অতৃপ্ত জীবন..প্রবাসী০৭ http://www.sonelablog.com/archives/9920

পুড়ে যাওয়া ক্ষয় ক্ষতির জন্য নিকটস্হ থানায় ডাক পড়ে।সেখনে আমরা বেশ কয়েক জন রিপোর্ট দিয়ে আসলাম।এখানেও বাঙ্গালীদের ছলচাতুরী কেউ যা ক্ষতি হয়নি তাও বলে আসে।পায়ের অবস্হা মোটামুটী ভাল কিন্তু কোম্পানী তার পরও কাজে দিচ্ছেনা।কাজ দিচ্ছে না ঠিক তা নয় কোম্পানীর হাতে এখন তেমন একটা কাজ নেই।তাই শুয়ে বসে আর পার্ট টাইম দোকানে কাজ করে নিজের পেট চালাচ্ছি কোন মতে কিন্তু দুশ্চিন্তা মাথায় এসে ভর করে, কি করব ঠিক ভেবে পাচ্ছি না।এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে চলে গেলাম অরচার্ডে আড্ডা মারতে আর পুরাতন বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যদি কোন কাজের হদিস পাই।অরচার্ড সিঙ্গাপুরে যতগুলো প্রসিদ্ধ স্হান রয়েছে তার মধ্যে একটি।অরচার্ড লিং http://en.wikipedia.org/wiki/Orchard_Road               

অরচার্ডে লাকী প্লাজায় আমাদের বাঙ্গালী এবং ইন্ডিয়ানদের আড্ডা স্হল সেখানে গেলাম দু'জনে।দু'জনে চিন্তা করলাম এখানে নাকি গার্ল ফেন্ডস সহজেই পাওয়া যায় অহরহ।দুষ্টুমির ছলে বন্ধুদের খোজা মাঝে গার্ল খুজছি।প্রায় ঘন্টাখানেক সময় চলে গেল প্লাজার প্রতিটি স্তরে পদচারনা দিলাম  কোন বান্ধুবী তো দুরে থাক বন্ধুও পাচ্ছিনা।সত্যি এই যে এখানে যারা গুড়তে আসে তাদের আগ থেকেই চেনা জানা থাকে।হতাশ হয়ে গেলাম একটি ৭০ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ে সেখানে এক নাইট বারে টিকিট নিয়ে ঢুকলাম।পৃথিবীর সব আনন্দ যেন উপচে পড়ল ক্লাবে।অন্ধকারে বিশাল সিনেমার পর্দায় ফুটবল খেলা চলছে ।গোলের কাছাকাছি এলে ক্লাবের সবাই যেন হৈ চৈ করে আনন্দ প্রকাশ করে এরই মধ্যে খেলা নিয়ে চলে হাজার হাজার ডলারের জুয়া।সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো থাকে হুইসকির গ্লাস যে যখন মন চায় পান করছে।অন্যত্র চলছে উমুক্ত লুঙ্গি ড্যান্স।মেয়ে ছেলের ভাবের আদান প্রদান,পৃথিবীর মানুষ হিসাবে লাইফ কি,মনে হয় একমাত্র ওরাই এনজয় করতে পারে।দিনের আলোতে ওদের বেশী একটা দেখা যয়না বিকাল পাচটার পর ভোর রাত পর্যন্ত ওদের জীবনকে ওরা উপভোগ করে ওদের মত করে যেন বাধহীন কিছু গাঙ্গচিল আকাশে ডানা মেলে ছুটে চলছে যেখানে আনন্দ সেখানেই।সেখানে দেখা হয় এক শিখ মেয়ে লাভুনীর সাথে প্রথমত আমি চিনতে পারিনি কিন্তু মেয়েটি চিনে ফেলে।হাতে হুইচকির গ্লাস নিয়ে সে কাছে এসে আমাদের অফার করে সহ নৃত্যের ।আমার নাচের কোন অভিজ্ঞতা নেই তাই সরি বলে প্রত্যাখান করি।সে আশ্চর্য্য হয়।

-তুমি আমাকে চিনতে পারোনি?

লাল নীল লাইটের আলোতে চিনতে না পারলেও এবার লক্ষ্য করে দেখলাম সেতো এলাকার ছোট ভাই মনিরের বান্ধুবী পার্টনার।

-ওহ !সরি কেমন আছো?..চিনেছি,মনির আসেনি?

-এসেছে,ঐ খানে...ঐতো...

দেখছি মনির অন্য এক মেয়ের সাথে বেশ দক্ষতার সহিত পশ্চিমা নৃত্য করছে ইউরোপিয়ান স্টাইলে হাতে হুইচকির কোনা কাটা লেটেষ্ট গ্লাস।লাভুনীর ডাকে আমাদের কাছে এসে মনির প্রথমে লজ্জা পেয়ে ধরা দিতে চায়নি।আমিই একটু আগ্রহ দেখিয়ে বললাম...চল ঐখানে একটু বসি তোর সাথে কথা আছে।আমরা ভারের একটি রেষ্ট স্হানে বসলাম।

-..তুই এখন কি করছ?

-আপনারেতো এক বার বলেছিলাম..আমি,লাভুনী এবং মালেশিয়ার দুজন মিলে ম্যান পাওয়ারের একটি কোম্পানী খুলেছি।আপনিতো বৈধ আপনিতো পারেন আমার কোম্পানীতে কিছু লোক দিতে।আপনিও আসতে পারেন।আমার হাতে এখন অনেক কাজ।

-ঠিক আছে,তুই একদিন তোর পার্টনাদের নিয়ে অফিসে আয় আমি আমার বসের সাথে কথা বলব।আমাদের এখন কাজ নেই,অনেক লোক গোডাউনে বসে আছে।বসকে বললে কাজ মনে হয় কাজ হবে।

-কবে আসব?

-কালকেই আয়।

ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বসের সাথে মোবাইলে কথা বললাম সে রাজি হলো আর বলল লোকগুলো ভালো কিনা তাদের কোম্পানী লাইসেন্স কৃত  কিনা।আমি বসকে বললাম আমার এলাকার ছোট ভাই তার সাথে মালেশিয়ান সিঙ্গাপুরিয়ান পার্টনার আছে,তুই কাগজ পত্র দেখে যাচাই বাছাই করে আমাদের দিবি।বস তাতে রাজি হয়।পর দিন মনির আমার অফিসে গিয়ে বসের সাথে আলাপ করে পনের জনের এগ্রিম্যান্ট করে।সেই পনের জনের মধ্যে আমিও একজন যদিও আমার পারমিটের মেয়াদ তিন মাস কিন্তু চিন্তা করলাম এখন যদি কাজ পাই এই ভাবে, তাহলে আমার হাতে আমার পাশপোর্টটা এসে যাবে আমি তখন ইচ্ছে মত মালেশিয়া ইন্দোনেশিয়া ট্যুরে গিয়ে পাশপোর্টটা ভারী করতে পারব।যেই কথা সেই কাজ।মনিরকে আমার কোম্পানী পনের জন লোক দেয় মনির তৎক্ষনাত পনের জনের চৌদ্দজনকেই বিভিন্ন স্হানে কাজে লাগিয়ে দেন।লোকের বিনিময়ে বসকে অ্যাডভান্স মনিরের পার্টনাররা একটি চেক দিয়ে আসে।আমাকে প্রথম যে কাজ দেন তা আমার পছন্দ হয়নি বলে ফের চলে আসি।মনির বলল ভাই কোন সমস্যা নেই আপনার যেই কাজটি পছন্দ হবে সেটাই করবেন এতে আমার কোন সমস্যা নেই আর কাজ না করলেও আপনাকে বেসিকটা দিয়ে দেব।আমি খুশি হলাম বললাম আমি একটু ইন্দোনেশিয়ায় যেতে চাই তুই সব ব্যাবস্হা করে দিবি।মনির আসস্হ করে বলে...এটা কোন ব্যাপারি না,কালই আপনার পাশপোর্টে ভিসা লাগিয়ে দেব আপনার সাথে আমার এক বন্ধু যাবে তার সাথে যাবেন.. ওকে।মনির বয়সে অনেক ছোট প্রায় পাচ ছয় বছরের পার্থক্য।সে সিঙ্গাপুর যায় আমারো চার বছর আগে।অনেক চতুর সহজে সিঙ্গাপুরে বছর খানেকের মাথায় তামিল,হিন্দী,চাইনিজ,থাই এবং ইংলিশ ভাষা আয়ত্ত্ব করে নেয়।মাত্র ইন্টার পাশ কিন্তু তার ইংলিশ তর্ক যে কোন উচ্চ শিক্ষিত লোককে হার মানাবে।বাস্তব অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক।সে সিঙ্গাপুরে শেষ পর্যন্ত বৈধ ভাবে লোক এনেছিল একশয়ের মত কিন্তু সে প্রায় পাচশঁ লোকের প্রতিদিনের লেভী বা সরকারী টেক্স বিভিন্ন কোম্পানীতে নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নেন প্রায় ৫৬০*৫০০=২৮০০০ডলার অথচ সরকারী ঘরে তার প্রতিদিনের টেক্স যায় মাত্র ১০০*৫০০=৫০০০ডলার।সুতরাং বুঝাই যায় সে কি পরিমান টাকা ইনকাম করেছিল কিন্তু দুরভাগ্য বশতঃ সে এখন শুণ্যের কোটায় দাড়িয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে সাউথ আফ্রিকায়।মনিরের সাথে কথা হয় দু একদিনের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া যাওয়া হবে।টার্গেট আমার ইন্দোনেশিয়ার বার্লি দ্বীপ।.........পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী ট্যুরিষ্ট সেখানে বসবাস করে।সেখানে কিছু হোষ্টেল আছে যা সারা বছরই বুক করা থাকে,প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ভরা ইন্দোনেশিয়ার বার্লি দ্বীপের উদ্দ্যেশ্য রওয়ানা দিলাম।সাথে একজন সিঙ্গাপুরিয়ান থাকাতে তেমন কোন সমস্যা সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেসন করেনি।১৯৯৯ মার্চের ২০ তারিখে আকাশে উড়াল দিলাম আবারও বার্লির উদ্দ্যেশ্যে........

চলবে....

 

 

 


0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ