কিশোর কুমার বরাবরই আয়কর দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। কিশোর কুমার সে সময় দেশের অন্যতম বড় করদাতা। তিনি কর ফাঁকি দিতে একটি সুপার ফ্লপ সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। কম খরচে সিনেমা বানিয়ে বেশী খরচ দেখিয়ে ফ্লপের খাতায় ফেলে আয়ের পরিমাণ কম দেখাবেন। এটাই ছিল উদ্দেশ্য। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নির্মিত হয় ‘চলতি কি নাম গাড়ি’ সিনেমাটি। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি সাথে সাথে ইতিহাস গড়ে বসে। সুপার ডুপার বাম্পার হিট। ফলে করের হিসেব আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে কিশোর কুমার এই বিশাল আয় নিজের আয়কর ফাইলে যুক্ত না করার জন্য তার ম্যানেজার অনুপ শর্মার নামে সিনেমাটির যাবতীয় রাইটস লিপিবদ্ধ করেন। কিশোর কুমারের নামে আয়কর মামলা হয়। যা পরবর্তী ৪০ বছরেও সমাধান হয়নি।

১৯৫৮ সালের ২য় সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমাটির গ্রস আয় ছিল ২.৫ কোটি আর নেট আয় ছিল ১.২৫ কোটি। ২০১৬ সালের আর্থিক বিচারে গ্রস আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৮৫ কোটি। যা আজো ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ গ্রস আয়ের সিনেমাগুলোর একটি।

১৯৫৮ সালের একটি মিউজিক্যাল রোমান্টিক কমেডি সিনেমা ‘চলতি কি নাম গাড়ি’। আপনাদের বহুবার শোনা ‘এক লাড়কি ভিগি ভিগি সে’, ‘হাল কিসি হে জনাব কা’, ‘হাম থে ও থি’ গানগুলো এই সিনেমার। সিনেমাটিতে আপন তিন ভাই (অশোক কুমার, অনুপ কুমার, কিশোর কুমার) অভিনয় করেছেন। যারা গাঙ্গুলী ব্রাদার্স নামে পরিচিত ছিলেন। সাথে ছিল বিখ্যাত মধুবালা এবং কামিনি। পরিচালনা করেন সত্যোন বোস।

সিনেমার গল্পটি যেমন সিনেমাটিক পাওয়ারফুল, তেমনি ক্ষণে ক্ষণে সরলতা এবং প্রচুর হাসির খোরাক জোগাবে। বড় ভাই’র জীবনের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ছোট দুই ভাইও নারী বর্জিত জীবনযাপন করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী। স্বাভাবিকভাবেই গল্পে নারীর আগমন ঘটে। প্রেম আসি আসি করে আসে না। আবার এসে নানান ঘটনায় জট পাকায়। তবে হ্যা, চরিত্রগুলোর সরলতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। সাথে থাকে শক্তিশালী দুষ্টুচক্র আপনাকে আটকে রাখবে।

সিনেমাটি আজকের সমালোচকদের কাছেও সমান প্রশংসিত। সিনেমাতে সম্পর্কের যে টান দেখানো হয়েছে তা সে সময়ের সিনেমা তো দূরের কথা পরবর্তী ৬০ বা ৭০ এর দশকের সিনেমাতেও কেউ তা ভাবতে পারে নি। সে সাহসও দেখাতে পারে নি। সেই সাথে মধুবালার চরিত্রটির মাধ্যমে স্বাধীনচেতা নারীর যে রূপ দেখানো হয়েছে সেটাও ছিল খুব শক্তিশালী। যা এই সময়ে খুব সাধারণ হলেও, সে সময়ের জন্য খুব সাহসী পদক্ষেপ।

সিনেমাটি কমেডি, সঙ্গীত, শব্দ, স্ক্রীন প্রেজেন্টেশন এবং অভিনয় গুণে সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়। সময়ের সাথে সাথে সিনেমাটি কাল্ট ক্লাসিকে পরিণত হয়ে পরবর্তীতে ভারতের সিনেমাকে বেশ প্রভাবিত করে। সিনেমাটির অনুপ্রেরণায়/রিমেকে নির্মিত হয় তিনটি সিনেমা। ‘বাড়তি কি নাম দাড়ি (১৯৭৪)’ যা কিশোর কুমার নিজেই পরিচালনা করেন। মারাঠি ভাষায় ২০০৭ সালের ব্লকব্লাস্টার সিনেমা ‘সারে মারে টান’ নামে রিমেক করা হয়। সর্বশেষ অনুপ্রাণিত গল্পে শাহরুখ, কাজল, বরুন ধাওয়ান, কৃতি শ্যানন কে নিয়ে ২০১৫ সালে রোহিত শেঠি নির্মাণ করেন রোমান্টিক কমেডি ‘দিলওয়ালে’।

সিনেমাটি ২০০৩ সালে আউটলুক ম্যাগাজিনের জরিপে ভারতীয় শ্রেষ্ঠ ২৫ জন নির্মাতার সর্বকালের সেরা সিনেমার মাঝে ১৮ তম স্থান অর্জন করে।

সিনেমাটি ইউটিউবে আছে। চাইলে অবসরে দেখে নিতে পারেন।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া এবং অমিত কুমারের সাক্ষাৎকার

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ