iDxJmGLYdGEv

যাহোক, আমি ও আরও কয়েকজন সহকর্মী শহীদ সাহেবের শরণাপন্ন হলাম এবং ছাত্রদের অসুবিধার কথা বললাম। শহীদ সাহেব বললেন, "কেন, একজন তো টাকা নিয়ে গেছে, এদের ভাড়া দেবার কথা বলে। তোমার সাথে আলোচনা করে টাকা দিতে বলেছি।" বললাম, "জানি না তো স্যার, সে তো চলে গিয়েছে।" শহীদ সাহেব রাগ করলেন। তিনি ছাত্র নন, তার নাম আজ আর আমি বলতে চাই না। শহীদ সাহেব আবারও কিছু টাকা দিলেন। হিসাব করে প্রত্যেককে পঁচিশ টাকা করে, এতেই হয়ে যাবে। খন্দকার নূরুল আলম ও আমি সকলকে পঁচিশ টাকা করে দিয়ে রসিদ নিয়ে নিলাম, প্রত্যেকের কাছ থেকে। তারা বিদায় হয়ে কলকাতা চলে গেল। আমরা আট-দশজন জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবের সাথে আজমীর শরীফ রওয়ানা করলাম। চৌধুরী সাহেব সাথে আছেন, টাকার দরকার পড়লে অসুবিধা হবে না। আবার দিল্লি শহরকে ভাল করে দেখে নিলাম। শত শত বৎসর মুসলমানরা দিল্লি থেকে সমস্ত ভারতবর্ষ শাসন করেছে। তখন কি জানতাম, এই দিল্লির উপর আমাদের কোনো অধিকার থাকবে না। দিল্লির লালকেল্লা, কুতুব মিনার, জামে মসজিদ আজও অনন্য মুসলিম শিল্পের নিদর্শন ঘোষণা করছে। পুরানা দিল্লি ও তার আশেপাশে যখনই বেড়াতে গিয়েছি দেখতে পেয়েছি সেই পুরানা স্মৃতি।

আমরা দলেবলে আজমীর শরীফ যাবার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ে বসলাম। কত গল্পই না শুনেছি বাড়ির গুরুজনদের কাছ থেকে। 'খাজাবাবার দরগায় গিয়ে যা চাওয়া যায়, তাই পাওয়া যায়, যদি চাওয়ার মত চাইতে পারো।' আমরা যখন আজমীর শরীফ স্টেশনে পৌঁছালাম দেখি বহু লোক তাদের কাছে থাকবার জন্য আমাদের অনুরোধ করছিলেন। ভাবলাম, ব্যাপার কি? আমাদের এত আদর কেন? আমরা কারও দাওয়াত কবুল করছি না, কারণ চৌধুরী সাহেবই আমাদের প্রতিনিধি। তিনি যা করবেন তাই আমাদের করতে হবে। তিনি মালপত্র নিয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে নেমে আসলেন এবং একজন ভদ্রলোককে বললেন, চলুন আপনার ওখানেই যাওয়া যাবে। তিনি তাড়াতাড়ি গাড়ি ডেকে আমাদের নিয়ে চললেন। আমাদের জন্য কামরার অভাব নাই। গোসল করলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম। পরে বুঝতে পারলাম, এরাই খাদেম। আজমীর শরীফের খাদেমদের যথেষ্ট ভদ্রতাবোধ আছে দেখলাম, তারা কিছুই চেয়ে নেয় না। থাকার বন্দোবস্ত করবে, খাবার ব্যবস্থা করবে, সাথে লোক দেবে, যে খরচগুলি করার একটা নিয়ম আছে সেগুলিই শুধু আপনাকে দিতে হবে। ফিরে আসার সময় আপনারা যা দিবেন, তাই তারা গ্রহণ করবে। শুনেছি, যে টাকা তারা গ্রহণ করে, তার একটা অংশ নাকি দিতে হয় দরগাহ কমিটিকে। কারণ, দরগাহ কমিটির যথেষ্ট খরচ আছে। খাজাবাবার দরগায় কোনো লোক না খেয়ে থাকে না। পাক হতে থাকে, মানুষ খেতে থাকে।

আমরা দরগায় রওয়ানা করলাম, পৌঁছে দেখি এলাহী কাণ্ড! শত শত লোক আসে আর যায়। সেজদা দিয়ে পড়ে আছে অনেক লোক। চিৎকার করে কাঁদছে, কারো কারো বা দুঃখে দুই চক্ষু বেয়ে পানি পড়ছে। সকলের মুখে একই কথা, 'খাজাবাবা, দেখা দে।'

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৫৫)

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৪২)

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ