ফারিহা ছোটবেলা থেকেই দারুন মেধাবী সে সাথে বুদ্ধমতি ও বটে,,,প্রানচঞ্চল স্বভাবের ফারিহা জীবনের কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয় নি, বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। মফস্বলে বেড়ে ওঠা ফারিহার তেমন কোন আত্মিয় স্বজন নেই ঢাকায়, তাইতো সে হোস্টেলে থেকেই পড়ালেখা করে।

ফারিহার দেশের বাড়ি চাঁদপুরে, চাইলেই ও একাই ও বাড়ি যেতে পারে, কিন্তু বাবা মায়ের নিষেধ আছে একা যাওয়া যাবে না,,,তাই তো ছুটি ছাটায় ফারিহার বাবা বা তার বড় ভাই তাকে নিতে আসে।

২১/০৩/২০০০, ফারিহা কলেজ থেকে হোস্টেলে ফিরে দেখে তার বড় ভাই পাভেল ওয়েটিং রুমে বসা, ফারিহার হাত পা কাঁপতে থাকে ভাইকে দেখে,সবাই সুস্থ আছে তো বাড়িতে! এই অসময়ে তো ভাই আসার কথা না, তবে কি হলো? ভাই জানালো বাবার শরীর টা ভালো নেই, তাই তোকে এখনি আমার সাথে বাড়ি যেতে হবে।

ফারিহা বাবার আদরের মেয়ে, আর বাবার কি এমন হলো যে ভাই হুট করেই ওরে নিতে আসল এটা ভেবে ও কেঁদে কেটে অস্থির,নিশ্চই সিরিয়াস কিছু!!! ও ভাইকে জোর করে বলছে"" ভাইয়া সত্যি করে বলতো বাবার কি হয়েছে, দেখ আমি মেডিকেল স্টুডেন্ট কিছুটা হলেও বুঝবো, তুই আমাকে খুলে বল""

ভাই বললো আরে পাগলী বোন আমার তেমন কিছুই হয় নি, তুই তো বাবার আদরের মেয়ে, তোকে দেখলেই বাবা ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবেন।

তুই ব্যাগ ঘুচিয়ে নে, আমরা একটু পর ই রওনা দিবো। ফারিহার আগামীকাল খুব দরকারী একটা পরীক্ষা আছে, কিন্তু বাবার অসুস্থতার সামনে পরীক্ষা নিতান্তই তুচ্ছ ফারিহার আছে!

সে দ্রুত রেডি হয়ে ভাইকে বললো চলো,সেই সাথে অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। ভাই বললো আর কাঁদিস নাতো,  চল,,,,আমার সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি, আর তুই ও মাত্র কলেজ থেকে ফিরলি, আগে ২ ভাইবোন ভালো কোন রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে পেট ভরে খেয়ে নিই।

ফারিহা অবাক হয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন, এই রকম পরিস্থিতি তে ভাই,,, এই রকম করে কথা বলে কি করে,,এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে কি করে বাবার কাছে পৌছানো যায়, এটা হওয়া উচিত ওদের মূল লক্ষ্য। ফারিহা তার ভাইকে বললো,ভাইয়া আমার গলা দিয়ে কিছু মানবেনা, তুই বরং কিছু হালকা পাতলা খাবার কিনে নে তোর জন্য, বাসে খেয়ে নিস। ভাই বললো আচ্ছা তবে তাই হোক।

ওরা ভাইবোন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এ এসে পদ্মা বাসের কাউন্টার থেকে ৫ টা টিকেট নিলো,ফারিহা তো অবাক ভাইয়া আমরা মানুষ তো দু জন টিকেট কেনো পাঁচটা নিলি? পাভেল ফারিহার থেকে ৩ বছরের বড় ছোটবেলা থেকেই ফারিহা ভাই কে তুই করেই বলে,এটা ভালোবাসা কিংবা অভ্যাস।

পাভেল বললো, নাজু আপা( ওদের ছোট চাচার মেয়ে) তার ২ মেয়ে সহ যাবে আমাদের সাথে, দুলাভাই ঢাকার বাইরে,  আর আপার বাসা তো সাইনবোর্ড, আপা ঐ খান থেকে বাসে উঠবে,  তাই আমাকে আগেই বলছে সিট রাখতে। এটা শুনে ফারিহা চিৎকার করে উঠলো, তার মানে বাবার অবস্থা খুবই খারাপ, নয়তো নাজু আপা এ অসময়ে কেন যাবেন আমাদের সাথে! পাভেল বললো আরে তেমন কিছু না তুই চিন্তা করিস না। বাসে ছাড়ার পর থেকে ফারিহা কেঁদেই যাচ্ছে!

সাইনবোর্ড বাস খানিক টা থামিয়ে নাজু আপা আর তার মেয়েরা হুড়মুড় করে বাসে উঠলো,,ফারিহা ওদের সাজগোজ দেখে অবাক হলো, যেন কোন বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। নাজু আপা বাসে উঠে ফারিহা কে কাঁদতে দেখে বললো,,,কিরে বিয়ে কনে কি একদিন আগে থেকেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলি নাকি,  নাজু আপার ইচড়ে পাকা ছোট মেয়ে মানহা বলে উঠলো, আম্মু এই খালামনি টার ই তো কাল বিয়ে,,কি মজা! কি মজা!

পুরো পৃথিবীটা দুলে উঠলো ফারিহার,আপা কি বলছে এইসব!!!!!তাকে যে অপরাজিতা হতে হবে, এই সময় এই সব কথার মানে কি!!!

বাস্তবতা কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে ফারিহাকে?

 

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ