মালয়েশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, বাংলাদেশের পরেই এই দেশে স্বাধীনতা লাভ করলেই এই দেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নত দেশ, মাত্র আটারো বছরের মধ্যেই এই দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে যে, আজ এই দেশেই চাকরী করে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড সহ আরো অনেক দেশের মানুষ।
অন্য দেশ গুলো থাকুক, মালয়েশিয়াতে অল্প বেতনে সহজলভ্য বাংলাদেশি চাকুরী প্রার্থী, এই দেশে বিভিন্ন ভাবে আমাদের দেশ থেকে মানুষ চাকরীর উদ্দেশ্যে যায় যা দুই ধরণের, ১) বৈধ ও ২) অবৈধ।
বৈধ ভাবেরই আবার কিছু সিস্টেম আছে, তার মধ্যে সরকারি ভাবে হলে কলিং ভিসায় হয়, বাকি গুলো বেসরকারি ভাবে প্রফেশনাল ভিসায়।
আবার বেশিরভাগ মানুষ যায় অবৈধ ভাবে যার জন্য কোনো ভিসার ব্যবস্থা নেই, শত শত মানুষকে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়, এদের মধ্যে অনেকেই পতিমধ্যে অনাহারে মারা যায়, আবার অনেককে মালয়েশিয়া উপকূলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয় আরো টাকা দাবি করে, যারা টাকা দিতে পারেনা তাদের মেরে ফেলা হয়, এই বিষয়টি আপনারা সবাই জানেন।
ইদানীং মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় করা শুরু করেছে, যার মধ্যে সংখ্যার আদিখ্যে বাংলাদেশি বেশি, যাদের মধ্যে আছে কলিং, প্রফেশনাল, স্টুডেন্ট ভিসায় যারা মালয়েশিয়াই যাওয়ার পর ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ওখানে চাকরী করছেন বা থাকছেন।
নিয়ম হলো, যারা মালয়েশিয়া কলিং ভিসা ও প্রফেশনাল ভিসায় ঐ দেশে চাকরীর জন্য যান, তারা নির্দিষ্ট কোম্পানির বা চাকরীদাতার কাছেই চাকরী নিয়ে যান, আর সময় শেষ হওয়ার আগে চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের ভিসার সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু দেখা যায় যে উক্ত প্রতিষ্ঠান অবহেলা করে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে এদের ভিসার মেয়াদ না বাড়িয়ে এদের অবৈধ করে দেয়, এই কাজ করার একটি কুটিল কারণও আছে তা হলো, পুরাতন কর্মী থাকলে তাদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে দিতে হবে, যদি এরা বাধ্যগত ভাবে বিদায় হয়ে যায় তাহলে অল্প বেতনে নতুন কর্মী আসবে, এই জন্যই পুরানোদের এরা অবৈধ করে দিলো মালয়েশিয়ান কোম্পানি গুলো।
এই মূহুর্তে মালয়েশিয়াতে সাত লক্ষের উপর বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে এবং আরো পনের লক্ষ বাংলাদেশি যাওয়ার সুযোগ আছে এবং অনেকেই যাচ্ছেন।
এই অবৈধ অভিবাসীদের মালয়েশিয়ান সরকার গত ৩০শে জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অথবা যাদের পাসপোর্ট নেই বা ভিসা বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট টাকা নেই, তাদের জন্য E (ই) কার্ডের ব্যবস্থা করেছিলো, কিন্তু বাংলাদেশিরা তাও নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, যে কারণে এখন দলে দলে ধরা পড়ছেন।
এইবার মালয়েশিয়ান সরকার আরেকটি সুযোগ দিয়েছেন, মাত্র চারশ রিঙ্গিত (আমাদের আট হাজার টাকা) জরিমানা দিয়ে দেশে ফেরত আসা, যা হয়ত কিছু মানুষ এই জরিমানা দিয়ে ফিরে আসতে পারবে আর বাকিরা ক্ষমা পাওয়ার আশায় বা টাকার অভাবে মালয়েশিয়ার জেলে পঁচবে।
এইদিকে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ এয়ারপোর্টে শুরু করেছে আরেক তুঘলকি কান্ড, বাংলাদেশি বৈধ ভিসা ধারি পর্যটকদের তাদের দেশে প্রবেশে বাধা দান করছে, আজকাল তাদের দেশে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রচুর জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের প্রায় সবাইকে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আর এদের মধ্য থেকে বেশির ভাগ পর্যটকদের ফিরতি টিকেট যেদিন আছে, ততদিন এয়ারপোর্টে আটকে রেখে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা খুবই অমানবিক, তাদের দেশের এম্বেসি আমাদের সকল অনুসন্ধান শেষ করেই আমাদের ভিসা দেয়, এরপরেও মালয়েশিয়ান এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ যা করছে তা ঔদ্ধত্যই বটে যা অন্য কোনো দেশের পর্যটকের সাথে হচ্ছেনা।
এইদিকে আমাদের এম্বেসি যা মালয়েশিয়াতে আছে, তারা এই বিষয়ে কোন সহায়তা করছেনা, তাদের উচিত ছিলো যারা এরেস্ট অবস্থায় আছেন, তাদের পক্ষ নিয়ে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া, পর্যটকদের হয়রানি কেন হচ্ছে তার জবাবদিহি চাওয়া, কিন্তু আমাদের এম্বেসি ওখানে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তারা নানা ভাবে ব্যবসা করছে শুধু মাত্র তাদের স্বার্থে।
আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন, আমাদের দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের ইনকামের টাকায় এই দেশ চলে, আর সেই শ্রমিকদের বিপদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুপ কেন?
আমাদের প্রবাসীর টাকা একটু কম আসলেই সরকারের অন্দরমহলে হাহাকার রব উঠে, সরকারের কোনো দায়িত্ব কি নেই এইসব প্রবাসীদের জন্য?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্লিজ শুনুন প্রবাসীদের কান্না।
১১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
এদের টাকায় কিন্তু সরকার মাথা তুলে দাড়াতে চাচ্ছে অথচ বিভিন্ন দেশে রাস্ট্রদুত গুলির কাজ কি তা বুঝিও না। আসলএ রাজনোইতিকভাবে এনারা নইয়গ পায় তাই টাকা কামানড় আর ঘুরার কাজে শেষ করে দেশের প্রয়জনীয় প্রচার প্রসারে কাজ করেননা। এই ব্যাক্টিদ্বয় যদি এই শ্রম্বাজার নিয়ে কাজ করত তাহলে এইপ্রবাসীদের অনেক ঝামেলা মুক্ত কাজ করতে পারত।
ইঞ্জা
খুবই দুঃখজনক, শ্রম মন্ত্রণালয় আঙ্গুল মুখে দিয়ে বসে আছে।
মোঃ মজিবর রহমান
শ্রম মন্ত্রণালয় এক দিবস পালনে ব্যাস্ত থাকে দেশ উন্নয়নে ইচ্ছা নায়। ডিজিটাল কালেকশনের টাকা ব্যায়ে ব্যাস্ত।
ইঞ্জা
খুবই দুঃখজন ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলা দেশগুলো এসব ব্যাপারে একদম চুপ, না দেখলেই ভালো যেখানে নিজের দেশের রাষ্ট্রদূতরা চোখে ঠুলি পরে থাকে।
শ্রমিকের রক্ত না চুষলে এতো উন্নত এতো দ্রুত হতে পারতোনা। আফসোস, আমাদের দেশ ও শ্রমিকদের শুষে খায়, উন্নতি শুধু নিজের গ্যাটের হয়।
খুব ভালো একটি টপিক্স নিয়ে লিখেছেন ভাইয়া। অনুরোধ করবো বানানের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হন। মালয়েশিয়া হবে শব্দটা। কোন অজুহাত কিন্তু চলবেনা, হুম্ম 🙂
ইঞ্জা
যথার্থ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু, জানিনা কখন এই সরকার বা সংশ্লিষ্টরা কখন বুঝবে কি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের।
ইঞ্জা
আপু অসংখ্য ধন্যবাদ আমার অনিচ্ছাককৃত ভুলটির জন্য, এইমাত্র সব ঠিক করে দিলাম, একটু চোখ ভুলিয়ে দেবেন প্লিজ।
ছাইরাছ হেলাল
ওখানে যারা ভালো আছেন তাদের কথা বাদ, অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন তা খুব ই করুণ।
কোন কিছুই ঠিক ভাবে হচ্ছে না। শুধু হেনস্থাটুকু ছাড়া।
জানি না কবে কীভাবে এ অবস্থার উত্তরণ হবে!!
ইঞ্জা
ভাইজান, এই সমস্যার উত্তরণ আমার মতে সম্ভব, আমাদের সরকার যদি একটু সদয় হোন শ্রমিকদের জন্য আর সৌচ্চার হোন পর্যটকদের অযথা হয়রানির জন্য, তাহলে অবশ্যই সম্ভব হয়।
সঞ্জয় কুমার
প্রবাসী দের রক্ত পানি করা টাকায় দেশ উন্নত হচ্ছে । অথচ সবাই এদের ব্যাপারে উদাসীন ?
ইঞ্জা
ইদানিং সরকার চেষ্টা করছে মালয়েশিয়ার সাথে এই বিষয়ে কিছু করার জন্য, ধন্যবাদ দাদা।