ক্রীতদাস প্রথা একসময় ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। অর্থাৎ আইন করে বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ আসে। ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বৃটেন ও আমেরিকা অন্তমহাদেশীয় ক্রীতদাস পরিবহন বন্ধে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। তাদের চাপেই ১৮২২ সালে ওমানি আরবরা মর্সবি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে কোনো খ্রিস্টান শক্তির নিকট ক্রীতদাস বিক্রয়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই চুক্তি কতটুকু কার্যকর হচ্ছে তা মনিটর করার জন্য গ্রেট বৃটেন ও আমেরিকা জানজিবারে কনসাল নিযুক্ত করে। এই নিষেধাজ্ঞা খুবই কম কার্যকর হয়েছিল এবং তার পরও ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার আফ্রিকানকে ক্রীতদাস হিসেবে বন্দি করে কালোবাজারে বিক্রি করতে থাকে। এ সময় ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা শতো শতো আফ্রিকান ক্রীতদাসকে হত্যা করে। দূর দূরান্ত থেকে ক্রীতদাস ক্রয়ের প্রধান কারণ ছিল সেখানে তারা অত্যন্ত কম মূল্যে ক্রীতদাস সংগ্রহ করতে পারতেন। আবার কখনো তারা স্থানীয় উপজাতিদেরকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে আসতো। গহীন জঙ্গল থেকে হাতির দাঁত বহন করতে হতো এসব ক্রীতদাসদের। ক্রীতদাসদের অনেককে একসংগে শিকল বেঁধে তালা দিয়ে রাখা হতো যাতে করে এরা পালাতে না পারে।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজগুলো অন্তসমুদ্রপথে যাতে কেউ ক্রীতদাস বহন করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত টহল দিত এবং তাদের জাহাজ থেকে ক্রীতদাসবাহী জাহাজে বোমা মারত। এতে ক্রীতদাসরা অবশ্যই মারা পড়তো। এ রকম চাপের মুখে জানজিবারের সুলতান বারগাস ১৮৭৩ সালে সমুদ্রপথে ক্রীতদাস পরিবহন নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় এবং চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
মাঙ্গাপোয়ানির ক্রীতদাস চেম্বারঃ
মাঙ্গাপোয়ানির ক্রীতদাস চেম্বার জানজিবারের স্টোন টাউনের ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এটি একটি আয়তকার ভূগর্ভস্থ চেম্বার, যার ছাদ নির্মাণ করা হয়েছিল কোরাল পাথর দিয়ে। তৎকালীন মাঙ্গাপোয়ানির অত্যন্ত প্রভাবশালী ক্রীতদাস ব্যবসায়ী নসর আল-আলউই তার ক্রীতদাসদের বন্দি রাখার জন্য এই চেম্বার তৈরি করে। তানজানিয়া মেইনল্যান্ডের বাগাময়ো থেকে ক্রীতদাসবাহী নৌকা সমুদ্রতীরে ভিড়লে সেখান থেকে এই চেম্বারে নিয়ে আসা হতো। এই চেম্বারটি এখনো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।
ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্তকরণ আন্দোলনঃ মানব জাতির ইতিহাসে শুরু থেকেই কোনো না কোনোরূপে ক্রীতদাস প্রথা চালু ছিল। আর তাই একই কারণে ক্রীতদাস থেকে মুক্ত হওয়ার প্রতিবাদও তখন থেকে প্রচলিত ছিল।
মৌর্য সাম্রাজ্যের(২৬৯-২৩২ খ্রিস্টাব্দ)কিংবদন্তি সম্রাট অশোক ক্রীতদাস বাণিজ্য নিষিদ্ধ করেছিলেন সত্য কিন্তু তিনি ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করেননি। খ্রিস্টপূর্ব ২২১-২০৬ অব্দ পর্যন্ত চীনের কিন রাজবংশের শাসনামলে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভূমিদাস প্রথাও নিরূৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিন রাজবংশকে উৎখাত করার পর কিন রাজবংশের প্রচলন করা অনেক আইন পরে বাতিল করা হয়, যার মধ্যে ক্রীতদাস প্রথাও ছিল। আরো অনেক পরে ১৭ সালে চীনে ওয়াং ম্যাং এর শাসনামলে ক্রীতদাস প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাকে হত্যা করার পর চীনে পুনরায় ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন করা হয়।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ