নিউইয়র্ক শহর এখন কোলাহল মুখর, উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত, ভীষণ ঝলমলে। হাসিহাসি মুখের মানুষগুলোর হাতে শপিং ব্যাগ।শপিং মলগুলোতে লোভনীয় মূল্যছাড়ের অফার। ক্রিসমাস গান বাজছে সবখানে। বাড়িগুলোর সামনে নানান রং এর লাইট উৎসবের জানান দিচ্ছে। জ্যাকসন হাইটস সাজিয়েছে রংবেরং এর লাইটে রাস্তার এমাথা থেকে ওমাথা। ঈদের সময়টাতে আমাদের পাড়া এমন লাইট দিয়ে সাজানো হতো রাস্তার শেষ অবধি। কিশোর কুমারের, বাপ্পি লাহিড়ীর রোমান্টিক সব গান বাজতো রাতভর__ " জীবনের এতগুলো দিন কেটে গেলো একা একা... তুমি কেন আগে আসোনি... আগে কেন দাওনি দেখা..."।আমাদের জীবনের আর কি-ই বা সময় পেরিয়েছে তখন ! তবুও মনে হোত গানটি বুঝি আমাদের জন্যই গাওয়া ! একজন কল্পিত "তুমি" বোধহয় আমাদের সকলেরই ছিল।
এক বন্ধুর এপার্টমেন্ট এ সন্ধ্যায় ছোটখাটো পার্টি চলছিলো। বাচ্চারা এঘর ওঘর ছুটোছুটি করছিল। হৈচৈ আর আনন্দের মাঝে হঠাৎ ঠক্ঠক্ আওয়াজ। কিছুক্ষণ বাদে আবারো। আবারো। জানা গেলো, নিচতলার বাসিন্দারা নিচ থেকে ছাদে এই অদ্ভুত শব্দ করে জানান দিচ্ছে, " আমাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে, তোমরা হৈচৈ বন্ধ কর "।
বাড়ি ফিরছি। গাড়িতে রেডিওতে আবহাওয়া নিউজে বলছে, আজ কোয়াইয়েট কোল্ড। সম্ভবত বাতাসহীন শান্ত ঠাণ্ডা বুঝাচ্ছে। আমার সেদিকে মনোযোগ নেই। ভেতরে ঠক্ঠক্ শব্দ। ভীষণ পরিচিত। অনেককাল আগের পুরনো চেনা শব্দ। আমার বাবার বাড়িতে যখন সন্ধ্যা নামতো, মা তাগাদা দিতেন পড়তে বসতে। আমরা দোতলায় ঘুরঘুর করতাম বৈকালিক নাস্তা না দেয়া পর্যন্ত। যেন নাস্তাটা না হলেই নয় ! আম্মা বলে কয়ে পড়তে পাঠাতো চিলেকোঠায়। বলতো, নাস্তা রেডি হলে ডাকবো। অতঃপর ডাক আসতো অদ্ভুতভাবে। রুটি বানানোর বেলুনি দিয়ে নিচে রান্নাঘরের ছাদে ঠক্ঠক্ শব্দ করতেন। যেহেতু রান্নাঘরের সরাসরি উপরেই ছিল চিলেকোঠা, তাই সেই শব্দ অনায়াসে পৌঁছে যেতো সেখানে। সে ডাক জানান দিতো, "নাস্তা রেডি, খাইতে আয়"। একইভাবে রাতের খাবারের সময়ে আবারো ঠক্ঠক্, ঠক্ ঠক্ ...
পিচঢালা মসৃণ রাস্তায় অজস্র মানুষের কোলাহল, শতশত গাড়ির ছুটে চলা। পথ যেন ফুরায় না। অথচ, স্বপ্নের চেয়ে, কল্পনার চেয়েও দ্রুত ফুরিয়ে যায় জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়গুলো। কেবল অসমাপ্ত গল্পের মতন ফিরে ফিরে আসে অতীত...
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কিভাবে কেমন করে স্মৃতি ফিরে আসে বার বার,
লেখাটি পড়ে অদ্ভুত ভাল লাগায় মন আচ্ছন্ন হয়ে গেল।
ভাল থাকুন প্রবাসে,
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু কতো যে কথা তুমি মনে করিয়ে দাও।
আচ্ছা আজকাল তুমি কি খুব বেশী ব্যস্ত? ব্লগে অনেক কম দেখি।
ভালো থেকো।
মৌনতা রিতু
আপনি তো আমার মেমন রিয়ানের মতো, বিকালের নাস্তা না খাওয়া পর্যন্ত আমার পিছন পিছন ঘুরতে থাকে।
নাস্তা খেতেডাক দেওয়ার স্টাইলটা বেশ লেগেছে আমার।
অতীতই মানুষের সুখের ও দুঃখের স্মৃতির এক খোলা ডায়রি।
ভাল থাকুন আপু।